রাষ্ট্রদূত (ইংরেজি: Ambassador) একজন উচ্চপদস্থ ব্যক্তিবিশেষ, যিনি কোন নির্দিষ্ট দেশের সরকারের পক্ষ থেকে অন্য কোন স্বাধীন দেশ, সরকার কিংবা আন্তর্জাতিক সংস্থার সাথে কূটনৈতিক কার্য সম্পাদনের উদ্দেশ্যে প্রেরিত হন। একজন রাষ্ট্রদূত আনুষ্ঠানিকভাবে কোন দেশের প্রতিনিধিত্ব করে যাবতীয় রাষ্ট্রীয় কার্যাদি সম্পন্ন করেন। সাধারণতঃ তিনি নিজ দেশের স্বার্থ রক্ষা কিংবা সমস্যা নিয়ে অন্য দেশের কাছে তুলে ধরেন এবং দ্বি-পক্ষীয় স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি বাস্তবায়নে সদা তৎপর থাকেন।

প্রত্যেক স্বাধীন দেশের বিশ্বজুড়ে রাষ্ট্রদূত থাকে। ওয়াশিংটনে ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত হলেন গিসেলা পাদোভান

অতীতে পারস্পরিক দু'টি দেশের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষার জন্যে কয়েক দিন কিংবা কয়েক সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হতো। ফলে, সিদ্ধান্ত গ্রহণও বিলম্বিত হতো। এরই প্রেক্ষাপটে নির্দিষ্ট একজন ব্যক্তিকে রাষ্ট্রদূত হিসেবে একে-অপরের দেশে নিযুক্ত করা হয় সভা এবং আলাপ-আলোচনার জন্যে। বর্তমানে যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রভূত উন্নয়ন ঘটায় সরাসরি কিংবা মুহুর্তের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করা সম্ভবপর। তারপরও এটি সত্যি যে, অনেক সমস্যা রয়েছে যেখানে সরাসরি যোগাযোগ অবশ্যই রক্ষা করতে হয়। এখানেই রাষ্ট্রদূতের উপযোগিতা ও প্রয়োজনীয়তা বিদ্যমান।

প্রায়শঃই রাষ্ট্রদূতকে বৈদেশিক রাষ্ট্রে অনির্ধারিতভাবে কয়েক বছর অবস্থা করতে হয় এবং তিনি ঐ রাষ্ট্রের যাবতীয় আইন-কানুন, রীতি-নীতি, সমাজ ব্যবস্থা ইত্যাদি সম্পর্কে যথেষ্ট অবগত থাকেন। তিনি যেখানে বাস করেন তা দূতাবাস নামে পরিচিত। সাধারণতঃ দূতাবাস বৈদেশিক রাষ্ট্র কর্তৃক বরাদ্দকৃত এবং তা দেশটির রাজধানী এলাকায় অবস্থিত। তাঁকে কূটনৈতিক কর্মকাণ্ড ও কর্তব্য কাজে সহযোগিতার জন্য একদল প্রশিক্ষিত ব্যক্তিকে নিয়োগ করা হয়। কিছু উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তি দূতাবাসের কর্মকর্তা নামে পরিচিত।

সচরাচর উভয় দেশের রাষ্ট্রদূত এবং অনেক দূতাবাস কর্মী ব্যাপক কূটনৈতিক সুবিধাদি ভোগ করে থাকেন। বিদেশে অবস্থানকালীন সময়ে তাঁরা গ্রেফতার কিংবা বিচারের মুখোমুখি হন না। শাস্তি হিসেবে তাঁদেরকে কেবলমাত্র নিজ দেশে ফেরৎ পাঠানো হয়ে থাকে।

কমনওয়েলথভূক্ত দেশসমূহের ঊর্ধ্বতন কূটনৈতিক কর্মকর্তা ও সদস্যগণ হাইকমিশনার নামে পরিচিত। তাঁরা হাইকমিশনের প্রধান হিসেবে বিবেচিত হন। হলি সী বা ভ্যাটিকানের প্রতিনিধি পপল বা এপোসটোলিক নানসিও নামে এবং ১৭ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের পূর্বে লিবিয়ার আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে লিবিয় জনগণের সচিব হিসেবে পরিচিত হয়ে আসছেন।[১]

পদবী সম্পাদনা

কখনো কখনো দেশ থেকে উচ্চ পর্যায়ের সম্মানিত ব্যক্তিত্বকে নির্দিষ্ট দায়িত্ব প্রদান করে কাজের গুণগতমান সম্পর্কে অবগতকরণ এবং সরকারের চিন্তাধারা সম্পর্কে বিশ্লেষণধর্মী বক্তব্য প্রদানের জন্য প্রেরণ করা হয়। এধরনের ব্যক্তিত্বগণ অ্যাম্বাসেডর এট লার্জ নামে পরিচিত। আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুসারে রাষ্ট্রদূত এবং অ্যাম্বাসেডর এট লার্জ-গণ আনুষ্ঠানিকভাবে কুচকাওয়াজে অংশ নেন। তাঁর পদবীর শুরুতে মহামান্য অথবা মি. এম্বাসেডর শব্দগুচ্ছ প্রয়োগের মাধ্যমে সম্ভাষণ করা হয়।[২]

অ্যাম্বাসেডর এট লার্জ সম্পাদনা

নিজ দেশের প্রতিনিধিত্বকারী কূটনীতিবিদ হিসেবে একজন শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তি কিংবা মন্ত্রী পর্যায়ের ব্যক্তি অ্যাম্বাসেডর এট লার্জরূপে মনোনীত হন। তিনি সাধারণতঃ প্রতিবেশী অনেকগুলো দেশ, অঞ্চল কিংবা আন্তর্জাতিক সংস্থা হিসেবে জাতিসংঘ অথবা ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে থাকেন। কিছু ক্ষেত্রে তিনি বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে রাষ্ট্র কিংবা সরকারের দৃষ্টিভঙ্গী তুলে ধরেন। ঐতিহাসিকভাবে প্রেসিডেন্ট অথবা প্রধানমন্ত্রীগণ বিশেষ কূটনৈতিক দূতকে বহিঃদেশে প্রেরণ করেন।

অন্য ব্যবহার সম্পাদনা

কম গুরুত্বপূর্ণ ধারণায় অ্যাম্বাসেডর শব্দটি উচ্চ পর্যায়ের অ-কূটনীতিবিদ প্রতিনিধি হিসেবে প্রেরিত হন, যা শুভেচ্ছা দূত নামে পরিচিত। সাধারণতঃ সাংস্কৃতিক এবং দাতব্য সংস্থার উদ্দেশ্য সম্পর্কে সচেতনতা ও মনোযোগ আকর্ষণের জন্য গণমাধ্যমে তারা উপস্থাপিত হন। গুরুত্বপূর্ণ চলচ্চিত্র তারকা, সঙ্গীত শিল্পীরাই মূলতঃ জনগণের সম্মুখে ইউনেস্কোর কার্যাবলী তুলে ধরার জন্য ইউনেস্কো শুভেচ্ছা দূত হিসেবে মনোনীত হন।

ফরাসী ভাষাভাষী অঞ্চলের ফ্রান্স, ওয়ালোনিয়া অথবা কুইবেকে এ পদবীটি অ্যাম্বাসাদিউর পার্সন নামে ব্যবহার করা হয়।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

গ্রন্থপঞ্জি সম্পাদনা

Rana, K.(2004)."The 21st Century Ambassador: Plenipotentiary to Chief Executive" DiploFoundation আইএসবিএন ৯৯৯০৯-৫৫-১৮-২

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা