আলিপুর
আলিপুর হল ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের রাজধানী কলকাতার একটি অঞ্চল এবং দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার সদর দপ্তর। আলিপুরের উত্তরসীমায় অবস্থিত টালির নালা, পূর্বে ভবানীপুর, পশ্চিমে ডায়মন্ড হারবার রোড এবং দক্ষিণে শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখার বজবজ লাইনের রেলপথটি।
আলিপুর | |
---|---|
কলকাতার অঞ্চল | |
দেশ | ভারত |
রাজ্য | পশ্চিমবঙ্গ |
শহর | কলকাতা |
মেট্রো স্টেশন | যতীন দাস পার্ক |
সময় অঞ্চল | ভারত মান সময় (ইউটিসি+৫.৩০) |
এলাকা কোড | +৯১ ৩৩ |
ইতিহাস
সম্পাদনাআলিপুর অঞ্চলটি কলকাতার পত্তনের সময় থেকেই এই মহানগরীর অঙ্গ। সেই কারণে বহু ঘটনার সাক্ষী এই অঞ্চল ঐতিহাসিক দিক থেকে বিশেষ ঐতিহ্য বহনকারী।
অষ্টাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগ থেকে ফোর্ট উইলিয়াম ও ডালহৌসি স্কোয়ারের বাইরে রেস কোর্সের ওপারে ইংরেজরা বসতি স্থাপন করতে শুরু করে। এই সময়ে নির্মিত বেলভেডর এস্টেট ছিল এই আলিপুর তথা এই শহরের প্রাচীনতম প্রতিষ্ঠানগুলির অন্যতম। তৎকালীন গভর্নর জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংস নিজের বসবাসের উদ্দেশ্যে এটি নির্মাণ করেন। গভর্নরস হাউস বা লাটভবন নির্মিত হওয়ার পূর্বাবধি এই বাড়িটিই ছিল ব্রিটিশ গভর্নর জেনারেলদের সরকারি বাসভবন। আবার এই সময় থেকেই একের পর এক ব্রিটিশ এই অঞ্চলে এসে বসবাস শুরু করতে থাকেন। অবিলম্বে প্রাসাদ, বাংলো ও বাগানে ভরে উঠে আলিপুর হয়ে ওঠে কলকাতার অন্যতম জনপ্রিয় ও দ্রষ্টব্য অঞ্চল।
১৮২০ সালে মিশনারি উইলিয়াম কেরি বেলভেডর এস্টেটের পিছনে স্থাপনা করেন এগ্রি হর্টিকালচারাল গার্ডেন। এই উদ্যান এই অঞ্চলের সৌন্দর্য অনেকাংশে বৃদ্ধি করে। বেলভেডর এস্টেটেরই একাংশে ১৮৫২ সালে উঠে আসে ইম্পিরিয়াল লাইব্রেরি, যার বর্তমান নাম জাতীয় গ্রন্থাগার। এই বছরেই আলিপুর টাঁকশালের উদ্বোধন সম্পন্ন হয়। ১৮৭৫ সালে আলিপুর পশুশালা উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় জনসাধারণের জন্য।
ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসের সঙ্গেও এই অঞ্চলের যোগ অত্যন্ত গভীর। এই অঞ্চল সাক্ষী বিখ্যাত আলিপুর বোমার মামলার।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলা-সদর আলিপুর থেকে সরিয়ে কলকাতার অদূরে বারুইপুর শহরে নিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এর ফলে ভবিষ্যতে আলিপুর অঞ্চলের সুদীর্ঘ প্রশাসনিক গুরুত্বও অনেকাংশে খর্বিত হবে।
প্রসিদ্ধ চিকিৎসাকেন্দ্র
সম্পাদনা- উডল্যান্ড্স মাল্টিস্পেশালিটি হসপিটাল, আলিপুর রোড
- কলকাতা মেডিক্যাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট, ডায়মন্ড হারবার রোড
- বি এম বিড়লা হার্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট, জাতীয় গ্রন্থাগার অ্যাভিনিউ (পূর্বনাম স্টার্নডেল রোড)
- কোঠারি মেডিক্যাল সেন্টার, জাতীয় গ্রন্থাগার অ্যাভিনিউ (পূর্বনাম স্টার্নডেল রোড)
- কমান্ড হাসপাতাল ইস্টার্ন কম্যান্ড, আলিপুর রোড
পরিবহন ব্যবস্থা
সম্পাদনাকলকাতার অন্যান্য অঞ্চলের সঙ্গে বাস পরিষেবার দ্বারা আলিপুর অঞ্চলটি সুসংযুক্ত।
কলকাতা শহরতলি রেলওয়ের বজবজ শাখার মাঝেরহাট ও নিউ আলিপুর স্টেশনদুটি আলিপুরের নিকটস্থ রেলস্টেশন।
আলিপুরের নিকটস্থ মেট্রো স্টেশনগুলি হল কালীঘাট ও যতীন দাস পার্ক ।
প্রসিদ্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
সম্পাদনা- কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, আলিপুর ক্যাম্পাস
- উইমেনস ল কলেজ, জাজেস কোর্ট রোড
- বিহারীলাল গার্হ্যস্থবিজ্ঞান কলেজ, জাজেস কোর্ট রোড
- আলিপুর মাল্টিপারপাস স্কুল ফর গার্লস (হেস্টিংস হাউস) এবং বি এড কলেজ
- কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়, কম্যান্ড হাসপাতাল
- আর্মি ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট, কলকাতা
দ্রষ্টব্য স্থানসমূহ
সম্পাদনা- জাতীয় গ্রন্থাগার, জাতীয় গ্রন্থাগার অ্যাভিনিউ, বেলভেডর রোড ও আলিপুর রোডের ধারে একটি বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে অবস্থিত
- আলিপুর পশুশালা, বেলভেডর রোড
- জাতীয় পরীক্ষণালয়, জাজেস কোর্ট রোড
- আলিপুর আবহাওয়া অফিস, জাতীয় গ্রন্থাগার অ্যাভিনিউ
- কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার (পূর্বনাম আলিপুর কেন্দ্রীয় কারাগার)
- ভবানী ভবন (গোয়েন্দা বিভাগের সদর)
- ভারত সরকার টাঁকশাল (পূর্বনাম আলিপুর মিন্ট) ডায়মন্ড হারবার রোড
- এগ্রি হর্টিকালচারাল সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া
- আলিপুর মিউজিয়াম
- ধনধান্য প্রেক্ষাগৃহ
রাজনীতি
সম্পাদনারাজ্য বিধানসভার ২০০১ ও ২০০৬ সালের নির্বাচনে সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস মনোনীত প্রার্থী বিশিষ্ট অভিনেতা তাপস পাল ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী) (সিপিআইএম) মনোনীত যথাক্রমে মীরা ভৌমিক ও বিপ্লব চট্টোপাধ্যায়কে পরাস্ত করেন। তার পূর্বে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস প্রার্থী সৌগত রায় সিপিআইএম-এর রবীন্দ্রনাথ রায় (১৯৯৬), সিপিআইএম-এর তুহিন রায়চৌধুরী (১৯৯১) ও সিপিআইএম-এর অশোক বসুকে (১৯৮৭) পরাস্ত করেছিলেন। তারও পূর্বে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস প্রার্থী অণুপ কুমার চন্দ্র সিপিআইএম-এর অশোক বসুকে (১৯৮২) পরাস্ত করেছিলেন। সিপিআইএম-এর অশোক বসু ১৯৭৭ সালে পরাস্ত করেছিলেন জনতা পার্টির বলাই বরন চট্টোপাধ্যায়কে। [১]
আলিপুর বর্তমানে দক্ষিণ কলকাতা লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্ভুক্ত একটি বিধানসভা কেন্দ্র। এই লোকসভা কেন্দ্রের নির্বাচিত সাংসদ হলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। [২]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "148 – Alipore Assembly Constituency"। Partywise comparison since 1977। Election Commission of India। ২০০৫-০২-০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০১-৩০।
- ↑ "General election to the Legislative Assembly, 2001 – List of Parliamentary and Assembly Constituencies" (পিডিএফ)। West Bengal। Election Commission of India। ২০০৬-০৫-০৪ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-১০-০৮।