পিয়ং ইয়াং

উত্তর কোরিয়ার রাজধানী

পিয়ং ইয়াং (কোরীয়: 평양, কোরীয়: [pʰjʌŋjaŋ]) পূর্ব এশিয়ার রাষ্ট্র উত্তর কোরিয়ার রাজধানী শহর। প্রাদেশিক মর্যাদাবিশিষ্ট এই শহরটি কোরীয় উপদ্বীপের উত্তরভাগে অবস্থিত উত্তর কোরিয়া দেশটির পশ্চিম-মধ্য অংশে, তেদোং নদীর তীরে, কোরীয় উপসাগর (পীতসাগর) থেকে মূল ভূখণ্ডের ৪৮ কিলোমিটার অভ্যন্তরে একটি সমতল ভূমির উপরে অবস্থিত। শহরটি এখান থেকে উত্তর ও পূর্ব দিকে অনুচ্চ কিছু পর্বতমালার দিকে বিস্তৃত হয়েছে।

পিয়ং ইয়াং
평양
সরাসরি কেন্দ্রশাসিত নগরী
পিয়ং ইয়াং সরাসরি কেন্দ্রশাসিত নগরী
  প্রতিলিপি
 • চোসুনগুল평양 직할시
 • হানজা直轄市
 • McCune-ReischauerP'yŏngyang Chikhalsi
 • Revised RomanizationPyeongyang Jikhalsi
ডাকনাম: Ryŏkdongchŏk Lotŏng (력동적 로동)   (Korean)
" Dynamic Labors "
উত্তর কোরিয়ার মানচিত্রে পিয়ং ইয়াং নগরী।
উত্তর কোরিয়ার মানচিত্রে পিয়ং ইয়াং নগরী।
রাষ্ট্র উত্তর কোরিয়া
প্রশাসনিক অঞ্চলপিয়ং আন
প্রতিষ্ঠাকাল১১২২ খৃষ্টপূর্বাব্দ
Districts
আয়তন[১]
 • মোট২,০০০ বর্গকিমি (৮০০ বর্গমাইল)
উচ্চতা২৭ মিটার (৮৯ ফুট)
জনসংখ্যা (2008)
 • মোট৩২,৫৫,৩৮৮
 • জনঘনত্ব১,৬০০/বর্গকিমি (৪,২০০/বর্গমাইল)
 • Dialectপিয়ং আন

পিয়ং ইয়াং উত্তর কোরিয়ার বৃহত্তম শহর। এটি দেশটির শিক্ষা-সংস্কৃতি, ব্যবসাবাণিজ্য ও প্রশাসনের প্রধান কেন্দ্র। এছাড়াও পিয়ং ইয়াং উত্তর কোরিয়ার শিল্পের একটি প্রধান কেন্দ্র; শহরের কারখানাগুলিতে কাপড়, বস্ত্র, খাদ্যদ্রব্য, যন্ত্রপাতি, রাসায়নিক দ্রব্য এবং অন্যান্য পণ্য উৎপাদন করা হয়।

ইতিহাস সম্পাদনা

উত্তর কোরিয়ার কিংবদন্তি অনুসারে পিয়ং ইয়াং শহরটি কোরিয়ার প্রাচীনতম শহর যা ১১২২ খ্রিস্টপূর্বাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয়। বলা হয় যে শহরটি আরও প্রাচীন আরেকটি শহরের অবস্থানে নির্মাণ করা হয়েছিল, যা ছিল কোরীয় কিংবদন্তির তানগুন রাজবংশের (আনুমানিক ২৩৩৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দের) রাজধানী। পিয়ং ইয়াং সম্পর্কে সবচেয়ে প্রাচীন ঐতিহাসিক দলিলগুলি ১০৮ খ্রিস্টপূর্বাব্দে রচিত হয়। ঐ বছর চীনারা পিয়ং ইয়াঙে একটি বাণিজ্যকুঠি প্রতিষ্ঠা করে এবং পরবর্তীতে শহরটিকে ঘিরে দুর্গপ্রাচীর নির্মাণ করে। পিয়ং ইয়াং ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ে বহুবার আক্রমণের শিকার হয় এবং প্রতিবারই একে নতুন করে গড়ে তোলা হয়। ৪২৭ খ্রিষ্টাব্দে শহরটি উত্তর কোরিয়ার কোগুরিয়ো রাজ্যের রাজধানীতে পরিণত হয়। ৬৬৮ সালে চীনা আক্রমণকারীরা এটিকে দখল করে নেয়। ৬৭৬ সালে দক্ষিণের সিল্লা রাজ্য শহরটি নিয়ন্ত্রণে নেয়। কোরিয়ার কোরিয়ো রাজবংশ (৯১৮-১৩৯২) শহরটিকে তাদের দ্বিতীয় রাজধানীর মর্যাদা দেয়। ১৫৯২-১৫৯৩ সালে জাপানিরা শহরটি দখলে নেয়। ১৭শ শতকের শুরুর দিকে ১৬২৭ সালে চৈনিক মাঞ্চুরা শহরটিতে ধ্বংসলীলা চালায়। ১৯শ শতকের শেষের দিকে বহু পশ্চিমা খ্রিস্টান ধর্মপ্রচারক শহরে বাস করা শুরু করেন। ১৮৯০-এর দশকে চীন-জাপান যুদ্ধের সময় (১৮৯৪-৯৫) শহরটির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। যুদ্ধশেষে মহামারী বা প্লেগ ছড়িয়ে পড়লে শহরটি জনশূন্য হয়ে পড়ে। ১৯১০ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত জাপানিরা শহরটিকে নিয়ন্ত্রণ করত; তারা এটিকে হেইজো নামে ডাকত। জাপানিরা শহরটিকে একটি শিল্পশহর হিসেবে গড়ে তোলে এবং এখানে বহু কলকারখানা স্থাপন করে। ১৯৪৫ সালে কোরিয়া জাপান থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। জাপানি শাসনের সময় খ্রিস্টান ধর্মপ্রচারকেরা আরও অনেক তৎপরতা চালান। পিয়ং ইয়াং ও তার আশেপাশে ১০০-রও বেশি গির্জা নির্মাণ করা হয়; বলা হত এশিয়ার সব শহরের মধ্যে পিয়ং ইয়াঙেই প্রোটেস্টান্ট (প্রেসবাইটেরীয়) ঘরানার খ্রিস্টান ধর্মপ্রচারকের সংখ্যা সর্বাধিক। ১৯৪৮ সালে কোরিয়া দুইটি দেশে বিভক্ত হয়ে যায়, উত্তর কোরিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়া। পিয়ং ইয়াংকে উত্তর কোরিয়ার রাজধানী বানানো হয়। ১৯৫০ সালে কোরীয় যুদ্ধের সময় উত্তর কোরীয় সেনারা প্রথম দিকে দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউল দখল করলেও শীঘ্রই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে জাতিসংঘ বাহিনী উত্তর কোরীয় বাহিনীকে পিছে হটিয়ে দেয় এবং পিয়ং ইয়াঙের নিয়ন্ত্রণ হাতে নেয়। কিন্তু চীনা সাম্যবাদী সেনারা দ্রুত শহরটিকে পুনরায় দখল করে। কোরীয় যুদ্ধে (১৯৫০-১৯৫৩) মার্কিন বিমানবাহিনীর বিমানগুলি থেকে বহুশতবার বোমাবর্ষণের কারণে শহরের ব্যাপক ধ্বংসসাধন হয়। ১৯৫৩ সালে চীনা ও সোভিয়েত অর্থসাহায্যের মাধ্যমে পিয়ং ইয়াংকে নতুন করে গড়ে তোলা হয়।

বর্তমানে পিয়ং ইয়াং একটি সুপরিকল্পিত আধুনিক নগরী যাতে সুন্দর সুন্দর নগর-উদ্যান ও বাগান, প্রশস্ত সব রাজপথ ও বিশাল বিশাল অ্যাপার্টমেন্ট ভবন আছে। এখানে রয়েছে ১৯৪৬ সালে নির্মিত কিম ২ সুং বিশ্ববিদ্যালয় এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট কারিগরি ও চিকিৎসা ইন্সটিটিউটসমূহ। শহরে বহু গ্রন্থাগার, অপেরা ভবন, মঞ্চশালা, নৃত্যশালা, দড়াবাজি প্রদর্শনী, বৌদ্ধ মন্দির, খ্রিস্টপূর্ব ১ম শতকের সমাধি, কোরীয় কেন্দ্রীয় ইতিহাস জাদুঘর ও একটি চারুকলা জাদুঘর আছে। সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ে কোরীয় কিংবদন্তিতে উল্লিখিত পংখীরাজ ঘোড়া চোলিমা-র বিশাল ব্রোঞ্জ মূর্তি, যা কোরীয় যুদ্ধের পর দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির প্রতীক হিসেবে নির্মাণ করা হয়।

শহরটি দেশটির রেল, সড়কবিমান পরিবহন ব্যবস্থারও কেন্দ্র হিসেবে কাজ করছে। শহরের ভেতরে সাধারণ জনগণের চলাচলের সুবিধার্থে বাস, পাতালরেল ও ট্রলি ব্যবস্থা আছে। শহরের কাছেই সুনান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি উত্তর কোরিয়াতে বিদেশীদের প্রবেশের একমাত্র পথ।

পিয়ং ইয়াং শহরের আয়তন ২০০০ বর্গকিলোমিটার।[২] মূল শহরে প্রায় ২৬ লক্ষ এবং বৃহত্তর মহানগর এলাকাতে ৩৩ লক্ষ লোকের বাস।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Nick Heath-Brown (সম্পাদক), The Statesman's Yearbook 2016: The Politics, Cultures and Economies of the World, পৃষ্ঠা 720 
  2. Nick Heath-Brown (সম্পাদক), The Statesman's Yearbook 2016: The Politics, Cultures and Economies of the World, পৃষ্ঠা 720