আহোম বা হা-চাম (চীনা ভাষা:傣 阿洪 族, আহোম: ফান টাই আহোম , থাই: ไทอาหม Tai Ahom)রা হচ্ছে আসাম এবং অরুণাচল ত বসবাস করা একটি বৃহত্তর টাই জাতির অন্তর্গত উত্তরপূর্বের অনেক থেকে বড়ো টাই জনগোষ্ঠী। এরা চিনের য়ুন্নান প্রদেশের চিপচংপান্না দেহং অঞ্চলের (পূর্বের পূর্ব মৌঙ মাও অঞ্চলের) রাজকোঁয়র চাওলুং চুকাফা-এর সাথে ১২২৮ সালে আসা ৯০০০ টাই মানুষের বংশধর। এরা আসামে প্রায় ৬১০ বছর শাসন করেন। আহোম শব্দটির অর্থ আসাম-এর স্থানীয় ভাষায় টাই মানুষ। এরা আসাম-এর গোলাঘাট, যোরহাট,শিবসাগর,ডিব্রুগড় লখিমপুর ,তিনসুকিয়া ধেমাজী এবং কার্বি আংলংয়ে দেখা যায়। এই গোষ্ঠীটিই কালক্রমে ‘আহোম’ নামে পরিচিত হয়ে পরে আহোমরা নিজেদের ‘খাম-টাই’ নামেই পরিচয় দিয়েছিলেন।

টাই-আহোম
হা-চাম
উল্লেখযোগ্য জনসংখ্যার অঞ্চল
    আসাম১৯ লাখ
    অরুণাচল প্রদেশ৫০,০০০
ভাষা
আহোম ভাষা
ধর্ম
আহোম ধর্ম,বৌদ্ধ ধর্ম,
সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠী
ছান লোক, থাই লোক,টাই জাতি
Sukapha Kshetra

ইতিহাস সম্পাদনা

আহোম নামের উৎপত্তি সম্পাদনা

আহোমরা প্রথমে নিজেদের টাই বলেই পরিচয় দিতেন। কিন্তু এখানকার স্থানীয় লোকরা তাঁদের পরাস্ত করতে না পেরে আসাম বা আহম বা অহম বলেছিল। সেই নামটি মুখ বাগরি আহোম হয় যদিও এখনও আহোমরা টাই বলে নিজেদের পরিচয় দেয় সেজন্য আহোমরা এবং আহোম সংগঠনসমূহে টাই আহোম শব্দটি অধিক প্রয়োগ করতে দেখা যায়। এরা শাসন করা অঞ্চলটিকে আসাম বা আচাম বলা হত। শঙ্করদেবও আহোমদের "আসাম মুলুক" বলে উল্লেখ করেছিলেন এবং মোগলরাও আচাম বলত অবশ্য ব্যাপকভাবে লোকরা আহোম শব্দটি ব্যবহার করত। এই সম্বন্ধে সত্যেন্দ্রনাথ শর্মা নিজেদের ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন এমনভাবে-

যদিও শানরা নিজেদের পরিচয় টাই বলে দিয়েছিলেন, তাঁদের রাজ্যটির আদিবাসী লোকদের মধ্যে আসাম, অসম এবং কখনো অচম হিসাবে পরিচিত ছিলেন। নতুন অসমীয়া শব্দ আহোম, যার দ্বারা আজকের টাইদের জানা যায়, আসাম অথবা অসম থেকে উত্পত্তি হওয়া। কালক্রমে শাসকদের কারণে প্রয়োগ করা নাম রাজ্যের নাম পর্যন্ত পরিবর্তিত হল। কামরুপের নাম পরিবর্তন হয়ে প্রথমে অসম এবং পরে সংস্কৃতকরণের ফলে আসাম হয়ে যায় যার অর্থ হল "অসমকক্ষ, অসমান বা অসমান্তরাল"--পণ্ডিতপ্রবর সত্যেন্দ্রনাথ শর্মা

[১]

আদি বসতি সম্পাদনা

টাই আহোমদের প্রথম প্রজন্ম মৌঙ ফি এবং মৌঙ রির থেকে মৌঙ মাওর দিকে প্রবজন করেছিলেন (বর্তমান এই স্থানগুলি চীনদেশের চিপ-চং-পান্না বা Xishuangbanna, দেহংদা স্বায়ত্ত শাসিত প্রান্ত এবং রুইলীতে পড়ে।)[২]।রাজনৈতিক উচ্চাকাংক্ষায় চুকাফা নামের একজন টাই কোঁয়র পশ্চিম দিকে এগিয়ে এসে একটি নতুন দেশের শাসনকর্তা হতে অনুপ্রাণিত করেছিলেন৷ ১২২৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি প্রায় ৯০০০ অনুগামীর সাথে ব্রহ্মপুত্র উপত্য়কাত প্রবেশ করে[৩] | তারা সাথে শালি চাষ এবং বুরন্জী লেখার পরম্পরাও নিয়ে আসেন। তাঁরা নিগাজীকরে ব্রহ্মপুত্র-এর দক্ষিণ এবং দিখৌ নদীর পূর্ব অংশে বসবাস করতে থাকেন। বর্তমান এই স্থানসমূহে যথেষ্ট আহোম দেখতে পাওয়া যায়।[৪]

আসামের আন্তঃগঠন সম্পাদনা

চাওলুং জানিয়ে সমগ্র আসামের বিভিন্ন স্থান ঘুরে উচিত স্থানের সন্ধান আরম্ভ করেন। তারা বরাহী এবং মরাণদের সাথে মিলে সম্পর্ক গড়ে তোলে। এরা তিব্বত-বর্মী বরাহী আহোমদের সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক গড়ে , মরাণরা নিজেদের স্বকীয়তা বজায় রাখে।চ্যুকাফা ১২৫৩ সালে চে-রাই-দয় নামক একটি শহর নির্মাণ করে নিজেদের রাজধানী রূপে মর্যাদা দেন যাকে বর্তমান চরাইদেও বলেও ডাকা হয়।[৫]

পুনরায় উদ্ধার সম্পাদনা

১৮৯৩ সালে সদৌ অসম আহোম সভা গড়ে ওঠে যা অইন ঠাইয়ের টাইদের সাথে যোগাযোগ আরম্ভ করে।[৬]

সমাজ সম্পাদনা

বান-মৌং সম্পাদনা

টাই আহোমদের প্রাচীন সমাজিক প্রথা হল বান-মৌং। একটি নদীর পারে কয়েকঘর মানুষ সাথে খেয়ে একটি বান (গাঁও) সৃষ্টি হয়েছিল। কয়েকটি বান সাথে হয়ে মৌং সৃষ্টি হয়েছিল[৭]। অইন টাইদের মধ্যেও এই প্রথা দেখতে পাওয়া যায়। বান-মৌং কৃষি ভিত্তিক এবং একটি নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল। থাই, শান এবং অইন টাই ভাষায় একে বান-মৌং বলা হয়।[৭]

ফৈদ সম্পাদনা

আহোমদের ফৈদ সামাজিক প্রথার এক উৎকৃষ্ট উদাহরণ [৮]। তারা প্রথমে নিজেদের ৭ ভাগ করে সাতপরিবারের আহোম ফৈদ গঠন করেন। চ্য়ু (বাঘ) ফৈদে স্বয়ম চাওলুংজন আছেন, যেখানে অইন চাও-ফা সমস্ত অন্তর্ভুক্ত। দুজন প্রধানমন্ত্রী চাও-ফ্রুং-মৌং (বুঢ়াগোহাঞি) এবং চাও থাও মৌং (বরগোহাঞি) ফৈদ[৮]। তিন পুরোহিত ফৈদ মোষুং, ম'প্লং, ম'চাম। এবং চিরিং ফৈদ, মোট সাতটা ফৈদ গঠন হয়েছিল। পরে এই ফৈদসমূহে সন্দিকৈ যুগ হয়। পরে চাও-ফাদের ফৈদ চারিঙীয়া , দিহিঙীয়া , টিপমীয়া , শামুগুড়িয়া , তুংক্খুঙীয়া , পার্বত্য , নামরূপীয়া পর্যন্ত বিভক্ত হয়[৮]। থিক সেইমতো ,চাও-ফ্রুং-মৌং ফৈদ আঠটা, চাও থাও মৌং ষোলটা ,ম'-চাম বারটা , ম'-হুং সাতটা সাথে ম'-প্লং এবং চি-রিং আটটাকরে ফৈদে ভাগ হয়। বাকী আহোমরা কর্মসূত্রে চাওদাং, ঘরফলিয়া, লিকচৌ ইত্যাদিতে ভাগ হয়। জয়ধ্বজসিংহের সময়ে হিন্দু ধর্মের প্রভাবে পড়ে বাইলুং, দেওধাই এবং মোহন ফৈদকে গুদেখ পুনরায় নতুনভাবে "সাতঘরীয়া আহোম" গঠন করা হয়েছিল যেখানে চেতিয়া, লাহন, দুবরা, লুখুরাখন, পাতর, ইত্যাদি ফৈদসমূহকে প্রথম বার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল।

সাহিত্য সম্পাদনা

সাচি-পাত সম্পাদনা

আহোমদের নিজেদের লেখা পদ্ধতি আছে যা টাই-ক্রাদাই লিপি পরিবারের অন্তর্গত লিপি যাকে আহোম লিপি বলা হয়[৯]। আহোম লিপি টাই-নোয়া[১০] দের থেকে ক্রমবিকাশ হওয়া যা দেখতেও একই ছিল চিনের সরকার যাকে বর্তমানে উন্নীতকরণ করেছে[১১]। আহোমরা নিজস্ব ইতিহাস লিপিবদ্ধ করেছিলেন যাকে বুরঞ্জী বলা হয়[১২]। অহোমদের পূর্বে ইতিহাস লেখার প্রথা আসামে ছিল না। তাদের বিভিন্নপ্রকারের ইতিহাস , সমাজ , জ্য়োতিষ , এবং পূজার্চনা করার পুথি আছে। বিশেষকরে ম'-লুঙ শ্রেণী মোষুং, ম'প্লং, ম'চাম এই পুথিসমূহ অধিক ব্যবহার করতেন।

বছর গনণা সম্পাদনা

আহোমদের নিজস্ব লুনার ক্যালেন্ডার আছে যাকে লাক-নি-তাও-চি-ঙা [১৩] বলে জানা যায়, যা বছর গননার এক প্রাচীন নিয়ম। এই প্রথা মধ্য় টাই রাজ্য় (চৌং-কৌ)তে প্রচলন হয়েছিল এবং একে আজও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার টাইরা এবং চীনারা ব্যবহার করেন। এই সমস্ত দিন, মাস এবং বছর গণনা করা পুথিতে লেখা হয়েছিল[১৪]

ধর্ম সম্পাদনা

আহোম মানুষরা পূর্বপুরুষদের উৎসর্গ করার বাইরেও অন্য একটি অদৃশ্য মহান প্রাকৃতিক শক্তিকে বিশ্বাস করেন। তাই আহোমদের পণ্ডিত (ম' বা মলুঙ্) তিনটি ফৈদ লোক হল ম-হুং, ম-প্লং, চাংবুন।

আহোম ধর্ম সম্পাদনা

আহোম ধর্ম হল একটি পরম্পরাগত টাইধর্ম , এখানে মুলতঃ পুর্বপুরুষ উপাসনা (ফি-দাম) করা হয় সাথে এখানে বৌদ্ধ এবং তাও ধর্মেরও প্রভাব আছে। টাই-আহোমদের পরম্পরাগত বিশ্বাস মতে আহোমরা একজন পুর্বপূরুষ দেবতাকে ফা-তু-সিং (ফা:স্বর্গ, তু:একজন ,সিং:উচ্চ; একজন সর্বোত্তম পূর্বপুরুষ ; ফা লাই বেত বলাও হয়) যার দ্বারা সমগ্র পৃথিবী সৃষ্টি হয়েছে[১৫]। সেই অইন দেবতা ; খুন-থেও-খাম র সাথে চারটি সোনার কণী ছিল বলে জনবিশ্বাস আছে। চতুর্থ জন অর্থাৎ ড্রাগনরূপী ঙি-ঙাও খাম পৃথিবীটি তৈরি তোলায় সহায়তা করেছিলেন বলে বিশ্বাস করা হয়। ঙি-ঙাও-খাম বা ড্রাগনের চিত্র অংকিত চোলা আহোম চাও-ফারা পরেছিল। লেংদন মৌং-ফি (বর্তমান চীনার টিয়েন)র রাজা হয়েছিলেন এবং তাঁর নাতি খুনলৌং এবং খুনলাইকে একটি স্থান মৌংরি-মৌংরাম (বর্তমান চিনের Xishunagbanna) পর্যন্ত শাসন করতে পাঠান। এদের বংশধর আহোম রাজারা। খুনলুং এবং খুনলাই চুমফা (সম্পূর্ণ নাম:চুমফারৌংছেংমৌং ; অসমীয়া : চুমদেও) কে নিয়ে আনেন এবং বংশাণুক্রমে চাওলুং চুকাফা পেয়ে তাঁকে তাঁর য়ে-নাইয়েকে দিয়ে পাঠিয়েছিলেন। এই সম্পদের আহোমদের বিশেষ দেওঘর যার নাম হ'-ফি সেখানে রাখা হয় এবং আহোমদের রাজার রাজ-অভিষেক খেওন-রৌণ-মাই-ক্ব' অনুষ্ঠানে অর্চনা করা হয়।

ধর্মীয় পরম্পরা সম্পাদনা

উম-ফা: এই অনুষ্ঠান পূর্বপুরুষ শাসক দেবতা লেং-দনকে স্মরণ করে অতি ভব্য এবং উৎসাহে পালন করা হয়। এখানে লেংদনের প্রিয় খাদ্য মাংসও দেওয়া হয় এবং বিভিন্ন জীব জন্তু প্যাত-সি করে উৎসর্গ করা হয়। এই অনুষ্ঠানটি ৫ বছরের মাথায় একবার উদ্‌যাপন করা হয় এবং একে আহোম শাসনের শেষ হওয়ার পরেও পালন করে আসা হয়েছে।

চাই-ফা: এই অনুষ্ঠানে সমস্ত প্রজাও যোগদান করেছিলেন।

য়ে-চেং-ফা: বিদ্যা এবং কলার প্রতীক পুর্বপুরুষ দেবী য়ে-চেং-ফার স্মৃতিতে এই পরম্পরা পালন করা হয়।

ফুরা-লুং বা ফ্রা-লুং: এই অনুষ্ঠানে ফুরা-তেরা বা ফুরা-লুংকে স্মরণ করা হয়। এখানে টাইদের জনজাতীয় ধর্ম এবং বৌদ্ধ সংস্কৃতির প্রভাব আছে। আহোমদের ম'-লৌংরা এই অনুষ্ঠানে আই-সিং-লাও (টাই-আহোমদের প্রার্থনা) গায়। এই অনুষ্ঠানে কোনো জীব উৎসর্গ করা হয় না।

রিক-খ্বন : এই অনুষ্ঠানটি কোনো যুদ্ধের সময় উচ্চ শক্তিকে স্মরণ করে পালন করা হয়। আহোম ভাষায় রিক শব্দের অর্থ মাতা / আহ্বান করা, খ্বনের অর্থ দীর্ঘায়ু। এই অনুষ্ঠানে জলদেবতা খাও-খামকে স্মরণ করা হয়।

মে-দাম-মে-ফি : এই অনুষ্ঠানটি পূর্বপুরুষদের স্মরণ করে প্রতি বছরে ৩১ জানুয়ারি তারিখে পালন করা হয়। আহোম দম্পতী চেং-কা-ফা (খুন-থেও-খামর পুত্র)ক পাকঘরের দক্ষিণ খুটাত স্মরণ করা হয়।

বানফি-ফুরালুংর পূর্বপুরুষ উপাসনা সম্পাদনা

টাই-আহোমরা নিজেদের প'-লিন প'-থাওদের স্মরণ করেন। তারা বিশ্বাস করে যে পূর্বপুরুষদের পূজা না করলে ঘরটিতে অমঙ্গল হয় এবং পূর্বপুরুষদের পূজা করলে তারা ঘরটিকে বিপদ আপদ থেকে দূরে রাখে। টাই-আহোমরা নিজেদের উৎসব পার্বণ বিবাহ ইত্যাদিতে প'-লিন প'-থাওদের স্মরণ করেন। একজন ব্যক্তি মরার পরে ফি-দাম হয়ে যায় বলে বিশ্বাস করা হয়। তাদের পবিত্র বলে গণ্য করে স্মরণ করা হয় অইন সমাজের মতো ভুত বা মৃত অপশক্তি বলে ধরা হয় না। টাই-আহোমরা বতরের ফল, শাক-পাতা ইত্যাদি ফি-দামকে তর্পণ করেন। বিশেষকরে তিন পুরোহিত ফৈদ মোষুং, ম'প্লং, ম'চামরা অধিক স্পষ্ট ভাবে ফি-দাম করেন। দামদের বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয় সেগুলি হল- প্রধান দাম, চি-রৌণ-দাম,ন'-দাম এবং জকরুবা দাম।

ঘাই দাম: 'ঘাই' মানে মূল এবং দাম মানে মৃত, প্রধান দাম মানে ঘরের জ্যেষ্ঠ মৃত বুঢ়া দম্পত্তি।

ছি-রৌণ-দাম: চি মানে চার, রৌণ মানে ঘর। ছি-রৌণ-দাম মানে ঘরটির দম্পত্তির চার পিতৃ পুরুষ।

জকরবেন দাম: জকরবেন শব্দটির অর্থ হল যে কোনো সন্তান না দিয়ে মরে বা ছোটে ঢুকায় বা কোনো মানসিক বা শারীরিক ব্যাঘাতে মরে।

ন'-দাম: ন' মানে নতুন , ঘরের গৃহস্থের কোনো সম্পর্কিত কোনো লোকের মৃত্যু হলে তাঁকে ন দাম বলা হয়।

জকরবেন দামকে বাদ দিয়ে বাকী সমস্ত দামকে মিলিয়ে গৃহদাম বলে এবং এদের বছরে একবার স্মরণ করা হয়।

বৌদ্ধ প্রভাব সম্পাদনা

আহোমদের বৌদ্ধ সংস্কৃতি ফ্রা-ত্রা-আলং ভিত্তিক। এর মূল য়ুন্নান বা ব্রহ্মদেশ[১৬]। অইন উত্তর পূর্বের টাইরা একে ফ্রা-ত্রা-সংঘ বলেও বলে[১৭]। ফুরালুং নামের পরম্পরা এর সাথে জড়িত। এর সাথে জড়িত একটি পুথি হল মিং-মাং-ফ্রা-লৌং যা শান্তি এবং সভ্য় হওয়ার কথা শেখায়[১৮]

মৃতের সৎকার সম্পাদনা

 
মৈ-দাম

আহোমদের মধ্যে থাকা পরম্পরা অনুসারে তারা মৃতদেহ জ্বালায় না বরং একপ্রকারের বিশেষ বাকসে ভরে মৈ-দাম দেয়[১৯]

সংস্কৃতি সম্পাদনা

ঘর সম্পাদনা

আহোমরা কাঠ,বাশ ইত্যাদিতে অইন টাই বা গাবলীয়া থাইদের মতো ঘর তৈরি করেছিল[২০]। তাদের বাড়ি এবং চাষের খেত ঘরের কাছে থাকে। বাঁশে নির্মিত বিশেষ প্রকারের ঘর ব্যবহার করে[২০]। এই ঘরসমূহকে রৌন-হওয়াণ বলা হয় এবং এটি মাটি থেকে অল্প উপরে তৈরি হয় কিন্তু অন্য জনগোষ্ঠীর চাং-ঘর বলে অল্প চাপর হয়[২০]

খাদ্য সম্পাদনা

প্রায় সব আহোম (বিশেষকরে গ্রাম্য)রা আমিষভোজী এবং আজও টাইদের খাদ্যাভ্যাসকে চালিয়ে যাচ্ছে[২১]গাহরি, মুরগি, গরু, মহ, হাঁস ইত্যাদির মাংস ছাড়াও আহোমরা ভেকুলীর মাংস, মুগালেটা, শুকুতী মাছ এবং আমরলি টোপ খেতে দেখা যায়[২১]।তাঁদের মুখ্য আহার ভাত এবং মুখ্য পানীয় ভাত, ভীমকল বা কঠাল থেকে প্রস্তুত করা লাও নামের পানীয়টি। এর জল দেওয়া টিকে নাম-লাও এবং জল না দেওয়া টিকে লৌক-লাও বলা হয়। আহোমরা কলার বাকল থেকে প্রস্তুত করা খার ব্যবহার করে এবং অনেক ঔষধিগুণ যুক্ত শাক-পাতা এবং বেত-গাঁজ খায়। আহোমদের খাদ্যাভ্যাসে অইন টাইদের সাথে সাদৃশ্য প্রদর্শন করা হয়। তাদের খাদ্যাভ্যাসে- থেও-দাম (মাটি মাস) , খাও-মুন (ভাত এবং দালচেনী) , সান্দহগুরী, চেও-খাও (ভাপে দেওয়া ভাত), খাও-মাই (চোঙা-চাউল), তিলে নির্মিত তিল পিঠা, খাও-ত্য়েক (আখৈ)[২০]। না রেঁধে কোমল চাউলের প্রস্তুতকরণ বা তরা পাতায় বেঁধে বানানো খাও-মাই (চোঙা চাউল)[২০]। আহোমরা কম মশলাযুক্ত খাদ্য এবং মাছ, বেঙেনা, বিলাহী ইত্যাদি পুরি বা তরা পাতায় দিয়ে খেয়ে বেশি ভাল থাকেন[২০]

বিবাহ সম্পাদনা

 
চ-ক্লংং

আহোমদের নিজস্ব প্রথায় সম্পাদিত করা বিবাহ পদ্ধতিতে চ-ক্লং”'[২২] বলে জানা যায়৷ চ-ক্লং আহোমদের বিবাহ পদ্ধতিতে এটি টাই ভাষার শব্দ[চ=জোড়া লগুবা,ক্লঙ=পূজা]। রাতি বিবাহ-এর শুভ লগ্নে মরুলের সমুখে সোনা, রূপা, পিতল বা কাঠ-এর গাছায় ১০১ গাছি বান-ফাইং”'[২২] চোমচাও প্রমুখ্যে ১০১ জন ফুরার উদ্দেশ্যে প্রজ্জ্বলিত করা হয়।“'চ-ক্লং”'[২২] বিবাহ পদ্ধতিতে প্রথমে আহোমদের ফুরা লেংদন অক কাই মহুং ফুরা রাজার জোষ্ঠা কন্যা নাং হুন ফাকে বিয়ে করা থেকেই আরম্ভ হল এবং তারপর থেকেই অ টাই মানুষের মধ্যে প্রচলিত হয়ে আসছে। টাই আহোমদের লাই-লিত নাং হুন ফা নামের পুথিটিতে এর বিষয়ে লেখা আছে। লংদনে অক-কাই মহুঙের কন্যাকে বিয়ে করাম বলে সুন্দর রাঙা ফুলাম গামোছায় “চকলি ভার” বা “ সোধনি ভার” দেন। কোনো কোনো স্থানে চকলঙ-এর দিন ম-লুংকে ভোজ-ভাত খাইয়ে বর-কনেই ম-লুংকে খ্রুসম্পন্নং করেন।[২৩] মোট ২০ টা নিয়মে আহোম বিবাহ পদ্ধতি সম্পন্ন হয়। তার কিছু হল-

১.জু-রণ(আহোম ভাষায় জু=বেঁচে থাকা , রণ=চির জীবনে)

২.রিক-খ্বন

৩.আপ-তাং(আপ=গা ধোওয়া,তাং=পবিত্র)

৪.চাও-বান (বান বা সূর্যকে আরাধনা)

৫.জণ-মিং (আশীর্বাদ)

ভাষা সম্পাদনা

টাই আহোম ভাষা হল একটি টাই-ক্রাদাই পরিবারের ভাষা , এটি টাই ভাষাগুলির দক্ষিণতম ভাষা। এই ভাষাটির পুনর্ব্যবহার উজনি আসামের টাই-আহোম গবেষকদের তত্ত্বাবধানে আরম্ভ হয়েছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যেমন- Institute of Tai Studies and Research P. K. Buragohain Institute for Tai and South East Asian Studies, Guwahati, Central Tai Academy, পাটসাকো ইত্যাদি গড়ে নিয়ে উঠেছে[২৪] ।অনাগত সময়ে এমনধরনের এবং প্রতিষ্ঠান গড়ে নিয়ে ওঠার সম্ভাবনা গড়ে উঠেছে।.[২৫] হাবুঙে টাই বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণ করা হচ্ছে যে নয়া-শিকারীদের সহায়তা করেছে।

সাথে দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Kakati,Banikanta ,Assamese, Its Formation and Development: A Scientific Treatise on the History and Philology of the Assamese Language, Being a Thesis Approved for the Ph.D. Degree of the Calcutta University in 1935, 1995 , LBS Publication,https://books.google.co.in/books?id=OTSrmQEACAAJ&dq ,https://archive.org/details/AssameseitsFormationAndDevelopment/page/n3}}
  2. (Gogoi 2011:V)
  3. Gait, Edward. A History of Assam. Thacker, Spink and Co. Calcutta, 1906. pg 96
  4. (Terwiel 1996:276)
  5. (Morey 2014:51-52)
  6. (Terweil 1996:278)
  7. (Gogoi 1995:30)
  8. (Gogoi 1976:15)
  9. (Gogoi 2011:1.00)
  10. (Gogoi 2011:V)
  11. (Gogoi 2011:10)
  12. (Gogoi 2011)
  13. pp.271-278 in ABOURANJIK
  14. Phukan, J.N.2006 pp.1
  15. (Gogoi 1976:1)
  16. (Gogoi 1976:16)
  17. (Gogoi 1976:16–17)
  18. (Gogoi 1976:17)
  19. Proceedings of North East India History Association page 128,129 and 130
  20. (Phukan 2017:II)
  21. (Gogoi 2011:227)
  22. তাই আহোমদের বিবাহ পদ্ধতিতে এবং চকলঙ...নাঙ দীপালী গগৈ
  23. অসমীয়া সংস্কৃতির কণিকা – সম্পাদনা- ড০ পরমানন্দ রাজবংশী, ড০ নারায়ন দাস (পৃষ্ঠা- ১১৭)
  24. Dipima Buragohain. Issues of Language Contact and Shift in Tai Ahom
  25. "Ahom"Ethnologue 

গ্রন্থপঞ্জি সম্পাদনা

  • গগৈ, শ্রুতস্বীনী (২০১১)। টাই আহোম রিলিজীয়ন এ ফিলচফীকেল ষ্টাডি (PhD) (ইংরাজী ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ জানুয়ারি ৩১, ২০১৯ 
  • Baruah, S. L. (১৯৭৭)। "Ahom Policy Towards the Neighbouring Hill Tribes"। Proceedings of the Indian History Congress38: 249–256। জেস্টোর 44139078 
  • Gogoi, Nitul Kumar (২০০৬), Continuity and Change among the Ahoms, Concept Publishing Company, Delhi 
  • Gogoi, Nitul Kumar (১৯৯৫)। Acculturation in the Brahmaputra Valley: the Ahom Case (PhD)। সংগ্রহের তারিখ ডিসেম্বর ২৯, ২০১৮ 
  • Gogoi, Padmeshwar (১৯৭৬), Tai Ahom Religion and Customs (পিডিএফ), Publication Board, Gauhati, Assam 
  • Morey, Stephen (২০১৪), "Ahom and Tangsa: Case studies of language maintenance and loss in North East India", Cardoso, Hugo C., Language Endangerment and Preservation in South Asia, Honolulu: University of Hawai'i Press, পৃষ্ঠা 46–77 
  • Phukan, J N (১৯৯১)। "Relations of the Ahom Kings of Assam with Those of Mong Mao (in Yunnan, China) and of Mong Kwang (Mogaung in Myanmar)"। Proceedings of the Indian History Congress52: 888–893। জেস্টোর 44142722 
  • Terwiel, B.J. (১৯৯৬)। "Recreating the Past: Revivalism in Northeastern India."। Bijdragen Tot de Taal-, Land- en Volkenkunde152 (2): 275–92। জেস্টোর 27864746ডিওআই:10.1163/22134379-90003014 
  • Phukan, Dr. Girin (২০১৭), Cultural Linkage of TheAhom with the Tais of Southest Asia: A case study of Ahom— Thai Linkage, I, II, IV, Khwan Mung Magazine 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা

  • Phukon, G. (1998). State of Tai culture among the Ahoms. [Assam, India?]: G. Phukon.
  • Saikia, Yasmin (২০০৪)। Fragmented Memories। Duke University। আইএসবিএন 978-0-8223-3373-9 
  • Lambert, Eric T.D. (১৯৫২)। "A short account of the Ahom people" (পিডিএফ)Journal of the Siam Society। Siam Society। JSS Vol.40.1 (digital): image। সেপ্টেম্বর ২৪, ২০১৫ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ নভেম্বর ১০, ২০১৩ 
  • Terwiel, Barend Jan (১৯৮৩)। "Ahom and the Study of Early Thai Society" (পিডিএফ)Journal of the Siam Society। Siam Society। JSS Vol. 71.0 (digital): image। নভেম্বর ৩, ২০১৩ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ নভেম্বর ১০, ২০১৩ 
  • The Tai-Ahom connection by Yasmin Saikia in Gateway to the East, June 2005.
  • Polities mentioned in the Chinese Ming Shi-lu, several references are made to a Tai Ahom kingdom in this translation of an important Ming dynasty historical source

টেমপ্লেট:আসামের জনগোষ্ঠী