গোবিন্দ

কৃষ্ণের নাম

গোবিন্দগোপাল কৃষ্ণের দুটি বিশেষ নাম ও রূপ। এই রূপে তিনি একটি অল্পবয়স্ক রাখাল বালক। বৈষ্ণবধর্মে তিনি সর্বোচ্চ ঈশ্বর। হিন্দুধর্মের অন্যান্য শাখাও তাঁকে পূজা করে থাকে। প্রাচীন ধর্মগ্রন্থ ব্রহ্মসংহিতা-য় তাঁকে সকল জগতের সৃষ্টির কারণ বলা হয়েছ।

জয়পুরের বিখ্যাত গোবিন্দজী মন্দিরের বিগ্রহ

গোপালরূপী কৃষ্ণ বৈদিক দেবতা ইন্দ্রের পূজা করতে অস্বীকার করেছিলেন। এই কারণে গোপালরূপী কৃষ্ণকে অ-বৈদিক দেবতা হিসেবে গণ্য করা হয়। যদিও কোনো কোনো মতে, ঋগ্বেদ সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণাই এই জাতীয় মতবাদের সৃষ্টির কারণ।[]

ক্লস ক্লোস্টারমিরের মতে, কৃষ্ণ-বাসুদেব পূজা খ্রিস্টের জন্মের কয়েকশো বছর আগে শুরু হয়েছিল। তার সঙ্গে পরবর্তীকালে গোপীজনবল্লভ কৃষ্ণ ও বালগোপাল পূজার প্রথা যুক্ত হয়।[]

নামকরণ

সম্পাদনা

গোবিন্দগোপাল দুটি নামেরই অর্থ রাখাল। সংস্কৃতে গো শব্দের অর্থ গোরু আর পাল বা বিন্দ শব্দের অর্থ যথাক্রমে অন্বেষনকারী বা রক্ষক

ব্যাখ্যা

সম্পাদনা

গোবিন্দ নামটি "বিষ্ণুসহস্রনামে" (বিষ্ণুর এক হাজার নাম-সংবলিত স্তোত্র) ১৮৭ ও ৫৩৯তম নাম।[]

স্বামী তপস্যানন্দ কর্তৃক অনূদিত আদি শঙ্করের "বিষ্ণুসহস্রনাম" ভাষ্য অনুসারে গোবিন্দ শব্দের চারটি ব্যাখ্যা পাওয়া যায়:[]

  1. ঋষিরা কৃষ্ণকে গোবিন্দ বলেন, কারণ তিনি সকল জগতকে পরিব্যাপ্ত করে থাকেন ও তাদের শক্তিমান করেন।
  2. মহাভারত-এর "শান্তিপর্ব"-এ আছে, বিষ্ণু পাতালে তলিয়ে যাওয়া পৃথিবীকে উদ্ধার করার পর দেবতারা তাঁকে গোবিন্দ নামে স্তব করেন।
  3. অন্যমতে, গোবিন্দ শব্দের অর্থ "সেই দেবতা, একমাত্র যাঁর বেদজ্ঞান রয়েছে।"
  4. হরিবংশ-এ আছে, ইন্দ্র গোপালকরূপী কৃষ্ণকে স্তব করে বলেছিলেন, "মানবসমাজেও আপনি গোবিন্দ নামে পূজিত হবেন।"

মহর্ষি মহেষ যোগী, তাঁর গীতাভাষ্যে বলেছেন, গোবিন্দ শব্দের অর্থ ইন্দ্রিয়ের অধিপতি[]

আদি শঙ্কর রচিত "ভজ গোবিন্দম নামে বিখ্যাত স্তবটিতে আছে, "যে গোবিন্দকে ভজনা করে, সে সহজেই জন্ম ও মৃত্যুর সাগর অতিক্রম করে যায়।" অর্থাৎ, কৃষ্ণকে পূজা করলে জন্ম-মৃত্যুর চক্র বা "সংসার" থেকে মুক্তি লাভ করে, জীবাত্মা বৈকুণ্ঠে গমন করে।

পাদটীকা

সম্পাদনা
  1. Ramkrishna Gopal Bhandarkar, Ramchandra Narayan Dandekar (১৯৭৬)। Ramakrishna Gopal Bhandarkar as an Indologist: A Symposium। India: Bhandarkar Oriental Research Institute। পৃষ্ঠা 38–40। 
  2. Klostermaier, Klaus K. (২০০৫)। A Survey of Hinduism (3rd সংস্করণ)। State University of New York Press। পৃষ্ঠা 206আইএসবিএন 0-7914-7081-4Present day Krishna worship is an amalgam of various elements. According to historical testimonies Krishna-Vasudeva worship already flourished in and around Mathura several centuries before Christ. A second important element is the cult of Krishna Govinda. Still later is the worship of Bala-Krishna, the Divine Child Krishna—a quite prominent feature of modern Krishnaism. The last element seems to have been Krishna Gopijanavallabha, Krishna the lover of the Gopis, among whom Radha occupies a special position. In some books Krishna is presented as the founder and first teacher of the Bhagavata religion. 
  3. Sri Vishnu Sahasranama, commentary by Sri Sankaracharya, pgs. 69 and 115, translated by Swami Tapasyananda (Ramakrishna Math Publications, Chennai)
  4. Maharishi Mahesh Yogi on the Bhagavad-Gita, a New Translation and Commentary, Chapters 1–6. Penguin Books, 1969, p 57 (v 32).

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা