ঢেকীয়াখোয়া বর নামঘর

ঢেকীয়াখোৱা বর নামঘর - একশৰন নাম ধর্মর ঐতিহাসিক ৫০০ বছর পুরনি প্রসিদ্ধ উপাসনা গৃহ - মহাপুরুষ মাধ

ঢেকীয়াখোয়া বর নামঘর, অসমের যোরহাট নগরী থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত। এটি ৩৭ নং রাষ্ট্রীয় সড়ক থেকে প্রায় ৩.৫ কি.মি. দূরে ঢেকীয়াখোয়া গাঁয়ে অবস্থিত। ভাদ্র মাসের অখণ্ড নাম-কীর্ত্তনের জন্য নামঘরে অগণিত ভক্তের ভিড় হতে দেখা যায়। জনশ্রুতি অনুসারে, ১৫২৮ সালে মহাপুরুষ মাধবদেব এই নামঘর প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।[১] মহাপুরুষ মাধবদেব এই স্থানে একগাছি বাতি জ্বালিয়েছিলেন, যেগুলি সুদীর্ঘ চারশ বছর ধরে ধর্মপ্রাণ রাইজেরা জ্বালিয়ে রাখেন। এই বাতির গোছা এশিয়া বুক অফ রেকর্ডস এবং ইণ্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডস"-এ দীর্ঘতম সময়ের জন্য প্রজ্বলিত বাতি" বলে স্বীকৃতি প্রদান করেছে।[২][৩] নামঘরটির মোট জায়গা ১৩ বিঘা।[১] ভাদ্র মাসে ঢেকীয়াখোয়া বর নামঘর মর্ত্যের বৈকুণ্ঠপুরীতে পরিণত হয় বলে লোকবিশ্বাস আছে। ভক্তগণ নিজেদের মত নামঘরে দান করেন এবং পরিচালনা সমিতি একে সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক উন্নতির জন্য ব্যবহার করে। এটি বৈষ্ণবধর্ম এবং আসামের মানুষের মাঝে একতা বজায় রাখতে সহায়তা করে আসছে।

ঢেকীয়াখোৱা বর নামঘর
ঢেকীয়াখোয়া বর নামঘরের সম্মুখভাগ
ধর্ম
অন্তর্ভুক্তিহিন্দুধর্ম
জেলাযোরহাট জেলা
অবস্থান
দেশভারত
স্থাপত্য
সৃষ্টিকারীমাধবদেব

ইতিহাস সম্পাদনা

প্রবাদ অনুসারে বৈষ্ণবমত প্রচার করার সময়ে, অবৈষ্ণবদের প্ররোচনায় পড়ে রাজা মহাপুরুষ শংকরদেব এবং মাধবদেবকে বন্দী করার জন্য খোঁজ করলে, শংকর গুরুকে শিষ্যগণ আত্মগোপন করায়। রাজা মাধবদেবকে জোঁয়ায়েকের সাথে বন্দী করে, পরে বিচারে জোঁয়ায়েককে মৃত্যুদণ্ড দেন এবং মাধবদেবকে মুক্তি দেন। বন্দীশালা থেকে পালিয়ে এসে এখনকার ঢেকীয়াখোয়া বরনামঘরে ভাঙা ঘড়ে থাকা এক বুড়া-বুড়ির ঘরে মাধবদেব আশ্রয় নেন। রাতের ভাত রান্নার পর ঢেঁকি শাকের ব্যঞ্জন বানিয়ে বুড়ি নিজে না খেয়ে মাধবদেবকে খাইয়েছিল। আহার গ্রহণ করার পর, বুড়ার সহযোগিতায় গাঁয়ের কয়েকজন লোক মিলিত হয়ে সেই স্থানে একটা নামঘর স্থাপনের কথা বলে এবং মাধবদেব নিজের পরিচয় দেন। ধনীরা তাঁর কাছে দীক্ষা নিতে সম্মতি প্রকাশ করে। যে স্থানে গুরু ভোজন করেছিলেন, সেই স্থানে বড়গাছের তলায় খুটি মেরে বাতি প্রজ্বলন করে নামঘর ভাগ স্থাপন করেন। তখন থেকেই এই নামঘরটির সাথে অঞ্চলটির নাম ঢেকীয়াখোয়া হয়। মহাপুরুষ মাধবদেব সেই স্থান ত্যাগ করার পরে বুড়া-বুড়ির মৃত্যু হয় এবং ধনীরা সেই স্থানে খড়-বাঁশের নামঘর তৈরি করে বুড়া নামঘর নাম দেয় এবং প্রত্যেক বছরের ভাদ্র মাসে গুরুর স্মৃতিতে পালনাম করে। একসময় কাঠ-বাঁশে নির্মিত এই নামঘরই ঢেকীয়াখোয়া নামঘর হিসেবে প্রখ্যাত হয়।

কিংবদন্তি সম্পাদনা

ঢেকীয়াখোয়া বর নামঘরের সাথে কয়েকটি কাহিনী জড়িত আছে। বলা হয় যে, নামঘরের মূল খুঁটিটি শাল গাছে নির্মিত। একদিন রাতে এর একজন ভক্ত স্বপ্নে দেখল যে, বর নামঘরের কাছ দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীটি (ঢেকীয়াখোয়া জান নামে পরিচিত) স্রোতের বিপরীতে বয়ে গেছে এবং বর নামঘর নির্মাণ করবার জন্য সাথে এক শাল গাছ উঠিয়ে নিয়ে আসছে। পরদিন যখন লোকেরা স্বপ্নটি বাস্তবিত হতে যেন দেখল, তখন তাঁরা বর নামঘরের মূল খুঁটিগুলি শাল গাছ দিয়ে নির্মাণ করে।

নামঘরের কার্যসূচী সম্পাদনা

প্রতি বছরের ভাদ্র মাসে এতে চার প্রসংগীয় পালনাম অনুষ্ঠিত হয়৷ অগণিত ভক্তের সমাবেশ হয়৷ এই নামঘর পরিচালনার জন্য একটি পরিচালনা সমিতি আছে৷ ১৯৫৯ সালে স্থাপিত সমিতিটি নামঘরটির উন্নয়নের জন্য কার্যসূচী গ্রহণ করেছে।

অবস্থান এবং পরিবহন সম্পাদনা

 
ঢেকীয়াখোয়া বর নামঘরের এক ভাষ্কর্য

ঢেকীয়াখোয়া বর নামঘরের অবস্থান হল ২৬°২৮′ উত্তর ৯৪°১১′ পূর্ব / ২৬.৪৭° উত্তর ৯৪.১৯° পূর্ব / 26.47; 94.19

বিমানসেবা

ঢেকীয়াখোয়া বর নামঘরের নিকটবর্তী বিমানবন্দর হল: যোরহাট বিমানবন্দর। দূরত্ব প্রায় ১০ কিঃমিঃ।

রেলসেবা

ঢেকীয়াখোয়া বর নামঘরের নিকটবর্তী রেল স্টেশন হল যোরহাট রেল স্টেশন। অন্য নিকটবর্তী স্টেশনটি হল মরিয়নি জংশন; এর দূরত্ব প্রায় ৩০ কিঃমিঃ।[৪]

পথসেবা

আসামের প্রায় সকল স্থানের সঙ্গে যোরহাট জেলায় যাতায়াত করার সু-ব্যবস্থা আছে। ৩৭ নং জাতীয় সড়ক দিয়ে যোরহাট নগর থেকে শিবসাগর যাওয়ার পথে লাহদৈগড় আরক্ষী চৌকি পার হয়ে ঢেকীয়াখোয়া বর নামঘরে যাওয়ার প্রবেশ দ্বার পাওয়া যায়। তার থেকে প্রায় ৩.৫ কিঃমিঃ দূরত্বে ঢেকীয়াখোয়া গাঁওতে নামঘরটি অবস্থিত।[৪]

অভিলেখ সম্পাদনা

ঢেকীয়াখোয়া বর নামঘর প্রতিষ্ঠা করার সময় মহাপুরুষ মাধবদেব এই স্থানে একগাছি বাতি জ্বালিয়েছিলেন। এই বাতি গাছি সুদীর্ঘ চারশ বছর ধরে ধর্মপ্রাণ রাইজেরা এখনো জ্বালিয়ে রেখেছে। যেখানে ৪৮৫ বছর ধরে ঢেকীয়াখোয়া বর নামঘরে এই বাতি গাছি জ্বলছে। এই বাতি গাছি এশিয়া বুক অফ রেকর্ডস এবং ইণ্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডস" "দীর্ঘতম সময়ের জন্য প্রজ্বলিত বাতি" বলে স্বীকৃতি প্রদান করেছে।[২][৩]

আরও দেখুন সম্পাদনা

প্রসঙ্গ পুঁথি সম্পাদনা

  • বিশ্ব ঐতিহ্য, শান্তনু কৌশিক বরুয়া

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; DBN নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  2. "Lamp burning for 484 years enters Asia Book of Records"। Deccan Chronicle। August 19, 2012। আগস্ট ২৪, ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ November 02, 2012  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য)
  3. "ঢেকীয়াখোয়া বর নামঘরর অভিলেখ"। www.assaminfo.com। 2012। সংগ্রহের তারিখ November 02, 2012  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য)
  4. "অবস্থান এবং পরিবহন"www.assaminfo.com। www.assaminfo.com। 2012। সংগ্রহের তারিখ November 03, 2012  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য)

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা