ডেরেক ওয়ালকট‌

সাহিত্যে নোবেল পুরষ্কার বিজয়ী

ডেরেক এলটন ওয়ালকট, ওবিই, ওসিসি (ইংরেজি: Derek Alton Walcott; ২৩ জানুয়ারি, ১৯৩০ - ১৭ মার্চ, ২০১৭) সেন্ট লুসিয়ায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত কবি ও বিশিষ্ট নাট্যকার। ১৯৯২ সালে তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।[১] ১৯৯০ সালে হোমারীয় মহাকাব্য ওমেরজ নিয়ে কাজ করেন[২] যা তার বৃহৎ অর্জন হিসেবে বিবেচিত। দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট বইটির উচ্ছসিত প্রশংসা করে এবং দ্য নিউইয়র্ক টাইমস বুক রিভিউ থেকে ১৯৯০ সালের সেরা বইরূপে আখ্যায়িত করা হয়েছিল।

ডেরেক ওয়ালকট
২০ মে, ২০০৮ তারিখে ওয়ালকটের সম্মানে আয়োজিত আমস্টারডামের এক নৈশভোজে
২০ মে, ২০০৮ তারিখে ওয়ালকটের সম্মানে আয়োজিত আমস্টারডামের এক নৈশভোজে
জন্মডেরেক এলটন ওয়ালকট
(১৯৩০-০১-২৩)২৩ জানুয়ারি ১৯৩০
ক্যাস্ট্রিজ, সেন্ট লুসিয়া
মৃত্যু১৭ মার্চ ২০১৭(2017-03-17) (বয়স ৮৭)
ক্যাপ এস্টেট, গ্রস-আইলেট, সেন্ট লুসিয়া
পেশাকবি, নাট্যকার, অধ্যাপক
জাতীয়তাসেন্ট লুসিয়
ধরনকবিতা, নাটক, অধ্যাপনা
উল্লেখযোগ্য রচনাবলিওমেরজ
উল্লেখযোগ্য পুরস্কারসাহিত্যে নোবেল পুরস্কার
১৯৯২
টি. এস. ইলিয়ট পুরস্কার
২০১১
সন্তানপিটার ওয়ালকট, এলিজাবেথ ওয়ালকট-হ্যাকশ, আন্না ওয়ালকট-হার্ডি

স্বাক্ষর
মরনে ফরচুনে ডেরেক ওয়ালকটের কবর

ওয়ালকট সম্বন্ধে মন্তব্য করতে গিয়ে রবার্ট গ্রেভস লিখেছিলেন যে, "কাছাকাছি ও নিবিড়ভাবে কাব্যকে ইংরেজি ভাষায় বুঝতে কেউ অসমর্থ হলে সমসাময়িককালে একমাত্র তিনিই এর অভ্যন্তরীণ মাহাত্ম্য বুঝতে সক্ষম।"[৩] ২০১১ সালে হুয়াইট ইগ্রেটস কাব্যগ্রন্থের জন্যে টি. এস. ইলিয়ট পুরস্কারে ভূষিত হন তিনি।[৪] বর্তমানে তিনি এসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরূপে কর্মরত আছেন।

প্রারম্ভিক জীবন সম্পাদনা

ডেরেক ওয়ালকট ওয়েস্ট ইন্ডিজ বা পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জের সেন্ট লুসিয়ার ক্যাস্ট্রিজে জন্মগ্রহণ করেন ও সেখানেই শৈশবকাল অতিক্রমণ করেন। বিশিষ্ট নাট্যকার রডেরিক ওয়ালকট নামীয় তার এক যমজ ভাই ও পামেলা ওয়ালকট নাম্নী এক বোন রয়েছে। পরিবারটি শঙ্কর গোত্রীয় এবং নৃ-তাত্ত্বিকভাবে ভিন্ন। তার দুই শ্বেতাঙ্গ দাদা এবং দুই কৃষ্ণাঙ্গ দাদী রয়েছে।[৫] তার পরিবার আফ্রিকা ও ইউরোপীয় বংশোদ্ভূত, যা ঐ দ্বীপপুঞ্জের ঔপনিবেশিক কারণে তৈরী হয়েছে। এ বিষয়ে তিনি তার কবিতায় ফুঁটিয়ে তুলেছেন। মা শিক্ষয়িত্রী ছিলেন, শিল্পকলাকে ভালবাসতেন এবং গৃহমধ্যে প্রায়শঃই কবিতা আবৃত্তি করতেন।[৬] বাবা চিত্রকর ছিলেন ও কবিতা লিখতেন। ৩১ বছর বয়সে যমজের গর্ভধারণের সময় স্ত্রীকে ফেলে রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।[৬] ওয়ালকটের পরিবার সংখ্যালঘু মেথডিস্ট সম্প্রদায়ের অধিবাসী ছিলেন। ক্যাথলিক সংস্কৃতিতে প্রভাববিস্তারকারী ফরাসী ঔপনিবেশিক শাসনামলে সম্প্রদায়ের হওয়ায় বেশ ত্যাগ শিকার করতে হয় তাদেরকে।

কর্মজীবন সম্পাদনা

বৃত্তিধারী হয়ে তিনি জ্যামাইকার কিংস্টন অবস্থিত ওয়েস্ট ইন্ডিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেন।[৭] স্নাতক ডিগ্রী সম্পন্নের পর ১৯৫৩ সালে ওয়ালকট ত্রিনিদাদে ফিরে আসেন। সমালোচক, শিক্ষক এবং সাংবাদিক জীবনে অংশ নেন।[৭] ১৯৫৯ সালে ওয়ালকট ত্রিনিদাদ থিয়েটার ওয়ার্কশপ প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর থেকে অদ্যাবধি প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পরিষদে সক্রিয় রয়েছেন।[৮]

তরুণ বয়সে হ্যারল্ড সিমন্স নামীয় পেশাদার চিত্রশিল্পীর কাছে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন যা তাকে পরবর্তী জীবনে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল। ওয়ালকট ফরাসী চিত্রশিল্পী পল সেজান এবং গিওর্গিওনের শিল্পকর্ম থেকেও চিত্রকলায় ব্যাপকভাবে উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন।[৬]

ওয়ালকট লেখক হবার উদ্দেশ্যে পড়াশোনা করেছেন। তিনি ইংরেজির প্রতি গভীরভাবে আকৃষ্ট উন্মাদ কবি হিসেবে চিত্রিত হয়েছেন। আধুনিককালের কবি হিসেবে টি. এস. ইলিয়ট এবং এজরা পাউন্ডের ন্যায় ব্যক্তিত্বের দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবান্বিত হয়েছেন।[৯]

ক্যারিবিয় দ্বীপপুঞ্জ গঠন ও ঔপনিবেশিক এবং ঔপনিবেশিক পরবর্তীকালের ইতিহাস বিষয়াদি নিয়ে ১৯৬২ সালে প্রকাশিত কাব্য সঙ্কলন 'ইন এ গ্রিন নাইট:পয়েমস ১৯৪৮-১৯৬০'-এ তুলে ধরেন। এরফলে তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সংশ্লিষ্ট সকলের দৃষ্টি ও মনোযোগ আকর্ষণ করেন।[৯] ১৯৭০ সালে 'ড্রিম অন মাঙ্কি মাউন্টেইন' শিরোনামের নাটক রচনা করেন। পরবর্তীতে ঐ বছরই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এনবিসি-টিভিতে প্রদর্শিত হয়। ১৯৭১ সালে বছরের সেরা নাটকরূপে এটি ওবি পুরস্কার জয় করে।[১০]

সম্মাননা সম্পাদনা

১৯৭২ সালে ওয়ালকট তার কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক ওবিই পদবী লাভ করেন।[১১] ১৯৯২ সালে প্রথম ক্যারিবিয় লেখক হিসেবে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভের সৌভাগ্য অর্জন করেন। নোবেল কমিটি পদক প্রদানের সময় ব্যক্ত করে যে, 'তিনি কবিতাকে আলোকোজ্জ্বল, ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণে বিবৃত করেছেন, বহুসংস্কৃতিকে মেলে ধরেছেন।'[১২]

২০০৯ সালে তিন বছর মেয়াদে অ্যালবার্টা বিশ্ববিদ্যালয়ে বৃত্তিধারী হন। ২০১০ সালে এসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়ে কবিতার অধ্যাপক পদে অধিষ্ঠিত হন।[১৩]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Nobel profile
  2. "Derek Walcott", Poetry Foundation
  3. The Great Modern Poets, Google books
  4. "TS Eliot prize goes to Derek Walcott for 'moving and technically flawless' work", Guardian 24 January 2011
  5. Patrick Bixby, "Derek Walcott", essay: Spring 2000, Emory University, accessed 30 March 2012
  6. "Derek Walcott, The Art of Poetry No. 37", The Paris Review Winter 1986
  7. "British Council Profile"। ৪ জানুয়ারি ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ জানুয়ারি ২০১৩ 
  8. "Derek Walcott", Academy of American poets
  9. "Derek Walcott", Poetry Foundation
  10. Obie Award Listing: Dream on Monkey Mountain, InfoPlease
  11. "Oxford University"। ১৭ ডিসেম্বর ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ জানুয়ারি ২০১৩ 
  12. "Nobel Prize in Literature 1992". Nobel Foundation. Retrieved 2008-10-17.
  13. ""Nobel Laureate Derek Walcott is new Professor of Poetry". University of Essex. 11 December 2009. Retrieved 10 January 2010."। ২ মে ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ জানুয়ারি ২০১৩ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা

জীবন-বৃত্তান্ত
নিবন্ধ ও স্বাক্ষাৎকার

টেমপ্লেট:Derek Walcott plays