কালা জ্বর
কালা জ্বর বা ভিসেরাল লিশম্যানিয়াসিস (ইংরেজি: Visceral leishmaniasis, Sahib's disease, Dumdum fever, Black fever[১]) একটি রোগ যা লিশম্যানিয়াসিস রোগের কয়েকটি প্রকারের মধ্যে সবচেয়ে গুরুতর। লিশম্যানিয়া গণভুক্ত এক প্রকার প্রোটোজোয়া পরজীবী এই রোগটি ঘটায় এবং বেলেমাছির কামড় দ্বারা এটি বিস্তার লাভ করে। পরজীবী-ঘটিত রোগগুলোর মধ্যে এটি দ্বিতীয় প্রাণঘাতী রোগ; ম্যালেরিয়ার পরেই এর স্থান। ভিসেরাল লিশম্যানিয়াসিসে প্রতি বছর পৃথিবীতে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়।[২]
কালা জ্বর | |
---|---|
![]() | |
বিশেষত্ব | সংক্রামক রোগ ![]() |
পরজীবীটি মানুষের যকৃত, প্লীহা (একারণে 'ভিসেরাল'), এবং অস্থি মজ্জাতে সংক্রমন ঘটায় এবং চিকিৎসা না দিলে মৃত্যু প্রায় অবধারিত। এই রোগের লক্ষণ হলো, জ্বর, ওজন হ্রাস, ক্ষত, অবসাদ, রক্তাল্পতা, চামড়া কালচে হওয়া এবং যকৃৎ ও প্লীহার ব্যাপক আকার বৃদ্ধি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, কালা জ্বর এইচআইভি সহসংক্রমণের আবির্ভাব নতুন সংকটের জন্ম দিচ্ছে। [৩] প্রখ্যাত ভারতীয় বিজ্ঞানী এবং চিকিৎসক উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারী(১৯ ডিসেম্বর ১৮৭৩ - ৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৬) ১৯২২ সালে কালাজ্বরের ওষুধ ইউরিয়া স্টিবামাইন (কার্বোস্টিবামাইড) সংশ্লেষণ করেন এবং নির্ধারণ করেন যে পূর্বে কালাজ্বরের (Leishmania donovani দ্বারা ঘটিত) চিকিৎসায় অ্যান্টিমনি-ভিত্তিক যেসব যৌগ ব্যবহৃত হত ইউরিয়া স্টিবামাইন সেসবের একটি কার্যকরী বিকল্প যৌগ।
বিস্তারসম্পাদনা
পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই রোগটি আছে। বিশেষ করে বাংলাদেশ, চীন, ভারত, দক্ষিণ আমেরিকা, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ভূমধ্যসাগরীয় দেশগুলোতে এটি ব্যাপকভাবে দেখা যায়। সমগ্র পৃথিবীর প্রতি দশটি কালাজ্বর রোগির মধ্যে নয়টিই বাংলাদেশ, ভারত, ব্রাজিল ও সুদান এই চারটি দেশে বিদ্যমান। বাংলাদেশ, নেপাল ও ভারতের 'মানুষ' এই রোগের উৎস রূপে চিহ্নিত হলেও চীন ও ব্রাজিলে 'কুকুর' এই রোগের উৎস। বাংলাদেশের ৪৬ টি জেলায় কালাজ্বর দেখা যায়, এর মধ্যে ময়মনসিংহ, পাবনা, টাঙ্গাইল, গাজীপুর, মানিকগঞ্জ ও জামালপুর অঞ্চলে এই রোগটি সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। দরিদ্র জনগোষ্ঠী যারা মাটির ঘরে বাস করে বা গোয়ালঘরের আশে পাশে থাকে তারাই বেশি এই রোগে আক্রান্ত হয়, কারণ বেলেমাছি বাস করে মাটির ফাটলে বা আবর্জনার নিচে।
কালা জ্বরের লক্ষণ সমূহসম্পাদনা
কালা জ্বর হলে যেসব লক্ষণ দেখা যায় সেগুলো হলঃ শারীরিক দুর্বলতা, ক্ষুধা মন্দা ভাব হওয়া, বার বার জ্বর আসা, রক্ত শূন্যতা দেখা দেয়া, লসিকা গ্রন্থি ফুলে যাওয়া, যকৃত ও প্লীহা ফুলে যাওয়া।[৪]
প্রতিরোধ ও প্রতিকারসম্পাদনা
কালাজ্বর প্রতিরোধের তিনটি উপায় আছেঃ
- ক) বাসস্থান উন্নয়ন: মাটির মেঝে বা দেয়াল ফাটলহীন ও পরিচ্ছন্ন রাখা যাতে বেলে মাছি বংশ বিস্তার করতে না পারে। গোয়াল ঘর থেকে দূরে মানুষের থাকার ঘর স্থাপন।
- খ) বেলেমাছি নিধন: ডিডিটি বা ম্যালাথিয়ন দিয়ে বেলেমাছি নিধন করা যায়।
- গ) উৎস নির্মূল: মিল্টেফোসিন, সোডিয়াম স্টিবোগ্লুকোনেট কিংবা এম্ফোটেরিসিন বি নামক ওষুধ দিয়ে আক্রান্ত মানুষের চিকিৎসা করে কালজ্বরের জীবাণুর উৎস নির্মূল করা যায়।
আরও দেখুনসম্পাদনা
তথ্যসূত্রসম্পাদনা
- ↑ James, William D.; Berger, Timothy G.; ও অন্যান্য (২০০৬)। Andrews' Diseases of the Skin: clinical Dermatology। Saunders Elsevier। আইএসবিএন 0-7216-2921-0।
- ↑ Desjeux P. (২০০১)। "The increase of risk factors for leishmaniasis worldwide"। Transactions of the Royal Society of Tropical Medicine and Hygiene। 95 (3): 239–43। ডিওআই:10.1016/S0035-9203(01)90223-8। পিএমআইডি 11490989। অজানা প্যারামিটার
|unused_data=
উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য) - ↑ "Leishmaniasis and HIV co-infection"। WHO।
- ↑ কালা জ্বরের লক্ষণ, জাতীয় ই-তথ্য কোষ[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]