ইব্রাহিমের পরিবার বৃক্ষ

ইব্রাহিম ইসহাকের সাথে (যিনি ইব্রাহিমের বৃদ্ধ বয়সে তার স্ত্রী সারাহের গর্ভে জন্মগ্রহণ করেছেন) সম্পর্কের জন্য ইসরায়েলিদের পিতৃপুরুষ হিসাবে এবং ইসমাইলের সাথে (যিনি ইব্রাহিম এবং তার অন্য স্ত্রী হাজেরার গর্ভে জন্মগ্রহণ করেছেন) সম্পর্কের জন্য আরবদের পিতৃপুরুষ হিসাবে পরিচিত। যদিও ইব্রাহিমের পিতৃপুরুষ বাইবেলের বর্ণনানুসারে দক্ষিণ মেসোপটেমিয়া (বর্তমান ইরাক[১]) থেকে এসেছিলেন এবং প্রভুর নির্দেশে কেনান যাত্রা করেছিলেন।

ঐতিহাসিক উৎসের মূল্যায়ন সম্পাদনা

ইব্রাহিমের বংশসূত্র আদিপুস্তক ৫, আদিপুস্তক ১০: ১-৭, ২০, ২২-২৩, ৩১-৩২ এবং আদিপুস্তক ১১-এ উল্লেখিত রয়েছে। প্রামাণিকতত্ত্বে এই বংশানুক্রমকে যাজকীয় উৎস হতে প্রাপ্ত বলে উল্লেখ করা হয়েছে।[২]

বাইবেলের বিবরণ সম্পাদনা

ইব্রাহিম ও সারার তাদের জিবনে বস্তুগতভাবে উন্নতি অর্জন করেছিল, কিন্তু তাদের কোন সন্তান হচ্ছিল না। ইব্রাহিম তার সম্পদগুলো বিশ্বস্ত কোন এক দাসকে দিয়ে যাওয়ার চিন্তা করতে থাকেন, কিন্তু এমন সময় সৃষ্টিকর্তা তাকে সন্তান প্রদানের আশ্বাস দেন। ৮৬ বছর বয়সে স্ত্রী সারার অনুরোধে বিবি হাজেরা-কে বিয়ে করেন তিনি। বিবি হাজেরার গর্ভে ইসমাইলের জন্ম হয়।[৩]

পরিবার বৃক্ষ সম্পাদনা

নিম্নে নূহের পুত্র শাম বংশের, ইব্রাহিম এর মাধ্যমে ইয়াকুব এবং তার পুত্রদের একটি পরিবার বৃক্ষ দেয়া হল:

নূহ
শামহামজাফেত
এলমআসুরআরফাযাদলুতআরম৪ পুত্র৭ পুত্র
কানিনান[৪]৪ পুত্র
কন্যা[৪]সালাহ
ইবার
পেলেগজকতান
রেও১৩ পুত্র
সেরুগ
নহর
তেরাহ
সারাহ[৫]আব্রাহাম (ইব্রাহিম)হাজেরাহারান
নাহোর
ইসমাইলমিল্কালোত (লূত)ইস্কা
ইসমাইলগণ৭টি ছেলে[৬]বেথিউ১ম কন্যা২য় কন্যা
ইসহাকরেবেকালাবনমোয়াবগণআমেনগণ
এষৌইয়াকুবর‌্যাচেল
বিলহা
ইদোমগণজিল্পাহ
লিয়া
১. রেউবেন
২. সিমোন
৩. লেভি
৪. জুদাহ
৯. ইসসাচার
১০. জেবুলুন
১১. দিনাহ (মেয়ে)
৭. গাদ
৮. আশের
৫. দান
৭. নাফতালি
১২. জোসেফ (ইউসুফ)
১৩. বেনিয়ামিন


কোরআনের বিবরণ সম্পাদনা

ইব্রাহিমের পরিবারের সদস্য এবং বংশধরদের আল-ইব্রাহিম বলা হয়।
আল-কুরআন অনুসারে: فَقَدْ آتَيْنَا آلَ إِبْرَاهِيمَ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَآتَيْنَاهُم مُّلْكًا عَظِيمًا...

"... অবশ্যই আমি ইব্রাহীমের বংশধরদেরকে কিতাব ও হেকমত দান করেছিলাম আর তাদেরকে দান করেছিলাম বিশাল রাজ্য।" – (সূরা আন-নিসা; আয়াত: ৫৪)[৭]

অন্যান্য উৎস, বিশেষত বহুলভাবে গৃহীত হাদিসগুলোও ইব্রাহীমের পরিবার সম্পর্কে উল্লেখ রয়েছে

  • তাফসীর আল-তাবারি: আলে-ইব্রাহীম হল মুমিন, ইবনে আব্বাস সম্পর্কিত একটি বর্ণনার উপর ভিত্তি করে কুরআনে উল্লেখ রয়েছে: "নিঃসন্দেহে আল্লাহ আদম, নূহ ও ইব্রাহীমের বংশধর এবং এমরানের খান্দানকে নির্বাচিত করেছেন।" – (সূরা আল-ইমরান; আয়াত: ৩৩)[৮] এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন: এরা ইব্রাহিমের পরিবার, ইমরানের পরিবার, ইয়াসিনের পরিবার এবং মুহাম্মদের বংশের ইমানদারগণ, অতপর আয়াতটি উদ্ধৃত করেন: "মানুষদের মধ্যে যারা ইব্রাহীমের অনুসরণ করেছিল, তারা, আর এই নবী এবং যারা এ নবীর প্রতি ঈমান এনেছে তারা ইব্রাহীমের ঘনিষ্ঠতম-আর আল্লাহ হচ্ছেন মুমিনদের বন্ধু।" – (সূরা আল-ইমরান; আয়াত: ৬৮)[৯]
  • তাফসির আস-সা'দী: আল ইব্রাহিম তার নবীদের উত্তরসূরী হয়েছিলেন, কারণ তারা তার বংশধরদের মধ্যে রয়েছে এবং হযরত মুহাম্মাদ তাদেরই অন্তর্ভুক্ত।[১০]
  • তাফসীর আল-বাঘাবি: ইব্রাহিম নিজেকেই আল ইব্রাহিম উল্লেখ করেন এবং আরও বলেন যে আল ইব্রাহিম হলেন ইসমাইল (ইসমাইল), ইসহাক (আইজ্যাক), ইয়াকুব (জ্যাকব) এবং আল- আসবাত (ইয়াকুবের ১২ জন সন্তান) সেই সাথে আরও যোগ করে বলেছেন যে মুহাম্মদ আলে ইব্রাহিমের একজন।[১১]

এই ব্যাখ্যার উপর ভিত্তি করে, আল-ইব্রাহিমের সাথে সম্পর্কিত ব্যক্তিবর্গ:

এরাই ইব্রাহিমের বংশধর যারা ইমানদার হিসেবে আল-ইব্রাহিমের সাথে যুক্ত হয়েছিলেন। "এটি ছিল আমার যুক্তি, যা আমি ইব্রাহীমকে তার সম্প্রদায়ের বিপক্ষে প্রদান করেছিলাম। আমি যাকে ইচ্ছা মর্যাদায় সমুন্নত করি। আপনার পালনকর্তা প্রজ্ঞাময়, মহাজ্ঞানী। আমি তাকে দান করেছি ইসহাক এবং এয়াকুব। প্রত্যেককেই আমি পথ প্রদর্শন করেছি এবং পূর্বে আমি নূহকে পথ প্রদর্শন করেছি-তার সন্তানদের মধ্যে দাউদ, সোলায়মান, আইউব, ইউসুফ, মূসা ও হারুনকে। এমনিভাবে আমি সৎকর্মীদেরকে প্রতিদান দিয়ে থাকি। আর ও যাকারিয়া, ইয়াহিয়া, ঈসা এবং ইলিয়াসকে। তারা সবাই পুণ্যবানদের অন্তর্ভুক্ত ছিল। এবং ইসরাঈল, ইয়াসা, ইউনূস, লূতকে প্রত্যেককেই আমি সারা বিশ্বের উপর গৌরবাম্বিত করেছি। আর ও তাদের কিছু সংখ্যক পিতৃপুরুষ, সন্তান-সন্ততি ও ভ্রাতাদেরকে; আমি তাদেরকে মনোনীত করেছি এবং সরল পথ প্রদর্শন করেছি। এটি আল্লাহর হেদায়েত। স্বীয় বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা, এপথে চালান। যদি তারা শেরেকী করত, তবে তাদের কাজ কর্ম তাদের জন্যে ব্যর্থ হয়ে যেত।" – (সূরা আল-আনআম ; আয়াত: ৮৩– ৮৭)[১৩]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. আব্রাহাম, উইগোডার, জেফ্রি সচিত্র অভিধান এবং বাইবেলের একত্রীকরণ। ১৯৮৬, জেরুসালেম পাবলিশিং হাউস।আইএসবিএন ০-৮৯৫৭৭-৪০৭-০, pp. 22-23
  2. Coogan, Michael D. (2014). The Old Testament: A Historical and Literary Introduction to Hebrew Scriptures. New York: Oxford University Press. pp. 62-64. আইএসবিএন ৯৭৮-০-১৯-৯৯৪৬৬১-৭
  3. Ishmael, in Freeman, David Noel. The Anchor Bible Dictionary Volume 2 H-J. 1992. Doubleday Publishing Group. আইএসবিএন ০-৩৮৫-১৯৩৬০-২, pp. 513-514
  4. From Luke 3:36, Sala was the son (in law) of Cainan, which was the son of Arphaxad.
  5. Genesis 20:12: সারাহ ইব্রাহীমের অর্ধ-বোন ছিল।
  6. Genesis 22:21-22: Uz, Buz, Kemuel, Chesed, Hazo, Pildash, and Jidlaph
  7. "Surah An-Nisa [4:54-64]"Surah An-Nisa [4:54-64] (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-১০-১২ 
  8. "Surah Ali 'Imran [3:33-43]"Surah Ali 'Imran [3:33-43] (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-১০-১২ 
  9. "Surah Ali 'Imran [3:68-78]"Surah Ali 'Imran [3:68-78] (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-১০-১২ 
  10. http://quran.ksu.edu.sa/tafseer/saadi/sura3-aya33.html#saadi
  11. http://quran.ksu.edu.sa/tafseer/baghawy/sura3-aya33.html#baghawy
  12. "Surah Hud [11:73-83]"Surah Hud [11:73-83] (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-১০-১২ 
  13. emediarif। "৬) সূরা আল আন-আম ( মক্কায় অবতীর্ণ ), আয়াত সংখাঃ ১৬৫ | Online Holy Quran - পবিত্র কোরআন বাংলা অনুবাদ - OurHolyQuran.com" (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৪-২৯