ইতিহাসের কাঠগড়ায় হযরত মুআবিয়া রা.

মুহাম্মদ তাকি উসমানির বই

ইতিহাসের কাঠগড়ায় হযরত মুআবিয়া রা. (উর্দু: حضرت معاویہ اور تاریخی حقائق‎‎) ইসলামের নবী মুহাম্মদ (স.)–এর সাহাবী মুআবিয়া ইবনে আবু সুফিয়ানকে নিয়ে লিখিত একটি সুক্ষ্ম বিশ্লেষণধর্মী গ্রন্থ।[১][২] ১৯৭১ সালে এই গ্রন্থটি রচনা করেন পাকিস্তানি ইসলামি পণ্ডিত ও বিচারক মুহাম্মদ তাকি উসমানি। এটি মূলত জামায়াতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা আবুল আ'লা মওদুদীর লিখিত খিলাফত ও রাজতন্ত্র –এর জবাবে রচিত হয়েছে।[৩] মওদুদী তার বইয়ে মুআবিয়ার রাজনীতি, শাসন ব্যবস্থা নিয়ে যেসব অভিযোগ উত্থাপন করেছেন, মুহাম্মদ তাকি উসমানি তাত্ত্বিকভাবে তার জবাব দিয়েছেন।[১] বইটির উর্দু নাম "হযরত মুআবিয়া আওর তারিখি হাকিকাহ" যার অর্থ হযরত মুআবিয়া এবং ঐতিহাসিক সত্য। মূল বইয়ের পৃষ্ঠা সংখ্যা ৩২৭।[৪] "ইতিহাসের কাঠগড়ায় হযরত মুআবিয়া রা." নামে ১৯৮৭ সালে বইটির বঙ্গানুবাদ করেছেন আবু তাহের মিসবাহ

ইতিহাসের কাঠগড়ায় হযরত মুআবিয়া রা.
বাংলা সংস্করণের প্রচ্ছদ
লেখকমুহাম্মদ তাকি উসমানি
মূল শিরোনামআরবি: حضرت معاویہ اور تاریخی حقائق
দেশপাকিস্তান
ভাষাউর্দু
বিষয়প্রথম মুয়াবিয়া
প্রকাশিত১৯৭১
প্রকাশকদারুল উলুম করাচি
মিডিয়া ধরনশক্তমলাট
পৃষ্ঠাসংখ্যা৩২৭
ওসিএলসি৪২৭৯৭৯৭৭৩
ওয়েবসাইটmuftitaqiusmani.com

প্রেক্ষাপট সম্পাদনা

গ্রন্থটির ভূমিকায় লেখক তাকি উসমানি গ্রন্থটি রচনার প্রেক্ষাপট তুলে ধরেছেন। ইসলামের আলোকে সাহাবীর গুরুত্ব ও প্রথম মুয়াবিয়ার অবদান বর্ণনা করার পর তিনি লিখেন,

বিষয়বস্তু সম্পাদনা

গ্রন্থটির শুরুতে লেখক মুআবিয়ার উপর আরোপিত বিভিন্ন অভিযোগের জবাব দিয়েছেন। তারপর সাহাবা সম্পর্কীয় কিছু মৌলিক আলোচনা ও মুআবিয়ার ব্যক্তি চরিত্র অবদান তুলে ধরেছেন। মুআবিয়ার উপর আরোপিত বিভিন্ন অভিযোগের জবাবের মধ্যে রয়েছে: মুআবিয়ার বিদআত জারি করা, দিয়তের অর্থ আত্মসাৎ, গনীমতের অর্থ আত্মসাৎ, হযরত আলীকে গালমন্দ করা, যিয়াদকে ভ্রাতৃমর্যাদা দান, প্রশাসকদের স্বেচ্ছাচার, হাজার বিন আদীর মৃত্যুদণ্ড, মুআবিয়া ও বাকস্বাধীনতা, ইয়াযিদের মনোনয়ন, শরীয়তের দৃষ্টিতে পরবর্তী খলীফার মনোনয়ন, মুআবিয়ার চোখে ইয়াযিদ, মুগীরার ভূমিকা, বাইআত গ্রহণে অসদুপায় অবলম্বন, হুসাইন-এর ভূমিকা। কয়েকটি মৌলিক আলোচনার মধ্যে রয়েছে: সাহাবাদের আদালত ও ন্যায়পরতা, ঐতিহাসিক বর্ণনার প্রকৃতি, মুআবিয়ার খিলাফতের সঠিক মূল্যায়ন, বালাকোটের শহীদের দৃষ্টিতে একটি জরুরী কথা। মুআবিয়ার ব্যক্তি-চরিত্র, অবদান অংশে আছে: মুআবিয়ার ইসলাম গ্রহণ, নবীর সাথে নিবিড় সম্পর্ক, সাহাবাদের দৃষ্টিতে মুআবিয়া, তাবেয়ীদের চোখে মুআবিয়া, সংক্ষিপ্ত জীবনালেখ্য, শাসক মুআবিয়া, দৈনন্দিন কর্মসূচী, সহনশীলতা ও কোমল ব্যবহার, নবীপ্রেম, নবীর প্রতি অখণ্ড আনুগত্য, সরল অনাড়ম্বর জীবন, ইলম ও প্রজ্ঞা, নির্দোষ কৌতুক, ওয়াফাত।[৬]

