কামরুদ্দীন আহমদ

বাংলাদেশী আইনজীবী, রাজনীতিবিদ ও কূটনীতিক
(কামরুদ্দিন আহমেদ থেকে পুনর্নির্দেশিত)

কামরুদ্দীন আহমদ (৮ সেপ্টেম্বর ১৯১২ - ৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৮২) বিশিষ্ট লেখক, রাজনীতিবিদকূটনীতিবিদ হিসেবে সুপরিচিত ব্যক্তিত্ব ছিলেন। বাংলা ভাষা আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ও সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের অন্যতম সদস্য ছিলেন। ১৯৬০-এর দশকে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে পূর্ব বাংলায় যে বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সৃষ্টি হয়, তার একজন তাত্ত্বিক হিসেবেও তিনি চিহ্নিত হয়ে আছেন।[১]

কামরুদ্দীন আহমদ
জন্ম৮ সেপ্টেম্বর, ১৯১২
মৃত্যু৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৮২(1982-02-06) (বয়স ৬৯)
মাতৃশিক্ষায়তনঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
প্রতিষ্ঠানবাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
আন্দোলনবাংলা ভাষা আন্দোলন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ

প্রারম্ভিক জীবন সম্পাদনা

কামরুদ্দীন আহমেদ ৮ সেপ্টেম্বর ১৯১২ সালে ব্রিটিশ ভারতের পূর্ব বাংলার মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরের ষোলঘর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।। ১৯২৯ সালে বরিশাল জিলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাশ করেন। অতঃপর ১৯৩১ সালে বরিশালের বি.এম কলেজ থেকে আই.এ পাশ করে ১৯৩৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিষয়ে স্নাতক সম্মান শ্রেণীতে ভর্তি হন। ১৯৩৪ সালে বি.এ অনার্স ও ১৯৩৫ সালে এম.এ (ইংরেজি)সহ ১৯৪৪ সালে আইন পাস করেন।

কর্মজীবনের শুরুতে ঢাকার আরমানিটোলা স্কুলে শিক্ষকতা করতেন।

রাজনৈতিক জীবন সম্পাদনা

প্রথম জীবনে পাকিস্তান আন্দোলনের একজন উৎসাহী কর্মী হিসেবে গণ্য হতেন। ১৪ আগস্ট, ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর শাসক দল মুসলিম লীগের গণ-বিরোধী কার্যকলাপে বীতশ্রদ্ধ হয়ে উক্ত সংগঠনের সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করেন। পরবর্তীকালে বাংলা ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। সেইসূত্রে ১৯৪৮ ও ১৯৫২ সালে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের অন্যতম সদস্য ছিলেন। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন এবং পরবর্তীকালে বিভিন্ন আন্দোলনে কখনো প্রকাশ্যে, কখনো গোপনে থেকে নিজ দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৫৪ সালে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন ও ১৯৫৫ সালে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। ১৯৫৭ সালে রাজনীতি ত্যাগ করে কূটনীতিকের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। ১৯৫৭-১৯৫৮ সাল পর্যন্ত কলকাতায় পাকিস্তানের ডেপুটি হাই কমিশনার হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৫৮ থেকে ১৯৬১ সাল পর্যন্ত বার্মায় পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত ছিলেন। ১৯৬২ সালের পর থেকে আইন ব্যবসায় মনোনিবেশ ঘটান। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে অক্টোবর মাসে পাকিস্তান হানাদার বাহিনী কর্তৃক গ্রেফতার বরণ করেন ও ১৭ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে মুক্তিলাভ করেন।[২] ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ও ১৯৭৬-১৯৭৮ সাল পর্যন্ত এশিয়াটিক সোসাইটির সভাপতি ছিলেন।

রচনাসমগ্র সম্পাদনা

কামরুদ্দীন আহমদের বাংলাদেশের রাজনীতি ও সমাজ-সম্পর্কীত চিন্তা-ভাবনার বিশ্লেষণমূলক গ্রন্থগুলো বিশিষ্টতা অর্জন করেছে। তিনি অনেকগুলো গ্রন্থ প্রকাশ করেছেন। প্রকাশিত গ্রন্থগুলো হচ্ছে:

  • পূর্ব বাংলার সমাজ ও রাজনীতি (১৯৭৬)
  • বাংলার মধ্যবিত্তের আত্মবিকাশ (১ম ও ২য় খণ্ড)
  • স্বাধীন বাংলার অভ্যুদয় এবং অতঃপর (১৯৮২)
  • বাংলার এক মধ্যবিত্তের আত্মকাহিনী
  • এ সোশাল হিস্টোরি অফ বেঙ্গল (বাংলার একটি সামাজিক ইতিহাস) (১৯৭৫)
  • এ সোশ-পলিটিক্যাল হিস্টোরি অফ বেঙ্গল অ্যান্ড দ্য বার্থ অফ বাংলাদেশ (বাংলার একটি সামাজিক-রাজনৈতিক ইতিহাস ও বাংলাদেশের জন্ম)

মৃত্যু সম্পাদনা

৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৮২ সালে তিনি ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. বাংলা একাডেমী চরিতাভিধান, সম্পাদক: সেলিনা হোসেন ও নূরুল ইসলাম, ২য় সংস্করণ, ২০০৩, বাংলা একাডেমী, ঢাকা, পৃ. ১১৮
  2. "We, the people"দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ৩ নভেম্বর ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ১৪ জানুয়ারি ২০১৮ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা