তারলেজা আবাবিল

পাখির প্রজাতি

তারলেজা আবাবিল, তারলেজা বা লিশরা (ইংরেজি: Wire-tailed Swallow) (Hirundo smithii) হাইরানডিনিডি পরিবারভুক্ত একটি ছোট গায়ক পাখি। এর দুইটি উপপ্রজাতি রয়েছে। বাংলাদেশে তার একটি H. s. filfera দেখা যায়।[২]
চড়াইয়ের আকারের পাখিটিকে মাথার উপর লালটুপি আর তারের মতো দুইটি লম্বা লেজ দেখলে চিনতে দেরি হয় না। এরা উড়ে উড়ে কীটপতঙ্গ খায়। এরা বাংলাদেশপশ্চিমবঙ্গে স্থায়ী বাসিন্দা। তারের উপর প্রায়ই এই পাখিদের বসে থাকতে দেখা যায়।[৩]

তারলেজা আবাবিল
Hirundo smithii
Hirundo smithii smithii উপপ্রজাতির তারলেজা, দক্ষিণ আফ্রিকা
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ: প্রাণীজগৎ
পর্ব: কর্ডাটা
শ্রেণী: পক্ষী
বর্গ: প্যাসারিফর্মিস
পরিবার: হাইরানডিনিডি
গণ: Hirundo
প্রজাতি: H. smithii
দ্বিপদী নাম
Hirundo smithii
লিচ, ১৮১৮

বিবরণ সম্পাদনা

তারলেজা আবাবিল লম্বায় ৫ ইঞ্চি। কিন্তু চেরা লেজের বাইরের পালকের দুদিক থেকে একটি করে সরু তারের মতো লেজ আছে আরো ৭ ইঞ্চি। স্ত্রী পাখিটি একটু ছোট। মাথার চাঁদি উজ্জ্বল বাদামী। মাথার দুই পাশ, ঘাড় এ উপরের সমস্ত পালক চকচকে ইস্পাত নীল। লম্বা ডানায় লুকানো অংশ ও লেজ গাঢ় পিঙ্গল। লেজের ঠিক মাঝের দুই জোড়া পালকে সাদা ছোপ। তলার সব পালক সাদা। ঠোঁট ও পা কালো।[৪]

বিস্তৃতি সম্পাদনা

মধ্য ও দক্ষিণ আফ্রিকা, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে পাখিটির আবাসস্থল। ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, তাজিকিস্তান এবং আফ্রিকার অ্যাঙ্গোলা, বুরুন্ডি, জিম্বাবুয়ে, সুদান, ইথিওপিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকাসহ কয়েকটি দেশে পাখিটির বিস্তৃতি। এছাড়া বাংলাদেশ, কঙ্গো, মিশর, লাইবেরিয়া ওমান, শ্রীলঙ্কা: এসব দেশে পাখিটি খুব অল্প পরিমাণে দেখা যায়।[১]বাংলাদেশে চট্টগ্রাম, খুলনা, ঢাকাসিলেটে পাখিটি দেখার চারটি রেকর্ড আছে।[২]

উপপ্রজাতি সম্পাদনা

 
H. s. filfera, ভারত

তারলেজা আবাবিলের মোট দুইটি উপপ্রজাতি পাওয়া যায়:[৫]

স্বভাব সম্পাদনা

 
তারলেজা আবাবিলের ডিম

তারলেজা জলের ধারের পাখি। নদী, বিল, বড় জলাশয়, ধানক্ষেত এবং বড় খালের উপর এদের উড়তে দেখা যায়। এরা সংঘবদ্ধভাবে বাস করে না। প্রজননকালে খুব ছোট পারিবারিক দলে দেখা যায়। পরিযায়ী হবার সময় কিছু পাখি মেঠো আবাবিলদের ঝাঁকে যোগ দেয়। এদের টেলিগ্রাফের তারের উপর বসতে দেখা যায় বেশি। গাছের ডালে এরা সাধারণত বসে না। একমাত্র বাসা তৈরির জন্য মাটির নিচের জমিতে নামে।[৪] এদের ডাক সাধারণত খুব নিচু স্বরের: চিট-চিট...। এর গান অনেকটা এরকম: চিরিক-উইট...চিরিক-উইট...। তারলেজার সতর্ক সংকেত বেশ স্পষ্ট: চিইপ-চিই ধরনের।[২]

প্রজনন সম্পাদনা

এর প্রজননের সময় মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর। এই সময়ের মধ্যে এরা দইবার ডিম পাড়ে। মাটি দিয়ে তৈরি বাসার আকার দইয়ের চ্যাপ্টা ভাঁড়ের মতো। বাসা বানায় স্ত্রী পাখি। পুরুষ সাথে থাকে মাত্র। তবে সন্তানপালনে সর্বতোভাবে স্ত্রী পাখিকে সহায়তা করে। ডিম পাড়ে ৩-৪টি অল্প চকচকে। খোলার রং সাদা, তার উপর লালচে-পাটকিলে ছিট ও ছোপ। ডিমের মাপ: লম্বায় ০.৭২ ইঞ্চি, চওড়ায় ০.৫৩ ইঞ্চি।[৪]

বর্তমান অবস্থা সম্পাদনা

পৃথিবীতে অনেকখানি এলাকাজুড়ে পাখিটির বাস। এমনকি পাখিটির সংখ্যা কিছুটা হলেও বাড়ছে। সেকারণে আই. ইউ. সি. এন. এই প্রজাতিটিকে Least Concern বা ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত বলে ঘোষণা করেছে।[১] তবে বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত।[২]

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. BirdLife International (২০১২)। "Hirundo smithii"বিপদগ্রস্ত প্রজাতির আইইউসিএন লাল তালিকা। সংস্করণ 2012.1প্রকৃতি সংরক্ষণের জন্য আন্তর্জাতিক ইউনিয়ন। সংগ্রহের তারিখ ৬ জানুয়ারি ২০১৩ 
  2. Kamal Uddin Siddiqui, M Anwarul Islam (সম্পাদক)। "Hirundinidae"। Encyclopedia of Flora and Fauna of Bangladesh: Volume 26 (প্রিন্ট) (English ভাষায়)। ঢাকা: Asiatic Society of Bangladesh। পৃষ্ঠা ৪১৮। আইএসবিএন 984-300-000286-0 |আইএসবিএন= এর মান পরীক্ষা করুন: invalid prefix (সাহায্য)  অজানা প্যারামিটার |origmonth= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য)
  3. প্রণবেশ সান্যাল, বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী। "তারলেজা"। পশ্চিম বাংলার পাখি (প্রিন্ট)। কলকাতা: আনন্দ। পৃষ্ঠা ৫৯। আইএসবিএন 81-7215-254-X  অজানা প্যারামিটার |origmonth= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য)
  4. অজয় হোম। "ভাণ্ডিক বংশ"। বাংলার পাখি (প্রিন্ট)। কলকাতা: শৈব্যা প্রকাশন বিভাগ। পৃষ্ঠা ১৫১।  অজানা প্যারামিটার |origmonth= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য)
  5. [১] ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৭ এপ্রিল ২০১৬ তারিখে, The Internet Bird Collection এ তারলেজা আবাবিল বিষয়ক পাতা।

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা