টাইপ-২ সুপারনোভা
টাইপ-২ সুপারনোভা হলো এক ধরনের সুপারনোভা যা একটি বিশাল নক্ষত্রের দ্রুত পতন এবং প্রবল বিস্ফোরণের ফলাফল। এই ধরনের বিস্ফোরণ ঘটাতে একটি নক্ষত্রের ভর কমপক্ষে সূর্যের ভরের আট গুণ হতে হবে যদিও তা ৪০ থেকে ৫০ গুণের বেশি হতে পারবে না।[১] টাইপ-২ সুপারনোভা তাদের বর্ণালীতে উপস্থিত হাইড্রোজেনের কারণে অন্যান্য সুপারনোভা থেকে ভিন্ন। এগুলি সাধারণত ছায়াপথের সর্পিল বাহুতে এবং H II অঞ্চলে দেখা যায়, যদিও উপবৃত্তাকার ছায়াপথে এদের দেখা মিলে না; এগুলি সাধারণত পুরোনো এবং কম ভর সম্পন্ন নক্ষত্র কর্তৃক সংঘটিত হয়, যেখানে সুপারনোভার জন্য প্রয়োজন বিশাল কিন্তু অল্প বয়স্ক নক্ষত্র।

নক্ষত্রগুলি তাদের উপাদানের কেন্দ্রীণ সংযোজনের মাধ্যমে শক্তি উৎপাদন করে।সূর্যের বিপরীতে, বড় বড় নক্ষত্রগুলি হাইড্রোজেন এবং হিলিয়ামের চেয়েও বেশি পারমাণবিক ভর বিশিষ্ট উপাদানগুলিকে সংযোজিত করতে প্রয়োজনীয় ভর সম্পন্ন হয়, তথাপি ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা এবং চাপে নাক্ষত্রিক জীবনকাল ক্রমে সংক্ষিপ্ততর হয়। ইলেক্ট্রন অবক্ষয় চাপ এবং কেন্দ্রীণ সংযোজন প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন শক্তি, মহাকর্ষ বল মোকাবেলা করে, তারকীয় ভারসাম্য বজায় রেখে একটি নক্ষত্রকে পতিত হওয়া থেকে রক্ষা করে। নক্ষত্রগুলি হাইড্রোজেন এবং হিলিয়াম থেকে শুরু করে ক্রমে আরো উচ্চ ভর বিশিষ্ট মৌল সংযোজিত করে এবং পর্যায় সারণির মধ্য দিয়ে অগ্রসর হয় যতক্ষণ না লোহা এবং নিকেলের একটি কেন্দ্র উৎপন্ন হয়। লোহা বা নিকেলের ফিউশন কোনো নেট শক্তি উৎপাদন করে না। ফলে, নিকেল–লোহার তৈরী কেন্দ্রটি নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়। শক্তি উৎপাদিত না হওয়ায় বহির্মুখী তাপমাতৃক চাপ তৈরি হয় না। ফলে, নক্ষত্রটি, ইলেক্ট্রন অবক্ষয় চাপ দ্বারা এর উপরিতলের ওজন সমর্থিত না হওয়া পর্যন্ত মহাকর্ষের কারণে সঙ্কুচিত হতে থাকে।
নিষ্ক্রিয় কেন্দ্রের সন্নিবিষ্ট ভর যখন চন্দ্রশেখর সীমা, প্রায় ১.৪ সৌর ভর ছাড়িয়ে যায় তখন ইলেকট্রন অবক্ষয় চাপ আর মহাকর্ষীয় সংকোচনের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে না। ফলে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই একটি ভয়াবহ অন্তর্বিস্ফোরণ ঘটে। সদ্য-অন্তর্বিস্ফোরিত অন্ত কেন্দ্রের সমর্থন বিহীন বহি কেন্দ্রটি মহাকর্ষের প্রভাবে আলোর বেগের ২৩% বেগ প্রাপ্ত হয়ে ভেতরের দিকে ধসে যায়। এমন আকস্মিক সংকোচনের ফলে অন্ত কেন্দ্রের তাপমাত্রা ১০০ বিলিয়ন কেলভিন পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। নিউট্রন এবং নিউট্রিনোগুলি বিপরীত বিটা-ক্ষয়ের মাধ্যমে গঠিত হয় যা দশ সেকেন্ডের একটি বিস্ফোরণে প্রায় জুল (১০০ ফো(একক)) শক্তি নির্গত করে। উপরন্তু, অন্ত কেন্দ্রের পতন নিউট্রন অবক্ষয়ের কারণে বন্ধ হয়ে যায়, ফলে অন্তর্বিস্ফোরণটি প্রতিক্ষীপ্ত হয় এবং বহির্মুখী বাউন্সে পরিণত হয়। এই বিস্তৃত শক ওয়েভের শক্তি নাক্ষত্রের উপরিতলের উপাদানগুলিকে বিপর্যস্ত করে এবং মুক্তিবেগের দিকে ত্বরান্বিত করে একটি সুপারনোভা বিস্ফোরণ তৈরির পক্ষে যথেষ্ট। শক ওয়েভ এবং উচ্চ তাপ ও চাপ দ্রুত ক্ষয় হয় যদিও তা এমন দীর্ঘ সময় পর্যন্ত উপস্থিত থাকে যাতে লোহার চেয়ে ভারী উপাদানগুলির সংশ্লেষ ঘটতে পারে।[২] তারার প্রাথমিক আকারের উপর নির্ভর করে, কেন্দ্রের ধ্বংসাবশেষ নিউট্রন তারা বা কৃষ্ণগহ্বর তৈরি করে। অন্তর্নিহিত প্রক্রিয়াটির কারণে, উৎপন্ন সুপারনোভাটি একটি কেন্দ্র-পতন সুপারনোভা হিসাবেও বর্ণীত হয়।
আলোক বক্ররেখা অর্থাৎ ঔজ্জ্বল্য বনাম সময়ের লেখের উপর ভিত্তি করে টাইপ-২ সুপারনোভাকে বিভিন্ন শ্রেণিতে বিভক্ত করা হয়। টাইপ ২-এল সুপারনোভা বিস্ফোরণে আলোক বক্ররেখার সুস্থিত(রৈখিক) পতন দেখা যায় যেখানে টাইপ ২-পি সুপারনোভায় আলোক বক্ররেখায় সাধারণের তুলনায় একটি ধীর পতন(একটি অধিত্যকা) দেখা যায়। টাইপ ১বি ও ১সি সুপারনোভা হলো একটি বিশাল তারার কেন্দ্র-পতন সুপারনোভা যা তার হাইড্রোজেন এবং (টাইপ ১সি এর জন্য) হিলিয়ামের বহীরাবরণটি বিকীর্ণ করে ফেলেছে। ফলস্বরূপ, তাদের মধ্যে এই উপাদানগুলির অনুপস্থিতি দেখা যায়।
সৃজন
সম্পাদনাসূর্যের চেয়ে অনেক বড় বড় নক্ষত্র আরও জটিল ভাবে বিবর্তীত হয়। নক্ষত্রের কেন্দ্রে হাইড্রোজেনের সংযোজনে হিলিয়াম উৎপন্ন হওয়ার সময় তাপীয় শক্তি নির্গত হয় যা সূর্যের মত অন্যান্য নক্ষত্রের কেন্দ্রকে উত্তপ্ত করে এবং বহির্মুখী চাপ সরবরাহ করে যা নক্ষত্রের স্তরগুলিকে নাক্ষত্রিক বা ঔদস্থিতিক ভারসাম্য নামক প্রক্রিয়ায় পতনের বিরুদ্ধে সমর্থন করে। এই পর্যায়ে হিলিয়াম সংযোজনের জন্য পর্যাপ্ত তাপ না থাকায় কেন্দ্রে উৎপন্ন হিলিয়াম সেখানেই জমে। অবশেষে যখন কেন্দ্রের হাইড্রোজেন নিঃশেষ হয়ে যায় তখন ফিউশনটি ধীর হতে শুরু করে এবং মহাকর্ষের প্রভাবে কেন্দ্রটি সঙ্কুচিত হতে থাকে। এই সংকোচনের ফলে পর্যাপ্ত পরিমাণে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় যা হিলিয়াম সংযোজনের সংক্ষিপ্ত পর্যায়টি শুরু করতে যথেষ্ট যা নক্ষত্রের জীবনকালের ১০% এরও কম সময় ধরে চলে। আট সৌর ভরের কম ভর যুক্ত নক্ষত্রে হিলিয়াম সংযোজনের মাধ্যমে উৎপন্ন কার্বন আর সংযোজীত হয় না এবং তারাটি ধীরে ধীরে শীতল হয়ে একটি শ্বেত বামনে পরিণত হয়।[৩][৪] যদি শ্বেত বামনের কাছাকাছি একটি সহচর থাকে তবে তারা টাইপ ১এ সুপারনোভায় পরিণত হতে পারে।
যদিও এর থেকে বড় নক্ষত্র হিলিয়াম সংযোজনের শেষে যখন সঙ্কুচিত হয় তখন কার্বন সংযোজনের জন্য প্রয়োজনীয় তাপ এবং চাপ তৈরি করতে পারে। এমন বৃহৎ নক্ষত্রের কেন্দ্র পেঁয়াজের মতো স্তরীভূত হয়ে যায় যেখানে ক্রমান্বয়ে ভারী পারমাণবিক নিউক্লিয়াস কেন্দ্রটি গড়ে তোলে। এখানে হাইড্রোজেন গ্যাসের একটি বহি স্তর হাইড্রোজেনের আরো একটি স্তরকে ঘিরে থাকে যেখানে হাইড্রোজেন সংযোজনের মাধ্যমে হিলিয়াম উৎপন্ন হয় যা আবার হিলিয়ামের একটি স্তরকে ঘিরে থাকে যেখানে হিলিয়ামের সংযোজনে ত্রি-আলফা প্রক্রিয়ায় কর্বন উৎপন্ন হয়। এই স্তরটি আবার ক্রমান্বয়ে অন্যান্য স্তরগুলিকে ঘিরে থাকে যেখানে আরো ভারী উপাদানের সংযোজন ঘটে। একটি নক্ষত্র যখন এই বিশাল বিবর্তীত পর্যায়ে পৌছায় তখন পুনরায় এর কেন্দ্রের ফিউশন বন্ধ হয়ে যায়, এবং চাপ এবং তাপমাত্রা সংশ্লেষণের পরবর্তী পর্যায়ে পৌছে পুনরায় পতন না থামানো পর্যন্ত কেন্দ্রটির পতন ঘটতে থাকে।
একটি ২৫ সৌর ভর সম্পন্ন নক্ষত্রের কেন্দ্র-দহন কেন্দ্রীণ সংযোজনের ধাপ সমূহ প্রক্রিয়া প্রধান জ্বালানি প্রধান উৎপাদ ২৫ সৌর ভর সম্পন্ন নক্ষত্র[৫] তাপমাত্রা
(কে)ঘনত্ব
(g/cm3)স্থিতিকাল হাইড্রোজেনের দহন হাইড্রোজেন হিলিয়াম ৭×১০৭ 10 ১০৭ বছর ত্রি-আলফা প্রক্রিয়া হিলিয়াম কার্বন, অক্সিজেন {{val}} টেমপ্লেটে ত্রুটি: Val প্যারামিটার "2e=8" সমর্থিত নয় 2000 ১০৬ বছর কার্বন দহন প্রক্রিয়া কার্বন Ne, Na, Mg, Al ৮×১০৮ ১০৬ 1000 বছর কার্বন দহন প্রক্রিয়া নিয়ন O, Mg ১.৬×১০৯ ১০৭ 3 বছর অক্সিজেন দহন প্রক্রিয়া অক্সিজেন Si, S, Ar, Ca ১.৮×১০৯ ১০৭ 0.3 বছর সিলিকন দহন প্রক্রিয়া সিলিকন নিকেল (লোহায় পরিনত হয়) ২.৫×১০৯ ১০৮ 5 দিন
আরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ Gilmore, Gerry (২০০৪)। "The Short Spectacular Life of a Superstar"। Science। 304 (5697): 1915–1916। ডিওআই:10.1126/science.1100370। পিএমআইডি 15218132।
- ↑ "Introduction to Supernova Remnants"। NASA Goddard/SAO। ২০০৬-০৯-০৭। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৫-০১।
- ↑ Richmond, Michael। "Late stages of evolution for low-mass stars"। Rochester Institute of Technology। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-০৮-০৪।
- ↑ Hinshaw, Gary (২০০৬-০৮-২৩)। "The Life and Death of Stars"। NASA Wilkinson Microwave Anisotropy Probe (WMAP) Mission। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-০৯-০১।
- ↑ Woosley, S.; Janka, H.-T. (ডিসেম্বর ২০০৫)। "The Physics of Core-Collapse Supernovae"। Nature Physics। 1 (3): 147–154। arXiv:astro-ph/0601261 । ডিওআই:10.1038/nphys172। বিবকোড:2005NatPh...1..147W।
এই নিবন্ধটি অসম্পূর্ণ। আপনি চাইলে এটিকে সম্প্রসারিত করে উইকিপিডিয়াকে সাহায্য করতে পারেন। |