সিদ্ধান্ত সম্পাদনা

লেখক মুয়াবিয়া কর্তৃক ইয়াজিদের মনোনয়নের নিয়ে শাহ ওয়ালীউল্লাহ দেহলভী, মাওয়ার্দী, আবি ইয়ালা আল-ফাররা হাম্বলী, ইবনে খালদুন, তাবারী, ইবনে-ই-কুতাইবা দিনাওয়ারী, ইবনে কাছির, আল-যাহাবী, সুয়ুতি, আল-বালাজুরি, কাজী ইবনে আল-আরাবি, ইবনে আল-হামাম, ইবনে তাইমিয়া প্রমুখ ইসলামি পণ্ডিতদের মতামত নিয়ে আলোচনা করে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে শাসক খলিফা মুয়াবিয়া কর্তৃক ইয়াজিদের মনোনয়ন ইসলামি আইনের সাথে সাথে রাজনৈতিক বুদ্ধিমত্তার সাথে বেশ সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল; এটি প্রকৃতপক্ষে ইসলামি উম্মাহর সর্বোত্তম স্বার্থে করা হয়েছিল এবং মুয়াবিয়ার জন্য কোনো অপ্রকৃত উদ্দেশ্যকে দায়ী করা যায় না। ইয়াজিদের মনোনয়নের বৈধতার সর্বোত্তম প্রমাণ পাওয়া যায় সাহাবায়ে কেরাম এবং উম্মাহর অন্যান্য গণ্যমান্য ব্যক্তিদের ঐকমত্য থেকে।[৭]

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

উদ্ধৃতি সম্পাদনা

  1. লোকমান হাকীম, মাওলানা (২০১৪)। জাস্টিস মুফতী মুহাম্মদ তকী উসমানী জীবন ও কর্ম। বাংলাবাজার, ঢাকা: মাকতাবাতুল হেরা। পৃষ্ঠা ৯৭। আইএসবিএন 9789849112310 
  2. নদভী, ডক্টর সৈয়দ রিদওয়ান আলী (১৯৯৬)। "حضرت علیؓ اور حضرت معاویؓہ کی قبور اور مولانا تقی عثمانی ایک تنقیدی جائزہ" [হযরত আলী ও হযরত মুয়াবিয়া এবং মাওলানা তাকি উসমানির একটি অধ্যয়ন]। ইসলামিক রিসার্চ ইনডেক্সইসলামাবাদ: আল্লামা ইকবাল উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়। ৩৪ (১): ১০৯–১২৮। ৩ জানুয়ারি ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ জানুয়ারি ২০২২ 
  3. ইসলাহি, শরিফ উদ্দিন (১৯৭৩)। "حضرت معاویہ اور تاریخی حقائق" [বই পর্যালোচনা: হযরত মুআবিয়া এবং ঐতিহাসিক সত্য]। ফিকর ওয়া নজরপাকিস্তান: আন্তর্জাতিক ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামাবাদ। ১০ (৭): ৪১৯–৪২২। আইএসএসএন 2518-9948। ৫ জানুয়ারি ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ জানুয়ারি ২০২২ 
  4. জিল হুমা, ডক্টর (৩০ জুন ২০১৯)। "مفتی محمد تقی عثمانی کی معروف تصنیفات و تالیفات کا تعارفی جائزہ:" [মুফতি মুহাম্মদ তাকি উসমানির বিখ্যাত লেখাগুলির একটি পরিচিতিমূলক পর্যালোচনা]। রাহাতুল কুলুব (ইংরেজি ভাষায়): ১৯৯। আইএসএসএন 2521-2869ডিওআই:10.51411/rahat.3.1.2019.66 
  5. ইতিহাসের কাঠগড়ায় হযরত মুআবিয়া রা., পৃ.২০–২১
  6. সূচিপত্র, ইতিহাসের কাঠগড়ায় হযরত মুআবিয়া রা.
  7. ভাট, ফয়েজ আহমদ (২০০৩)। Tragedy of karbala an analytical study of Urdu historical writings during 19th _ 20th century। ভারত: আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়। পৃষ্ঠা ২৩—২৪। 

গ্রন্থপঞ্জি সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা