দার্জিলিং মেল

ভারতের দ্রুতগামী ট্রেন

দার্জিলিং মেল হলো পূর্ব ভারতের একটি কিংবদন্তি ট্রেন। ট্রেনটির পরিসেবা স্বাধীনতার আগে শুরু হয়েছিল এবং বর্তমানেও এটি চলমান। এটি উত্তরবঙ্গের উপ-হিমালয় ও তরাই এলাকার সঙ্গে দক্ষিণবঙ্গে রাজধানী কোলকাতার মধ্যে সংযোগকারী প্রধান ট্রেন। এই ট্রেনটি শিয়ালদহ-হলদিবাড়ি রুটে চলাচল করে। ১২৩৪৩ শিয়ালদহ-হলদিবাড়ি দার্জিলিং মেল রাত ১০:০৫ মিনিটে শিয়ালদহ স্টেশন থেকে ছেড়ে পরেরদিন সকাল ০৯:৫৫ মিনিটে হলদিবাড়ি পৌঁছয় এবং ১২৩৪৪ হলদিবাড়ি- শিয়ালদহ দার্জিলিং মেল সন্ধ্যা ০৬:১৫ মিনিটে হলদিবাড়ি থেকে ছেড়ে পরেরদিন সকাল ০৫:৩০ মিনিটে শিয়ালদহ স্টেশনে পৌঁছয়। যাত্রাপথে ৬টি স্টেশনে ট্রেনটি দাঁড়ায়, সেগুলি হলো- জলপাইগুড়ি, নিউ জলপাইগুড়ি, কিশানগঞ্জ, মালদহ টাউন, বোলপুর শান্তিনিকেতন এবং বর্ধমান।

দার্জিলিং মেল
সংক্ষিপ্ত বিবরণ
বর্তমান পরিচালকপূর্ব রেল
যাত্রাপথ
শুরুশিয়ালদহ
বিরতিবর্ধমান, বোলপুর, মালদা, কিষণগঞ্জ, নিউজলপাইগুড়ি, জলপাইগুড়ি
শেষহলদিবাড়ি
ভ্রমণ দূরত্ব৬৩১ কিমি
যাত্রার গড় সময়১১ ঘণ্টা ৫৫ মিনিট
পরিষেবার হারপ্রত্যেক দিন
রেল নং১২৩৪৩/১২৩৪৪
কারিগরি
পরিচালন গতিগড় গতিবেগ ৬০ কিমি/ঘণ্টা সর্বোচ্চ গতিবেগ ১৩০ কিমি/ঘণ্টা

ইতিহাস সম্পাদনা

পূর্ব বাংলার মাধ্যমে চলাচল সম্পাদনা

ব্রিটিশ আমলে উত্তরবঙ্গ থেকে সমস্ত সংযোগ ইস্ট বেঙ্গল এর মাধ্যমে ছিল। ১৮৭৮ সাল থেকে কলকাতা থেকে শিলিগুড়ির মধ্যে রেল রুট টি ছিল দুই ভাগে। এটির প্রথম ভাগে ছিল ইস্টার্ন বেঙ্গল রেলওয়ে বরাবর একটি ১৮৫ কিলোমিটার এর যাত্রা কলকাতা স্টেশন (পরে নাম পালটে শিয়ালদহ হয়) থেকে পদ্মা নদীর দক্ষিণ তীরে অবস্থিত দামূখদিয়াহ ঘাট অবধি। তারপর ফেরি করে নদী পার করে দ্বিতীয় ভাগের যাত্রা শুরু হত যেটা পদ্মার উত্তর তীরে অবস্থিত সরাঘাট থেকে শিলিগুড়ি অবধি ৩৩৬ কিলোমিটার এর দুরত্ব, নর্থ বেঙ্গল রেলওয়ের মিটার গেজ লাইন এর মাধ্যমে সম্পূর্ণ করত।[১]

পদ্মার ওপর ১.৮ কিলোমিটার দীর্ঘ লম্বা হার্ডিঞ্জ ব্রিজ, ১৯১২ সালে তৈরী করা হয়। ১৯২৬ সালে এই সেতুর উত্তরে মিটার-গেজ সেকশন টা ব্রডগেজ এ রূপান্তরিত করা হয় এবং তাই সমগ্র কলকাতা-শিলিগুড়ি রুট ব্রডগেজ হয়ে ওঠে।[১] রুট টা তখন এরম চলাচল করত: শিয়ালদহ- রানাঘাট - দর্শনা - ভেড়ামারা - হার্ডিঞ্জ ব্রিজ - ঈশ্বরদী - সান্তাহার - হিলি - পার্বতীপুর - নীলফামারী - হলদিবাড়ি - জলপাইগুড়ি - শিলিগুড়ি

দার্জিলিং মেল, ভারত বিভাগের এর আগে থেকেই এই রুট এর উপর চলাচল করত। এমনকি ভারত বিভাগের পর এটা কিছু বছর ধরে এই রুট উপর চলাচল করেছে। এটি অসম মেল এর সাথে সংযোগ স্থাপন করত যেটা ভারত বিভাগের এর আগে সান্তাহার থেকে গুয়াহাটি অবধি চলাচল করত।[২][৩]

গঙ্গার ফেরি সম্পাদনা

১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর কলকাতা ও শিলিগুড়ি সংযোগ ক্ষেত্রে প্রধান বাধা হয়ে দাড়িয়েছিল একটি কারণ যেটা হলো পশ্চিমবঙ্গে বা বিহারে গঙ্গা জুড়ে কোন ব্রিজ ছিল না। শিলিগুড়ি অবধি একটি সাধারণত গ্রহণযোগ্য রুট ছিল সাহিবগঞ্জ লুপ এর মাধ্যমে সাকরিগালি অবধি এবং কখনও কখনও সাহিবগঞ্জ ঘাট অবধি| ফেরি করে গঙ্গা পার করে মনিহারী ঘাট। তারপর মিটার গেজ এ কাটিহার এবং বার্সই এর মাধ্যমে কিষণগঞ্জ এবং অবশেষে ন্যারো গেজ এ শিলিগুড়ি। ১৯৪৯ সালে কিষাণগঞ্জ-শিলিগুড়ি বিভাগ টি মিটার গেজ এ রূপান্তরিত হয়।[১]

ফারাক্কা বাঁধ এর মাধ্যমে চালান সম্পাদনা

১৯৬০ এর দশকের প্রথম দিকে যখন ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছিল, তখন আরো একটি আমূল পরিবর্তন করা হয়। ভারতীয় রেল কলকাতা থেকে একটি নতুন ব্রডগেজ রেল লিংক তৈরি করে এবং শিলিগুড়ি টাউন এর দক্ষিণ দিকে একটি গ্রীনফিল্ড সাইটে একটি সম্পূর্ণ নতুন ভাবে ব্রডগেজ স্টেশন নির্মাণ করে যার নাম নিউ জলপাইগুড়ি।[১]

২,২৪০ মিটার (৭,৩৫০ ফুট) লম্বা ফারাক্কা বাঁধ, গঙ্গার ওপর দিয়ে একটি রেল সহ রাস্তা'র সেতু বহন করে। রেল সেতু টি ১৯৭১ সালে জনসাধারণের জন্য খোলা হয় যার ফলে বার্হারওয়া-আজিমগঞ্জ-কাটোয়া লুপ লাইন টি সংযুক্ত হয় মালদহ টাউন, নিউ জলপাইগুড়ি এবং উত্তরবঙ্গের অনন্য রেল স্টেশন এর সাথে।[৪][৫] তারপর থেকে দার্জিলিং মেল[৬], হাওড়া-নিউ জলপাইগুড়ি লাইন ব্যবহার করে আসছে।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "India: the complex history of the junctions at Siliguri and New Jalpaiguri"। IRFCA। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-১১-১২ 
  2. Joydeep Dutta and Harsh Vardhan। "Trains of Fame and Locos with a Name, part 2"। IRFCA। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০২-২২ 
  3. "Geography - International"IRFCA। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০২-২২ 
  4. Salman, Salman M. A.; Uprety, Kishor (২০০২)। Conflict and cooperation on South Asia's international rivers: a legal perspective। World Bank Publications। পৃষ্ঠা 135–136। আইএসবিএন 978-0-8213-5352-3। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-০৭-০৫ 
  5. R.P.Saxena। "Indian Railway History timeline"। ২০১২-০৭-১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-১১-২০ 
  6. "Darjeeling Mail"। cleartrip.com। ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ এপ্রিল ২০১৫ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা