মুজিববর্ষ

শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী পালনের উপলক্ষ্যে ঘোষিত বর্ষ

মুজিববর্ষ হলো বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী পালনের জন্য ঘোষিত বর্ষ। বাংলাদেশ সরকার ২০২০-২১ সালকে (১৭ই মার্চ ২০২০ থেকে ৩১ মার্চ ২০২১ পর্যন্ত) মুজিববর্ষ হিসেবে পালনের ঘোষণা দেয়।[১][২] বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অবিভক্ত ভারতের পূর্ববঙ্গের ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার (বর্তমানে গোপালগঞ্জ জেলা) টুঙ্গিপাড়া গ্রামে (বর্তমানে উপজেলা) ১৯২০ সালের ১৭ই মার্চ জন্মগ্রহণ করেন এবং ২০২০ সালের ১৭ই মার্চ তাঁর জন্মের ১০০ বছর পূর্তি হয়। তাই তাঁর এই জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের জন্যই 'মুজিববর্ষ' পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এছাড়াও ২০২১ সালের ২৬শে মার্চ বাংলাদেশ স্বাধীনতার অর্ধ-শত বার্ষিকীতে পদার্পণ করে। তাই ২০২০ ও ২০২১ সাল দুটি বাঙালির জাতীয় জীবনের দুটি ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী হয়ে থাকছে।

মুজিববর্ষ
মুজিববর্ষের লোগো
আনুষ্ঠানিক নামমুজিববর্ষ
পালনকারী বাংলাদেশ
ধরনজাতীয়
তাৎপর্যবঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী পালন
শুরু১৭ মার্চ ২০২০
সমাপ্তি৩১ মার্চ ২০২২
সংঘটন২০২০-২০২২
সম্পর্কিতবঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান

ঘোষণা ও প্রস্তুতি সম্পাদনা

২০১৮ সালের ৬ জুলাই আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে উপদেষ্টা পরিষদ ও কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের যৌথ সভার শুরুতে প্রধানমন্ত্রী  শেখ হাসিনা ২০২০-২১ সালকে 'মুজিববর্ষ' হিসেবে পালনের ঘোষণা দেন। প্রথম ঘোষণা অনুযায়ী, 'মুজিববর্ষ' ২০২০ সালের ১৭ই মার্চে শুরু হয়ে ২০২১ সালের ২৬ই মার্চ পর্যন্ত পালন করার পরিকল্পনা ছিল। তবে পরবর্তীতে এর সময় ২০২১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়। পরে সরকার পুনরায় মুজিব বর্ষের সময়কাল ও ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদ্‌যাপন জাতীয় কমিটি’ ও ‘জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি’র মেয়াদ ২০২২ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত বর্ধিত করে।[৩]

মুজিববর্ষের লোগো উন্মোচন ও আনুষ্ঠানিক সময় গণনা শুরু হয় ২০২০ সালের ১০ই জানুয়ারি, 'বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে'। মুজিববর্ষের লোগোর নকশা করেন সব্যসাচী হাজরা।

মুজিববর্ষের আবহ সঙ্গীত

"তুমি বাংলার ধ্রুবতারা, তুমি হৃদয়ের বাতিঘর আকাশে-বাতাসে বজ্রকন্ঠ, তোমার কন্ঠস্বর।"

কর্মসূচি সম্পাদনা

 
'মুজিববর্ষ' উপলক্ষ্যে বিমান বাহিনীর বিশেষ কুচকাওয়াজ

মুজিববর্ষ পালনের অংশ হিসেবে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে শেখ মুজিবুর রহমানের ভূমিকা তৃণমূল পর্যায়ে প্রচারের পাশাপাশি প্রতি বছরের মতই তার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস, আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী, জাতীয় শোক দিবস এবং জেল হত্যা দিবসও পালিত হয়। এছাড়াও বাংলাদেশ সরকার জন্মশতবার্ষিকী ও মুজিববর্ষ উদ্‌যাপন উপলক্ষ্যে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ও প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করে।[৪][৫]

 
'মুজিববর্ষ' উপলক্ষ্যে বিমান বাহিনীর বিশেষ কুচকাওয়াজ

মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে ১লা মার্চকে 'জাতীয় বিমা দিবস' হিসেবে ঘোষণা করা হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রাজনীতির বাইরে আলফা ইন্সুরেন্স কোম্পানিতে তাঁর প্রথম কর্ম জীবন শুরু করেছিলেন। মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের ভূমিহীন ও গৃহহীনদের বিনামূল্যে ঘর প্রদানের জন্য বিশেষ গৃহায়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করেন।

এছাড়া শেখ মুজিবের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ২০২১ সালের মার্চ মাসে আ. ফ. ম. বাহাউদ্দিন নাছিম, ন্যাশনাল এগ্রিকেয়ার ইম্পোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট লিমিটেডের কে এস এম মোস্তাফিজুর রহমান বগুড়া জেলার শেরপুরে ১০০ বিঘা বা ১,১৯,৪৩০.২৭৩ বর্গমিটার (১২,৮৫,৫৩৬.৭৬ ফু) আকৃতির জমিতে “শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধু” নামে একটি ম্যুরাল তৈরি করেন। ২০২১ সালের ১৬ই মার্চ গিনেস বিশ্ব রেকর্ড ম্যুরালটিকে 'বিশ্বের বৃহত্তম শস্যচিত্র' হিসেবে স্বীকৃতি দেয়, যে রেকর্ডটি পূর্বে ছিল চীনের[৬][৭]

বৈশ্বিক উদ্‌যাপন সম্পাদনা

 
মুজিববর্ষ উপলক্ষে ভারতীয় ডাক বিভাগ কর্তৃক প্রকাশিত ডাকটিকিট।

জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক অঙ্গসংগঠন ইউনেস্কোর ৪০তম সাধারণ অধিবেশনে বাংলাদেশের সাথে যৌথভাবে মুজিববর্ষ পালনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।[৮][৯] ২০১৯ সালের ১২-২৭ নভেম্বরে প্যারিসে অনুষ্ঠিত অধিবেশনে ২৫ নভেম্বরে ইউনেস্কোর সকল সদস্যের উপস্থিতিতে এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

সময় বৃদ্ধি সম্পাদনা

 
মুজিব শতবর্ষকে ঘিরে স্মারকসূচক পেপারওয়েট

করোনাভাইরাসের কারণে গ্রহণ করা কর্মসূচিগুলো নির্ধারিত সময়ে যথাযথভাবে করতে না পারায় মুজিববর্ষের মেয়াদ প্রায় ৯ মাস বাড়ানো হয়। এ সময়কাল ২০২১ সালের ২৬ মার্চ থেকে বাড়িয়ে ২০২১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়।[১০][১১][১২][১৩] ১৪ই ডিসেম্বর, ২০২০ তারিখে এক প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে এ তথ্য দেয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।[১৪] পরে প্রজ্ঞাপনটি গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়। এতে বলা হয়, "স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদ্‌যাপনের লক্ষ্যে সরকার ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ২৬ মার্চ সময়কে মুজিববর্ষ হিসেবে ঘোষণা করে। কিন্তু মুজিববর্ষ উদ্‌যাপনের লক্ষ্যে গৃহীত কর্মসূচিগুলো কোভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারির কারণে নির্ধারিত সময়ে যথযাথভাবে করা সম্ভব হয়নি। সে কারণে মুজিববর্ষের সময়কাল ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত বর্ধিত ঘোষণা করা হল।" উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ৮ই মার্চ দেশে করোনা মহামারি দেখা দিলে ভাইরাসটির সংক্রমণ রোধে গত ২৬ মার্চ থেকে ৩০ মে পর্যন্ত টানা ৬৬ দিন দেশে সাধারণ ছুটি পালিত হয়। যে কারণে এই সময়ের মধ্যে মুজিববর্ষের জন্য গৃহীত নানা কর্মসূচি পালন করা যায়নি।[১৫] ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর বাংলাদেশ সরকার এবং জন্মশতবার্ষিকী উদ্‌যাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি জনস্বার্থে ও জনকল্যাণে ১৭ মার্চের পূর্ব ঘোষিত অনুষ্ঠান ছোট পরিসরে করার ঘোষণা দেয়।[১৬] একইসাথে আমন্ত্রিত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের সফরও বাতিল করা হয়।[১৭]

মুজিববর্ষের আয়োজন সম্পাদনা

করোনা মহামারির কারণে সঠিক সময়ে অর্থাৎ ২০২০ সালের ১৭ই মার্চ হতে ২০২১ সাল পর্যন্ত মুজিববর্ষ উদযাপনের কোনো আয়োজন সুসম্পন্ন করা না গেলেও, ২০২১ সালের মার্চ মাস থেকে শুরু করে এ উপলক্ষ্যে বছরব্যাপী নানা আয়োজনের পরিকল্পনা করা হয়। মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে করা এই আয়োজনগুলোর মাঝে উল্লেখযোগ্য হলো:-

  • 'মুজিব চিরন্তন' নামে ১০ দিন ব্যাপী জাতীয় অনুষ্ঠান মালা আয়োজন
  • মুজিববর্ষের বিশেষ ওয়েবসাইট চালু
  • মুজিববর্ষের স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ
  • ১০০ দিনব্যাপী কুইজ প্রতিযোগিতা আয়োজন
  • রাষ্ট্রায়ত্ব মোবাইল অপারেটর টেলিটকের শতবর্ষ নামে বিশেষ মোবাইল প্যাকেজ সংযোগ বিনামূল্যে প্রদান
  • রাষ্ট্রায়ত্ব মোবাইল অপারেটর টেলিটকের বিশেষ ইন্টারনেট প্যাকেজ প্যাকেজ নামমাত্র মুল্যে প্রদান
  • মুজিববর্ষে দেশীয় যোগাযোগ অ্যাপ আলাপ চালু

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "২০২০-২১ সালকে মুজিববর্ষ ঘোষণা"somoynews.tv 
  2. "২০২০-২১ সাল হবে মুজিববর্ষ : প্রধানমন্ত্রী"যুগান্তর। ৭ জুলাই ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ১৫ জানুয়ারি ২০২০ 
  3. "মুজিব বর্ষের সময়কাল ৩১ মার্চ পর্যন্ত বাড়ল"প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ১ ফেব্রুয়ারি ২০২২ 
  4. তথ্য মন্ত্রণালয়
  5. তথ্য কমিশন
  6. "Largest crop field mosaic (image)"গিনেস বিশ্ব রেকর্ড। সংগ্রহের তারিখ ১৬ মার্চ ২০২১ 
  7. "গিনেস বুকে 'শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধু'"। ইত্তেফাক। ১৬ মার্চ ২০২১। ১৭ মার্চ ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ মার্চ ২০২১ 
  8. "Proposals by Member States for the celebration of birthdays in 2020-2021 with which UNESCO could be associated"unesdoc.unesco.org (ইংরেজি ভাষায়)। ইউনেস্কো ডিজিটাল গ্রন্থাগার। পৃষ্ঠা ৩। 
  9. "বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথভাবে 'মুজিববর্ষ' উদ্‌যাপন করবে ইউনেস্কো"ঢাকা ট্রিবিউন। ২৭ নভেম্বর ২০১৯। ২৯ অক্টোবর ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ জানুয়ারি ২০২০ 
  10. "মুজিববর্ষের সময় বাড়ল"প্রথম আলো। ১৬ ডিসেম্বর ২০২০স। 
  11. "সময় বাড়লো মুজিববর্ষের"ঢাকা ট্রিবিউন। ১৬ ডিসেম্বর ২০২০। ১৬ ডিসেম্বর ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ ডিসেম্বর ২০২০ 
  12. "মুজিববর্ষে যত আয়োজন"বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। ১০ জানুয়ারী ২০২০। ১১ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ জানুয়ারী ২০২০ 
  13. "মুজিববর্ষে বছরব্যাপী আয়োজনে যা থাকছে"বণিক বার্তা অনলাইন। ১০ জানুয়ারী ২০২০। সংগ্রহের তারিখ ১২ জানুয়ারী ২০২০ 
  14. "নম্বর: ০৪.০০.০০০০.৫১২.২৩.০০৮.২০.৬০১।--সরকার মুজিববর্ষের সময়কাল ১৭ই মার্চ ২০২০ থেকে ১৬ই ডিসেম্বর ২০২১ পর্যন্ত বর্ধিত ঘোষণা করল" (পিডিএফ)সরকারি গেজেট। ১৪ ডিসেম্বর ২০২০। সংগ্রহের তারিখ ১৬ ডিসেম্বর ২০২০ 
  15. "সময় বাড়লো মুজিববর্ষের"ঢাকা ট্রিবিউন। ১৫ ডিসেম্বর ২০২০। ১৬ ডিসেম্বর ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ ডিসেম্বর ২০২০ 
  16. "১৭ মার্চ মুজিববর্ষের মূল অনুষ্ঠান হচ্ছে না, অনুষ্ঠানে কাটছাঁট"প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ১২ মার্চ ২০২০ 
  17. "আসছেন না বিদেশিরা"ইনকিলাব। সংগ্রহের তারিখ ১২ মার্চ ২০২০ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা