বিমান একপ্রকার যন্ত্র যা বায়ুর উপর ভর করে উড়তে সক্ষম হয়। এটি এয়ারফয়েলের স্থির উত্তোলন বা গতিশীল উত্তোলন অথবা কিছু ক্ষেত্রে জেট ইঞ্জিনের নিম্নমুখী ধাক্কা দ্বারা অভিকর্ষের বিপরীতে ক্রিয়া করে।[১]

নাসা কর্তৃক পরীক্ষামূলক কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন বিমান
উত্তর আমেরিকান পি-৫১ মুস্টেং

বিমান কে ঘিরে মানুষের কর্মকাণ্ডকে বলা হয় বিমানচালনা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিমান চালিত হয় এতে উপস্থিত বৈমানিক কর্তৃক, তবে অনেক ক্ষেত্রে মনুষ্যবিহীন উড়োযানগুলো নিয়ন্ত্রিত হয় দূর হতে রিমোট দিয়ে অথবা বিমানে উপস্থিত কম্পিউটারের স্বনিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে।বিভিন্ন ক্ষেত্রের সাপেক্ষে বিমানসমূহকে বিভিন্নভাবে শ্রেণীকরণ করা যায়,যেমন-উত্তোলনের ধরন,ইঞ্জিনের চালনশক্তি, ব্যবহার কিংবা অন্যান্য।

ইতিহাসসম্পাদনা

যদিও বিমানের ছোট প্রতিরূপ উড়ানো বা প্রথম মনুষ্যবাহী উড্ডয়নের ঘটনার পর কয়েক শতাব্দী পার হয়ে গেছে, তবুও আধুনিক সময়ে প্রথম মনুষ্যবাহী আরোহণ এবং নিরাপদ অবতরণ ঘটেছে অষ্টাদশ শতাব্দীতে তৈরিকৃত বৃহদাকৃতি উষ্ণ গ্যাসবেলুন দিয়ে। দুটো বিশ্বযুদ্ধের প্রতিটির মধ্য দিয়ে বিমানের ব্যাপক কৌশলগত উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। ফলস্বরূপ, বিমানের ইতিহাসকে পাঁচটি যুগে বিভক্ত করা যায়:

  • উড্ডয়নের পথিকৃৎ,বিমানচলনের উষালগ্নের বিমানসমূহ, ব্যাপ্তি : শুরুর দিকের পরীক্ষা-নিরীক্ষাগুলো হতে ১৯১৪ পর্যন্ত
  • প্রথম বিশ্বযুদ্ধকালীন সময়, ব্যাপ্তি: ১৯১৪ হতে ১৯১৮ পর্যন্ত
  • বিশ্বযুদ্ধ মধ্যবর্তী বিমানচলন, ব্যাপ্তি: ১৯১৮ হতে ১৯৩৯ পর্যন্ত
  • দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন সময়, ব্যাপ্তি: ১৯৩৯ হতে ১৯৪৫ পর্যন্ত
  • যুদ্ধপরবর্তী যুগ,অথবা জেট যুগ, ব্যাপ্তি: ১৯৪৫ হতে বর্তমান

উত্তোলনের পদ্ধতিসম্পাদনা

বিভিন্ন ধরনের বিমান বায়ুতে উত্তোলনের ক্ষেত্রে বিভিন্ ধরনের পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়। কিছু সাধারণ পদ্ধতি :

বায়ু অপেক্ষা হালকা-বায়ুস্থির বিমানসম্পাদনা

 
উষ্ণ গ্যাসবেলুন

বায়ুস্থির বিমানসমূহ যেমন-উষ্ণ গ্যাসবেলুন, প্লবতার ধারণাকে কাজে লাগিয়ে বায়ুতে ভেসে বেড়ায়।এক্ষেত্রে এদের পানিতে ভাসমান জাহাজের সাথে তুলনা করা যায়।এসব বিমানের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ বিশাল গ্যাসাধার হাইড্রোজেন,হিলিয়াম,উষ্ণ বায়ু ইত্যাদি বায়ু থেকে হালকা গ্যাস দ্বারা পূর্ণ থাকে। সর্বপ্রথম চৈনিকরা খৃষ্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীতে ফানুস উদ্ভাবন করেন।এটি ছিল আকাশে ওড়া প্রথম বিমানসদৃশ বস্তু। এর আগে চৈনিকরাই সর্বপ্রথম আকাশে ওড়া বস্তু হিসেবে দু'হাজার বছরেরও বেশি পূর্বে ঘুড়ি উড়ায়। মূলত উষ্ণ গ্যাসবেলুনগুলোই বায়ুস্থির বিমান নামে পরিচিত।তাছাড়া বিশালাকৃতির,শক্তিচালিত,পাখাবিশিষ্ট বিশেষ নকশার বিমানগুলো পরিচিত ছিলো এয়ারশিপ নামে [২][৩]।তবে এগুলো কখনো বাস্তবায়িত হয়নি।কিছু,বায়ুস্থির বিমান ছিলো কঠিন কাঠামো বিশিষ্ট,শক্তিচালিত ও নিয়ন্ত্রণযোগ্য,যাদের বলা হয় "'ডিরিজিবল"'।এদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ছিল জেপলিন বিমান যা পরবর্তীতে দুর্ঘটনায় পতিত হয়।

 
জেপলিন বিমান

আবার, কিছু বায়ুস্থির বিমানের কাঠামো ছিল নমনীয় এবং বায়ুগতিময় আকৃতির যাদের বলা হতো "'ব্লিম্প"'।

বায়ু অপেক্ষা ভারী- বায়ুগতিময় বিমানসম্পাদনা

এধরনের বিমানগুলো কোন না কোন উপায়ে বায়ু বা গ্যাসকে নিচের দিকে সজোরে চালিত করে,যার ফলে নিউটনের গতির তৃতীয় সুত্র অনুযায়ী একটি ঊর্ধ্বমুখী প্রতিক্রিয়া বলের সৃষ্টি হয়।এ বল বিমানকে বাতাসে ভেসে থাকতে সাহায্য করে । সাধারণত বায়ুগতিময় বিমানসমূহ দু'ভাবে উত্তোলন ঘটায়- বায়ুগতিময় উত্তোলন ও ইঞ্জিনের শক্তিচালিত উত্তোলন।

বায়ুগতিময় উত্তোলনসম্পাদনা

এক্ষেত্রে সাধারণত পাখা ব্যবহৃত হয়।বিশেষকরে স্থির পাখাবিশিষ্ট উড়োজাহাজে,যেখানে পাখার সম্মুখবর্তী চলনে বিমান ভেসে থাকে এবং ঘুর্ণায়মান পাখাবিশিষ্ট উড়োজাহাজ,যেখানে পাখার ঘুর্ণনের ফলে বিমান বাতাসে ভাসে।পাখা হচ্ছে একটি সমতল,চওড়া,অনুভূমিক তল যা উড়োজাহাজে এয়ারফয়েল হিসেবে আড়াআড়ি ব্যবহৃত হয়।বায়ু পাখার উপর দিয়ে উড়ে গেলে বিমান উড়ে।

 
এমিরেটস এয়ারবাস এ৩৮০
 
বেল ২০৬ হেলিকপ্টার

শক্তিচালিত উত্তোলনসম্পাদনা

এক্ষেত্রে উড়োজাহাজের ইঞ্জিন কর্তৃক নিম্নমুখী যে ধাক্কা প্রদত্ত হয় তার ফলস্বরূপ বিমান বায়ুতে আরোহণ ও অবতরণ করে।ভি/এসটিওএল বিমান,যেমন হ্যারিয়ার জাম্প জেট কিংবা এফ-৩৫বি শক্তিচালিত উত্তোলনের সাহায্যে আরোহণ করে এবং তারপর বায়ুগতিময় উত্তোলনের সাহায্যে এগিয়ে চলে।

 
হ্যারিয়ার জাম্প জেট

মানদণ্ড- আকার ও গতিসম্পাদনা

আকারসম্পাদনা

  • সবচেয়ে ছোট বিমান- খেলনা বিমানসমূহ,তবে এর চেয়েও ছোট- ন্যানোবিমান
  • আয়তন ও আকারে সর্ববৃহৎ বিমান- ব্রিটিশ এয়ারল্যান্ডার ১০,একটি হাইব্রিড ব্লিম্প যা প্রায় ৩০২ ফুট দীর্ঘ এবং ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৯০ মাইল বেগে উড়তে পারে।[৪][৫][৬]
  • সবচেয়ে ভারী বিমানসর্ববৃহৎ সচল স্থির পাখাবিশিষ্ট বিমান- আন্টোনভ এন-২২৫।আশির দশকে ইউক্রেনে নির্মিত, রাশিয়ান এসব পরিবহন বিমানগুলোর দৈর্ঘ্য ছিল ৮৪ মিটার এবং এদের পাখাগুলোর এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত দুরত্ব ৮৮ মিটার। এদের সর্বোচ্চ লোডেড ভর ৫৫০-৭০০ টন।তাছাড়া এদের সর্বোচ্চ বেগ প্রায় ঘণ্টায় ৫০০ মাইল। [৭][৮]
  • সবচেয়ে বড় সামরিক বিমান — যৌথভাবে ইউক্রেনীয়/রাশিয়ান আন্টোনভ এন-১২৪ এবং আমেরিকান লকহিড সি-৫ গ্যালাক্সি পরিবহন বিমান। এদের উভয়ের সর্বোচ্চ লোডেড ভর প্রায় ৩৮০ টন।[৯]
  • সবচেয়ে বড় বেসামরিক বিমান- যৌথভাবে ফরাসী এয়ারবাস বেলুগা ও আমেরিকান বোয়িং ড্রিমলিফটার পরিবহন বিমান।তাছাড়া,সবচেয়ে বড় বেসামরিক বিমান ফরাসী এয়ারবাস এ৩৮০ 'সুপার-জাম্বো' জেট।[৯][১০]

গতিসম্পাদনা

  • সর্বোচ্চ গতিসম্পন্ন উড্ডয়নের রেকর্ড ধারণকারী বিমান- নাসার এক্স-৪৩এ পেগাসাস, যা স্ক্রামজেট চালিত,শব্দোত্তর গতিসম্পন্ন, লিফটিং বডি, পরীক্ষামূলক বিমান যা ১৬ নভেম্বর, ২০০৪ তারিখে ম্যাক ৯.৬ বা ঘণ্টাপ্রতি ৭০০০ মাইল বেগ অর্জন করার মধ্য দিয়ে রেকর্ড গড়ে।[১১][১২]
  • সর্বাধিক গতিসম্পন্ন শক্তিচালিত উড়োজাহাজ উড্ডয়নের রেকর্ড- উত্তর আমেরিকান এক্স-১৫এ-২ উড়োজাহাজ ১৯৬৭ সালের ৩ অক্টোবর, ম্যাক ৬.৭২ বা ৪৫২০ মাইল প্রতিঘণ্টা বেগ তুলে এ রেকর্ড গড়ে।[১৩][১৪]
  • রকেট কিংবা মিসাইল ব্যতীত,দ্রুততম প্রডাকশন বিমান-
    • দ্রুততম স্থির পাখাবিশিষ্ট বিমান এবং গ্লাইডার- স্পেস শাটল, যা প্রায় ম্যাক ২৫ বা ঘণ্টায় ১৭০০০ মাইল বেগ তুলতে সক্ষম হয়।[১৩][১৫]
    • দ্রুততম সামরিক বিমান- লকহিড এসআর-৭১ ব্ল্যাকবার্ড(ম্যাক ৩.৩ বা ২২০০ মাইল প্রতিঘণ্টা)[১৩][১৬][১৭]
    • দ্রুততম বর্তমান সামরিক বিমান- যৌথভাবে সোভিয়েত/রাশিয়ান মিগ-২৫ যুদ্ধবিমান(ম্যাক ৩.২, ইঞ্জিন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া সাপেক্ষে এবং ম্যাক ২.৮৩, স্বাভাবিক অবস্থায়) এবং রাশিয়ান মিগ-৩১ (ম্যাক ২.৮৩)[১৮][১৯]
    • সর্বকালের দ্রুততম বেসামরিক ও যাত্রীবাহী বিমান-টুপোলেভ টু-১৪৪ সুপারসনিক জেট বিমান।(ম্যাক ২.৩৫)[২০]
    • দ্রুততম বর্তমান বেসামরিক উড়োজাহাজ- আমেরিকান সেসনা সিটেশন টেন বিমান(ম্যাক ০.৯৩৫)[২১][২২]
    • দ্রুততম বর্তমান যাত্রীবাহী বিমান- বোয়িং ৭৪৭(ম্যাক ০.৮৮৫)[১৩][২৩]

পরিচালনাসম্পাদনা

শক্তিহীন বিমানসম্পাদনা

গ্লাইডার বিমানগুলো বায়ু অপেক্ষ ভারী এবংএকবার বাতাসে ভাসার পর এদের আর কোন শক্তিচালনার দরকার হয় না।এদের উড্ডয়নের জন্য বায়ুর সংস্পর্শ প্রয়োজন। উষ্ণ গ্যাসবেলুনগুলো বায়ু অপেক্ষা হালকা হয় এবং এরা বায়ুপ্রবাহের সাথে ভেসে বেড়ায়।এদের দিক বা গতি নিয়ন্ত্রণ করা না গেলেও বায়ুতে এদের উচ্চতা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। ঘুড়ি শক্তিহীন বিমান[২৪] তবে এদের ভূপৃষ্ঠ হতে সুতা বা অন্য কোনকিছুর সাহায্যে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

শক্তিচালিত বিমানসম্পাদনা

এদের ক্ষেত্রে বিমানে এক বা একাধিক যান্ত্রিক শক্তি সরবরাহকারী ইঞ্জিন থাকে যারা ধাক্কা তৈরিতে সহায়তা করে।

প্রোপেলার বিমানসম্পাদনা

 
প্রোপেলার বিমান

এধরনের বিমানে সামনে বা পেছনে সংযুক্ত প্রোপেলারের সাহায্যে এরা সম্মুখবর্তী ধাক্কা লাভ করে।

জেট বিমানসম্পাদনা

 
জেট বিমান

জেট বিমানে থাকে জেট ইঞ্জিন যা বাতাস ভিতরে টেনে নিয়ে তার দহন করে এবং উচ্চবেগে নিক্ষেপ করার মাধ্যমে ধাক্কা অর্জন করে। অনেকক্ষেত্রে,অতিরিক্ত ধাক্কা অর্জনের জন্য টার্বোফ্যান বা টার্বোগ্যাস ইঞ্জিন ব্যবহৃত হয়।তাছাড়া অতিরিক্ত জ্বালানী প্রবাহের জন্য আফটারবার্নার যুদ্ধবিমানগুলোতে ব্যবহৃত হয়।

রোটরবিমানসম্পাদনা

 
ডুয়েল রোটর বিমান

এধরনের বিমানে সাধারণত অনুভূমিকভাবে বসানো ঘুর্ণায়মান পাখা বা রোটর নিম্নমুখী ধাক্কা তৈরী করে এবং ভুমির সাথে রোটরের কৌণিক অবস্থান পরিবর্তন করার মাধ্যমে এদের নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

নকশা এবং নির্মাণসম্পাদনা

একটি বিমান নকশা করার ক্ষেত্রে গ্রাহক ও উৎপাদক চাহিদা,নিরাপত্তাবিধি,গাঠনিক ও অর্থনৈতিক বিভিন্ন প্রতিবন্ধক-এর দিকে লক্ষ রাখতে হয়।বহু ক্ষেত্রে বিমান নকশা করার প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রিত হয় জাতীয় নভোযোগ্যতা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক।

বিমানের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অংশকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়:
  • গঠন- এর মধ্যে পড়ে বিমানের ভারবহনকারী অংশ ও এর সাথে সংশ্লিষ্ট যন্ত্রাংশ।
  • শক্তিচালনা- এর মধ্যে পড়ে বিমানের শক্তিসরবরাহকারী অংশ ও সংশ্লিষ্ট যন্ত্রাংশ।
  • অ্যাভিওনিক্স- এর মধ্যে পড়ে বিমানের নিয়ন্ত্রণ,নেভিগেশন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা।

গঠনসম্পাদনা

বিভিন্ন ধরনের বিমানের বিভিন্ন ধরনের গাঠনিক নকশা রয়েছে।যেমন,প্যারাগ্লাইডার এর সম্পূর্ণ গঠন নমনীয় বস্তু দিয়ে নির্মিত।বেলুনের নিচে ভারবহনের জন্য অনমনীয় ঝুড়ি বা গন্ডোলা ঝুলানো থাকে। বর্তমানে বেশিরভাগ বিমানের গঠন অর্ধ-মনাকক পদ্ধতিতে নির্মিত হয়,যেখানে বিমানের বহিঃস্থ আবরণ ও অভ্যন্তরীণ কাঠামো মিলিতভাবে বিমানের গঠন তৈরী করে।

বায়ুস্থির বিমানসম্পাদনা

এধরনের বায়ু অপেক্ষা হালকা বিমানগুলোতে থাকে এক বা একাধিক গ্যাসাধার এবং অবলম্বন হিসেবে থাকে নমনীয় তারের তৈরী একটি কাঠামো।

বায়ুগতিময় বিমানসম্পাদনা

 
অগাস্টা ওয়েস্টল্যান্ড এডব্লিউ১০১ হেলিকপ্টার এয়ারফ্রেম

বায়ু অপেক্ষা ভারী এ বিমানগুলো গঠিত হয় ফিউসিলেজ এবং এর সাথে সংযুক্ত পাখা দিয়ে।ফিউসিলেজের পেছনে বিমানের লেজ অংশ সংযুক্ত থাকে।পাখা ফিউসিলেজের সঙ্গে অথবা ঘুর্ণায়মান শ্যাফটের সাথে যুক্ত থাকতে পারে।

অ্যাভিওনিক্সসম্পাদনা

বিমানের উড্ডয়ন নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট ককপিট যন্ত্রাংশ,নেভিগেশন,রাডার ও যোগাযোগ ব্যবস্থা, অ্যাভিওনিক্সের আওতায় পড়ে।

উড্ডয়ন বৈশিষ্ট্যসম্পাদনা

কোনো বিমানের ফ্লাইট এনভেলপ বলতে বোঝায় বিমানের গতি,ভারবহন,উচ্চতা,ম্যানুভারেবিলিটি ইত্যাদি সম্পর্কিত সর্বোচ্চ সক্ষমতা[২৫][২৬]

বিস্তারসম্পাদনা

 
বোয়িং ৭৭৭-২০০এলআর পৃথিবীর সর্বাধিক বিস্তার সম্পন্ন বিমান যা এক উড্ডয়নে প্রায় পৃথিবীর অর্ধেক পরিধি অতিক্রম করতে পারে

বিস্তার বলতে বোঝায় কোনো বিমান এর আরোহণ ও অবতরণের মধ্যবর্তী সময়ে যে দূরত্ব অতিক্রম করে।এ দুরত্ব বিমানের বায়ুতে অবস্থানকালীন সময়ের উপর নির্ভর করে। শক্তিচালিত বিমানের ক্ষেত্রে এ সময়সীমা নির্ভর করে বিমানের জ্বালানী ধারণক্ষমতা ও জ্বালানী ব্যবহারের হারের উপর। শক্তিহীন বিমানের ক্ষেত্রে এ সময়সীমা আবহাওয়ার পরিস্থিতি ও বৈমানিকের সহনক্ষমতার উপর নির্ভর করে।

উড্ডয়ন গতিবিদ্যাসম্পাদনা

উড্ডয়ন গতিবিদ্যা হচ্ছে বিজ্ঞানের একটি শাখা,যেখানে তিনটি মাত্রায় বিমানের নিয়ন্ত্রণ ও স্থাপন নিয়ে আলোচনা করা হয়।উড্ডয়ন গতিবিদ্যার এই গুরুত্বপূর্ণ তিনটি স্থিতিমাপ হচ্ছে বিমানের ভরকেন্দ্র সাপেক্ষে তিনটি অক্ষ বরাবর এর ঘূর্ণন কোণ,যেগুলো হল-

  • রোল- বিমানের দৈর্ঘ্য বরাবর ঘূর্ণন।
  • পিচ- বিমানের পাখা বরাবর ঘূর্ণন।
  • ইয়- বিমানের উল্লম্ব বরাবর ঘূর্ণন।

স্থিতিসম্পাদনা

একটি অস্থিতিশীল বিমান নিজের গতিপথ পরিবর্তন করতে চায় এবং একে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন।তবে,একটি সুস্থিতিশীল বিমান এর গতিপথে অটল থাকে এবং এর পরিবর্তন করাও কঠিন।নির্দিষ্ট স্থিতিমাত্রার জন্য ঠিকঠাক নকশা করা গুরুত্বপূর্ণ। তবে বর্তমানে কম্পিউটারচালিত নিয়ন্ত্রণব্যবস্থার মাধ্যমে স্থিতি অর্জন করা সহজ হয়ে গেছে। একটি স্থিরপাখাবিশিষ্ট বিমানে রোল,পিচ ও ইয়-এর ক্ষেত্রে অস্থিতিশীল হয়।এর পিচ ও ইয় অস্থিতিশীলতা দূর করার জন্য ব্যবহৃত হয় অনুভূমিক ও উল্লম্ব সুস্থিতিকারক যেগুলো বিমানের লেজ অংশে সজ্জিত থাকে।[২৭][২৮] রোটরবিমানের ক্ষেত্রেও 'ইয়' অস্থিতিশীলতা দূর করার জন্য উল্লম্ব সুস্থিতিকারক ব্যবহৃত হয়। তবে বেলুন বিমানের নিচে ভর সংযুক্ত থাকায় এরা পিচ ও রোলের ক্ষেত্রে সুস্থির হয়।

নিয়ন্ত্রণসম্পাদনা

উড্ডয়ন নিয়ন্ত্রণ তলের সাহায্যে একজন বৈমানিক কোনো বিমানের উড্ডয়ন উচ্চতা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।এটি সাধারণত বিমানের পাখার অংশ এবং সংশ্লিষ্ট সুস্থিতিকারকের সাথে একীভূত অবস্থায় থাকে।বিমানের ইতিহাসে এর উদ্ভাবন একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

বৈমানিক প্রকৌশলীগণ বিমানের ভরকেন্দ্র সাপেক্ষে এর স্থাপনের উপর ভিত্তি করে নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা তৈরী করেছেন।এর মধ্যে আছে প্রণোদক যা বিমানের বলকে বিভিন্ন দিকে চালনা করে এবং ঘূর্ণন বলের সৃষ্টি করে, যার ফলে বিমানের রোল,পিচ ও ইয় ঘূর্ণন ঘটে।নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা দিয়ে বিমানের উপর টান বল বৃদ্ধি বা হ্রাস করা যায়।

কোনো বিমানের উপর ক্রিয়াশীল দুইটি প্রধান বায়ুগতিময় বল হল- এর উত্তোলন বল যা একে বাতাসে ভাসিয়ে রাখে এবং এর গতির বিপরীত দিকে ক্রিয়াশীল টান বল।নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার সাহায্যে এদের ওপরও প্রভাব বিস্তার করা যায়।

বিমান ব্যবহারের প্রভাবসম্পাদনা

বিমান আমাদের লম্বা দূরত্বের,উচ্চ গতির ও কিছু ক্ষেত্রে জ্বালানীসাশ্রয়ী ভ্রমণ উপহার দেয়।জ্বালানীসাশ্রয়ী দিক ছাড়াও বিমান, পরিবেশজলবায়ুর উপর অন্যান্য প্রভাব ফেলে।এরা অন্যান্য যাতায়াত-মাধ্যমের তুলনায় অনেক বেশি আওয়াজ করে এবং অধিক উচ্চতাসম্পন্ন উড্ডয়নে 'কনট্রেইল' সৃষ্ট হয় যা জলবায়ুর উপর প্রভাব ফেলে বলে মনে করা হয়।

বিমানের ব্যবহারসম্পাদনা

বিভিন্ন ধরনের ব্যবহারের প্রতি লক্ষ রেখে বিভিন্ন ধরনের বিমান প্রস্তুত করা হয়; সামরিক বিমান,যার মধ্যে কেবল যুদ্ধবিমানই নয়,অন্যান্য সহযোগী বিমানও অন্তর্ভুক্ত, এবং বেসামরিক বিমান,যার মধ্যে সকল অসামরিক, পরীক্ষামূলক ও মডেল বা প্রতিরূপ বিমান অন্তর্ভুক্ত।

সামরিকসম্পাদনা

 
নরথ্রপ গ্রামেন বি-২ স্পিরিট বম্বার

সামরিক বিমান' বলতে বোঝায় সেসমস্ত বিমান,যেগুলো যেকোন সরকারি কিংবা বিদ্রোহী সশস্ত্র বাহিনী কর্তৃক চালিত হয়[২৯] Military aircraft can be either combat or non-combat:

  • Combat aircraft are aircraft designed to destroy enemy equipment using its own armament.[২৯]।এদের মধ্যে পড়ে- যুদ্ধবিমানসহযোগী বিমান
  • যুদ্ধবিমান-যুদ্ধবিমান গুলোকে নিজস্ব আগ্নেয়াস্ত্র দ্বারা শত্রুপক্ষের বিনাশ করার মত সক্ষমতা দিয়ে নকশা করা হয়।এদের প্রধানত দু'ভাগে ভাগ করা হয়- ফাইটার বিমানবম্বার বিমান।তাছাড়া, কিছু মধ্যবর্তী বিভাজন হিসেবে রয়েছে- ফাইটার-বম্বার বিমান,অ্যাটাক হেলিকপ্টার ইত্যাদি।
  • সহযোগী বিমান- এধরনের বিমান আক্রমণের জন্য নয় বরং রক্ষণের জন্য হালকা আগ্নেয়াস্ত্র সজ্জিত হয়।এদের কাজের মধ্যে পড়ে- খোজঁ ও উদ্ধার,পর্যবেক্ষণ, পরিবহন, প্রশিক্ষণ ইত্যাদি।

সামরিক বিমানসমূহ সাধারণত বায়ু অপেক্ষা ভারী ধরনের হয়।তবে অনেক ক্ষেত্রে বায়ু অপেক্ষা হালকা বিমান ব্যবহারের নজিরও আছে।

বেসামরিকসম্পাদনা

 
ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ বোয়িং ৭৪৭-৪০০ বাণিজ্যিক বিমান

বেসামরিক বিমান দু'ধরনের হয়- বাণিজ্যিক সাধারণ

  • বাণিজ্যিক বিমানগুলো সরকারি ও বেসরকারি বিমান চলাচল সংস্থায় বাণিজ্যিকভাবে যাত্রী পরিবহন,ডাক যোগাযোগ ও পণ্য পরিবহনে ব্যবহৃত হয়।
  • সাধারণ বিমানের আওতায় বাণিজ্যিক ব্যতীত অন্যান্য সকল ব্যক্তিগত ও বেসরকারি বিমান পড়ে।

পরীক্ষামূলকসম্পাদনা

যেসকল বিমান উড্ডয়নের জন্য সম্পূর্ণ যোগ্য হিসেবে প্রমাণিত নয়,তাদের পরীক্ষামূলক বিমান বলা হয়।এধরনের বিমানের 'পরীক্ষামূলক' শ্রেণিতে এফএএ নভোযোগ্যতা সনদ থাকে।মূলত নিত্যনতুন বিমানসম্পর্কিত প্রযুক্তি এসব বিমানগুলোর মাধ্যমে পরীক্ষা করে দেখা হয়।

আরো দেখুনসম্পাদনা

তথ্যসূত্রসম্পাদনা

  1. "বিমানের সংজ্ঞা-Dictionary.com এ বিমানের সংজ্ঞা"dictionary.com 
  2. Ezekiel Airship (1902) wright-brothers.orgaltereddimensions.net "এয়ারশিপ,"-এইচটিএ বিমান হিসেবে.
  3. The Bridgeport Herald, August 18, 1901 ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত আগস্ট ৩, ২০১৩ তারিখে "এয়ারশিপ,"হোয়াইটহ্যাড বিমান হিসেবে.
  4. "World's largest aircraft the Airlander makes maiden flight in UK," ১৬ আগস্ট,২০১৬,লন্ডন 'Daily Telegraph'
  5. [ "Airlander 10, the world's largest aircraft, takes off for the first time,"]১৯ আগস্ট,২০১৬,সিবিএস নিউজ টিভি
  6. Kottasova, Ivana "The world's largest aircraft crashes after 2nd test flight",২৪ আগস্ট,২০১৬,সিএনএন টেক
  7. July, Dyre। "Fly Drive Aanbiedingen - FlyDriveReizen.nl"www.flydrivereizen.nl 
  8. "Watch the world's biggest plane land in Australia," ১৬ মে,২০১৬,ফক্স নিউজ
  9. Loftin, Laurence K., Jr., "Wide-Body Transports", in Chapter 13, "Jet Transports," in Part II, "The Jet Age," in Quest for Performance: The Evolution of Modern Aircraft, NASA SP-468, 1985, Scientific and Technical Information Branch, NASA, Washington, D.C., Updated: August 6, 2004, retrieved November 22, 2016.
  10. "Airbus reviews A380 schedule," ২৯ এপ্রিল,২০০৮,The New York Times.
  11. "Hypersonic X-43A Takes Flight.htm," নভেম্বর,২০১৬নাসা
  12. "Fastest aircraft, air-breathing engine," গিনেস বিশ্বরেকর্ড
  13. Jackson, Doug, "Ask Us - Aircraft Speed Records," ২২ এপ্রিল,২০০১,Aerospaceweb.org
  14. "Fastest speed in a non-spacecraft aircraft," গিনেস বিশ্বরেকর্ড
  15. Benson, Tom, ed., "Speed Regimes: Hypersonic Re-Entry," ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৩ নভেম্বর ২০১৬ তারিখে গ্লেন গবেষণা কেন্দ্র,নাসা
  16. "NASA Armstrong Fact Sheet: SR-71 Blackbird" NASA. Retrieved November 22, 2016
  17. "Lockheed SR-71A," ২৯ মে,২০১৫,যুক্তরাষ্ট্র বিমানবাহিনী যাদুঘর
  18. Bender, Jeremy and Amanda Macias, "The 9 fastest piloted planes in the world," ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৫,বিজনেস ইনসাইডার
  19. "Fast and furious - the world's fastest military aircraft," Airforce Technology
  20. "Fastest aircraft, airliner," গিনেস বিশ্বরেকর্ড
  21. Whitfield, Bethany, "Cessna Citation Ten Chases Mach 0.935 Top Speed: Jet would retake speed prize from G650," ২৮ আগস্ট, ২০১২,ফ্লাইং ম্যাগাজিন
  22. "Cessna rolls out first production unit of new Citation X," ১৫ এপ্রিল, ২০১৩,উইচিটা বিজনেস জার্নাল
  23. "Ask Us - Fastest Airliner and Area Rule,"
  24. "Guided Tours of the BGA"nasa.gov। ২৫ মার্চ ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ এপ্রিল ২০১৫ 
  25. "eCFR — Code of Federal Regulations"gpoaccess.gov। ২ এপ্রিল ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ এপ্রিল ২০১৫ 
  26. Flight envelope – diagram
  27. Crane, Dale: Dictionary of Aeronautical Terms, third edition, page 194. Aviation Supplies & Academics, 1997. আইএসবিএন ১-৫৬০২৭-২৮৭-২
  28. Aviation Publishers Co. Limited, From the Ground Up, page 10 (27th revised edition) আইএসবিএন ০-৯৬৯০০৫৪-৯-০
  29. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; gunston নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি