জুলে রিমে
জুলে রিমে (১৪ অক্টোবর ১৮৭৩ – ১৬ অক্টোবর ১৯৫৬) ফ্রান্স ফুটবলের প্রশাসক ছিলেন। এছাড়াও, তিনি বিশ্ব ফুটবল সংস্থা ফিফা'র সভাপতি পদে আসীন থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
জুলে রিমে | |
---|---|
![]() জুলে রিমে (১৯৫৪) | |
৩য় ফিফা সভাপতি | |
কাজের মেয়াদ ১৯২১ – ১৯৫৪ | |
পূর্বসূরী | ড্যানিয়েল বার্লি উলফল |
উত্তরসূরী | রোডোল্ফ উইলিয়াম সীলড্রয়ার্স |
ফ্রেঞ্চ ফুটবল ফেডারেশনের (এফএফএফ) সভাপতি | |
কাজের মেয়াদ ১৯১৯ – ১৯৪২ | |
উত্তরসূরী | হেনরী জেভেইন |
ব্যক্তিগত বিবরণ | |
জন্ম | থিউলে, ফ্রান্সি-কমটি, ফ্রান্স | ১৪ অক্টোবর ১৮৭৩
মৃত্যু | ১৬ অক্টোবর ১৯৫৬ লাউজানা, সুইজারল্যান্ড | (বয়স ৮৩)
জাতীয়তা | ফ্রেঞ্চ |
জীবিকা | ফুটবল প্রশাসক |
শিক্ষাজীবনসম্পাদনা
জুলে রিমে ফ্রান্সের থিউলে এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ছিলেন একজন খুচরো মুদী দোকানদার। বিদ্যালয়ের পড়াশোনা শেষ করে প্যারিসে আইন বিষয়ে অধ্যয়ন করেন। এসময়েই খেলার মাঠে প্রবেশ না করেও ফুটবল পছন্দ করতেন। পাশাপাশি দৌড়বিদদেরকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করতেন তিনি।
ফুটবল সংগঠনসম্পাদনা
মার্চ, ১৮৯৭ সালে কোচিংয়ের দায়িত্ব পালন করেন। বন্ধুদেরকে সাথে নিয়ে ফ্রান্সের অন্যতম প্রাচীনতম ফুটবল দল যা এখনও চালু রয়েছে - রেড স্টার সেন্ট-ওয়েন প্রতিষ্ঠাতা করেন জুলে রিমে। ১৯১০ সালে প্রথমবারের মতো ফরাসী লীগ চালু করেন। এর নয় বছর পর ফরাসী ফুটবল সংস্থার সভাপতি হিসেবে ১৯১৯ থেকে ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত দায়িত্বে ছিলেন তিনি।
ফিফা সভাপতিসম্পাদনা
আইনজীবী ও ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে ফিফা সভাপতিদের মধ্যে অন্যতম সফল ব্যক্তিত্ব ছিলেন তিনি। ফ্রান্স জাতীয় ফুটবল দলের পক্ষ থেকে ফিফায় প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ফিফা'র ৩য় সভাপতি হিসেবে ১৯২১ থেকে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। এখানেই তার নেতৃত্বের বহিঃপ্রকাশ ঘটে এবং ফুটবলের প্রতি গভীর অনুরাগ ও ভালবাসার জন্ম নেয়। এরফলেই ফিফা বিশ্বফুটবল অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এবং ফিফাও পরবর্তীকালে তার অবদানের কথা স্বীকার করেছিল। এ পর্যন্ত ৮জন ফিফা সভাপতির মধ্যে তিনিই দীর্ঘ ৩৩ বছর যাবৎ সভাপতি ছিলেন। জুলে রিমে বিভিন্ন দেশের ফুটবল সংস্থাগুলোর কাছ থেকে ব্যাপক সমর্থন পান এবং জাতীয় দলগুলোর মধ্যেকার ফুটবল খেলা আয়োজনের ব্যবস্থা করতে থাকেন। তার ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা ও চিন্তা-ভাবনার ফসল হিসেবে ১৯৩০ সালের ফিফা বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতার সূচনা ঘটে।
১৯২০-এর দশকে গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে ফুটবলের অন্তর্ভুক্তিতে বেশ সচেষ্ট ছিলেন তিনি। কিন্তু বেশ কিছু দেশের অনাগ্রহ ও প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করে জুলে রিমে বিশ্বকাপ ফুটবল আয়োজনের চিন্তাধারা করেন, যা ছিল তার অন্যতম স্বপ্ন বাস্তবায়নের প্রতিফলন।
বিশ্বকাপ ফুটবলসম্পাদনা
বিভিন্ন দেশের ফুটবল সংস্থার সাথে বিশ্বকাপ ফুটবল প্রতিযোগিতা আয়োজন ও আর্থিক বিষয়াদি নিয়ে প্রচণ্ড পরিশ্রম করেন তিনি। এরই প্রেক্ষাপটে পরিশ্রমলব্ধ ফসল হিসেবে ১৯২৮ সালে ফিফা প্রতিষ্ঠা করেন জুলে রিমে। অতঃপর ১৯৩০ সালে উরুগুয়েতে ১ম বারের মতো ফিফা বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতা আয়োজনের ব্যবস্থা করেন তিনি। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, অলিম্পিকের ফুটবল প্রতিযোগিতায় ১৯২৪ ও ১৯২৮ সালের বিজয়ী উরুগুয়ে দলটিই ১ম বিশ্বকাপ জয় করেছিল।
প্রথম বিশ্বকাপ সফলভাবে সমাপণ হয়। তারপরেও জুলে রিমে বিভিন্ন দেশের জাতীয় ফুটবল সংস্থাগুলোর সাথে পরবর্তী বিশ্বকাপ ফুটবল প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্যে তার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখেন। এরফলে ১৯৩৪ সালে ইতালি ও ১৯৩৮ সালে ফ্রান্সে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতায় বৈশ্বিক পর্যায়ে সাড়া পান। কিন্তু ২য় বিশ্বযুদ্ধের ফলে প্রতিযোগিতাটি স্থগিত হয়ে পড়ে ও পূর্ব নির্ধারিত চার বছর অন্তর প্রতিযোগিতা আয়োজনে বিঘ্ন ঘটায়।
বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তীসম্পাদনা
১৯৪৬ সালে লুক্সেমবার্গে ফিফা কংগ্রেসে বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতাকে তার নামে নামকরণ করা হয়, যা ১৯৭০ সাল পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। কংগ্রেসে আরো সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যে প্রথম কোন দল যদি তিনবার কাপ জয়ী হয় তাহলে তারা চীরতরে নিজ দেশে নিয়ে যেতে পারবে। উল্লেখ্য, ১৯৭০ সালে বিশ্বকাপ জয় করার মাধ্যমে ব্রাজিল জাতীয় ফুটবল দল কাপটি চিরতরে নিয়ে যায়।
২য় বিশ্বযুদ্ধের ফলে সমগ্র বিশ্ব পুনরায় নিজেদের ক্ষয়-ক্ষতি পুষিয়ে নেবার প্রাণান্তকর চেষ্টা করায় ব্যস্ত ছিল। জুলে রিমেও স্থগিত হয়ে পড়া বিশ্বকাপ ফুটবল প্রতিযোগিতায় দেশগুলোর সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছিলেন। সদস্যভূক্ত দেশগুলোকে বুঝানোর চেষ্টা করছিলেন যে, রাজনৈতিক দূরত্ব থাকলেও খেলাধূলার সাথে রাজনীতিকে জড়ানো উচিত নয়। অন্যান্য দেশের প্রবল আপত্তি থাকা স্বত্ত্বেও তিনি ইতালি এবং জার্মানীকে আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গনে ফিরে আসতে সহায়তা করেন।
তার অসামান্য কর্মতৎপরতার ফলে ১৯৫০ সালের ৪র্থ বিশ্বকাপ ফুটবল প্রতিযোগিতা বা রিমে বিশ্বকাপ কাপ ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু ইউরোপের দেশসমূহের দলগুলোর তেমন প্রস্তুতি ছিল না। রিমের পূর্ণসন্তুষ্টি ছিল ফুটবলের আবিষ্কর্তা দেশ ইংল্যান্ডের অংশগ্রহণকে ঘিরে। ১৯৫৪ সালে রিমে ফিফা'র সম্মানিত সভাপতি হিসেবে ৮১ বছর বয়সে সভাপতির আসন ত্যাগ করেন।
সম্মাননাসম্পাদনা
ফিফা গঠনে কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের ফলে বিশ্ব ফুটবল ক্রীড়াঙ্গনে অমর হয়ে আছেন জুলে রিমে। তার কর্মকাণ্ডকে চীরস্মরণীয় করে রাখতে ফিফা বিশ্বকাপ ট্রফির নতুন নামকরণ করা হয় জুলে রিমে ট্রফি। ২০০৩ সালে তাকে মৃত্যু-পরবর্তীকালে ফিফা অর্ডার অব মেরিটের সদস্যভূক্ত করা হয়।
১৯৫৫ সালে জুলে রিমে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিলেন। কিন্তু তার প্রার্থীতা পুরোপুরি সফলকাম হয়নি।
মৃত্যুসম্পাদনা
জুলে রিমে ১৯৫৬ সালে সুইজারল্যান্ডের লাউজানায় ৮৩তম জন্মদিনের দু'দিন পরে মৃত্যুবরণ করেন।[১]
তথ্যসূত্রসম্পাদনা
- ↑ "ফরাসী ভাষা জুলে রিমের জীবনী, সংগ্রহঃ ১৮ জানুয়ারী, ২০১২ইং"। ১৬ ডিসেম্বর ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ জানুয়ারি ২০১২।
আরও দেখুনসম্পাদনা
বহিঃসংযোগসম্পাদনা
- ফাইন্ড এ গ্রেইভে জুলে রিমে (ইংরেজি)
- FIFA ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৯ আগস্ট ২০০৪ তারিখে
- French Football Federation