চীনের ভূগোল

পূর্ব এশিয়ার রাষ্ট্র গণচীনের ভূগোল

চীন এশিয়া মহদেশের পূর্ব অঞ্চলে এবং প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত। চীনের স্থলভাগের আয়তন প্রায় ৯৬ লক্ষ বর্গকিলোমিটার।[১] আয়তনের দিক থেকে চীন এশিয়ার বৃহত্তম দেশ এবং রাশিয়াকানাডার পর চীন বিশ্বে তৃতীয় বৃহত্তম দেশ।

নাসার উপগ্রহ থেকে তোলা চীনের আলোকচিত্র।

উত্তর-দক্ষিণে চীন মোহো অঞ্চলের উত্তরের হেইলুংচিয়াং (চীনা: 黑龙江省; ফিনিন: Hēilóngjiāng) নদীর কেন্দ্রস্থল অর্থাৎ ৫৩.৩০ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ থেকে দক্ষিণে নানশা দ্বীপপুঞ্জের (চীনা: 南沙群岛) চেনমু-আনসা অর্থাৎ ৪ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত। চীনের সর্বদক্ষিণ আর সর্বউত্তর প্রান্তের মধ্যকার দূরত্ব প্রায় ৫৫০০ কিলোমিটার। পূর্ব-পশ্চিমে চীন পূর্বের হেইলুংচিয়াং নদী আর উসুলিচিয়াং (চীনা: 乌苏里江) নদীর সঙ্গমস্থল অর্থাৎ ১৩৫.০৫ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমা থেকে পশ্চিমে পামির মালভূমি অর্থাৎ ৭৩.৪০ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমা পর্যন্ত বিস্তৃত। দেশটির পূর্ব আর পশ্চিম প্রান্তের মধ্যকার দূরত্ব প্রায় ৫০০০ কিলোমিটার।

চীনের স্থলসীমার দৈর্ঘ্য প্রায় ২২,৮০০ কিলোমিটার। চীনের পূর্ব দিকে উত্তর কোরিয়া , উত্তর দিকে মঙ্গোলিয়া , উত্তর -পূর্ব দিকে রাশিয়া, উত্তর-পশ্চিম দিকে কাজাকিস্তান, কিরগিজস্তান, ও তাজিকিস্তান, পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে আফগানিস্তান, পাকিস্তান , ভারত, নেপাল, ও ভুটান, দক্ষিণ দিকে মিয়ানমার, লাওসভিয়েতনাম। পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব দিকে দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, ফিলিপাইন, ব্রুনাই, মালয়েশিয়াইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে চীনের সমুদ্র সীমানা রয়েছে।

জলসীমা ও দ্বীপসমূহ সম্পাদনা

চীনের মূলভূভাগের তটরেখা উত্তর দিকের ইয়ালুচিয়াং (চীনা: 鸭绿江) নদীর মোহনা থেকে দক্ষিণ দিকের কুয়াংসি (চীনা: 广西) স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চলের পেইলুন হো (চীনা: 北仑河) নদীর মোহনা পর্যন্ত বিস্তৃত; এর দৈর্ঘ্য প্রায় ১৮ হাজার কিলোমিটার। চীনের উপকূলীয় অঞ্চলের ভূমিরূপ সমতল এবং এখানে বহু বিখ্যাত বন্দর অবস্থিত। এই বন্দরগুলির বেশির ভাগই সারা বছর বরফমুক্ত থাকে। চীনের নিকটে পোহাই সাগর, হুয়াংহাই সাগর, পূর্ব সাগর, নানহাই সাগর এবং তাইওয়ানের পূর্ব অঞ্চলের প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল সহ পাঁচটি সাগর রয়েছে । এগুলির মধ্যে পোহাই সাগর চীনের অভ্যন্তরীণ সাগর। তাইওয়ানের পূর্বদিকের প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল পূর্বদিকে জাপানের রিইউকিয়ু দ্বীপপুঞ্জের দক্ষিণ-পশ্চিমের সাখি সীমা দ্বীপপুঞ্জ থেকে দক্ষিণ দিকের বাস প্রণালী পর্যন্ত বিস্তৃত।  

চীনের অভ্যন্তরীণ নদী আর সামুদ্রিক জলসীমা নিয়ে গঠিত সামুদ্রিক অঞ্চলের মোট আয়তন ৩ লক্ষ ৮০ হাজার বর্গকিলোমিটার। চীনের সামুদ্রিক অঞ্চলে ৫০০০-এরও বেশি দ্বীপ রয়েছে। এগুলির মোট আয়তন প্রায় ৮০ হাজার বর্গকিলোমিটার। দ্বীপগুলির তটরেখার দৈর্ঘ্য প্রায় ১৪ হাজার কিলোমিটার। দ্বীপগুলির মধ্যে বৃহত্তম তাইওয়ান দ্বীপের আয়তন ৩৬ হাজার বর্গকিলোমিটার। দ্বিতীয় বৃহত্তম হাইনান দ্বীপের আয়তন ৩৪ হজার বর্গকিলোমিটার। তাইওয়ান দ্বীপের উত্তর-পূর্ব সমুদ্রে অবস্থিত তিয়াও ইয়ু তাও দ্বীপ ও ছিওয়েই ইয়ু দ্বীপ চীনের সবচেয়ে পূর্বাঞ্চলীয় দ্বীপ। দক্ষিণ চীন সমুদ্রে ছড়িয়ে থাকা দ্বীপ, ও প্রবাল-প্রাচীরগুলিকে নানহাই দ্বীপপুঞ্জ নামে ডাকা হয়। এটি চীনের সবচেয়ে দক্ষিণাঞ্চলীয় দ্বীপপুঞ্জ। অবস্থান অনুযায়ী এগুলোকে তুঙসা দ্বীপপুঞ্জ, সিসা দ্বীপপুঞ্জ,চুংসা দ্বীপপুঞ্জ এবং নানসা দ্বীপপুঞ্জ নামে ডাকা হয়।এছাড়াও চিনের

ভূমিরূপ সম্পাদনা

 
চীনের ভূগোল

চীন একটি পর্বতময় দেশ। এর মোট আয়তনের দুই-তৃতীয়াংশ পর্বত, ছোট পাহাড় এবং মালভূমি নিয়ে গঠিত। আরও সঠিকভাবে বলতে গেলে চীনের ৩৩% উঁচু পর্বত,২৬% মালভূমি,১৯% অববাহিকা,১২% সমতলভূমি এবং প্রায় ১০% ক্ষুদ্র পাহাড়। কয়েক মিলিয়ন বছর আগে ছিংহাই-তিব্বত মালভূমি সৃষ্টি হয়। আকাশ থেকে দেখলে মনে হবে চীনের ভূভাগ সিঁড়ির মতো পশ্চিম দিক থেকে পূর্বদিকে ধাপে ধাপে নেমে গেছে। সমুদ্র সমতল থেকে ছিংহাই-তিব্বত মালভূমির গড় উচ্চতা ৪০০০ মিটারের বেশি বলে মালভূমিটি "বিশ্বের ছাদ" নামে পরিচিত; এটি চীনের ভূমিরূপের প্রথম সিঁড়ি গঠন করেছে। মালভূমিটিতে অবস্থিত হিমালয়ের অন্যতম প্রধান পর্বতশৃঙ্গ চুমোলাংমা শৃঙ্গের উচ্চতা ৮৮৪৮.১৩ মিটার। আন্তঃমঙ্গোলিয়া মালভূমি,দো-আঁশ মালভূমি,ইয়ুন্নান-কুইচৌ মালভূমি এবং থালিমু অববাহিকা, চুনগার অববাহিকা ও সিছুয়ান অববাহিকা নিয়ে চীনের ভূগোলের দ্বিতীয় সিড়ি গঠিত। এর গড় উচ্চতা ১০০০-২০০০ মিটার। দ্বিতীয় সিড়ির পূর্বপ্রান্ত অতিক্রম করে বড় সিং আনলিন পর্বত, থাইহান শ্যান পাহাড়, উশ্যান পাহাড়, আরস্যুয়ে ফোং শ্যান পাহাড় পূর্বদিকের প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের উপকূলীয় এলাকায় বিস্তৃত হয়েছ; এটি তৃতীয় সিঁড়ি । তৃতীয় সিঁড়ির ভূখণ্ড ৫০০-১০০০ মিটার নিচে নেমে গেছে। উত্তর থেকে দক্ষিণ দিক পর্যন্ত বিস্তৃত তৃতীয় সিঁড়িতে উত্তর-পূর্বসমতল-ভূমি, উত্তর চীন সমতল-ভূমি, ইয়াংসি নদীর মধ্য ও নিম্ন অববাহিকা সমতল-ভূমি আর সমতল-ভূমির প্রান্তে নিচু ও ক্ষুদ্র পাহাড় ছড়িয়ে আছে। এরও পূর্বদিকে চীনের মহাদেশীয় সোপান তথা স্বল্প গভীর সাগরীয় এলাকা অর্থাৎ চতুর্থ সিঁড়িটি বিস্তৃত; এর গভীরতা ২০০ মিটারের কিছু কম।

পর্বতমালা সম্পাদনা

চীনের বৃহত্তম পর্বতমালাগুলির মধ্যে হিমালয় পর্বতমালা, খুনলুনশান পর্বতমালা (昆仑山), থিয়েনশান পর্বতমালা (天山), থাংকুলাশান পর্বতমালা (唐古拉山), ছিনলিন পর্বতমালা (秦岭), বৃহত্তর সিংআনলিন পর্বতমালা (大兴安岭), থাইহাংশান পর্বতমালা (太行山), ছিলিয়েনশান পর্বতমালা (祁连山) এবং হাংতুয়ানশান পর্বতমালা (横断山脉) উল্লেখযোগ্য।

হিমালয় পর্বতমালা সম্পাদনা

হিমালয় পর্বতমালা বক্রাকারে ভারত আর নেপাল-সংলগ্ন চীন সীমান্তে ২৪০০ কিলোমিটার ধরে বিস্তৃত। সমুদ্র সমতল থেকে এর গড় উচ্চতা ৬০০০ মিটার। এটি বিশ্বের উচ্চতম ও বৃহত্তম পর্বতমালা।

খুনলুনশান পর্বতমালা সম্পাদনা

পশ্চিমের পামির মালভূমি থেকে পূর্ব দিকে চীনের সিছুয়াং প্রদেশের উত্তর-পশ্চিম এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত খুনলুনশান পর্বতের দৈর্ঘ্য ২৫০০ কিলোমিটার। সমুদ্র সমতল থেকে এর গড় উচ্চতা ৫০০০-৭০০০ মিটার। এর উচ্চতম শৃঙ্গ কোংগার পর্বতের উচ্চতা হলো ৭৭১৯ মিটার।

থিয়েনশান পর্বতমালা সম্পাদনা

থিয়েনশান পর্বতমালা উত্তর-পশ্চিম চীনের সিনচিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের মধ্যাংশে বিস্তৃত। এর গড় উচ্চতা ৩০০০-৫০০০ মিটার এবং এর সবচেয়ে উঁচু শৃঙ্গ থোমোরের উচ্চতা ৭৪৫৫.৩ মিটার।

থাংকুলাশান পর্বতমালা সম্পাদনা

থাংকুলাশান পর্বতমালা ছিংহাই-তিব্বত মালভূমির মধ্যাংশে অবস্থিত। এর গড় উচ্চতা ৬০০০ মিটার। এর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ কালাতানতং শৃঙ্গের উচ্চতা ৬৬২১ মিটার। এটি চীনের দীর্ঘতম নদী ছাংচিয়াং নদীর উৎস ।

ছিনলিন পর্বতমালা সম্পাদনা

পশ্চিম চীনের কানসু প্রদেশের পূর্ব দিক থেকে পূর্ব চীনের হোনান প্রদেশের পশ্চিম দিক পর্যন্ত বিস্তৃত এই পর্বতমালার গড় উচ্চতা হলো ২০০০-৩০০০ মিটার। এর প্রধান শৃঙ্গ থাইপাইশানের উচ্চতা ৩৭৬৭ মিটার। ছিনলিন পর্বতমালা চীনের দক্ষিণাঞ্চল ও উত্তরাঞ্চলের মধ্যকার গুরুত্বপূর্ণ ভৌগোলিক সীমারেখা গঠন করেছে।

বৃহত্তর সিং আনলিন পর্বতমালা সম্পাদনা

উত্তর দিকে উত্তর-পূর্ব চীনের হেইলুংচিয়াং প্রদেশের মোহো থেকে দক্ষিণ দিকে পুরানো হাহো নদীর উত্তর অববাহিকা পর্যন্ত বিস্তৃত বড় সিং আনলিন পর্বতমালার দৈর্ঘ্য ১০০০ কিলোমিটার। এর গড় উচ্চতা ১৫০০ মিটার। এর প্রধান শৃঙ্গ হুয়াংকাংলিয়াংয়ের সামুদ্রিক উচ্চতা ২০২৯ মিটার।

থাইহাং পর্বতমালা সম্পাদনা

থাইহাং পর্বতমালা উত্তর দিক থেকে দক্ষিণ দিকে হুয়াংথু মালভূমির পূর্ব-প্রান্তে অবস্থিত। এর দৈর্ঘ্য ৪০০ কিলোমিটার এবং গড় উচ্চতা ১৫০০-২০০০মিটার। এর প্রধান শৃঙ্গ ক্ষুদ্র উ থাইশ্যানের উচ্চতা ২৮৮২ মিটার।

ছিলিয়েনশান পর্বতমালা সম্পাদনা

ছিলিয়েনশ্যান পর্বতমালা ছিংহাই-তিব্বত মালভূমির উত্তর-পূর্ব প্রান্তে বিস্তৃত। এর গড় উচ্চতা ৪০০০ মিটারের বেশি। ছিলিয়েনশ্যান পর্বতমালার প্রধান শৃঙ্গের সামুদ্রিক উচ্চতা ৫৫৪৭ মিটার।

হেংতুয়ানশান পর্বতমালা সম্পাদনা

হেংতুয়ানশ্যান পর্বতমালা ছিংহাই-তিব্বত মালভূমির দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলে অর্থাৎ তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল এবং সিছুয়ানইউন্নান প্রদেশের সংলগ্ন অঞ্চলে অবস্থিত। এর গড় উচ্চতা ২০০০-৬০০০মিটার। এর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ কোংগাশানের উচ্চতা ৭৫৫৬ মিটার।

তাইওয়ান পর্বতমালা সম্পাদনা

তাইওয়ান পর্বতমালা তাইওয়ান দ্বীপের পূর্ব দিকের মধ্য দিয়ে বিস্তৃত। এর গড় উচ্চতা ৩০০০-৩৫০০ মিটার। এর প্রধান শৃঙ্গ ইয়ুশানের উচ্চতা ৩৯৫২ মিটার।

এছাড়াও হুয়াংশান, থাইশান, হুয়াশান, সোংশান, হেংশান, হ্যানশান, অ্যামেইশান, লুশান, উতাংশান, ইয়েনতাংশান, ইত্যাদি চীনের উল্লেখযোগ্য কিছু পর্বতমালা।

নদনদী সম্পাদনা

 
ছাংচিয়াং নদী, নানচিং শহরের কাছে (২০০৬ সালে তোলা ছবি)
 
হুয়াংহো নদী, ছিংহাই প্রদেশ (২০০৪ সালে তোলা ছবি)

চীন একটি নদীবহুল দেশ। চীনের ১৫০০টিরও বেশি নদীর অববাহিকার আয়তন ১০০০ বর্গকিলোমিটারের বেশি। চীনের নদীগুলিকে অভ্যন্তরীণ নদী ও বহির্গামী নদী---এই দুই ভাগে বিভক্ত করা যায়। সমুদ্রে প্রবাহিত হওয়া বহির্গামী নদীগুলোর অববাহিকার আয়তন চীনের স্থলভাগের মোট আয়তনের ৬৪%। ছাংচিয়াং নদী, হুয়াংহো নদী, হেইলুংচিয়াং নদী, চুচিয়াং নদী, লিয়াও হো নদী, হাইহো নদী, হুয়াইহো নদী, ইত্যাদি নদী পূর্ব দিকে প্রশান্ত মহাসাগরে পতিত হয়েছে। তিব্বতের ইয়ালুচাংবু চিয়াং নদী পূর্ব দিক থেকে সীমান্ত পার হয়ে দক্ষিণ দিকে ভারত মহাসাগরে প্রবাহিত হয়েছে। ইয়ালুচাংবু নদী ৫০৪.৬ কিলোমিটার দীর্ঘ; এটি ৬০০৯ মিটার গভীরতার বিশ্বের বৃহত্তম গিরিখাদ ইয়ালুচাংবু নদী গিরিখাদের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। সিনচিয়াংয়ের আরচিস নদী উত্তর দিক থেকে সীমান্ত পার হয়ে উত্তর মহাসাগরে প্রবাহিত হয়েছে। যেসব অভ্যন্তরীণ নদী অভ্যন্তরীণ হ্রদে পতিত হয়েছে অথবা মরুভূমিতে বা লবণাক্ত সমুদ্র –সৈকতে অদৃশ্য হয়েছে, সেসব অভ্যন্তরীণ নদীর অববাহিকার আয়তন চীনের স্থলভাগের মোট আয়তনের প্রায় ৩৬%।

ছাংচিয়াং (চীনা লিপিতে: 长江 ফিনিন: Chang Jiang; ইংরেজি ভাষায়: Yangtze River) নদী চীনের দীর্ঘতম নদী।[২] এর মোট দৈর্ঘ্য ৬৩০০ কিলোমিটার। আফ্রিকার নীল নদ আর দক্ষিণ আমেরিকার আমাজান নদীর পর ছাংচিয়াং নদী বিশ্বে তৃতীয় বৃহত্তম নদী। উঁচু পাহাড় আর গভীর গিরিখাদের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ছাংচিয়াং নদীর অববাহিকা পানি শক্তিসম্পদে সমৃদ্ধ। নদীটির মধ্য ও নিম্ন অববাহিকার আবহাওয়া উষ্ণ ও আর্দ্র; এখানে প্রচুর বৃষ্টি হয়। মাটি উর্বর বলে অঞ্চলটি চীনের একটি কৃষি ও শিল্প সমৃদ্ধ অঞ্চল ।

হুয়াংহো নদী চীনের দ্বিতীয় দীর্ঘতম নদী। এর মোট দৈর্ঘ্য ৫৪৬৪ কিলোমিটার। হুয়াংহো নদীর অববাহিকার পশুচারণ ভূমি বেশ উর্বর ও খনিজ পদার্থে সমৃদ্ধ। এই নদীর অববাহিকাতে চীনের প্রাচীনতম সভ্যতা গড়ে উঠেছিল।

হেইলুংচিয়াং নদী উত্তর চীনের একটি বড় নদী। এর মোট দৈর্ঘ্য ৪৩৫০ কিলোমিটার। এর মধ্যে ৩১০১ কিলোমিটার চীনের অভ্যন্তরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।

চুচিয়াং নদী দক্ষিণ চীনের একটি বড় নদী। এর মোট দৈর্ঘ্য ২২৪১ কিলোমিটার।

দক্ষিণ সিনচিয়াংয়ের থালিমো নদী চীনের দীর্ঘতম অভ্যন্তরীণ নদী। এর মোট দৈর্ঘ্য ২১৭৯ কিলোমিটার।

প্রাকৃতিক নদী ছাড়া চীনে মানুষের তৈরি একটি বিখ্যাত নদীও রয়েছে। এটি হল দক্ষিণ থেকে উত্তর-মধ্য দিয়ে প্রবাহিত মহাখাল। পঞ্চম শতাব্দীতে মহাখালটির খনন কাজ শুরু হয়। উত্তর দিকের পেইচাং থেকে দক্ষিণ দিকের পূর্ব চীনের চেচিয়াং প্রদেশের হাংচৌ পর্যন্ত বিস্তৃত মহাখালটি হাইহো নদী, হুয়াংহো নদী, হুয়াইহো নদী, ছাংচিয়াং নদী এবং ছিয়েনথাংচিয়াং নদীন---এই পাঁচটি বড় নদীকে সংযুক্ত করেছে। এর মোট দৈর্ঘ্য ১৮০১ কিলোমিটার। মহাখালটি বিশ্বের দীর্ঘতম খালগুলির একটি।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "China"The World Factbook। CIA। ২০১৬-১০-১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-১২-৩১ 
  2. "Yangtze River"। University of Washington। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-১২-৩১