কম্পরাম সিং
কম্পরাম সিং (১৮৮৭ - ২৪ এপ্রিল, ১৯৫০) একজন বাংলাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলন, তেভাগা আন্দোলন, সাম্যবাদী কৃষক আন্দোলনের নেতা এবং একজন শহীদ বিপ্লবী। ১৯৫০ সালের ২৪ এপ্রিল রাজশাহীর খাপড়া ওয়ার্ড গণহত্যায় পুলিশ জেলের ভেতরে আরো ছয়জন রাজবন্দীর সঙ্গে তাকেও হত্যা করে।[১]
কম্পরাম সিং | |
---|---|
জন্ম | ১৮৮৭ |
মৃত্যু | ২৪ এপ্রিল, ১৯৫০ |
নাগরিকত্ব | ব্রিটিশ ভারত (১৯৪৭ সাল পর্যন্ত) পাকিস্তান (১৯৫০ সাল পর্যন্ত) |
পেশা | রাজনীতিবিদ |
পরিচিতির কারণ | খাপড়া ওয়ার্ড গণহত্যার শিকার |
রাজনৈতিক দল | স্বাধীনতার পুর্বে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি, স্বাধীনোত্তর কালে পাকিস্তানের কমিউনিস্ট পার্টি |
আন্দোলন | তেভাগা আন্দোলন, সাম্যবাদী আন্দোলন |
দাম্পত্য সঙ্গী | পয়ানশ্বরী সিং |
আত্মীয় | সন্তরাম সিং, সেবকদাস সিং |
পারিবারিক জীবন
সম্পাদনাকম্পরাম সিংয়ের স্ত্রীর নাম পয়ানশ্বরী সিং। কম্পরাম দেখতে ছিলেন বেঁটে ও শক্তসামর্থ; মাঝারি গড়নের অদম্য সাহসের অধিকারী।[২]
রাজনৈতিক জীবন
সম্পাদনাকম্পরাম সিং ১৯৪০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে লাহিড়ীহাটে জমিদারদের স্বেচ্ছাচারমূলক তোলা আদায়ের বিরুদ্ধে কৃষকদের সংগঠিত করেন, যা রাজনৈতিক ইতিহাসে "তোলাবাটি" আন্দোলন নামে খ্যাত হয়। এই আন্দোলনে নেতৃত্বদানের দায়ে গ্রেফতারবরন করেন এবং তিনমাস বন্দী জীবন কাটান।
১৯৪৭ সালে বঙ্গীয় প্রাদেশিক পার্টি সম্মেলনে প্রতিনিধিরূপে নির্বাচিত হন।[৩]
তোলাবটি আন্দোলন শেষ না হতেই সমগ্র উত্তরবঙ্গে বর্গা চাষীদের তেভাগা আন্দোলন সংগঠিত হয় এবং কম্পরাম সিং সেই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। তিনি বালিয়াডাঙ্গী, রাণীশংকৈল, আটোয়ারী থানায় তেভাগা আন্দোলনে নেতৃত্ব প্রদান করেন। এই সময় তার উপর সরকারি হুলিয়া থাকায় দুই বছর আত্মগোপন করেন।[১] ইনি জীবনের সমস্ত সঞ্চয় কমিউনিস্ট পার্টিকে দান করে সর্বক্ষণের কর্মী হয়ে যান।[২]
পাকিস্তানকালীন রাজনীতি
সম্পাদনাপাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর মুসলিম লীগ শাসনামলে ১৯৪৯-এ পুনরায় গ্রেফতার হন। অন্যান্য কৃষক নেতা কর্মীর সাথে রাজবন্দি হিসেবে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে খাপড়া ওয়ার্ডে অন্তরীণ ছিলেন। এই সময় রাজবন্দিদের উপর মুসলিম লীগ সরকারের অত্যাচার উৎপীড়নের প্রতিবাদে এবং রাজবন্দি ও সাধারণ বন্দিদের মানবেতর পরিবেশ থেকে মানবিক পরিবেশে উন্নীত করার দাবিতে রাজবন্দিরা যে আন্দোলন করেন, রাজশাহী কারাগারে তিনি তার নেতৃত্ব প্রদান করেন।[১][৪]
মৃত্যু
সম্পাদনা১৯৫০ সালের ২৪ এপ্রিল রাজশাহী সেন্ট্রাল জেলে আটজন রাজবন্দীকে কনডেমড সেল বা ফাঁসির আসামীর নির্জন সেলে আটকে রাখলে তীব্র বিক্ষোভে সামিল হন বাকি বন্দীরা। তাদের কুখ্যাত খাপরা ওয়ার্ডে পাঠানো হয়। জেলার বিলের নির্দেশে বাইরে থেকে নির্মমভাবে গুলি চালায় কারারক্ষীরা। এর ফলে শহীদ হন সাম্যবাদী কর্মী কম্পরাম সিং। তার সাথে শহীদ হন আরো ছয়জন। শ্রমিক নেতা বিজন সেন, সুধীন ধর, হানিফ সেখ, দিলওয়ার হোসেন, ছাত্র নেতা আনোয়ার হোসেন এবং ছাত্র সংগঠক সুখেন ভট্টাচার্য।বাকি সমস্ত বন্দীরা মারা না গেলেও মারাত্মকভাবে আহত হন। পুলিশ রক্তাপ্লুত বন্দীদের ওপর পূনরায় লাঠিচার্জ করে।[৫][৬]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ গ হোসেন, সেলিনা; ইসলাম, নুরুল, সম্পাদকগণ (ফেব্রুয়ারি ১৯৯৭)। "কম্পরাম সিং" (ছাপা) । বাংলা একাডেমী চরিতাভিধান (পরিমার্জিত ও পরিবর্ধিত বিতীয় সংস্করণ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলা একাডেমী। পৃষ্ঠা ১০৮।
- ↑ ক খ চৌধুরী, মানবেশ (সেপ্টেম্বর ২০১৫)। তেভাগার পথ ধরে (প্রথম প্রকাশ সংস্করণ)। কলকাতা: ন্যাশনাল বুক এজেন্সি প্রাইভেট লিমিটেড। পৃষ্ঠা ১৭–১৮। আইএসবিএন 978-8176263069
|আইএসবিএন=
এর মান পরীক্ষা করুন: checksum (সাহায্য)। - ↑ দাশ, সুস্নাত (জানুয়ারি ২০০২)। "সংযোজন ২"। অবিভক্ত বাঙলার কৃষক সংগ্রাম: তেভাগা আন্দোলনের আর্থ-রাজনৈতিক প্রেক্ষিত-পর্যালোচনা-পুনর্বিচার (প্রথম প্রকাশ সংস্করণ)। কলকাতা: নক্ষত্র প্রকাশন। পৃষ্ঠা ২৮৫।
- ↑ বসু, অঞ্জলি (নভেম্বর ২০১৩)। বসু, অঞ্জলি; সেনগুপ্ত, সুবোধচন্দ্র, সম্পাদকগণ। সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান। ১ (পঞ্চম সংস্করণ, দ্বিতীয় মুদ্রণ সংস্করণ)। কলকাতা: সাহিত্য সংসদ। পৃষ্ঠা ৬১। আইএসবিএন 978-8179551356।
- ↑ "The Khapra Ward Day: The Moment and the Movement"। The Daily Star। 23 April 2016। সংগ্রহের তারিখ 28.01.17। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|সংগ্রহের-তারিখ=
(সাহায্য) - ↑ "ঐতিহাসিক খাপড়া ওয়ার্ড শহীদ দিবস রোববার"। বাংলা নিউজ। ২৪ এপ্রিল ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ২৮.০১.২০১৭। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|সংগ্রহের-তারিখ=
(সাহায্য)[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]