শরিফুল হক ডালিম
শরিফুল হক ডালিম (জন্ম: ১৯৪৬)[১] যিনি মেজর ডালিম নামে অধিক পরিচিত, হলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন প্রাক্তন সামরিক কর্মকর্তা। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার সাথে তিনি জড়িত ছিলেন।[৪][৫][৬] শেখ মুজিব নিহত হবার পর মেজর ডালিম (পরবর্তীতে লেফটেন্যান্ট কর্নেল) বাংলাদেশ বেতারে নিজেই হত্যার সাথে জড়িত থাকার ঘোষণা দেন।[৭][৮][৯][১০] '৭৫ পরবর্তী কতিপয় সরকার তাকে বিদেশে বিভিন্ন বাংলাদেশি দূতাবাসে বিভিন্ন পদে নিয়োগ দেয়।
শরিফুল হক ডালিম | |
---|---|
জন্ম | |
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
অপরাধীর অবস্থা | পলাতক |
দাম্পত্য সঙ্গী | নিম্মি ডালিম |
পুরস্কার | বীর উত্তম[২](বাতিল)[৩] |
দণ্ডাদেশের কারণ | খুন (শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ড) |
ফৌজদারি দণ্ড | ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যু |
সামরিক কর্মজীবন | |
আনুগত্য | পাকিস্তান বাংলাদেশ |
সেবা/ | বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পাকিস্তান সেনাবাহিনী (১৯৭১-এর আগে) |
কার্যকাল | ১৯৬৮-১৯৭৪[১] |
পদমর্যাদা | লেফটেন্যান্ট কর্নেল |
ইউনিট | আর্মার্ড কোর |
নেতৃত্বসমূহ |
|
পরিচিতির কারণ | শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ড |
কর্মজীবন
সম্পাদনাশরিফুল হক ডালিম প্রথমে ১৯৬৪ সালে পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে যোগদান করেন। ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধের পর তিনি বিমান বাহিনী থেকে সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন।[১১] ১৫ই আগস্ট ১৯৭৫ সালের শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর তাকে সেনাবাহিনীতে পুনঃনিয়োগ করা হয় এবং লে. কর্ণেল পদে পদোন্নতি দেয়া হয়। ১৯৭৬ সালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নিয়োজিত হবার পর গণচীনে তাকে কূটনীতিক হিসাবে প্রেরণ করা হয়। ১৯৮০ সালে তিনি লন্ডন হাই কমিশনের সাথে যুক্ত হন। ১৯৮২ সালে কমিশনার হিসাবে হংকং-এর দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। ১৯৮৮ সালে রাষ্ট্রদূত হিসাবে কেনিয়ায় দায়িত্ব পালন করেন। একই সাথে তাকে তানজানিয়ার দায়িত্ব দেয়া হয়। ইউনেপ (UNEP) এবং হেবিটাট (HABITAT) এ বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি হিসাবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেন। সোমালিয়ায় যুদ্ধকালীন সময়ে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা বাহিনীর অংশ হিসাবে প্রেরিত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যদের সার্বিক তত্ত্বাবধানের বিশেষ দায়িত্বও তিনি পালন করেন। ১৯৯৫ সালে তিনি সরকারি চাকুরি থেকে অবসর লাভ করেন।[১২]
মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ
সম্পাদনামুক্তিযুদ্ধের শুরুতে শরিফুল হক ডালিম পাকিস্তানে (তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তান) ছিলেন। ২০শে এপ্রিল ১৯৭১ সালে তিনি পাকিস্তান থেকে পালিয়ে ভারত আসেন এবং সেখান থেকে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন।[১১][১৩] মুক্তিযুদ্ধে অসাধারণ সাহস ও কৃতিত্বের জন্য তিনি বীর উত্তম খেতাবে ভূষিত হন। তবে ২০২১ সালের ৬ই জুন তৎকালীন সরকার শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলায় শরিফুল হক ডালিমসহ মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত চারজনের মুক্তিযুদ্ধের খেতাব বাতিল করে।[৩]
শেখ মুজিব হত্যা
সম্পাদনা১৯৭৫-এ বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার সাথে মেজর ডালিম সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন।[৮] [৩]মেজর সৈয়দ ফারুক রহমান, খন্দকার আবদুর রশিদ ও মেজর ডালিমসহ আরও কয়েকজন সেনা কর্মকর্তা ১৯৭৫ সালে একটি সেনা অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা করেন।[৪] ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট ডালিমকে রাষ্ট্রপতি মুজিবকে হত্যা করতে নেতৃত্ব দিতে বলা হয় তবে ডালিম সেটি করতে অস্বীকার করেন।[৪] এরপর তাকে দ্বিতীয় ফিল্ড আর্টিলারি রেজিমেন্টের দায়িত্ব দেওয়া হয়। সেনা-অভ্যুত্থান চলাকালে শেখ মুজিবকে হত্যা করা হয়। পরে ডালিম বাংলাদেশ বেতারের নিয়ন্ত্রণ নেন এবং একটি ঘোষণা দেন: ‘আমি মেজর ডালিম বলছি, শেখ মুজিবকে হত্যা করা হয়েছে। খন্দকার মোশতাক আহমদের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখল করেছে। কারফিউ জারি করা হয়েছে।’[১৪]
শেখ মুজিব হত্যা মামলায় মেজর ডালিমকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়। তবে বর্তমানে তিনি পলাতক আছেন।[১৫][১৬]
ব্যক্তিগত জীবন
সম্পাদনাডালিম, নিম্মি চৌধুরীকে বিয়ে করেন এবং তাদের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে।[১৭] তার ছোট ভাই হলেন কামরুল হক স্বপন।[১৮][১৯]
গ্রন্থাবলি
সম্পাদনা- যা দেখেছি যা বুঝেছি যা করেছি (২০২১)
- আমি মেজর ডালিম বলছি (২০০২)
- কিছু কথা কিছু ব্যথা
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ২৭ অক্টোবর ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ আগস্ট ২০২৪। মেজর ডালিমের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট সংগ্রহের তারিখ ১১ নভেম্বর ২০১৬
- ↑ ১৯৭৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর প্রকাশিত বাংলাদেশ সরকারের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের চূড়ান্ত গেজেট, গেজেট নং-৮/২৫/ডি-১/৭২-১৩৭৮
- ↑ ক খ গ "বঙ্গবন্ধুর চার খুনির মুক্তিযুদ্ধের খেতাব বাতিল"। প্রথম আলো। ৬ জুন ২০২১। ১৯ আগস্ট ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ আগস্ট ২০২৪।
- ↑ ক খ গ জনকণ্ঠ, দৈনিক। "বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড সেনা কর্মকর্তাদের বয়ান"। দৈনিক জনকণ্ঠ || Daily Janakantha (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২৪-০৮-২৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৮-২৭।
- ↑ জনকণ্ঠ, দৈনিক। "বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড সেনা কর্মকর্তাদের বয়ান"। দৈনিক জনকণ্ঠ || Daily Janakantha (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২৪-০৮-২৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৮-২৭।
- ↑ https://www.risingbd.com। "বঙ্গবন্ধুর খুনি ডালিমের বাড়ি নিলামে বিক্রি | জাতীয়"। Risingbd Online Bangla News Portal (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৭-০৭-১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৮-২৭।
- ↑ "এখনো সক্রিয় খুনি ডালিম!"। www.kalerkantho.com। ২০১৬-০৮-১৫। ২০১৯-০৯-০৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৮-২৭।
- ↑ ক খ admin (২০২১-০১-১০)। "বঙ্গবন্ধু আত্মস্বীকৃত খুনি ডালিমের খেতাব এখনও বহাল! | Businessbangladesh.com.bd"। Business Bangladesh | is the Most Popular Bangla Newspaper in Bangladesh (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২৪-০৮-২৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৮-২৭।
- ↑ "বঙ্গবন্ধুর তিন খুনির খোঁজ নেই, দুজন কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রে"। Newsbangla24। ২০২৪-০৮-২৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৮-২৭।
- ↑ "বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের রাষ্ট্রীয় খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত"। dbcnews.tv (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২৪-০৮-২৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৮-২৭।
- ↑ ক খ "মেজর ডালিমের ওয়েবসাইট"। ১৮ জানুয়ারি ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২১।
- ↑ "WELCOME TO THE OFFICIAL SITE OF MAJORDALIM"। www.majordalimbubangla.com। ২০২৪-০৮-২৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৮-২৭।
- ↑ একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (দ্বিতীয় খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। মার্চ ২০১৩। পৃষ্ঠা ৬২। আইএসবিএন 9789849025375।
- ↑ "সেদিন ঢাকা বেতারে যা ঘটেছিলো"। banglanews24.com। ১৫ আগস্ট ২০২১। ১৭ আগস্ট ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ আগস্ট ২০২৪।
- ↑ "রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিব হত্যা"। প্রথম আলো। ১৪ আগস্ট ২০১৮। ২৭ আগস্ট ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ আগস্ট ২০১৮।
- ↑ "বঙ্গবন্ধুর তিন খুনির খোঁজ নেই, দুজন কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রে"। Newsbangla24। ২০২৪-০৮-২৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৮-২৭।
- ↑ "সমশের মুবিন সফিউল্লাহ'র দিকে বেল্ট ছুড়ে দিয়ে বললেন..."। মানবজমিন। ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০। ২৭ আগস্ট ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ আগস্ট ২০২৪।
- ↑ "আবার ঢাকায়"। ২৭ আগস্ট ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ আগস্ট ২০২৪।
- ↑ "এখনো সক্রিয় খুনি ডালিম!"। www.kalerkantho.com। ২০১৬-০৮-১৫। ২০১৯-০৯-০৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৮-২৭।
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনাএই নিবন্ধটি অসম্পূর্ণ। আপনি চাইলে এটিকে সম্প্রসারিত করে উইকিপিডিয়াকে সাহায্য করতে পারেন। |