ছাপ্পান্নো হাজার বর্গমাইল
ছাপ্পান্নো হাজার বর্গমাইল বাংলাদেশী লেখক হুমায়ুন আজাদ রচিত উপন্যাস।[১] এই উপন্যাসের মাধ্যমে আজাদ ঔপন্যাসিক হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেন।[২][৩] বাংলাদেশে সামরিক আইন জারীর প্রেক্ষাপটে রচিত উপন্যাসটি ১৯৯৪ সালের[৪] (ফাল্গুন, ১৪০০ বঙ্গাব্দ) একুশে বইমেলায় আগামী প্রকাশনী, ঢাকা থেকে এটি গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়।[৫] এই উপন্যাস প্রকাশের মধ্য দিয়ে হুমায়ুন আজাদের ঔপন্যাসিক হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটে।[৬]
লেখক | হুমায়ুন আজাদ |
---|---|
মূল শিরোনাম | ছাপ্পান্নো হাজার বর্গমাইল |
প্রচ্ছদ শিল্পী | সমর মজুমদার |
দেশ | বাংলাদেশ |
ভাষা | বাংলা |
বিষয় | বাংলাদেশে সামরিক অভ্যুত্থান |
ধরন | উপন্যাস |
পটভূমি | বাংলাদেশে সামরিক অভ্যুত্থান |
প্রকাশক | আগামী প্রকাশনী |
প্রকাশনার তারিখ | ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৪ |
মিডিয়া ধরন | ছাপা (শক্তমলাট) |
পৃষ্ঠাসংখ্যা | ১৬৮ |
আইএসবিএন | ৯৭৮-৯৮৪০৪১৭১৭৯ |
ওসিএলসি | ৬০০৪৩৪৯৫ |
পরবর্তী বই | সব কিছু ভেঙে পড়ে (১৯৯৫) |
আজাদ উপন্যাসটি উৎসর্গ করেছেন উপন্যাসের প্রধান চরিত্র রাশেদকে। তার বাবার নামও ছিলো রাশেদ, তিনি উপন্যাসের উৎসর্গ পাতায় লিখেছিলেন, 'উৎসর্গ পরলোকগত পিতা, আমি একটি নাম খুঁজছিলাম, আপনার নামটিই-রাশেদ-মনে পড়লো আমার'।[৭]
পটভূমি
সম্পাদনা১৯৯৩ সালে আজকের কাগজ পত্রিকাতে লেখা এই উপন্যাসটির ধারাবাহিকতার পর ১৯৯৪ সালে একুশে বইমেলাতে প্রকাশিত হয় এবং হুমায়ুন আজাদের রচিত এটিই ছিলো প্রথম পূর্ণাঙ্গ উপন্যাস যদিও ১৯৮৯ সালে তার লেখা আব্বুকে মনে পড়ে ছিলো একটি উপন্যাসিকা। হুমায়ুন আজাদ সামরিক-শাসন, স্বৈরাচার এবং একনায়কতন্ত্রের বিরোধিতা করতেন, সেটা তিনি রাশেদ চরিত্র দ্বারা বিভিন্ন রূপক এবং প্রতীকের মাধ্যমে বুঝিয়েছেন, তাছাড়া হুমায়ুন আজাদ একটি চিত্রকল্প এঁকেছেন নিজস্ব ভঙ্গিতে যে সামরিক শাসন বাংলাদেশের সমাজের ক্ষতি করেছে এবং দেশের সমাজের মধ্যবিত্ত পরিবারের মূল্যবোধ অনেক রক্ষণশীল, মানুষের বিকাশ নাকি রোধ হয়ে যাচ্ছে এটাই হুমায়ুন আজাদের এই উপন্যাসের মূল বিষয়।[বিদ্র ১]
উপন্যাসটি ছিলো হুমায়ুন আজাদের নিজের একটি ব্যক্তিগত জীবনের ছোটোখাটো উপাখ্যান এবং তিনি উপন্যাসটিতে বাংলাদেশের সমাজে চলা বিভিন্ন মূল্যবোধের উপর ব্যক্তিগত আক্রোশ প্রকাশ করেছিলেন পরোক্ষভাবে।[বিদ্র ২]
চরিত্রসমূহ
সম্পাদনা- রাশেদ - উপন্যাসের প্রধান চরিত্র যে সামরিক শাসনকে ঘৃণা করে
- মৃদু - রাশেদের কন্যা, বয়স পাঁচ
- মমতাজ - রাশেদের পত্নী
- আবদেল - একজন ধনী ব্যবসায়ী
- উদ্দীন মোহাম্মদ - সেনাবাহিনীর জেনারেল যিনি সামরিক আইন জারী করে রাষ্ট্রপতি হন
- লিলি - একজন অল্প বয়স্কা মহিলা যিনি টেলিভিশন উপস্থাপনা করেন
- সেলিমা - একজন উচ্চ শিক্ষিতা নারী যিনি ধার্মিক হয়ে যান
কাহিনী সারাংশ
সম্পাদনাউপন্যাসটির মূল চরিত্র হচ্ছে রাশেদ যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ায়, তার স্ত্রীর নাম হচ্ছে মমতাজ এবং একমাত্র কন্যার নাম মৃদু। আশির দশকের শুরুর দিকে বাংলাদেশে হঠাৎ একদিন সামরিক আইন জারি হলে ঘুমন্ত রাশেদকে তার স্কুলগামী মেয়ে মৃদু উঠিয়ে দেয় যে রাস্তায় সামরিক সদস্যদেরকে দেখে বাসায় চলে আসে। বেতারে সামরিক শাসনের ঘোষণা শুনতে পায় তারা এবং পরে টেলিভিশনে সামরিক বাহিনীর শাসকদেরকে দেখে রাশেদ তার শৈশবকালের কথা মনে করে যখন পাকিস্তান আমলে আইয়ুব খান সামরিক আইন জারি করেছিলো।
রাশেদ বাংলাদেশের সমাজের মানুষের নৈতিকতার অধঃপতন দেখতে পায়, সমাজে দেখতে পায় যে ধর্মান্ধতা চালু হচ্ছে, প্রেম-ভালোবাসা উঠে যাচ্ছে, পতিতাবৃত্তি-পরকীয়া চালু হচ্ছে, সমাজের মানুষ নানা অসৎ কাজে লিপ্ত হচ্ছে। রাশেদ নিজে সৎ থাকে, তার চারপাশকে তার মনে হয় অনেক অসুস্থ এবং ময়লা। রাশেদ পর্যবেক্ষণ করে যে, সমাজের নারীরা ধীরে ধীরে স্বাধীনতা হারাচ্ছে, বাঙালি তরুণ-তরুণীরা ক্রমশ অপসংস্কৃতির দিকে ধাবিত হচ্ছে - এগুলো দেখে রাশেদের মন কষ্টে ভরে যায়; রাশেদের মনে হয় যে, সে তার নিঃশ্বাসে নিঃশ্বাসে রন্ধ্রে রন্ধ্রে একটি অসুস্থ সমাজের দিকে ধাবিত হচ্ছে।
আরও দেখুন
সম্পাদনাটিকা
সম্পাদনা- ↑ মধ্যবিত্তের মূল্যবোধের সারকথা হচ্ছে কপটতা; আর সবধরণের কপটতাকে আঘাত করা আমার রচনার স্বভাব। আমি গৃহীত সত্যকে কখনোই মেনে নেইনি। আমার রচনা পড়লেই বোঝা যাবে সবধরণের গৃহীত সিদ্ধান্তকে বাদ দিয়েছি। আমার সাহিত্যসমালোচনা পড়লে বোঝা যাবে আমি গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো ত্যাগ করেছি। আমার রাজনৈতিক লেখাগুলো পড়লে বোঝা যাবে আমি গৃহীত মূল্যবোধ ত্যাগ করেছি। আমার এ-উপন্যাসে তা ব্যাপকভাবে দেখা যাবে। আমি চাই মধ্যবিত্তের কপটমূল্যবোধগুলোকে ধ্বংস করে দিতে[.....................] এদের কপটতার কোনো সীমা নেই[.........] তাদের বাজে মূল্যবোধগুলো ধ্বংস হওয়া অত্যন্ত জরুরী।: (প্রাথমিক উৎস)[৮]
- ↑ ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে আমি যে বর্ণনা দিয়েছি তা সম্পূর্ণ ভিন্ন, এ-বর্ণনার ভাষাও সম্পূর্ণ ভিন্ন।: (প্রাথমিক উৎস)[৯]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ জাহেদ মোতালেব (ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৩)। "৫৬ হাজার বর্গমাইল"। দৈনিক আজাদী। ২০১৬-০৩-০৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৫।
- ↑ "বহুমাত্রিক লেখক হুমায়ুন আজাদ"। বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম। ২৭ এপ্রিল ২০১৬। ১৩ জানুয়ারি ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জানুয়ারি ২০২০।
- ↑ "বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে প্রথাবিরোধী কবি ও লেখক হুমায়ুন আজাদ স্মরণে সেমিনার আয়োজন"। বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর। ১০ জানুয়ারি ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জানুয়ারি ২০২০।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ মুহম্মদ সাইফুল ইসলাম (২০১২)। "আজাদ, হুমায়ুন"। ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। আইএসবিএন 9843205901। ওএল 30677644M। ওসিএলসি 883871743।
- ↑ "ছাপ্পান্নো হাজার বর্গমাইল"। রকমারি.কম। ১২ জুন ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জুন ১, ২০১৪।
- ↑ "বহুমাত্রিক লেখক হুমায়ুন আজাদ"। বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম। এপ্রিল ২৮, ২০১৬। ১৩ জানুয়ারি ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ আগস্ট ১৪, ২০১৭।
- ↑ আজাদ, হুমায়ুন (ফেব্রুয়ারি ১৯৯৪)। ছাপ্পান্নো হাজার বর্গমাইল। আগামী প্রকাশনী।
- ↑ আততায়ীদের সঙ্গে কথোপকথন (হুমায়ুন আজাদের সাক্ষাৎকারগ্রন্থ) ১৯৯৫, পৃ. ১১৫।
- ↑ আততায়ীদের সঙ্গে কথোপকথন (হুমায়ুন আজাদের সাক্ষাৎকারগ্রন্থ) ১৯৯৫, পৃ. ৯৪-৯৫।
উৎস
সম্পাদনা- হুমায়ুন আজাদ (১৯৯৫)। আততায়ীদের সঙ্গে কথোপকথন (প্রথম সংস্করণ)। ঢাকা: আগামী প্রকাশনী (প্রকাশিত হয় ফেব্রুয়ারি ১৯৯৫)। আইএসবিএন 978-984-04-1542-7।