জটার দেউল

পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা জেলা অবস্থিত মন্দির

জটার দেউল স্থাপত্যশৈলীতে একরকমের টাওয়ার মন্দির বা রেখা-দেউল। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের দক্ষিণে সুন্দরবনের জনবসতি অঞ্চলে পাথর-মুক্ত পলি এবং গুল্মাচ্ছন্ন পরিমণ্ডলে মণি নদীর মোহনায় কঙ্কনদিঘির পূর্বে ১১৬ নম্বর প্লটে অবস্থিত। [] আর্কিওলজিক্যাল সোসাইটির ঘোষণামত আনুমানিক খ্রীস্টীয় একাদশ শতকে ইস্টক নির্মিত এই দেব দেউল জটাধারী শিবের নামানুসারে জটার দেউল নামে সমধিক পরিচিত।

জটার দেউল
ধর্ম
অন্তর্ভুক্তিহিন্দুধর্ম
ঈশ্বরশিব
অবস্থান
অবস্থানকঙ্কনদিঘি/জটা
দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা জেলা
রাজ্যপশ্চিমবঙ্গ
দেশভারত
জটার দেউল পশ্চিমবঙ্গ-এ অবস্থিত
জটার দেউল
পশ্চিমবঙ্গে অবস্থিত##ভারতে অবস্থিত
জটার দেউল ভারত-এ অবস্থিত
জটার দেউল
পশ্চিমবঙ্গে অবস্থিত##ভারতে অবস্থিত
স্থানাঙ্ক২১°৫৯′৩৩″ উত্তর ৮৮°২৯′১৫″ পূর্ব / ২১.৯৯২৫০° উত্তর ৮৮.৪৮৭৫০° পূর্ব / 21.99250; 88.48750
স্থাপত্য
ধরনরেখা দেউল
সম্পূর্ণ হয়একাদশ শতক
উচ্চতা৩০ মি (৯৮ ফু)

অবস্থান

সম্পাদনা

জটার দেউল পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের ডায়মন্ড হারবার মহকুমার মথুরাপুর ২নং সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের ছোট শহর রায়দিঘির পাঁচ কিলোমিটার পূর্বে কঙ্কনদিঘির নিকটে অবস্থিত। কলকাতা মহানগর হতে জাতীয় ও রাজ্য সড়ক পথে আনুমানিক দূরত্ব ৮০ কিলোমিটার। আশেপাশের গ্রামের অবস্থান এবং মানুষজনের পরিচয়ে এটি একটি আঞ্চলিক তীর্থস্থান কিনা তা' স্পষ্ট নয়। []

ইতিহাস

সম্পাদনা

প্রাচীন এই সৌধটি ১৮৬০-এর দশকে তৎকালীন  মথুরাপুর থানার অন্তর্গত  লট নং ১১৬ -এ গভীর জঙ্গল পরিস্কারের সময় আদিগঙ্গার খাত থেকে আবিষ্কৃত হয়। তবে সৌধটি ঠিক কবে, কখন, কীভাবে তৈরি হয়েছিল, তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে ইতিহাসবিদ ও প্রত্নতাত্ত্বিকদের মধ্যে। সৌধটির নিকটে প্রাপ্ত এক তাম্রশাসন থেকে ১৮৭৫ খ্রিস্টাব্দে ডায়মন্ডহারবারের ডেপুটি কমিশনার জানিয়েছিলেন যে, এটি ৯৭৫ খ্রিস্টাব্দ(বা ৮৯৭ শকাব্দে) বিক্রমপুরের চন্দ্র বংশের  তৎকালীন রাজা জয়চন্দ্রের সময় তৈরি করা হয়। [] আবার বীরভূম জেলার কেন্দুলির পাশে অজয় নদীর দক্ষিণে প্রাচীন পাল বংশের শাসক দেবপালের আমলে তৈরি ইছাই ঘোষের দেউলের সাথে জটার দেউলের সাদৃশ্য লক্ষ্য করে অনুমান করা হয় যে,  এটিও খ্রিস্টীয় নবম শতকে তৈরি। প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ সতীশচন্দ্র মিত্র তার যশোহর-খুলনার ইতিহাস গ্রন্থে সৌধটিকে প্রতাপাদিত্যের বিজয়স্তম্ভ ও ওয়াচ টাওয়ার হিসাবে বর্ণনা করেছেন। অন্যদিকে এ এস আই তথা ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের প্রাক্তন মহানির্দেশক কাশীনাথ নারায়ণ দীক্ষিতসহ  অধিকাংশ প্রত্নতত্ত্ববিদদের মতে, জটার দেউলের স্থাপত্যশৈলীর সাথে  ওড়িশার  দেউল স্থাপত্যের মিল আছে এবং সেদিক থেকে ও অন্যান্য আবিষ্কৃত নিদর্শন বিচার করে এর নির্মাণকাল আনুমানিক একাদশ শতাব্দী বলেই গণ্য করা হয়। []

পবিত্রতা

সম্পাদনা
 
জটার দেউল

সৌধটি কোন ধর্মীয় স্থান বা অন্য কোন ভাস্কর্য বা শিলালিপি সংক্রান্ত বিষয়ে নিশ্চিতভাবে প্রামাণ্য তথ্য পাওয়া যায় না। কেউ কেউ  এটিকে  একটি বৌদ্ধ প্যাগোডার  কাঠামোর মত ভাবেন। এ এস আই এর পর্যবেক্ষণ অনুসারে 'পঞ্চরথ ভিত্তির এক শিখর বিশিষ্ট' এই মন্দিরটি উত্তর ভারতের অনেক দেব দেউলেরই অনুরূপ। বর্তমানে এটির গর্ভগৃহে স্থানীয় মানুষেরা অনেক দেবদেবীর সাথে শিবের পূজা করে থাকেন।

স্থাপত্য

সম্পাদনা

জটার দেউল সুন্দরবনের গভীর অরণ্যে বাংলার প্রাচীন সরু ইটে নির্মিত মন্দিরগুলির মধ্যে একটি। প্রায় ৯৮ ফুট (বা ৩০ মিটার)  উচ্চতার স্তম্ভের বাইরের প্রতি দিকের পরিমাপ ৯.৩০ মিটার। পঞ্চরথ ভিত্তির এক শিখর বিশিষ্ট এই মন্দিরটির পূর্বদিকে রয়েছে ২.০৯ মিটার মাপের খিলানযুক্ত প্রবেশপথ। ভিত্তিমূলটি বর্তমান ভূমিস্তর হতে প্রায় তিন মিটার উঁচু।

জটার দেউল পশ্চিমবঙ্গের জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ সৌধসমূহের তালিকায় স্থান পেয়েছে এবং সেই অনুসারে এটি ভারত সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রকের অধীন এ এস আই তথা  ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের সুরক্ষিত স্মারক []

প্রতিবছর ২রা বৈশাখ (ইংরাজী এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময়ে) মন্দিরের কাছে একটি মেলা অনুষ্ঠিত হয় এবং ঘোডদৌড়ের আয়োজন করা হয় []

পশ্চিমবঙ্গের রেখা-দেউল মন্দিরের ছবি

সম্পাদনা

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. Ghosh, Binoy, Paschim Banger Sanskriti, (বাংলা ভাষায়), part III, 1980 edition, pages 152-155, Prakash Bhaban, Kolkata
  2. মাহবুবুর রহমান (২০১২)। "স্থাপত্যশিল্প"ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটিআইএসবিএন 9843205901ওএল 30677644Mওসিএলসি 883871743 
  3. "Jatar Deul History Unexplained"। Tale of 2 Backpackers। সংগ্রহের তারিখ ১০ জানুয়ারি ২০২০ 
  4. "List of Ancient Monuments and Archaeological Sites and Remains of West Bengal - Archaeological Survey of India"Item no. 6। ASI। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জানুয়ারি ২০২০ 

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা