জয়দেব

বৈষ্ণব সংস্কৃত কবি

কবি জয়দেব গোস্বামী সংস্কৃত সাহিত্যের একজন মধ্যযুগীয় অন্যতম প্রসিদ্ধ কবি। তিনি গীতগোবিন্দ কাব্যের রচয়িতা। সংস্কৃত কাব্য গীতগোবিন্দের অত্যন্ত ব্যাপক ও গভীর প্রভাব রয়েছে। বাংলা ভাষায় বৈষ্ণব পদাবলির সূচনা জয়দেবের গীতগোবিন্দের পদাবলি থেকেই বলে ধারণা করা হয়।ভক্তি বিজয়ের রচয়িতা সন্ত মহীপতির মতে জয়দেব হলেন বেদব্যাসের অবতার।

কবি জয়দেব
জয়দেব বিষ্ণুর উপাসনা করছেন

কবি জয়দেবের জন্ম ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বীরভূমের কেন্দুবিল্ব বা কেঁদুলি গ্রামে।[] তার নামে সেখানে প্রতি বছর মেলা অনুষ্ঠিত হয়। বেশ কিছু মন্দির ও আশ্রম পরিবেষ্টিত এই গ্রামটি একটি ধর্মীয় তীর্থস্থানে পরিণত হয়েছে। প্রতি বছর মকর সংক্রান্তি উপলক্ষে এই স্থানে বাউল মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।এই গ্রামে জয়দেব দ্বারা প্রতিষ্ঠিত রাধামাধবের মূর্তির পুজো করা হয়ে থাকে এবং যে আসনে বসে তিনি সিদ্ধিলাভ করেছিলেন বলে মনে করা হয়, তা সংরক্ষণ করা রয়েছে।এই গ্রামের যুগলকিশোর মুখোপাধ্যায় বর্ধমান রাজদরবারের সভাকবি ছিলেন। মনে করা হয়ে থাকে, তার অনুরোধে বর্ধমানের মহারাণী ব্রজকিশোরী ১৬৮৩ খ্রিষ্টাব্দে এই গ্রামে জয়দেবের জন্মভিটেয় রাধাবিনোদ মন্দির স্থাপন করেন।[] ১৮৬০-এর দশকে নির্বাক বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের রাধারমণ ব্রজবাসী এই গ্রামে তাদের কুলগুরু জয়দেবের জন্মভিটেয় নির্বাক আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে রাধাবল্লভ মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়।[][]

জয়দেব কেন্দুলির নবরত্ন রাধাবিনোদ মন্দির

তার পিতার নাম ভোজদেব গোস্বামী ও মাতার নাম রামাদেবী।বাংলা,উড়িষ্যা ও দাক্ষিণাত্যর সংস্কৃৃতিতে জয়দেবের প্রভাব অনস্বীকার্য৷

জয়দেব ছিলেন লক্ষ্মণসেনের (১১৭৮-১২০৬) রাজসভার পঞ্চরত্নের অন্যতম; অপর চারজন হলেন গোবর্ধন আচার্যশরণধোয়ী ও উমাপতিধর

লক্ষ্মণসেনের সভায়

সম্পাদনা
 
গীতগোবিন্দের পান্ডুলিপি

সেকশুভোদয়ায় একটি গল্প আছে লক্ষ্মণসেনের সভায় জয়দেবের আগমন নিয়ে। একদিন লক্ষ্ণণসেনের সভায় এক বিখ্যাত সঙ্গীতনিপুণ কলাবিদ এসে নিজেকে শ্রেষ্ঠ হিসেবে জাহির করলেন। রাজা তার দাবি স্বীকার করে নিয়ে জয়পত্র লিখে দিতে চাইলেন। খবর পেয়ে জয়দেব পত্নী পদ্মাবতী রাজসভায় এসে অনুরোধ করলেন তার স্বামীর সাথে না প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করে যেন তাকে জয়পত্র না দেওয়া হয়। রাজা সভায় জয়দেবকে আনলেন। তথাকথিত সঙ্গীতনিপুণ কলাবিদের গানে গাছের সব পাতা ঝরে গেল। সবাই সঙ্গীতনিপুণ কলাবিদকে ধন্য ধন্য করতে লাগল। জয়দেব বললেন এ আর এমন কী! গাছে আবার পাতা গজিয়ে দেখাও। সঙ্গীতনিপুণ কলাবিদ অপারগতা প্রকাশ করলেন। তখন জয়দেব গান ধরলেন, আর সাথে সাথে গাছের পাতা গজিয়ে উঠল। সকলে জয়দেবের শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকার করল।[]

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. Reddy, William (২০১২)। Longing and Sexuality in Europe, South Asia, and Japan, 900-1200 CE। University of Chicago Press। পৃষ্ঠা 257। আইএসবিএন 9780226706283 
  2. Mukhopadhyay, Aditya, Birbhumer Mela, Paschim Banga, Birbhum Special Issue, p. 213, (in Bengali), February 2006, Information and Culture Deptt., Government of West Bengal
  3. "The Temples in Birbhum:Kendu Billa"P.C.Roy Choudhuri। Hindu Books Universe। ৪ জুলাই ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ 
  4. বঙ্গভূমিকা-সুকুমার সেন

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা