ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ

১৯৩১ সালে কবি কাজী নজরুল ইসলাম রচিত ও সুরারোপিত কালজয়ী গান

ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ মুসলমানদের অন্যতম ধর্মীয় ও আনন্দের উৎসব ঈদ-উল-ফিতর নিয়ে বাঙালি কবি কাজী নজরুল ইসলাম রচিত একটি কালজয়ী গান। গানটি বাঙালি মুসলমানের ঈদ উৎসবের আবশ্যকীয় অংশ।[১] কবির শিষ্য শিল্পী আব্বাস উদ্দিন আহমদ-এর অনুরোধে ১৯৩১ সালে কবি নজরুল এই গান রচনা ও সুরারোপ করেন।[২] একে তাঁর সমসাময়িকরা একটি উল্লেখযোগ্য কৃতিত্ব হিসাবে বিবেচনা করেছিলেন, কারণ তখন বাঙালি মুসলমানরা নজরুলের ভক্তিমূলক শ্যামা সঙ্গীতের প্রতি ঘোরতর বিরোধী ছিল।[৩]

"ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ"
Kazi Nazrul Islam, circa 1940.jpg
গানের রচিয়তা কবি কাজী নজরুল ইসলাম
সঙ্গীত
রচিতকাজী নজরুল ইসলাম
মুক্তিপ্রাপ্ত১৯৩১; ৯২ বছর আগে (1931)
ধারানজরুল সঙ্গীত
গান লেখককাজী নজরুল ইসলাম
সুরকারকাজী নজরুল ইসলাম

প্রথম রেকর্ডিংসম্পাদনা

১৯৩১ সালে গানটি লেখার চারদিন পর শিল্পী আব্বাস উদ্দিনের গলায় প্রথম রেকর্ড করা হয়।[৪] রেকর্ড করার দুই মাস পরে ঈদের ঠিক আগে আগে এই রেকর্ড প্রকাশ করা হয়।[৪] গ্রামোফোন কোম্পানি এর রেকর্ড প্রকাশ করে। রেকর্ডের অপর গান ছিল কবির ‘ইসলামের ঐ সওদা লয়ে এলো নবীন সওদাগর, বদনসীন আয়, আয় গুনাহগার নতুন করে সওদা কর।’ হিজ মাস্টার্স কোম্পানির রেক রেকর্ড নম্বর এন‌- ৪১১১। গানটির প্রকাশকাল ফেব্রুয়ারি ১৯৩২ খ্রিষ্টাব্দ।

গানের কথাসম্পাদনা

এখানে ১৯৩১ সালে প্রকাশকালে যেই বানানরীতিতে গানটি লিখা হয়েছিল, সেই বানানরীতিতেই গানটির কথা তুলে ধরা হয়েছে। পুরাতন বানানরীতির কয়েকটি শব্দ আধুনিক বাংলা বানানরীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।


ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ,
তুই আপনাকে আজ বিলিয়ে দে, শোন আসমানী তাগিদ।
তোর সোনা-দানা, বালাখানা সব রাহে লিল্লাহ
দে যাকাত, মুর্দা মুসলিমের আজ ভাঙাইতে নিঁদ,
ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ।

আজ পড়বি ঈদের নামাজ রে মন সেই সে ঈদগাহে,
যে ময়দানে সব গাজী মুসলিম হয়েছে শহীদ।
ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ।

আজ ভুলে যা তোর দোস্ত-দুশমন, হাত মেলাও হাতে,
তোর প্রেম দিয়ে কর বিশ্ব নিখিল ইসলামে মুরিদ।
ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ।

যারা জীবন ভরে রাখছে রোজা, নিত্য উপবাসী,
সেই গরীব ইয়াতীম মিসকিনে দে যা কিছু মুফিদ,
ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ।
আপনাকে আজ বিলিয়ে দে শোন আসমানী তাগিদ।

ঢাল হৃদয়ের তোর তশতরীতে শিরনি তৌহিদের,
তোর দাওয়াত কবুল করবেন হজরত হয় মনে উম্মীদ।
ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ।

তোরে মারল' ছুঁড়ে জীবন জুড়ে ইট পাথর যারা,
সেই পাথর দিয়ে তোলরে গড়ে প্রেমেরই মসজিদ।
ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ,
আপনাকে আজ বিলিয়ে দে শোন আসমানী তাগিদ।

তথ্যসূত্রসম্পাদনা

  1. "10 key events in Kazi Nazrul's life"দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ২৭ আগস্ট ২০১৫। ১১ মে ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ মে ২০২০ 
  2. শামস আরেফিন (১৭ জুলাই ২০১৫)। "নজরুল এবং ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে"দৈনিক যুগান্তর। ২৫ জুন ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ জুন ২০১৭ 
  3. Kamrunnessa Azad. 2001. Dharmiya Chetonay Nazrul. Nazrul Institute, Dhaka. 1999. pp. 173–174
  4. "'রম্‌জানের ঐ রোজার শেষে' গানের পেছনের গল্প"। ঢাকা: প্রথম আলো। ১৩ মে ২০২১। ১৪ মে ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ মে ২০২১