ধোয়ী
কবিন্দ ধোয়ী (আনু ১১১৯-আনু ১২০৫) দ্বাদশ শতকের সংস্কৃত ভাষার বাঙালি কবিদের মধ্যে অন্যতম।[১] তিনি লক্ষ্মণ সেনের রাজসভায় পঞ্চরত্নের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। তিনি মুলত সংস্কৃত ভাষায় কাব্য রচনা করতেন। লক্ষ্মণ সেনের পঞ্চরত্নের মধ্যে বাকি চারজন হলেন জয়দেব, শরণ, উমাপতিধর ও গোবর্ধন আচার্য। এছাড়াও লক্ষ্মণ সেনের রাজ সভায় শূলপাণি, হুলায়ুদ, পশুপতি এবং লক্ষ্মণ সেনের সেনাপতি পুত্র শ্রীধর রাজসভায় সমাদৃত ছিলেন। পশ্চিমবঙ্গের নদিয়া জেলার নবদ্বীপ শহরে তিনি জন্মগ্রহণ করেন।[২] বিভিন্ন রচনায় বিভিন্ন ব্যক্তি তাকে বিভিন্ন জন ব্রাহ্মণ, বৈদ্য এবং তন্তুবায় সম্প্রদায়ভুক্ত বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি কাশ্যপ গোত্রের পালাধী গ্রামীণ ছিলেন।[৩]
কবিন্দ
ধোয়ী | |
---|---|
জন্ম | ১১১৯ নবদ্বীপ, নদিয়া, পশ্চিমবঙ্গ, সেন যুগ |
মৃত্যু | ১২০৫ (৮৬ বছর) |
পেশা |
|
ভাষা | সংস্কৃত |
সময়কাল | সেনযুগ |
উল্লেখযোগ্য রচনাবলি | পবনদূত |
কাব্যকীর্তি
সম্পাদনাপবনদূত
সম্পাদনাতার একটিমাত্র কাব্যগ্রন্থ পবনদূত আবিষ্কৃত হয়েছে।[৪] লক্ষ্মণসেন দিগ্বিজয় উপলক্ষে দক্ষিণদেশে মালয় পর্বতের কাছে [৩] গেলে কুবলয়বতী নামে এক গন্ধর্বকন্যা তার প্রেমে আসক্ত হয় এবং সে পবন অর্থাৎ বায়ুকে দূত করে তার কাছে প্রেরণ করে। তাই এই কাব্য়গ্রন্থের নাম পবনদূত। এটাই পবনদূত কাব্যের মূল বিষয়বস্ত্ত। কাব্যটি বাঙালি কবিদের রচিত সংস্কৃত দূতকাব্যসমূহের মধ্যে প্রাচীনতম। এই কাব্যটি মন্দাক্রান্তা ছন্দে ১০৪টি শ্লোকে রচিত। এই কাব্যের শেষভাগের একটি শ্লোকে (১০১) গৌড়েন্দ্র লক্ষ্মণসেনকে কবি তার পৃষ্ঠপোষক হিসেবে উল্লেখ করেছেন। কাব্যটিতে কুবলয়বতী ও লক্ষ্মনসেনের প্রেমলীলা ছাড়াও গৌড়সহ ভারতের অন্যান্য কিছু স্থান ও নদনদীর বর্ণনা আছে।
কাব্যটি থেকে তৎকালীন বাংলা অর্থাৎ গৌড়দেশের রাজধানী বিজয়পুরের চমৎকার বর্ণনা আছে। আরও জানা যায় যে, দিগ্বিজয়কালে লক্ষ্মণসেন দক্ষিণদেশীয় রাজাদের পরাজিত করেন এবং তার সময়ে বিজয়পুর যে গৌড়ের রাজধানী ছিল সেই কথাও জানা যায় এই কাব্য়গ্রন্থ থেকে। পবনদূতের ৩৮ তম শ্লোক থেকে জানা যায় তৎকালীন সময়ে বাংলায় সুপারি গাছের প্রাচুর্য ছিল। এছাড়া তৎকালীন সময়ের দক্ষিণভারত ও উত্তর ভারতের কিছু ভৌগোলিক তথ্যও এ কাব্য থেকে পাওয়া যায়। পবনের গতিপথের বর্ণনা প্রসঙ্গে কবি পান্ড্যদেশ, উরগপুর, সেতুবন্ধ, কাঞ্চীপুর, চোল, কেরল, অন্ধ্র, কলিঙ্গ, সুহ্ম প্রভৃতি স্থান; তাম্রপর্ণী, সুবলা, কাবেরী, গোদাবরী, রেবা, নর্মদা, গঙ্গা, যমুনা প্রভৃতি নদী এবং ভিল ও শবরজাতির নাম উল্লেখ করেছেন।
সমালোচনা
সম্পাদনাকাব্য় সমালোচকরা কাব্য রচনায় কালিদাসের মেঘদূত কাব্যের প্রভাব আছে বলে মনে করেন। তবে মেঘদূতের মতো এতে পর্ববিভাগ নেই। কালিদাসের মেঘদূতে যেমন যক্ষ মেঘকে দূত করেছিলেন তেমন এখানে পবনকে দূত করা হয়েছে। মেঘদূতের বর্ণনা পড়লে বোঝা যায় কালিদাস রাম গিরি থেকে কৈলাস পর্যন্ত নিজে চোখে দেখে বর্ণনা দিয়েছেন কিন্তু সেই বর্ণনা পবনদূতে নেই।[৩] পবনদূতের ভাষা প্রাঞ্জল ও সরস। ধোয়ীর কবিপ্রতিভার স্বীকৃতিস্বরূপ জয়দেব তাকে কবিক্ষ্মাপতি (কবিদের রাজা) এবং 'শ্রুতিধর উপাধিতে ভূষিত করেন। ঐতিহাসিক বিষয় নিয়ে দূতকাব্য রচনায় এই কাব্যের দৃষ্টান্ত বিরল। সেই হিসেবে সংস্কৃত দূতকাব্যের ইতিহাসে পবনদূত এক বিশেষ স্থানের অধিকারী।
অন্যান্য কাব্যকীর্তি
সম্পাদনাতবে পবনদূত ছাড়াও সদুক্তিকর্ণামৃত, সুভাষিতমুক্তাবলী, শার্ঙ্গধরপদ্ধতি প্রভৃতি কোষকাব্যে তার প্রকীর্ণ কবিতা পাওয়া যায়।
আরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ আনন্দবাজার, বিতান ভট্টাচার্য (৪ আশ্বিন ১৪১৯ বৃহস্পতিবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০১২)। "প্রাচীন অর্ধনারীশ্বর মূর্তি পেয়ে পুজো শুরু সুখচরে"। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|তারিখ=
(সাহায্য) - ↑ "ধোয়ী"।
- ↑ ক খ গ চক্রবর্তী, রজনীকান্ত (১৯১০ খ্রিস্টাব্দ (১৩১৭ বঙ্গাব্দ))। গৌড়ের ইতিহাস। রঙ্গপুর: রঙ্গপুর সাহিত্য পরিষৎ। পৃষ্ঠা ১৯৯। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|তারিখ=
(সাহায্য) - ↑ "সাময়িক সাহিত্য সমালোচনা - ৩৮"। আশ্বিন, ১৩০৫। Authors list-এ
|প্রথমাংশ1=
এর|শেষাংশ1=
নেই (সাহায্য); এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:|তারিখ=
(সাহায্য)[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]