আবিদা পারভিন
আবিদা পারভিন (জন্ম ২০ ফেব্রুয়ারি ১৯৫৪ সাল[১]) একজন পাকিস্তানি সঙ্গীতশিল্পী। বর্তমান সুফি গানের শিল্পীদের মধ্যে তিনি অন্যতম।[২] তিনি প্রধানত গজল, উর্দু প্রেমের গান পরিবেশন করে থাকেন।[৩] তিনি উর্দু, সিন্ধি, সারাইকি, পাঞ্জাবি এবং ফার্সি ভাষায় গান গেয়েছেন। তিনি আধুনিক যুগের শ্রেষ্ঠ সূফী গায়ক হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকেন।[৪][৫][৬][৭][৮] তাঁকে সুফি সঙ্গীতের রাণী ও বলে ডাকা হয়।[৯]
আবিদা পারভিন | |
---|---|
প্রাথমিক তথ্য | |
জন্মনাম | আবিদা পারভিন |
উপনাম | সুফি সঙ্গীতের রানী, আবিদা জি |
জন্ম | ২০ ফেব্রুয়ারি ১৯৫৪ |
উদ্ভব | লরকনা, সিন্ধু পাকিস্তান |
মৃত্যু | |
ধরন | |
পেশা |
|
বাদ্যযন্ত্র |
|
কার্যকাল | ১৯৭৩–বর্তমান |
পুরস্কার | হিলাল-ই-ইমতিয়াজ (২০১২) সিতারা-ই-ইমতিয়াজ (২০০৫) |
প্রাথমিক জীবন
সম্পাদনাআবিদা পারভিন পাকিস্তানের সিন্ধি প্রদেশের লারকানা নামক এক মহল্লায় জন্মগ্রহণ করেন। তার শৈশব কাটে মুসলিম ভাব সুফি ধারায়[১০]। কারণ তার পূর্ব পুরুষেরা মুসলিম সুফি সাধকদের সেবা করত। তার বাবা উস্তাদ গোলাম হায়দার এর হাতেই গানে তার হাতেখড়ি।পারভিন প্রায় তার পিতার সাথে বিভিন্ন সুফিদের দরবার বা মাজারে কাওয়ালী পরিবেশন করতেন।সুফি সঙ্গীতের উপর পারভিনের দখল এতই বেশি ছিল যে তার পিতা তার ভাইদরে থেকে তাকেই বেশি পছন্দ করতেন। মাত্র তিন বছর বয়সেই তিনি প্রথম সর্ম্পূণ সুফি গানে কন্ঠ দেন।
কর্মজীবন
সম্পাদনাসত্তর দশকের শুরুর দিকেই তিনি বিভিন্ন দরগাহ এবং ওরশে সুফি গান পরিবেশন শুরু করেন।১৯৭৩ সালে[১১] পারভিন পাকিস্তানের হায়দ্রাবাদে রেডিও পাকিস্তান এ তাঁর পেশাদারি কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৭৭ সালে তিনি রেডিও পাকিস্তান এর সাথে স্থায়ীভাবে চুক্তি করেন। ২০১০ সালে তিনি ভারত-পাকিস্তানের যৌথ উদ্দ্যোগে আয়োজিত সঙ্গীত প্রতিযোগিতা সুর ক্ষেত্র নামক একটি প্রতিযোগিতায় বিচারক হিসেবে অংশগ্রহণ করেন[১২]।
কোক স্টুডিও
সম্পাদনাআবিদা ২০১০ সালে, আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত কোক স্টুডিও পাকিস্তানের শো মৌসুম ৩ তে তিনটি গান গেয়েছিলেন। গান গুলো হল রামোজ - ই - ইশক (Ramooz-e-Ishq) , নিগাহ - ই - দারওয়ায়ি শান ( Nigah-e-Darwaishaan),সুজ - ই- ইশকিন (Soz-e-Ishqin)।গানগুলি তিনি যথাক্রমে পর্ব ১ (কারণ), পর্ব ৩ (ধারণা) এবং পর্ব ৫(রিয়েলাইজেশন)এ পরিবেশন করেন।পারভিন এই স্টুডিওর প্রশংসা করেন ।কারণ হিসেবে তিনি বলেন এর পরিবেশ অনেকটা দরগাহে গান পরিবেশনের মতই।
“এই কার্যক্রম যেটি রুহালী হায়াতী শুরু করেছেন তা নিঃসেন্দেহে একটি মহৎ উদ্দ্যেগ এবং অনেক দিন ধরে আমি এই কার্যক্রমের শরিক হতে আশা করছিলাম।এই অনুষ্ঠানে যে গানগুলো পরিবেশিত হয় হৃদয় এবং আত্মা দুটিকেই ছুঁয়ে যায় এবং এটি প্রশংসার দাবিদার এই যে এটি সবসময় গানের মূল বাণীকে সুঠক ধারায় বজায় রাখে।এই প্ল্যাটফর্মটা আমাদের পূর্ববৎ সুফিদের বাণীর উপর প্রতিষ্ঠিত”। একটি সাক্ষাত্কারে পারভীন।[১৩]
তিনি ২০১৪ সালেও কোক স্টুডিওতে মৌসুম ৭ এ গান পরিবেশনের জন্য আমন্ত্রিত হয়েছিলেন। তিনি উস্তাদ রাঈস খানের সাথে “ মেঁ সুফি হুঁ” গানটি এবং এককভাবে “দোস্ত” গানটি পরিবেশন করেন। কোক স্টুডিওর মৌসুম ৭ এ রাহাত ফাতেহ আলী খানের সাথে “চাপ তিলাক” (বিখ্যাত সূফিধারার কবি আমির খসরুর সুফি কবিতা) গানটিও পরিবেশন করেন।
এ পি গ্যালারি
সম্পাদনাপারভিনের একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান এ পি গ্যালারি রয়েছে যেখানে জুয়েলারী, তাঁর গানের কালেকশন এবং গার্মেন্টস সামগ্রী পাওয়া যায়। এই প্রতিষ্ঠানটি তার মেয়ে পরিচালনা করেন।[১৪] প্রতিষ্ঠানটির প্রথম বর্ষপূর্তিতে পারভিনের সর্বশেষ অ্যালবাম রু-ই-আলী এর মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
ব্যক্তিগত জীবন
সম্পাদনা১৯৭৫ সালে রেডিও পাকিস্তানের প্রযোজক গোলাম হোসেন শেখ এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন[১৫]। গোলাম হোসেন শেখের সাথে বিবাহ তাঁর সঙ্গীত জীবনে এক অন্য মাত্রা যোগ করে। পারভীনের সঙ্গীত জীবনকে আরো সুসংহত করার জন্য তাঁর স্বামী ১৯৮০ সালে [১৬] রেডিও পাকিস্তান থেকে অবসর গ্রহণ করেন।তাদের দাম্পত্য জীবনে দুইটি কন্যা এবং একটি ছেলে জন্ম নেয়।পরিবার থেকে পারভিন সঙ্গীতে প্রচুর অণুপ্রেরণা লাভ করেন।তার পরিবার তার গানের অনুশীলনের ব্যাপারে তার সময়ের প্রয়োজনের কথা খুব গুরুত্ব সহকারে চিন্তা করতো।[১৭] ২০১০ সালে ২৮ নভেম্বরে লাহোরে গান পরিবেশনের সময় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হওয়ার পর থেকে তিনি একজন হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীতে পরিণত হয়েছেন।[১৮]
পুরস্কার
সম্পাদনাআবিদা পারভিন বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন।
প্রশংসাসূচক
সম্পাদনা- সঙ্গীতে অনন্য অবদান রাখার জন্য পাকিস্তনের গর্ব হিসেবে ১৯৮৪ সালে প্রাইড অফ পারফরম্যান্স পান[১৯]
- পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি পুরস্কারে ভূষিত হন। ২০১২ সালে[২০]
- ভারতের কালাধর্মি বেগম আক্তার একাডেমি অব গজল তাঁকে আজীবন সম্মাননা দেয়।
- ২০০৫ সালে সিতারা-ই-ইমতিয়াজ[২১],
- ২০১৩ সালে হিলাল এ ইমতিয়াজ[২২],
- ২০১৩ সালে শ্রেষ্ঠ প্লে-ব্যাকে অ্যারি ফিল্ম অ্যাওয়ার্ড[২৩] ,
- ১৯৮৪ সালে গোল্ড লাল শাহবাজ কালান্দার অ্যাওয়ার্ড,
- শাহ ভিঠ্ঠাই অ্যাওয়ার্ড (দুইবার),
- পাকিস্তান টেলিভিশন অ্যাওয়ার্ড
- সিন্ধু গ্রাজুয়েট এসোসিয়েশন পুরস্কার
- ১৬ পিটিভি পুরস্কার
- ২০১৩ সালের আশ্চর্য নারী
জয়মাল্য
সম্পাদনা- আতিফ আসলাম আবিদার সম্মানে আবিদার গান নিয়ে একটি ট্রিবিউট দেন। তিনি নিজেকে পারভিনের বিষম ভক্ত হিসেবে দাবি করেন।
- সনম মারভিও আবিদার সম্মানে আবিদার গান নিয়ে একটি ট্রিবিউট দেন।
- রাব্বি শেরগিল সঙ্গীত জীবনে পারভিনকে তার অণুপ্রেরণীয় আইকন হিসাবে ঘোষণা দেন।
- তাকে সুফি সঙ্গীতের মুকুটহীন সম্রাজ্ঞী এবং নির্বিবাদ সুফি রানী হিসেবে ডাকা হয়।
চলচ্চিত্রের তালিকা
সম্পাদনাটেলিভিশন
সম্পাদনাসাল | অনুষ্ঠান | ভূমিকা | টীকা |
---|---|---|---|
১৯৮০ | আওয়াজ ও আন্দাজ | অংশগ্রহণকারী | পিটিভিতে সম্প্রচারিত অনুষ্ঠান |
২০০৯ | নারা-এ-মাস্তানা | অংশগ্রহণকারী | হাম টিভি দ্বারা স্পন্সরকৃত কনসার্ট যা হাম টিভিতে সম্প্রচারিত হয় |
২০১০ | ছোটে উস্তাদ | গোলাম আলীর সাথে অতিথি বিচারক | ঈদ উদযাপন |
২০১২ | সুর ক্ষেত্র | বিচারক | পাকিস্তান প্রতিনিধিত্ব |
২০১২ | শেহর - এ-জাত | ইয়ার কো হাম এর সহ গায়িকা | অ্যালবাম রাক্স-ই-বিসমিল থেকে প্রাক রেকর্ডকৃত |
২০১২ | ঝলক দিক লা ঝা | রুনা লায়লার সাথে বিশেষ উপস্থিতি | সুরে ক্ষেত্রের প্রচারে |
২০১২ | ১ম হাম পুরস্কার | অংশগ্রহণকারী | নারে মাস্তানা গানটি পরিবেশন করেন |
২০১৪ | পাকিস্তান আইডল | অতিথি বিচারক | গ্রান্ড ফাইনাল |
২০১৪ | জি চ্যানেল | গায়ক | আসন্ন নতুন চ্যানেল |
২০১৪ | সালামে ইশক | পারফরমার | হাম টিভিতে সম্প্রচারিত কনসার্ট |
চলচ্চিত্র
সম্পাদনাসাল | চলচ্চিত্র | গান | টীকা |
---|---|---|---|
২০০৮ | জিল - ই - শাহ | সাজ্জান দে হাত | পুর্বে রেকর্ডকৃত |
২০১৩ | ইশক খোদা |
টাইটেল ট্র্যাক |
পুর্বে রেকর্ডকৃত জয়ী- সেরা প্লেব্যাক এর জন্য ১ম এআরওয়াই চলচ্চিত্র পুরস্কার |
২০১৪ | হিজরত | ঘোষিত | ফারুক মেনগেলের পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র |
২০১৫ | রাবটা | ঘোষিত | ফারুক মেনগেলের চলচ্চিত্র |
ডিস্কোগ্রাফি
সম্পাদনাএই তালিকা সম্পূর্ণ নয়
সাল | অ্যালবাম | গান |
---|---|---|
জানুয়ারী ১, ১৯৮১ | জি সিন্ধি মেহফিল |
|
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ Iqbal, Nosheen (২০১৩-০৭-০৮)। "Abida Parveen: 'I'm not a man or a woman, I'm a vehicle for passion'"। The Guardian (ইংরেজি ভাষায়)। আইএসএসএন 0261-3077। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১২-০৯।
- ↑ Madhumita Dutta (২০০৮)। Let's Know Music and Musical Instruments of India। পৃষ্ঠা 56। আইএসবিএন 9781905863297।
- ↑ Singer with the knock-out effect: Abida Parveen is one of the world's great singers – even if you can't understand her, By Peter Culshaw, The Telegraph, 15 Sep 2001.
- ↑ The Hypnotic Voice of Abida Parveen The Daily Star, 16 July 2004.
- ↑ Ecstasy In Songs Of the Sufi By Neil Strauss, New York Times, 15 October 1996.
- ↑ MYSTICAL SINGER'S MUSIC IS THE MESSAGE ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০১০-০৪-০৫ তারিখে By Mary Talbot, Daily News, 11 October 1996.
- ↑ Abida Parveen World music: the basics, by Richard Nidel. Routledge, 2005. আইএসবিএন ০-৪১৫-৯৬৮০০-৩. p.247.
- ↑ Dutta, Madhumita (২০০৮)। Let's Know Music and Musical Instruments of India (ইংরেজি ভাষায়)। Star Publications। পৃষ্ঠা ৫৬। আইএসবিএন 978-1-905863-29-7।
- ↑ "Abida Parveen: The Queen of Sufi Music"। BBC (ইংরেজি ভাষায়)। BBC Asian Network। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১২-০৯।
- ↑ "Abida Parveen, Singers is famous for Singing, Pakistani celebrity."। www.pak101.com।
- ↑ [[১] "India honours Abida Parveen with life time achievement award"]
|ইউআরএল=
এর মান পরীক্ষা করুন (সাহায্য)। www.dawn.com। - ↑ "SUR KSHETRA"। colors.in.com। ৩ জানুয়ারি ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ ডিসেম্বর ২০১৪।
- ↑ "Abida Parveen - profile, interview & pictures"। forumpakistan.com। সংগ্রহের তারিখ ১৮ জানুয়ারি ২০১৫।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ "A store that's jewellery will 'set it apart'"। tribune.com.pk। সংগ্রহের তারিখ ১৮ জানুয়ারি ২০১৫।
- ↑ "Biography"। www.hollandfestival.nl। ১৫ এপ্রিল ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ ডিসেম্বর ২০১৪।
- ↑ "marital relation"। en.wikipedia.org।
- ↑ "An Exclusive Interview with Abida Parveen- The Reigning Queen of Sufi Music"। Fuchsia। ২৯ নভেম্বর ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ জানুয়ারি ২০১৫।
- ↑ [২][স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ] আবিদা পারভিন অসুস্থ
- ↑ "1984"। en.wikipedia.org।
- ↑ "India honours Abida Parveen with life time achievement award"। www.dawn.com।
- ↑ "Sitara-e-Imtiaz in 2005."। www.dawn.com।
- ↑ "Recognition: President Zardari confers top civil awards"। tribune.com.pk।
- ↑ "About Abida Parveen & Iranian Group"। www.mtv.com। ৮ ডিসেম্বর ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ ডিসেম্বর ২০১৪।