উত্তর কোরিয়া

এশিয়ার রাষ্ট্র

উত্তর কোরিয়া পূর্ব এশিয়ার একটি রাষ্ট্র যা কোরীয় উপদ্বীপের উত্তর অর্ধাংশ নিয়ে গঠিত। এর সরকারি নাম গণতান্ত্রিক গণপ্রজাতন্ত্রী কোরিয়া (কোরীয় ভাষায় 조선민주주의인민공화국 চোসন্‌ মিন্‌জুজুই্যই ইন্‌মিন্‌ কোংহুয়াগুক্‌)। উত্তর কোরিয়ার উত্তরে চীন, উত্তর-পূর্বে রাশিয়া, পূর্বে জাপান সাগর, দক্ষিণে দক্ষিণ কোরিয়া এবং পশ্চিমে পীত সাগর অবস্থিত। দেশটির আয়তন ১,২০,৫৩৮ বর্গকিলোমিটার। উত্তর কোরিয়া রাষ্ট্রটি ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। তখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে সোভিয়েত সামরিক বাহিনী কোরীয় উপদ্বীপের উপরের অর্ধাংশ নিয়ন্ত্রণ করেছিল। ১৯৫০-এর দশকের কোরীয় যুদ্ধের পর থেকে এটি সমাজতান্ত্রিক শাসনের অধীনে রয়েছে। উত্তর কোরিয়ার রাজধানী ও বৃহত্তম শহরের নাম পিয়ং ইয়াং। উত্তর কোরিয়া এবং দক্ষিণ কোরিয়া মধ্যবর্তী অবস্থিত কোরীয় সেনামুক্ত অঞ্চলপ্রাবর অঞ্চলআম্নোক নদী এবং তুমান নদী উত্তর কোরিয়া এবং গণচীন এর মধ্যবর্তী সীমান্তে অবস্থিত। তুমান নদী একটি অংশ একেবারে উত্তর-পূর্ব অংশে রাশিয়ার সঙ্গে সীমান্ত রয়েছে।

গণতান্ত্রিক গণপ্রজাতন্ত্রী কোরিয়া

조선민주주의인민공화국
朝鮮民主主義人民共和國
চোসন্‌ মিন্‌জুজুই্যই ইন্‌মিন্‌ কোংহুয়াগুক্‌[১]
উত্তর কোরিয়ার জাতীয় মর্যাদাবাহী নকশা
জাতীয় মর্যাদাবাহী নকশা
নীতিবাক্য: 강성대국
強盛大國
শক্তিশালী ও সমৃদ্ধ জাতি
উত্তর কোরিয়ার অবস্থান
রাজধানী
ও বৃহত্তম নগরী বা বসতি
পিয়ং ইয়াং
সরকারি ভাষাকোরীয়
দাপ্তরিক হরফচোসন'গল (হাঙ্গুল)
ধর্ম
(২০২০)
জাতীয়তাসূচক বিশেষণউত্তর কোরীয়, উত্তর কোরিয়ান, কোরিয়ান
সরকারজুচে একদলীয় সমাজতান্ত্রিক দেশ
একনায়কতান্ত্রিক শাসন
কিম জং উনa
কিম টোক হুন
চাই রাইং-হা
পাক ইন-চোল
প্রতিষ্ঠা
মার্চ ১ ১৯১৯
আগস্ট ১৫ ১৯৪৫
• আনুষ্ঠানিক ঘোষণা
সেপ্টেম্বর ৯ ১৯৪৮
আয়তন
• মোট
১,২০,৫৪০ কিমি (৪৬,৫৪০ মা) (৯৮তম)
• পানি (%)
৪.৮৭
জনসংখ্যা
• ২০০৭ আনুমানিক
২৩,৩০১,৭২৫[২] (৪৮তম)
• ২০২৩ আদমশুমারি
২৪,০৫২,২৩১
• ঘনত্ব
১৯০/কিমি (৪৯২.১/বর্গমাইল) (৫৫তম)
জিডিপি (পিপিপি)২০০৬[৩] আনুমানিক
• মোট
$২২.৮৫ বিলিয়ন (৮৫তম)
• মাথাপিছু
$১০০৭ (১৪৯তম)
মানব উন্নয়ন সূচক (২০১০)অপরিবর্তিত ০.৫৪০[৪]
নিম্ন · ১৭৪তম
মুদ্রাউত্তর কোরীয় ওন (₩) (KPW)
সময় অঞ্চলইউটিসি+৯ (কোরিয়ার মানক সময়)
• গ্রীষ্মকালীন (ডিএসটি)
ইউটিসি+৯ (পালন করা হয় না)
তারিখ বিন্যাস
গাড়ী চালনার দিকডান
কলিং কোড+৮৫০[৫]
ইন্টারনেট টিএলডি.kp
1994 সালে মারা যান, ১৯৮৮ সালে "ইটারনাল প্রেসিডেন্ট" নামে পরিচিত
কিম জং-ইল হলেন দেশের সবচেয়ে বিশিষ্ট নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিত্ব এবং সরকার প্রধান, যদিও তিনি রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকার প্রধান নন; তার অফিসিয়াল উপাধি হল উত্তর কোরিয়ার জাতীয় প্রতিরক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান, এই পদে তিনি ১৯৯৪ সাল থেকে অধিষ্ঠিত ছিলেন।
কিম ইয়ং-নাম হলেন "রাষ্ট্রপ্রধান বিদেশী বিষয়ের জন্য"।
পিয়ংইয়ংয়ে চোলিমা আন্দোলনের ভাষ্কর্য

ইতিহাস সম্পাদনা

১৯১০ - ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত অবিভক্ত কোরিয়া মূলত জাপানিদের দখলে ছিল।

কোরিয়া বিভক্তি(১৯৪৫-১৯৫০) সম্পাদনা

১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হেরে যাবার সময় জাপানিরা সমাজতান্ত্রিক দেশ সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছে আত্মসমর্পণ করে। তার ফলে অবিভক্ত কোরিয়া দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায়| তখন উত্তর কোরিয়া ১৯৫০ সালে সমাজতান্ত্রিক দেশ সোভিয়েত ইউনিয়নের মতাদর্শে সমাজতান্ত্রিক ব্লকে চলে যায়, অন্যদিকে দক্ষিণ কোরিয়া পুঁজিবাদী আমেরিকার মতাদর্শে এর পুঁজিবাদী ব্লকে যোগ দান করে। তখন থেকে কোরিয়া দুটি ভিন্ন নাম যথা উত্তর ও দক্ষিণ তথা দুটি ভিন্ন অর্থনৈতিক ব্যবস্থাতে চলতে শুরু করে। দক্ষিণ কোরিয়াতে আমেরিকার পুঁজিবাদ আর উত্তর কোরিয়াতে সোভিয়েত ইউনিউনের মতো সমাজতন্ত্রবাদ চালু হয়। এটিই ১৯৪৮ সালে অবিভক্ত কোরিয়াকে বিভক্তিকরণের পথ দেখিয়েছে। উত্তর কোরিয়ার সরকারি নাম রাখা হয় গণপ্রজাতন্ত্রী কোরিয়া আর দক্ষিণ কোরিয়ার সরকারি নাম রাখা হয় প্রজাতন্ত্রী কোরিয়া। উত্তর কোরিয়া এর রাজধানী হয় পিয়ং ইয়াং আর দক্ষিণ কোরিয়া এর রাজধানী হয় সিউল

কোরীয় যুদ্ধ(১৯৫০-১৯৫৩) সম্পাদনা

বিভক্ত কোরিয়াকে সংযুক্তিকরণের লক্ষে ১৯৫০ সালের ২৫ জুন উত্তর কোরিয়া দক্ষিণ কোরিয়া আক্রমণ করে। অবশেষে ১৯৫৩ সালে কোরীয় যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষর হয়।

রাজনীতি সম্পাদনা

 
উত্তর কোরিয়ার একটি ভোটকেন্দ্র

সমাজতান্ত্রিকমার্ক্সবাদী নেতা কিম ইল সংয়ের নেতৃত্বাধীন কোরিয়ার ওয়ার্কার্স পার্টির নিয়ন্ত্রণে উত্তর কোরিয়ায় একদলীয় শাসন চালু হয়, মূলত যুদ্ধবিদ্ধস্ত দেশকে পুনর্গঠনের জন্যে পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা নেয়া হয়। তারপর থেকে উত্তর কোরিয়া শাসিত হতে শুরু করে সমাজতান্ত্রিক পথে। কিন্তু এ উন্নতি কোন সমাজতান্ত্রিক দেশের হওয়ায় বাজার অর্থনীতির প্রবক্তা আমেরিকা তা মেনে নিতে পারেনি। তাই তারা এই দেশের রাজনীতি নিয়ে নানা রকম প্রশ্ন তুলে ও নানা ভাবে সমাজতান্ত্রিক দেশ উত্তর কোরিয়া এর পতন এর জন্য কাজ শুরু করে। তারা এ দেশ এর মহান নেতা কিম ইল সংয়ের নেতৃত্বকে কখনও অগণতান্ত্রিক, কখনও স্তালিনীয় বা একনায়কতান্ত্রিক শাসন হিসাবে উল্লেখ করে। যদিও সমাজতান্ত্রিক দেশ উত্তর কোরিয়া নেতা কিম ইল সংয়ের সমাজতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক আদর্শতে দেশে প্রচুর উন্নতি সাধন করছিল এবং উন্নয়নে এগিয়ে ছিল। সমাজতান্ত্রিক ভাবধারা হওয়ায় সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে তাদের সম্পর্ক ছিল মধুর। সোভিয়েত ইউনিয়নের সমাজতান্ত্রিক উন্নয়নমুখিতার প্রভাব উত্তর কোরিয়া উপরও দেখা যায়। তবুও পুঁজিবাদী মাকিন যুক্তরাষ্ট্র এই উন্নতি মেনে নিতে পারছিল না, যেহেতু সকল সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র ছিল তাদের চোখে শত্রু। তারা সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র যে দুনিয়ার পক্ষে কতটা ক্ষতিকর তা তুলে ধরতে থাকে এবং সকল সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রই যে মানবজাতি ও মানবাধিকারের প্রতি হুমকি তা বার বার নানা কূটকথা এর মধ্যে দিয়ে প্রকাশ করতে থাকে। সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র এর পতন যে নিশ্চিত তা তারা নানা রকম পুঁজিবাদী মডেল এর মাধ্যমে জানিয়ে দেয়। সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা যে আবার আরেকটি মহাযুদ্ধ শুরু করবে তা নিয়ে পুঁজিবাদী মাকিন যুক্তরাষ্ট্র পূর্বেই ঘোষণা করেছিল । যদিও ১৯৯০ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন পর্যন্ত কোন সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রই মহাযুদ্ধ শুরু করেনি।

উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রব্যবস্থা সাংবিধানিক ভাবে একটি বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা হলেও দেশটি কার্যত একটি একদলীয় শাসনব্যবস্থাতে পরিচালিত হয়। কিম জং ইলের নেতৃত্বে কোরিয়ার ওয়ার্কার্স পার্টিই হলো দেশটির একমাত্র শাসক রাজনৈতিক দল। দেশের সরকার ব্যবস্থা গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতা নীতির উপর ভিত্তি করে গঠিত। সংবিধানে গণতান্ত্রিক সরকারের কথা বলা হলেও কিম জং ইল ও মুষ্টিমেয় কয়েকজন নেতা দেশটি পরিচালনা করেন। পশ্চিমা বিশ্বে দেশটি একটি কমিউনিস্ট রাষ্ট্র হিসেবে গণ্য হলেও মার্ক্সবাদ বা লেনিনবাদ নয়, বরং চুছে (Juche) তথা "স্বনির্ভরতা" হলো দেশটির বর্তমান সরকারি রাজনৈতিক দর্শন।

সামরিক শক্তি সম্পাদনা

কোরিয়ান পিপলস আর্মি (KPA) উত্তর কোরিয়ার সামরিক সংগঠন ।

প্রশাসনিক অঞ্চলসমূহ সম্পাদনা

 
উত্তর কোরিয়ার মূল প্রশাসনিক অঞ্চলসমূহ
নামa হাঙ্গুল হানজা
সরাসরিভাবে শাসিত অঞ্চল (চিক্কাল সি)a
1 পিয়ং ইয়াং (রাজধানী) 평양직할시(পিয়ংইয়াং চিক্কাল সি) 平壤直轄市
বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চলসমূহ (থুউকবিয়ল সি হ্যাংজংগু)a
2 ক্যাসং শিল্পাঞ্চল 개성공업지구 ক্যাসং কোংঅপ্‌চিগু 開城工業地區
3 কুমকানসান পর্যটন অঞ্চল 금강산관광지구 ক্যিম্‌গাংসান্‌ কুয়ান্‌গুয়াংজিগু 金剛山觀光地區
4 শিনুইজু বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল 신의주특별행정구 শিনুইজু থ্যিক্‌পিয়ল্‌ হ্যাংজংগু 新義州特別行政區
প্রদেশসমূহ (ডো)a
5 দক্ষিণ ফিয়ংআন 평안남도 ফিয়ংআন্‌নাম্‌দো 平安南道
6 উত্তর ফিয়ংআন 평안북도 ফিয়ংআন্‌বুক্‌তো 平安北道
7 চাকাং 자강도 চাগাংদো 慈江道
8 দক্ষিণ হোয়াংহ্যা 황해남도 হোয়াংহ্যানাম্‌দো 黃海南道
9 উত্তর হোয়াংহ্যা 황해북도 হোয়াংহ্যাবুক্‌তো 黃海北道
10 কাংউওন 강원도 কাংউঅন্‌দো 江原道
11 দক্ষিণ হামগিয়ং 함경남도 হাম্‌গিয়ংনাম্‌দো 咸鏡南道
12 উত্তর হামগিয়ং 함경북도 হাম্‌গিয়ংবুক্‌তো 咸鏡北道
13 রিয়াংগাং * 량강도 রিয়াংগাংদো 兩江道
* – কখনও কখনও বলা হয় "ইয়াংগাং"।

প্রধান শহরসমূহ সম্পাদনা

ভূগোল সম্পাদনা

উত্তর কোরিয়া এশিয়া মহাদেশের কোরীয় উপদ্বীপের উত্তরাংশে অবস্থিত রাষ্ট্র। এর আয়তন ১২০,৫৪০ বর্গ কি.মি.। উত্তরে চীনরাশিয়ার সাথে এবং দক্ষিণে দক্ষিণ কোরিয়ার কোরীয় বেসামরিক অঞ্চল এর সাথে এর সীমান্ত। উত্তর কোরিয়া হচ্ছে শীতষ্ণ-বলয়। এখানে গ্রীষ্মকালে প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টিপাত হয় এবং শীতকালে অনেক ঠান্ডা থাকে । উত্তর কোরিয়ার ৮০% এলাকা পর্বত ও উচ্চভূমি নিয়ে গঠিত। পূর্ব দিকের উপকূলীয় সমভূমিগুলি অত্যন্ত সরু, তবে পশ্চিমে পীত উপসাগরের উপকূলীয় সমভূমিগুলি প্রশস্ত; এগুলিতেই দেশের বেশির ভাগ লোক বাস করে। বেশির ভাগ নদী পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হয়ে পীত উপসাগরে পড়েছে। চীন ও পার্শ্ববর্তী এলাকার তুলনায় উত্তর কোরিয়াতে ভূমিকম্পের প্রকোপ কম। এখানে অনেক উষ্ণ প্রস্রবণ দেখতে পাওয়া যায়।

অর্থনীতি সম্পাদনা

উত্তর কোরিয়ার অর্থনীতি মূলত পর্যটনভিত্তিক। উত্তর কোরিয়ার অর্থনীতি হচ্ছে কেন্দ্রীয়ভাবে পরিকল্পিত অর্থনীতি, সেইসঙ্গে বিশ্বের স্বতন্ত্র অর্থনীতির মধ্যে একটি। উত্তর কোরিয়ার পর্যটন সরকার দ্বারা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত বিধায় এখানে খুব বেশি পর্যটক ঘুরতে আসেন না। দেশটির পূর্ব প্রান্তে সাগরের কোল ঘেঁষে অবস্থিত কুমগানসান নামের পর্বত ও অরণ্যময় এলাকাটি মনোরম দৃশ্যের জন্য পর্যটকদের কাছে খুবই আকর্ষণীয়। উত্তর কোরীয় সরকার জায়গাটিকে একটি পর্যটন এলাকা হিসেবে নির্ধারণ করেছে এবং এটি সরকারের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম উৎস বলে এখানে সমস্ত অর্থের আদান-প্রদান ডলারে সম্পন্ন হয়। রাজধানী পিয়ং ইয়াং শহরটিতেও পর্যটকদের জন্য অনেক দর্শনীয় স্থান আছে, বিশেষ করে উত্তর কোরিয়ার কেন্দ্রীয় চিড়িয়াখানাটি

জনসংখ্যা সম্পাদনা

উত্তর কোরিয়ার জনসংখ্যা সংগঠন একেবারে সরল। সংখ্যাগরিষ্ঠ হচ্ছে কোরীয় সম্প্রদায়, আরো আছে জাপানি, প্রবাসী চীনা ইত্যাদি। কোরীয় কেন্দ্রীয় গণমাধ্যম ১৬ই ডিসেম্বর, ২০০৯ রিপোর্ট অনুসারে, ২০০৮ সালের ১০ই জানুয়ারি উত্তর কোরিয়ার মোট জনসংখ্যা দাঁড়ায় ২ কোটি ৪০লক্ষের বেশি।

কোরীয় ভাষা উত্তর কোরিয়ার জাতীয় ভাষা। এখানকার প্রায় ২ কোটি ৩০ লক্ষ মানুষ কোরীয় ভাষায় কথা বলেন। উত্তর কোরিয়াতে ভাষাগত বৈচিত্র্য নেই বললেই চলে। কোরীয় ব্যতীয় কোন উল্লেখযোগ্য ভাষাগত বা জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায় এখানে বাস করে না।

উত্তর কোরিয়ার আদর্শ কোরীয় ভাষার নাম মুনহোয়াও, যার অর্থ পরিশীলিত ভাষা। এটি দক্ষিণ কোরিয়ায় ব্যবহৃত আদর্শ কোরীয় ভাষাটির চেয়ে আলাদা। এটি উত্তর কোরিয়ার রাজধানী পিয়ং ইয়াং অঞ্চলে প্রচলিত ভাষার উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। উত্তর কোরিয়াতে ছয়টি আঞ্চলিক উপভাষা রয়েছে, তবে চেজু দ্বীপের উপভাষাটি বাদে এরা পরস্পর বোধগম্য।

উত্তর কোরিয়াতে ব্যবহৃত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিদেশি ভাষা সম্ভবত চীনা ভাষার অবস্থান। উত্তর কোরিয়ার সাক্ষরতার হার উচ্চ, প্রায় ৯৩%।১৯৪৯ সালে উত্তর কোরিয়াতে আইন করে গণমাধ্যমে চীনা অক্ষর ব্যবহার করে কোরীয় ভাষা লেখা নিষিদ্ধ করা হয়। তবে একই সাথে উত্তর কোরিয়ার স্কুলগুলিতে চীনা ভাষা শিক্ষার ব্যবস্থাও করা হয়েছে। অন্যদিকে দক্ষিণ কোরিয়ার ভাষাতে ইংরেজি ও জাপানি শব্দ ব্যবহারের প্রবণতা লক্ষ করা যায়, যা উত্তর কোরিয়াতে সমালোচিত। ভাষা পরিকল্পনা, ভাষা নীতি, এবং নতুন শব্দ সৃষ্টি ও গ্রহণের নীতি প্রণয়নের ব্যাপারেও উত্তর কোরিয়ার প্রশাসন দক্ষিণ কোরীয় প্রশাসনের চেয়ে বেশি উদ্যমী।

উত্তর কোরিয়ায় শিক্ষিতের হার আনুমানিক ৯৮ শতাংশ।

পর্যটন সম্পাদনা

উত্তর কোরিয়ার পর্যটন সরকার দ্বারা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত। দেশটির পূর্ব প্রান্তে সাগরের কোল ঘেঁষে অবস্থিত কুমগানসান নামের পর্বত ও অরণ্যময় এলাকাটি মনোরম দৃশ্যের জন্য পর্যটকদের কাছে খুবই আকর্ষণীয়। উত্তর কোরিয়া সরকার জায়গাটিকে একটি পর্যটন এলাকা হিসেবে নির্ধারণ করেছে এবং এটি সরকারের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম উৎস বলে এখানে সমস্ত অর্থের আদান-প্রদান ডলারে সম্পন্ন হয়। রাজধানী পিয়ংইয়াং শহরটিতেও পর্যটকদের জন্য অনেক দর্শনীয় স্থান আছে, বিশেষ করে উত্তর কোরিয়ার কেন্দ্রীয় চিড়িয়াখানাটি।

পরিবহন ব্যবস্থা সম্পাদনা

পিয়ং ইয়াং মেট্রো সম্পাদনা

পিয়ং ইয়াং মেট্রো হচ্ছে এমন এক ধরনের দ্রুতগতি সম্পন্ন পাতাল রেল ব্যবস্থা যা কিনা উত্তর কোরিয়ার রাজধানী পিয়ং ইয়াং এ অবস্থিত। এতে রয়েছে দুটি লাইন। প্রতিদিন এতে প্রায় ৩০০০০০ থেকে ৭০০০০০ মানুষ চলাচল করে। এটি নির্মাণ শুরু হয় ১৯৬৮ সালে এবং ১৯৭৩ সালে মহান নেতা কিম ইল সুং এটি জনসাধারণের জন্য খুলে দেন। পিয়ং ইয়াং মেট্রো হচ্ছে দুনিয়ার সবচেয়ে গভীর পাতালরেল। প্রায় ১১০ মিটার(৩৬০ ফিট)। পিয়ং ইয়াং মেট্রো হচ্ছে অন্যতম দ্রুতগতির বাহন। এ্তে অনেক বিদেশিও ভ্রমণ করেছে। এটি দুনিয়ার অনেক গুলো সস্তা বাহনগুলির মধ্যে একটি,মাত্র ৫ KP₩(০.০৩ মার্কিন মুদ্রা) প্রতি টিকিট। এতে এলুয়মিনিয়াম এর মুদ্রা টিকিট হিসাবে প্রদান করা হয়। এতে ধূমপান করা এবং খাওয়া নিষেধ,এর জন্য বড় জরিমানা করা হয়। এটি উত্তর কোরিয়ার পরিবহন ব্যবস্থার একটি অন্যতম সংযোজন।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Administrative Divisions and Population Figures (#26)" (পিডিএফ)DPRK: The Land of the Morning Calm। Permanent Committee on Geographical Names for British Official Use। 2003-04। ২০০৬-০৯-২৫ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ 2006-10-10  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)
  2. "Korea, North"CIA World Factbook। ২০০৭। ২০১৫-০৭-০৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৮-০১  North Korea itself does not disclose figures.
  3. "Country Profile: North Korea"Foreign and Commonwealth Office, UK2007-07-20। সংগ্রহের তারিখ 2007-08-01  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)
  4. Aleksandr Vladimirovich Avakov (২৭ জানুয়ারি ২০১২)। Quality of Life, Balance of Powers, and Nuclear Weapons (2012): A Statistical Yearbook for Statesmen and Citizens। Algora Publishing। পৃষ্ঠা 54। আইএসবিএন 978-0-87586-892-9 
  5. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; CIATelephone নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি


উদ্ধৃতি ত্রুটি: "lower-alpha" নামক গ্রুপের জন্য <ref> ট্যাগ রয়েছে, কিন্তু এর জন্য কোন সঙ্গতিপূর্ণ <references group="lower-alpha"/> ট্যাগ পাওয়া যায়নি