কাওয়ালি এক প্রকার আধ্যাত্মিক প্রেমবিষয়ক ভক্তিমূলক গান।[১] বিশেষজ্ঞদের মতে, কাওয়ালি জাতীয় গান থেকেই কালক্রমে খেয়াল নামক উচ্চাঙ্গ সংগীতের শ্রেণীটির উৎপত্তি হয়েছে।[২]

ব্যুৎপত্তিসম্পাদনা

‘কওল’ শব্দটি থেকে কাওয়ালি শব্দটির উৎপত্তি ঘটেছে বলে মনে করা হয়।[১] আবার অনেকের মতে, দিল্লির পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে বসবাসকারী কাওয়াল নামক যাযাবর সম্প্রদায় কর্তৃক গীত সাধারণ ভক্তিমূলক গানকে কাওয়ালি বলে চহ্নিত করা হয়।[২]

ইতিহাসসম্পাদনা

প্রখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ আমীর খসরু 'কাওয়ালি' ধারার সঙ্গীতের প্রবর্তক বলে স্বীকৃত;[১] তিনিই কাওয়ালি গানের সংস্কার করেন এবং এটিকে একটি প্রথাবদ্ধ রূপদান করেন।[২] বাংলাদেশে কবি কাজী নজরুল ইসলামই এই সঙ্গীত ধারাটিকে জনপ্রিয় করে তোলেন।[৩]

বৈশিষ্ট্যসম্পাদনা

গঠনসম্পাদনা

এ গানের স্থায়ী ও অন্তরার মধ্যে তাল বন্ধ রেখে প্রতিবার বিভিন্ন প্রকার রাগ ব্যবহার করা হয়। একজন মূল গায়ক ও কয়েকজন সহযোগীর সমন্বয়ে গঠিত এক একটি দল কাওয়ালি পরিবেশন করে যাতে মূল গায়ক গান পরিবেশ করেন এবং সহযোগীগণ ধুয়া ধরেন।[১]

যন্ত্রসম্পাদনা

কাওয়ালি গানে যন্ত্র হিসেবে প্রধানতঃ ঢোলক ব্যবহৃৎ হয় এবং সমবেতভাবে হাততালি দিয়ে এর তাল রক্ষা করা হয়।[১]

রাগ ও তালসম্পাদনা

যে সকল রাগ আধ্যাত্মিক প্রেমভাব প্রকাশ করে সেসব রাগে কাওয়ালি গাওয়া হয়।[১] কাওয়ালি উত্তর ভারতীয় সঙ্গীত পদ্ধতির একটি ৮ মাত্রা বিশিষ্ট সমপদী তাল, যা ৪ । ৪ । ছন্দো-বিভাজন যুক্ত এবং এটি একটি তালি ও একটি ফাঁক বিশিষ্ট।[৪] সাধারণতঃ এটি দাদরা, ধূমালি, রূপক, পশ্তু ইত্যাদি তাল দ্বারা সৃষ্ট।[১] কাওয়ালির তালটির একটি ঠেকা নিম্নরূপঃ

   +                     ০
   ধা    ধিন্    ধাধা    ধিন্  ।  তা    তিন্    ধাধা    ধিন্
   ১     ২     ৩     ৪     ৫     ৬     ৭     ৮

পরিবেশনাসম্পাদনা

কাওয়ালি গানের শিল্পীদের ‘কাওয়াল’ বলা হয়।[১][৫] এটি একটি ভক্তিমূলক গান যা মূলতঃ সুফি সাধকরা নৃত্য ঢং-এ গেয়ে থাকেন।[৬] এই গানগুলো সাধারণতঃ ফারসি ও উর্দু ভাষায় রচিত হয়ে থাকে,[১] তবে বাংলা ভাষায়ও কাওয়ালি গান রচিত হয়।[৭]

শ্রোতাসম্পাদনা

কাওয়ালি গান মূলতঃ মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যেই অধিক প্রচলিত।[১] তবে, হিন্দু ধর্মীয় 'কুম্ভমেলা'-তেও এর পরিবেশনা লক্ষ্য করা যায়।[৮] পুরান ঢাকার আদিবাসীদের মধ্যে বিভিন্ন জলসা, বিবাহ ইত্যাদি অনুষ্ঠান উপলক্ষে এ গানের প্রচলন রয়েছে।[১] বাংলা কাওয়ালি গানের শ্রোতা এক সময় কেবল পুরান ঢাকা ও নির্দিষ্ট কিছু অঞ্চলে সীমাবদ্ধ থাকলেও এখন দেশের সাধারণ তরুণরাও কাওয়ালি গানের ভক্ত হয়ে উঠেছে।[৭]

তথ্যসূত্রসম্পাদনা

  1. "কাওয়ালি"। বাংলাপিডিয়া। সংগ্রহের তারিখ ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫ 
  2. "কাওয়ালি থেকে খেয়াল"। dainikdestiny.com। ৫ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫ 
  3. "নজরুলের কাওয়ালি নিয়ে লীনা তাপসী"। The Jaijaidin। সংগ্রহের তারিখ ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫ 
  4. "কাওয়ালি"। onushilon.org। সংগ্রহের তারিখ ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫ 
  5. "চাঁদ রাতে বিশেষ কাওয়ালী"। একুশে টেলিভিশন। ৬ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫ 
  6. "ভালোবাসা নিয়ে ভারতবর্ষ থেকে 'কাওয়ালি' ট্রুপ রাশিয়ায় এসেছে"। রেডিওরাশিয়া। ৫ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫ 
  7. "কাওয়ালি গানের ভক্ত এখন তরুণরাও"। Amader Konthosor। ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫ 
  8. "'কুম্ভমেলা'য় কাওয়ালি, তরুণের ফ্যাশন"। Associate News of Bengal। সংগ্রহের তারিখ ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]

বহিঃসংযোগসম্পাদনা