আব্দুল মাজেদ

বহিষ্কৃত বাংলাদেশী সামরিক অফিসার

ক্যাপ্টেন (অব.) আবদুল মাজেদ (মৃত্যু ১২ এপ্রিল ২০২০ )একজন সাবেক বাংলাদেশী সামরিক অফিসার। তিনি ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট বাংলাদেশের স্থপতি ও প্রথম রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের জন্য আত্মস্বীকৃত ও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামী। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ধানমন্ডির ৩২ নং রোডে শেখ মুুজিব হত্যাকাণ্ডের সময় ক্যাপ্টেন আবদুল মাজেদ অন্য আসামিদের সঙ্গে সরাসরি অংশগ্রহণ করেন। এছাড়া তিনি জাতীয় চার নেতাকে জেলখানায় জাতীয় চার নেতা হত্যার সাথে জড়িত ছিলেন। ২০২০ সালের ১২ এপ্রিল ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলিয়ে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।

আব্দুল মাজেদ
আব্দুল মাজেদ
জন্ম
মৃত্যু১২ এপ্রিল ২০২০
সমাধিহোসেনপুর, শম্ভুপুরা ইউনিয়ন, সোনারগাঁও উপজেলা, নারায়ণগঞ্জ[২]
পেশাসামরিক কর্মকর্তা (বরখাস্ত)
অপরাধের অভিযোগশেখ মুজিবুর রহমান ও জাতীয় চার নেতার হত্যাকাণ্ড
অপরাধের শাস্তিজাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ও জাতীয় চার নেতা হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত
অপরাধীর অবস্থাকার্যকর
পিতা-মাতা
  • আলী মিয়া চৌধুরী (পিতা)

কর্মজীবন সম্পাদনা

আবদুল মাজেদ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে ক্যাপ্টেন ছিলেন। ১৯৭৫ সালে ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পর তৎকালীন সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমান সাবেক সেনা কর্মকর্তা আব্দুল মাজেদকে সেনেগালের দূতাবাসে বদলি করেন।[৩] ১৯৮০ সালে বাংলাদেশে ফিরে এসে যোগদান করেন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশনে। সেসময়ে সেনাবাহিনী থেকে অবসরে যান এবং উপসচিব পদমর্যাদায় চাকরি করতেন, পরবর্তিতে তিনি সচিব পদে পদোন্নতি পান। বিআইডব্লিউটিসিতে চাকরির পরবর্তিতে তিনি যুব উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ে পরিচালক পদে যোগদান করেন। সেখান থেকে তিনি জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের পরিচালক হন।[৩] ১৯৯৭ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি আত্মগোপন করেন।

শেখ মুজিবুর, জাতীয় চার নেতার হত্যাকাণ্ড সম্পাদনা

১৯৭৫ সালের ১৪ আগস্ট মাজেদ ও অন্যান্য অফিসাররা বেঙ্গল ল্যান্সার্স অস্ত্রাগার থেকে অস্ত্র লুট করে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শেখ মুজিবুর রহমান এবং তাঁর পরিবারের বেশিরভাগ সদস্য সেনা অভ্যুত্থানে নিহত হন। আবদুল মাজেদ, শেখ মুজিবুর রহমানের শ্যালক আবদুর রব সেরনিয়াবাতের বাসভবনে হামলা করা দলের সদস্য ছিলেন। পরে মাজেদ এবং অন্যান্য কর্মকর্তারা বঙ্গভবনে সাক্ষাত করেন এবং খন্দকার মোশতাক আহমেদকে দায়িত্বে দিয়ে নতুন সরকার গঠন করেন।

১৯৭৫ সালের ২ নভেম্বর আব্দুল মাজেদ ও শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার সাথে জড়িত অন্যান্য সেনা কর্মকর্তারা বঙ্গভবনে খন্দকার মোশতাক আহমেদের সাথে সাক্ষাত করেন। সেখানে তারা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় চার নেতাকে হত্যার জন্য জেলহত্যা চালানোর সিদ্ধান্ত নেন।[৪] এই জাতীয় চার নেতারা হলেন আবুল হাসনাত মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, মুহাম্মদ মনসুর আলী, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, এবং তাজউদ্দীন আহমদ।

বিচারকার্য সম্পাদনা

বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার সম্পাদনা

বঙ্গবন্ধু হত্যার দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে মামলার বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার শুরু হলে আত্মগোপনে চলে যান মাজেদ।

১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর ঢাকা দায়রা আদালত ১৪ জন আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। দণ্ডপ্রাপ্তরা বাংলাদেশ হাইকোর্টে আপিল করেন। ২০০০ সালের ১৪ ডিসেম্বর হাইকোর্ট এক বিভক্তিমূলক রায় দেয়, রায়ে একজন বিচারপতি সকলের মৃত্যুদণ্ডের কথা বলেন এবং অন্য বিচারক ১০ জন আসামির মৃত্যুদণ্ডের কথা বলেন। তৃতীয় বিচারপতি কেবল অভিযুক্ত ১২ জনের সাজার কথা বলেন।

২০০৯ সালের ১৯ নভেম্বর, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট অভিযুক্ত ১২ জনের মৃত্যুদণ্ডের বিষয়টি নিশ্চিত করে রায় দেয়। দণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে পাঁচজনকে ২৭ জানুয়ারী ২০১০ সালে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল। তারা হলেন এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ, বজলুল হুদা, মহিউদ্দিন আহমেদ, সৈয়দ ফারুক রহমান, এবং সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান। অপর এক আসামি, আবদুল আজিজ পাশা জিম্বাবুয়েতে মারা যান। পলাতক আসামিরা ছিলেন- আব্দুল মাজেদ, খন্দকার আবদুর রশিদ, এস এইচ এম বি নূর চৌধুরী, রিসালদার মোসলেহউদ্দিন খান, রাশেদ চৌধুরী, এবং শরিফুল হক ডালিম

২০১৫ সালে, বাংলাদেশ সরকার বাংলাদেশে মাজেদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে, যার মধ্যে ছিল ভোলা জেলার বোরহানউদ্দিন পৌরসভায় ১.৩৩ একর জায়গা।

২০২০ সালের ১৬ মার্চ আব্দুল মাজেদ ঢাকায় ফিরে আসেন। ৭ এপ্রিল ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট তাঁকে মিরপুরে গ্রেপ্তার করে। পরে ঢাকার একটি আদালত তাকে কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রেরণ করে।[৫] তিনি জানান গ্রেপ্তার এড়ানোর জন্য তিনি ২২-২৩ বছর কলকাতায় আত্মগোপনে ছিলেন। ২০২০ সালের ১২ এপ্রিল রাত ১২ টা ১মিনিটে তার মৃৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়।

চার নেতা হত্যার বিচার সম্পাদনা

জাতীয় চার নেতার হত্যাকাণ্ডে অংশ নেন আবদুল মাজেদ। ২৮ আগস্ট ২০০৮ সালে, জেলহত্যা মামলায় তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছিল।[৩]

ব্যক্তিগত জীবন সম্পাদনা

আব্দুল মাজেদ ভারতের কলকাতার পার্ক স্ট্রিটের বেডফোর্ড লেনের ভাড়া বাড়িতে পলাতক ছিলেন। ২০১১ সালে তিনি তাঁর থেকে ৩২ বছরের ছোট উলুবেড়িয়ার সেলিনা বেগমকে বিয়ে করেন।[৩] মাজেদের চার কন্যা ও এক ছেলে রয়েছে।

মৃত্যুদণ্ড প্রদান সম্পাদনা

বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়ার পর ২০২০ সালের ১২ এপ্রিল রাত ১২টা ০১ মিনিটে কেরাণীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। তাকে নারায়ণগঞ্জে দাফন করা হয়। গিলোটিন[৬]

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "কে এই ক্যাপ্টেন আব্দুল মাজেদ?"জাগো নিউজ। ৭ এপ্রিল ২০২০। সংগ্রহের তারিখ ৮ এপ্রিল ২০২০ 
  2. "কঠোর গোপনীয়তায় খুনি মাজেদের লাশ সোনারগাঁওয়ে দাফন"। jugantor.com। ১২ এপ্রিল ২০২০। সংগ্রহের তারিখ এপ্রিল ১৩, ২০২০ 
  3. "কে এই ক্যাপ্টেন মাজেদ?"যুগান্তর। সংগ্রহের তারিখ ১৪ এপ্রিল ২০২০ 
  4. সংবাদদাতা, নিজস্ব। "পশ্চিমবঙ্গে গা ঢাকা দেওয়া সেই মুজিব হত্যাকারীর ফাঁসি শীঘ্রই"anandabazar.com। সংগ্রহের তারিখ ১৪ এপ্রিল ২০২০ 
  5. "বঙ্গবন্ধুর খুনি মাজেদকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ"প্রথম আলো। ৭ এপ্রিল ২০২০। সংগ্রহের তারিখ ৭ এপ্রিল ২০২০ 
  6. "বঙ্গবন্ধুর আরেক খুনি ফাঁসিতে ঝুললো"। bdnews24। ১২ এপ্রিল ২০২০। ১১ এপ্রিল ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ এপ্রিল ২০২০