তাফসিরে মাজেদী
তাফসীরে মাজেদী (ইংরেজি: Tafsirul Quran: Translation and Commentary of the Holy Quran; উর্দু: القرآن الحکیم) আব্দুল মাজেদ দরিয়াবাদি লিখিত একটি পূর্ণ তাফসীর। এটি প্রথমে ইংরেজিতে রচিত পরে উর্দুতে অনূদিত হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় প্রকাশিত তফসীরটি প্রচুর উদ্ধৃতি, আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গি, যুক্তিনির্ভর ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ, বাইবেল ও অন্যান্য ধর্মগ্রন্থ নিয়ে তুলনামূলক আলোচনা করে কুরআন ও ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনার জন্য অনন্য বৈশিষ্ট্যমন্ডিত।[১]
লেখক | আব্দুল মাজেদ দরিয়াবাদি |
---|---|
মূল শিরোনাম | ইংরেজি: Tafsirul Quran: Translation and Commentary of the Holy Quran; উর্দু: القرآن الحکیم |
দেশ | ব্রিটিশ ভারত |
ভাষা | ইংরেজি ও উর্দু |
বিষয় | তাফসীর |
প্রকাশিত |
|
প্রকাশক | দারুল ইশাআত, করাচি, তাজ কোম্পানি লিমিটেড, পাকিস্তান |
মিডিয়া ধরন | শক্তমলাট |
পৃষ্ঠাসংখ্যা |
|
ওসিএলসি | ১৭৫৫৭৯৫৮ |
২৯৭.১২২৭ | |
এলসি শ্রেণী | বিপি১০৯ ১৯৮১বি |
ইতিহাস
সম্পাদনাআব্দুল মাজেদ দরিয়াবাদি প্রথম জীবনে নাস্তিক ছিলেন; পরবর্তীতে আশরাফ আলী থানভীর দ্বারা প্রভাবে ও অনুপ্রেরণায় তাফসীরে মাজেদী রচনা করেন।[১]তাফসীরে মাজেদীর প্রাথমিক সংস্করণ ইংরেজিতে রচিত। তখন মুসলিমদের লিখিত কুরআনের কোনো ইংরেজি অনুবাদ ছিল না। দরিয়াবাদিকে ইংরেজিতে তাফসীর রচনার শুরু জন্য সিরাজুল হকের অনুরোধ ছিল। তিনি ১৯৩৩ থেকে ১৯৩৯ পর্যন্ত প্রায় ৬ বছরে গ্রন্থটি রচনা করেন। ১৯৪১ সালে করাচির দারুল ইশাআত থেকে "Tafsirul Quran: Translation and Commentary of the Holy Quran" নামে ৪ খণ্ডে তাফসীরটি প্রকাশিত হয়। পরবর্তীতে ১৯৪৪ সালে তাজ কোম্পানি লিমিটেড আল কুরআনুল হাকিম নামে এ্টির উর্দু সংস্করণ প্রকাশ করে। উর্দু সংস্করণটি ১২১৫ পৃষ্ঠার একক খন্ডে প্রকাশিত। ১৯৮১ সালের সংস্করণে আবুল হাসান আলী হাসানী নদভী লিখিত 'ভূমিকা' সংযুক্ত হয়।[১] ১৯৯৪ সালে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ হতে ওবাইদুর রহমান মল্লিক অনূদিত বঙ্গানুবাদ প্রকাশিত হয়।[২]
গঠন
সম্পাদনাতাফসীরে মাজেদীর ১৯৪১ সালে প্রকাশিত ইংরেজি সংস্করণটির গঠন নিম্নরূপ:[১]
- প্রথম খণ্ড: সূরা ফাতিহা – সূরা আল মায়িদাহ'র ৮২ নম্বর আয়াত পর্যন্ত। মোট পৃষ্ঠা ৪৫৪।
- দ্বিতীয় খণ্ড: সুরা আল মায়িদার ৮৩ – সূরা আন-নাহল। মোট পৃষ্ঠা ৪৯৭।
- তৃতীয় খণ্ড: সূরা বনী-ইসরাঈল – সুরা ফাতির। মোট পৃষ্ঠা ৫০৩।
- চতুর্থ খণ্ড: সূরা ইয়াসীন – সূরা নাস। মোট পৃষ্ঠা ৫৪৩।
বৈশিষ্ট্য
সম্পাদনাতাফসীরে মাজেদীর ইংরেজি ভাষায় রচিত মূল সংস্করণটিতে কুরআনের ব্যাখ্যা বর্ণনার সময় বাইবেলের আদি পুস্তক, নূতন নিয়ম, জিউইশ এনসাইক্লোপিডিয়া ও অন্যান্য ধর্মগ্রন্থ হতে উদ্ধৃতি দিয়ে ইসলামের তুলোনামূলক অবস্থান তুলে ধরা হয়েছে। এটি স্বীকৃত আরবী তফসীর ও কুরআনের ব্যাখ্যামূলক অন্যান্য বহুল পঠিত গ্রন্থ হতে উদ্ধৃতি সমৃদ্ধ। প্রনেতা তাফরীরে আধুনিক ধারণার আলোকে আলোচনা করেছেন।[১]
মূল্যায়ন
সম্পাদনাগ্রন্থটি মূল্যায়ন করে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের প্রাক্তন মহাপরিচালক দাউদউজ্জামান চৌধুরী বলেন,
“ | বর্তমান শতকে (বিংশ শতক) উপমহাদেশে উর্দু ভাষায় যে কটি তাফসীর লেখা হয়েছে তাফসীরে মাজেদী সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য। মাওলানা আবদুল মাজেদ দরিয়াবাদী একজন ইংরেজি শিক্ষিত দার্শনিক, লেখক ও সাংবাদিক। দর্শন চর্চা তাকে নাস্তিক্যবাদের দ্বারপ্রান্তে উপনীত করেছিল। শেষ পর্যন্ত তিনি মাওলানা আশরাফ আলী থানভীর (র.) দরবারে হাজির হন। আল্লাহ তাকে রক্ষা করেন। তার মধ্যে বিরাট পরিবর্তন সূচীত হয়। নাস্তিক দরিয়াবাদী মুফাসসির দরিয়াবাদীতে রূপান্তরিত হন। তার এ রূপান্তরের ফসল তাফসীরে মাজেদী। ইংরেজি শিক্ষিত শ্রেণীর জন্য প্রথমে তিনি ইংরেজিতে তাফসীর রচনা করেন। পরে উর্দু তাফসীর রচনা করেন। বাইবেলের বিপুল উদ্ধৃতি, ঐতিহাসিক স্থান, ঘটনার নিপুণ বিশ্লেষণ আর হৃদয়গ্রাহী বর্ণনাধারা তাফসীরে মাজেদীর প্রধান বৈশিষ্ট্য। | ” |
— [২] |
তাফসীরটির বঙ্গানুবাদক বলেন,
“ | প্রচুর কোটেশন, আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গি ও যুক্তিনির্ভর ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের দ্বারা তাফসীর খানা খুবই সমৃদ্ধ করা হয়েছে। এটাই তাফসীরে মাজেদীর অনন্য বৈশিষ্ট্য। পাশ্চাত্য জগত ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে যে বুদ্ধি-ভিত্তিক যুদ্ধ শুরু করেছে তার মোকাবিলায় এ তাফসীর খানি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে আমি মনে করি। | ” |
— [২] |
আরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনাউদ্ধৃতি
সম্পাদনা- ↑ ক খ গ ঘ ঙ মুহাম্মদ আব্দুল মাহবুব, আবু নাসের (২০১৯)। "Abdul Majid Daryabadi: A Charismatic Mufassir of the Holy Quran" [আবদুল মজিদ দরিয়াবাদি: পবিত্র কুরআনের একজন ক্যারিশম্যাটিক মুফাসসির] (পিডিএফ)। জার্নাল অফ রিলিজিয়ন এন্ড থিওলজি। ৩ (২): ৪০–৪১। আইএসএসএন 2637-5907। lay summary।
- ↑ ক খ গ আজাদ, আবুল কালাম (২০১৩)। বাংলা ভাষায় তাফসীর চর্চা : বিশেষত তফসীরে নূরুল কোরআন (পিডিএফ) (গবেষণাপত্র)। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। পৃষ্ঠা ২১৩–২১৫। ২১ ডিসেম্বর ২০২১ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ ডিসেম্বর ২০২১।
গ্রন্থপঞ্জি
সম্পাদনা- রাজ্জাক, আব্দুর (১৯৮০)। বিভিন্ন ভাষায় আল-কুরআনের তরজমা ও তাফসীর (পিডিএফ)। দিনাজপুর: ইসলামি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। পৃষ্ঠা ১৬–১৭।
- উসমানি, মুহাম্মদ তাকি (২০০৫)। তাবসেরে। করাচি, পাকিস্তান: মাকতাবা মাআরিফুল কুরআন। পৃষ্ঠা ১৭৭।
- মুহাম্মদ আব্দুল মাহবুব, আবু নাসের (২২ মে ২০১৯)। "Abdul Majid Daryabadi and Four Mufassirs: A Comparative Study" [আব্দুল মাজেদ দরিয়াবাদি এবং চার মুফাসসির: একটি তুলনামূলক অধ্যয়ন] (পিডিএফ)। সৌদি জার্নাল অব হিউম্যানিটিজ এন্ড সোশ্যাল সাইন্স। আইএসএসএন 2415-6248। ডিওআই:10.21276/sjhss.2019.4.5.8।
- বুজুর্গ জাদেহ, এম. (২০২০)। "আব্দুল মাজেদ দরিয়াবাদি এবং তার তাফসীর"। জার্নাল অব সাবকন্টিনেন্ট রিসার্চ। ১২ (৩৮): ৯–২৮। ডিওআই:10.22111/jsr.2020.5235।
- খানম, ফাওজিয়া (২০১২)। Moulana Abdul Majid Daryabadi Ki Adabi Khidmath [মাওলানা আব্দুল মাজেদ দরিয়াবাদির সাহিত্যে অবদান]। ভারত: আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়।
- মাহবুব, মুহাম্মদ (২০২০)। Abdul Majid Daryabadis contribution to Quranic studies [কুরআন অধ্যয়নে আব্দুল মজিদ দরিয়াবাদির অবদান] (গবেষণাপত্র)। ভারত: আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়। পৃষ্ঠা ১০৭–১৩৭। hdl:10603/354021।
- সালাহউদ্দিন, এস. কে. (২০১৩)। Moulana Abdul Maajid Daryabadi ki adabi jehat [আব্দুল মাজেদ দরিয়াবাদির সাহিত্য সাধনা] (গবেষণাপত্র)। ভারত: কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। hdl:10603/164202।
- Quran interpretation in Urdu : a critical study। Nazeer Ahmad Ab Majeed, Aligarh Muslim University. K̲h̲alīq Aḥmad Niz̤āmī Markaz-i ʻUlūmulqurʼān। New Delhi। ২০১৯। আইএসবিএন 978-93-89166-89-7। ওসিএলসি 1124776298।
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনা- তাফসীরের উর্দু ও ইংরেজি সংস্করণ ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৭ অক্টোবর ২০২১ তারিখে