আর্থার ফাগ

ইংরেজ ক্রিকেটার

আর্থার এডওয়ার্ড ফাগ (ইংরেজি: Arthur Fagg; জন্ম: ১৮ জুন, ১৯১৫ - মৃত্যু: ১৩ সেপ্টেম্বর, ১৯৭৭) কেন্টের চারথাম এলাকায় জন্মগ্রহণকারী প্রথিতযশা ইংরেজ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার ও আম্পায়ার ছিলেন। ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯৩৬ থেকে ১৯৩৯ সময়কালে ইংল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছিলেন।

আর্থার ফাগ
১৯৩০-এর দশকের সংগৃহীত স্থিরচিত্রে আর্থার ফাগ
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নামআর্থার এডওয়ার্ড ফাগ
জন্ম(১৯১৫-০৬-১৮)১৮ জুন ১৯১৫
চারথাম, কেন্ট
মৃত্যু১৩ সেপ্টেম্বর ১৯৭৭(1977-09-13) (বয়স ৬২)
টানব্রিজ ওয়েলস, কেন্ট
ব্যাটিংয়ের ধরনডানহাতি
বোলিংয়ের ধরনডানহাতি মিডিয়াম
ভূমিকাব্যাটসম্যান, উইকেট-রক্ষক, আম্পায়ার
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় দল
টেস্ট অভিষেক
(ক্যাপ ২৯১)
২৫ জুলাই ১৯৩৬ বনাম ভারত
শেষ টেস্ট২২ জুলাই ১৯৩৯ বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ
ঘরোয়া দলের তথ্য
বছরদল
১৯৩২ - ১৯৫৭কেন্ট
আম্পায়ারিং তথ্য
টেস্ট আম্পায়ার১৮ (১৯৬৭–১৯৭৫)
ওডিআই আম্পায়ার৭ (১৯৭২–১৯৭৬)
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা টেস্ট এফসি
ম্যাচ সংখ্যা ৪৩৫
রানের সংখ্যা ১৫০ ২৭,২৯১
ব্যাটিং গড় ১৮.৭৫ ৩৬.০৫
১০০/৫০ ০/০ ৫৮/১২৮
সর্বোচ্চ রান ৩৯ ২৬৯*
বল করেছে ৭২
উইকেট
বোলিং গড়
ইনিংসে ৫ উইকেট
ম্যাচে ১০ উইকেট
সেরা বোলিং
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং ৫/– ৪২৫/৭
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ১০ জুন ২০১৯

ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে কেন্টের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। দলে তিনি মূলতঃ ডানহাতি উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। এছাড়াও, দলের প্রয়োজনে ডানহাতে মিডিয়াম বোলিং ও উইকেট-রক্ষকের দায়িত্ব পালন করতেন আর্থার ফাগ

প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট সম্পাদনা

১৯৩২ থেকে ১৯৫৭ সাল পর্যন্ত আর্থার ফাগের প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান ছিল। ১৭ বছর বয়সে কেন্টের পক্ষে ডানহাতে ব্যাটিং উদ্বোধন করতে মাঠে নামেন। সমগ্র প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবনে ৩৬.০৫ গড়ে ২৭,২৯১ রান সংগ্রহ করেছিলেন।

১৯৩৮ সালে আর্থার ফাগ তার সেরা সময়ে অবস্থান করেছিলেন। কোলচেস্টারে কেন্টের সদস্যরূপে এসেক্সের বিপক্ষে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে বিশ্বরেকর্ড স্থাপন করেন। প্রথম ইনিংসে ২৪৪ রান তোলার পর দ্বিতীয় ইনিংসে অপরাজিত ২০২ রান তুলেন। দ্বিতীয় ইনিংস খেলতে তিনি মাত্র ১৭০ মিনিট ব্যয় করেছিলেন। এরফলে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে এক খেলার উভয় ইনিংসে দ্বি-শতক করার কৃতিত্ব প্রদর্শন করেন। ঐ খেলাটি ড্রয়ে পরিণত হয়।[১][২][৩] পরবর্তীতে ২০১৯ সালে শ্রীলঙ্কান ঘরোয়া ক্রিকেটে অ্যাঞ্জেলো পেরেরা তার এ কৃতিত্বের সমকক্ষ হন।[৪]

১৯৫০-এর দশকের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত কাউন্টি ক্রিকেটে ধারাবাহিকভাবে স্বীয় ক্রীড়ানৈপুণ্য প্রদর্শন করে চলেছিলেন। সর্বমোট ৫৮টি সেঞ্চুরির পাশাপাশি ২৫,০০০-এর অধিক রান তুলেন।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সম্পাদনা

সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে পাঁচটিমাত্র টেস্টে অংশগ্রহণ করার সুযোগ পেয়েছিলেন আর্থার ফাগ। ২১ বছর বয়সে ২৫ জুলাই, ১৯৩৬ তারিখে ম্যানচেস্টারে সফরকারী ভারতের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার। ২২ জুলাই, ১৯৩৯ তারিখে একই মাঠে সফরকারী ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সর্বশেষ টেস্টে অংশ নেন তিনি।

দলের সাথে পরবর্তী শীতকালে অস্ট্রেলিয়া গমন করেন। সেখানে বাতজ্বরে আক্রান্ত হন ও ১৯৩৭ সালের পুরো মৌসুম খেলার জগৎ থেকে দূরে সরেছিলেন।[১]

১৯৩৮ সালে তরুণ লিওনার্ড হাটন ইংল্যান্ডের প্রথম পছন্দের উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে অন্তর্ভুক্ত হন ও ওভালে সফরকারী অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৩৬৪ রান তুলেন। এরপর আর একটিমাত্র টেস্টে অংশগ্রহণের সুযোগ পান আর্থার ফাগ। ১৯৩৮ সালে দল নির্বাচকমণ্ডলী পুনরায় তাকে জাতীয় দলে অন্তর্ভুক্ত করে। কিন্তু, তেমন খেলা উপহার দিতে পারেননি। এরপরও তাকে শেষবারের মতো টেস্ট দলে ঠাঁই দেয়া হয়েছিল। কিন্তু দূর্বল স্বাস্থ্যের কারণে ঐ মৌসুমের শীতকালে দক্ষিণ আফ্রিকা গমন করা থেকে নিজেকে বিরত রাখেন। ১৯৩৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে আরও একটি টেস্টে অংশ নেন।

খেলার ধরন সম্পাদনা

প্রথম-শ্রেণীর কাউন্টি ক্রিকেটে বেশ সফল ছিলেন। তবে, তিনি টেস্ট ক্রিকেটে তেমন সফলতা লাভে সক্ষম হননি। ত্রিশোর্ধ্ব হার্বার্ট সাটক্লিফ ইংরেজ দল থেকে বাদ পড়লে টেস্টে নতুন উদ্বোধনী জুটির সন্ধান করতে থাকে। এক পর্যায়ে আর্থার ফাগ ও লেন হাটনকে এর উপযুক্ত মনে করা হয়।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে তাকে বাদ দেয়া হয়। ১৯৪৬ সালে প্রথম-শ্রেণীর খেলা শুরু হবার পূর্ব-পর্যন্ত চেল্টেনহামে কোচের দায়িত্বে চলে যান। ১৯৪৭ সালে পুনরায় কেন্ট দলে ফিরে আসেন। তখন তার বয়স ছিল প্রায় ৩২ বছর। প্রাক্তুন খেলোয়াড়ের ন্যায় তার অংশগ্রহণ ছিল। লেন হাটন ও সিরিল ওয়াশব্রুক ইংল্যান্ডের উদ্বোধনী জুটিরূপে নিজেদেরকে পাকাপোক্ত করে ফেলেন। তখন তার টেস্ট খেলোয়াড়ী জীবন স্পষ্টতঃই শেষ হয়ে গেছে। তখনও তিনি কেন্টের পক্ষে বিস্ময়করভাবে ব্যাট হাতে আরও দশ বছর খেলেছিলেন। উইকেটের চতুঃপার্শ্বে স্ট্রোকের ফুলঝুড়ি ছোটাতেন। এছাড়াও হুকেও তার সমান দক্ষতা ছিল। বিশেষ করে ফাস্ট বোলিংয়ের বিপক্ষে নিজেকে বেশ মেলে ধরতেন। তবে, স্পিনের ক্ষেত্রে তিনি তেমন ভালো খেলতে পারেননি।

ব্যাটিংয়ের সাথে ফিল্ডিং তেমন মানানসই ছিল না। স্লিপ অঞ্চল বাদে যে-কোন স্থানে তাকে রাখা হতো। দ্বিতীয় একাদশে থাকাকালীন উইকেট-রক্ষণে প্রশিক্ষণ নেন। কাউন্টি দলে লেস অ্যামিস কিংবা হপার লেভলেটের অনুপস্থিতিতে উইকেট-রক্ষকের ভূমিকায় থাকতেন।

আম্পায়ার সম্পাদনা

ক্রিকেট খেলা থেকে অবসর গ্রহণের পর ১৯৬৭ সালে বার্মিংহামে ইংল্যান্ড-ভারতের মধ্যকার খেলায় প্রথমবারের মতো টেস্ট ক্রিকেটে আম্পায়ারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। এরপর ১৯৭২ সালে লর্ডসে ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার একদিনের আন্তর্জাতিকে আম্পায়ার হিসেবে খেলা পরিচালনা করেছিলেন তিনি। মৃত্যু পূর্ব-পর্যন্ত প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট খেলায় আম্পায়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এ পর্যায়ে সর্বমোট আঠারোটি টেস্ট ও সাতটি একদিনের আন্তর্জাতিক খেলায় আম্পায়ারিত্ব করেন। ১৯৭৩ সালে এজবাস্টনে ইংল্যান্ড-ওয়েস্ট ইন্ডিজের মধ্যকার খেলায় তার সিদ্ধান্তে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল আপত্তি তোলায় তিনি আর মাঠে নামেননি। [৫]

বার্মিংহাম টেস্টের দ্বিতীয় দিনে তার পরিবর্তে ওয়ারউইকশায়ারের কোচ অ্যালেন ওকম্যান তৃতীয় দিনের সকালের দ্বিতীয় ওভারের পূর্ব-পর্যন্ত আম্পায়ারিত্ব করেছিলেন। এরপর তিনি পুনরায় মাঠে নামেন।

১৩ সেপ্টেম্বর, ১৯৭৭ তারিখে ৬২ বছর বয়সে কেন্টের টানব্রিজ ওয়েলসে আর্থার ফাগের দেহাবসান ঘটে।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Fagg's unique double-hundreds, CricInfo. Retrieved 2017-07-15.
  2. Frindall, Bill (২০০৯)। Ask BeardersBBC Books। পৃষ্ঠা 159–160। আইএসবিএন 978-1-84607-880-4 
  3. Abhishek Mukherjee (২০১৩-০৭-১৫)। "Arthur Fagg scores double hundred in each innings"CricketCountry। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০৫-০৫ 
  4. "Two double-tons in a first-class game - Angelo Perera achieves rare record"Cricinfo। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০২-০৪ 
  5. Cricinfo"Officious officialdom"। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০১-২২ 

আরও দেখুন সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা