টেলিটক
টেলিটক বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত এবং একমাত্র দেশীয় মালিকানাধীন মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান। এটি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মালিকানাধীন একটি পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি।[১] বাংলাদেশের হাওরাঞ্চল, সুন্দরবন, বঙ্গোপসাগরের বিভিন্ন দ্বীপ জনপদ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম-এর অনেক দুর্গম জায়গাতে টেলিটকের মোবাইল নেটওয়ার্ক পরিসেবা চালু রয়েছে।[২][৩][৪][৫]। আগস্ট ২০২১ অনুযায়ী, টেলিটক বাংলাদেশের চতুর্থ বৃহৎ মোবাইল ফোন অপারেটর যার গ্রাহক সংখ্যা ৬২ লাখ ।[৬] ২০১৮ সালে টেলিটকে ১০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছিল।[৭]
![]() | |
ধরন | পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি |
---|---|
শিল্প | টেলিযোগাযোগ |
প্রতিষ্ঠাকাল | ২৬ ডিসেম্বর ২০০৪ |
সদরদপ্তর | সড়ক নং - ১৭, গুলশান-১, ঢাকা, বাংলাদেশ |
প্রধান ব্যক্তি | আবু হেনা মোরশেদ জামান চেয়ারম্যান এ কে এম হাবিবুর রহমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক |
পণ্যসমূহ | টেলিযোগাযোগ, ইন্টারনেট,সফটওয়্যার |
মালিক | গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার |
ওয়েবসাইট | teletalk.com.bd (বাণিজ্যিক ওয়েব ঠিকানা) http://www.teletalk.gov.bd/ (দাপ্তরিক ওয়েব ঠিকানা) |
ইতিহাস সম্পাদনা
বাংলাদেশ টেলিফোন ও টেলিগ্রাফ বোর্ডের মোবাইল নেটওয়ার্ক পরিসেবা প্রকল্প হিসেবে টেলিটক প্রথমে “বিটিটিবি বি-মোবাইল” নামে আত্মপ্রকাশ করে। কোম্পানি আইন-১৯৯৪ মোতাবেক ২০০৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর এটি যাত্রা শুরু করে।[৮] [৯] পরবর্তীতে এটি "টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেড" নামে একটি পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে যাত্রা শুরু করে এবং ব্র্যান্ড নাম পরিবর্তন করে “টেলিটক” নামধারণ করে। এটি বাংলাদেশের একটি জিএসএম, জিপিআরএস, ৩জি ও ৪জি ভিত্তিক রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক কোম্পানি। ২০১৬ সালের মার্চ মাসে টেলিটক তার লোগো পরিবর্তন করে নতুন রুপে যাত্রা শুরু করে।[১০]
প্রদেয় সেবাসমূহ সম্পাদনা
টেলিটক বিভিন্ন ধরনের সেবা প্রদান করে। এসএমএস, ভয়েস এসএমএস, এসএমএস পুশ-পুল সার্ভিস, ফোনে কথা বলা, বিল প্রদান, মোবাইল টিভি, ভিডিও কল, সরকারি চাকরির ফি প্রদান, পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল ব্যবস্থাপনা এবং ডাটা সার্ভিস, টেলিটিউন, টেলিচারজ,টেলিশপ, মিসড কল এলার্ট, কল ব্লক প্রভৃতি সেবা প্রদান করে থাকে। ২জি, ৩জি, ৪জি মোবাইল ইন্টারনেট বা চতুর্থ প্রজন্মের ইন্টারনেট (তার বিহীন ব্রডব্যান্ড) সেবা চালু আছে প্রতিষ্ঠানটি। এটি প্রিপেইড, পোস্টপেইড ভিত্তিতে পরিষেবা প্রদান করে থাকে।
স্বাধীন সম্পাদনা
নতুন ব্যবহারকারীদের জন্য একটি সাশ্রয়ী প্যাকেজ। এর ইন্টারনেট, এফএনএফ কলরেট ও এস এম এস চার্জ কম।
স্বাগতম সম্পাদনা
অন্য অপারেটরের নম্বরের সাথে মিল রেখে নতুন সংযোগ নিয়ে অথবা নম্বর অপরিবর্তিত রেখে এমএনপির মাধ্যমে টেলিটকে আগত নতুন ব্যবহারকারীদের জন্য একটি সাশ্রয়ী প্যাকেজ। এর কলরেট, এসএমএস ও ইন্টারনেট চার্জ কম।
বর্ণমালা সম্পাদনা
কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্যে সাশ্রয়ী কলরেট ও ইন্টারনেট প্যাকেজ সমৃদ্ধ বিশেষ বর্ণমালা সিম প্রথম ২০১৫ সালে অমর একুশে বইমেলায় শিক্ষার্থীদের জন্য স্বল্পমূল্যে প্রদান করা হয়। বর্তমানে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ যেকোনো শিক্ষার্থী, নির্ধারিত প্রক্রিয়ায় রেজিষ্ট্রেশন করে বর্ণমালা প্যাকেজের সিম সংগ্রহ করতে পারেন। এই সংযোগের বিশেষত্ব হচ্ছে প্রতি ৩০ টাকা রিচার্জে মূল ব্যালেন্সে ৩০ টাকার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের জন্য উপহার হিসেবে অতিরিক্ত ৩০ মিনিট অননেট টকটাইম, মেসেজ (৩০টি) ও ইন্টারনেট (৬০এমবি) দেওয়া হয় ৩ দিনের মেয়াদে।
অপরাজিতা সম্পাদনা
নারীর ক্ষমতায়নের জন্য টেলিটকের বিশেষ প্যাকেজ "অপরাজিতা" যা শুধু নারী গ্রাহকদের জন্য প্রযোজ্য।২০১৭ সালে এই প্যাকেজ প্রথম চালু করা হয়
ইয়ুথ থ্রিজি সম্পাদনা
টেলিটকের একটি তরুণ গ্রাহক কেন্দ্রিক প্রাথমিক সেবা প্রদানকারী প্যাকেজ।
আগামী সম্পাদনা
এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৫ প্রাপ্তদের জন্য টেলিটকের বিশেষ প্যাকেজ যা টেলিটক বিনামূল্যে প্রদান করে থাকে ৷ কলরেট , এস এম এস চার্জ এবং ইন্টারনেট চার্জ খুবই কম।
মায়ের হাসি সম্পাদনা
প্রাথমিক শিক্ষাস্তরে উপবৃত্তিপ্রাপ্ত ছাত্র-ছাত্রীদের মায়েদের টেলিটক দিচ্ছে ফ্রি সিম যা মায়ের হাসি নামে পরিচিত। উক্ত সিমে সরকারের পক্ষ থেকে মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে উপবৃত্তির টাকা ও টেলিটক এর পক্ষ থেকে বিনামূল্যে টকটাইম দেয়া হয়। এই সিমে রয়েছে সাশ্রয়ী কল রেট এবং ডেটা প্যাকেজ।
শতবর্ষ প্যাকেজ সম্পাদনা
মুজিববর্ষ উপলক্ষে টেলিটক চালু করে টেলিটক শতবর্ষ প্যাকেজ এর সিম। যে কেউ নিকটস্থ দোকান কিংবা গ্রাহক সেবা কেন্দ্র থেকে তার জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে প্রথমবার নির্দিষ্ট রিচার্জের শর্তসাপেক্ষে বিনামূল্যে এই সিমটি সংগ্রহ করতে পারবে। সিমটিতে মুজিববর্ষের উপহার হিসেবে প্রথম মাসে বিনামূল্যে এবং এরপর থেকে অতি স্বল্প মূল্যে টকটাইম ও ইন্টারনেট সুবিধা রয়েছে।
বিনামূল্যে সীমাহীন অনলাইন ক্লাস ইন্টারনেট সম্পাদনা
বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো টেলিটক (আমাদের ফোন) শিক্ষার্থীদের অনলাইন ক্লাসের জন্য বিনামূল্যে ইন্টারনেট সেবা চালু করে। করোনা পরিস্থিতিতে টেলিটক শিক্ষার্থীদের অনলাইন ক্লাস করার জন্য বিডিরেনজুম ফ্রী করে দেয়। যেকোনো প্যাকেজের টেলিটক সিমে শিক্ষার্থীরা ১০০ টাকা রিচার্জ করলে ১০০ টাকা ব্যালেন্স এ থাকে এবং ফ্রী আনলিমিটেড বিডিরেন_জুৃম অনলাইন ক্লাস সেবাটি উপভোগ করতে পারে।[১১][১২]
বাংলাদেশের প্রথম ৫ জি সেবা টেলিটক এ সম্পাদনা
রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিটক গত ১২ ডিসেম্বর ২০২১ পরীক্ষামূলকভাবে দেশে ৫জি চালু করেছে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এবং আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় । টেলিটকের অনুকূলে ৩ দশমিক ৫ গিগাহার্জ ব্যান্ডে (৩৩৪০-৩৪০০ মেগাহার্জ) ৬০ মেগাহার্জ তরঙ্গ শর্ত সাপেক্ষে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। টেলিটক নিজেদের উদ্যোগে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ ৫টি এলাকায় (সাইট) প্রাথমিকভাবে ৫জি সেবা চালু করবে। পরবর্তীকালে একটি ছোট প্রকল্পের আওতায় ঢাকাকেন্দ্রিক ২০০টি সাইটে এই সেবা চালু করা হবে। [১৩]
চাকরির সাইট সম্পাদনা
বাংলাদেশের প্রথম পূর্ণাঙ্গ রাষ্ট্রীয় চাকরি বাতায়ন টেলিটক অল জব পোর্টাল যাতে প্রায় সকল সরকারি চাকরির বিজ্ঞপ্তির খবরের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থাসমূহের চাকরির বিজ্ঞপ্তির তথ্য ও পাওয়া যায় । তাছাড়া এর মাধ্যমে অনলাইনে চাকরির আবেদন, প্রবেশপত্র সংগ্রহ, ফলাফল জানা ইত্যাদি করা যায়।
বাংলাদেশে মেয়াদবিহীন ইন্টারনেট ডাটা চালু সম্পাদনা
বলা হচ্ছে, দেশে প্রথমবারের মত জনসাধারণের জন্য বাংলাদেশের মোবাইল ডেটার মেয়াদের সীমাবদ্ধতা তুলে দিয়েছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন মোবাইল সেবা দেওয়া প্রতিষ্ঠান টেলিটক প্রাথমিকভাবে ২ টি প্যাকে এই সেবা পাওয়া যাচ্ছে । ১২৭ টাকা ৬ জিবি আজীবন মেয়াদ এবং ৩০৯ টাকা তে ২৬ জিবি আজীবন মেয়াদ ।[১৪][১৫][১৬]
গ্রাহক নম্বর সম্পাদনা
টেলিটক গ্রাহকদেরকে নিচের নিয়মে নম্বর প্রদান করে থাকেঃ
- +৮৮০ ১৫ XXXXXXXX
উদাহরণস্বরুপ +৮৮ ০১৫ ০০১২১১২১ হলো টেলিটক এর গ্রাহক সেবা কেন্দ্রের নাম্বার
যেখানে +৮৮০ বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক কোড। ১৫ হল টেলিটকের গ্রাহকদের জন্য সরকারের নির্ধারিত কোড। ৮ ডিজিট XXXXXXXX হল গ্রাহকের নম্বর।
নেটওয়ার্ক বিস্তৃতি সম্পাদনা
টেলিটকের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২ সাল পর্যন্ত দেশের ৪৮% জনসংখ্যাকে ৪জি, ৬০% জনসংখ্যাকে ৩জি এবং ৭৮% জনসংখ্যাকে ২জি কাভারেজের আওতায় আনা হয় এবং [১৭] ২০২৩ সালের নতুন চুক্তি অনুযায়ী টেলিটকের নতুন আরও তিন হাজার বিটিএস বসানোর কাজ করবে হুয়াওয়ে ও জেটটিই।[১৮]
জাতীয় রোমিং কাভারেজ সম্পাদনা
জাতীয় রোমিংয়ের মাধ্যমে বাংলালিংক গ্রাহকরা টেলিটক নেটওয়ার্ক এবং টেলিটক গ্রাহকরা বাংলালিংকের নেটওয়ার্ক ব্যবহার করতে পারেন।[১৯][২০] বর্তমানে সেবাটি পরীক্ষামূলক পর্যায়ে আছে।
আন্তর্জাতিক রোমিং কাভারেজ সম্পাদনা
ভারত, রাশিয়া, কুয়েত, মিশরসহ বিশ্বের ২২টি দেশ টেলিটকের আন্তর্জাতিক রোমিং কাভারেজ আওতাধীন।
আরও দেখুন সম্পাদনা
তথ্যসূত্র সম্পাদনা
- ↑ "কর্পোরেট তথ্য - টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেড"। teletalk.gov.bd।
- ↑ "দুর্গম এলাকায় এ বছরই টেলিটকের উচ্চগতির ইন্টারনেট"। bangla.bdnews24.com।
- ↑ "হাওর -বাওর দুর্গম এলাকায় বসছে টেলিটকের ৪শ বিটিএস"। lastnewsbd.com। ২৭ জানুয়ারি ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ "সুন্দরবনে যাচ্ছে টেলিটক"। risingbd.com।
- ↑ "'চলতি মাসেই হাওরে কানেক্টিভিটি দেবে টেলিটক'"। dhakapost.com।
- ↑ "Mobile Phone Subscribers in Bangladesh May, 2021 | BTRC"। www.btrc.gov.bd। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১০-০৮।
- ↑ "সেই টেলিটক এখন সরকারের বোঝা"। প্রথম আলো। ১০ জানুয়ারি ২০২৩। সংগ্রহের তারিখ ১০ জানুয়ারি ২০২৩।
- ↑ "কর্পোরেট তথ্য (টেলিটক বাংলাদেশ লি:)"। teletalk.portal.gov.bd/।
- ↑ "Teletalk Bangladesh Ltd - আমাদের কথা"। www.teletalk.com.bd। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১০-০৮।
- ↑ "লোগো ও ওয়েবে নতুন টেলিটক"। techshohor.com/।
- ↑ প্রতিবেদক, নিজস্ব। "বিনা মূল্যে অনলাইন ক্লাসের সুবিধা টেলিটকে"। www.prothomalo.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১০-০৮।
- ↑ "টাকায় নয়, শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে টেলিটকের ইন্টারনেট"। banglanews24.com। ২০২০-০৯-০৪। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১০-০৮।
- ↑ "ডিসেম্বরে চালু হচ্ছে ৫জি সেবা: মোস্তাফা জব্বার"।
- ↑ "প্রথমবারের মতো মোবাইল ডেটার মেয়াদ আনলিমিটেড"।
- ↑ "টেলিটকে ডাটার মেয়াদের সীমাবদ্ধতা থাকছে না"।
- ↑ "ডেটার মেয়াদ 'ফুরাবে' না, কমলো প্যাকেজ সংখ্যাও"।
- ↑ "বার্ষিক প্রতিবেদন"। teletalk.com.bd।
- ↑ "টেলিটকের নতুন তিন হাজার বিটিএস বসাচ্ছে হুয়াওয়ে ও জেটটিই"। ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩।
- ↑ "বাংলালিংকের নেটওয়ার্ক মিলবে টেলিটক সিমে"। নিউজ ২৪ টেলিভিশন।
- ↑ "বাংলালিংকের নেটওয়ার্ক মিলবে টেলিটক সিমে"। টেকশহর।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]