আতাউর রহমান
আতাউর রহমান (জন্ম ১৮ জুন ১৯৪১)[১] হলেন একজন বাংলাদেশী মঞ্চ ও টেলিভিশন অভিনেতা, মঞ্চ নির্দেশক এবং লেখক।[২] তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ পরবর্তী মঞ্চনাটক আন্দোলনের অগ্রদূত।[৩] মঞ্চনাটকে তার অবদানের জন্য তিনি ২০০১ সালে একুশে পদক এবং ২০২১ সালে সর্বোচ্চ জাতীয় সম্মাননা স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত হন।[৪]
আতাউর রহমান | |
---|---|
জন্ম | |
জাতীয়তা | ব্রিটিশ ভারতীয় (১৯৮১-৪৭) পাকিস্তানি (১৯৪৭-৭১) বাংলাদেশী (১৯৭১-বর্তমান) |
নাগরিকত্ব | ব্রিটিশ ভারত (১৯৪৭ সাল পর্যন্ত) পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে) বাংলাদেশ |
শিক্ষা | এমএসসি (মৃত্তিকা বিজ্ঞান) |
মাতৃশিক্ষায়তন | ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় |
পেশা | অভিনেতা, পরিচালক, লেখক |
পুরস্কার | একুশে পদক |
প্রারম্ভিক জীবন
সম্পাদনাআতাউর রহমান ১৯৪১ সালের ১৮ জুন তদানীন্তন ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির (বর্তমান বাংলাদেশ) নোয়াখালী জেলায় জন্মগ্রহণ করেন।[৫] তার পিতা ছিলেন কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজের স্নাতক। তার মাতাও সংস্কৃতিমনা ছিলেন। তার মায়ের কাছেই তিনি বাইরের বই পড়ার শিক্ষা লাভ করেন। তার শৈশব কাটে নোয়াখালীতে তার মামার বাড়িতে। সেখানেই তিনি প্রথম জুল ভার্ন রচিত টুয়েন্টি থাউজেন্ড লিগস আন্ডার দ্য সি পড়েন। পাশাপাশি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাব্য, উপন্যাস, ছোটগল্প, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচনাবলি, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচনাবলির সাথে পরিচিত হন।[৬]
আতাউর রহমান চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল থেকে মাধ্যমিক এবং চট্টগ্রাম কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। পরে ১৯৬৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিষয়ে এমএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন।[৫]
কর্মজীবন
সম্পাদনাবিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হওয়ার পর তার বন্ধু জিয়া হায়দার আমেরিকার ইস্ট ওয়েস্ট সেন্টার থেকে পাস করে দেশে এসে তাকে মঞ্চনাটক করার প্রস্তাব দেন। ১৯৬৮ সালে ফজলে লোহানীর বাড়িতে প্রতিষ্ঠিত হয় "নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়"।[৬] তিনি হন এর প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক।[৭] পছন্দমত মৌলিক নাটক না পাওয়ায় প্রথম নাটক মনস্থ করতে কয়েক বছর সময় লেগে যায়। ১৯৭২ সালে রহমান তার প্রথম নাটকের নির্দেশনা প্রদান করেন। তার নির্দেশিত প্রথম মঞ্চনাটক মাইকেল মধুসূদন দত্ত রচিত প্রহসন বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রো-এ অভিনয় করেন লাকি ইনাম, আবুল হায়াত, ইনামুল হক, আলী যাকের, ও ফখরুল ইসলাম। পরের বছর ১৯৭৩ সালে তিনি বাদল সরকার রচিত এবং আলী যাকের পরিচালিত বাকি ইতিহাস মঞ্চনাটকে অভিনয় করেন। এটি ছিল নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের হয়ে তার প্রথম অভিনয়। এটি ছিল বাংলাদেশে প্রথম দর্শনীর বিনিময়ে নাট্য প্রদর্শনী।[৮]
রহমান ৩৫টির বেশি মৌলিক এবং অন্য ভাষা থেকে অনুবাদ করা মঞ্চনাটকের নির্দেশনা দিয়েছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল গ্যালিলিও, পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়, রক্তকরবী, বাংলার মাটি বাংলার জল, নারীগণ, ঈর্ষা, অপেক্ষমাণ, এবং ওয়েটিং ফর গোডো।[৫]
রহমান বাংলাদেশ সেন্টার অব দ্য ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইনস্টিটিউটের সাধারণ সম্পাদক[৯] এবং পরে সভাপতি পদে দায়িত্ব পালন করেন।[১০] তিনি সভাপতি থাকাকালীন ২০১১ সালের মে মাসে ১০ দিন ব্যাপী ১ম ঢাকা আন্তর্জাতিক থিয়েটার উৎসবের আয়োজন করেন।[১০] তিনি বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনে প্রাক্তন সভাপতি ছিলেন।[৭]
মঞ্চের পাশাপাশি রহমান কবিতা লিখেন। তার লেখা কয়েকটি কবিতা হল লেখা 'স্বপ্নের পাহাড়', 'রাতদিন', 'ভালো আছি'।[১১]
১৭ই আগস্ট ২০১৯ সালে তিনি আওয়ামীলীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন।
ব্যক্তিগত জীবন
সম্পাদনাআতাউর রহমানের এক পুত্র এবং এক কন্যা রয়েছে।[৪] পুত্রের নাম শাশ্বত চৌধুরী।[১১] তার জীবনে প্রভাব বিস্তারকারী দুটি বই হল ওয়েটিং ফর গোডো এবং জোরবা দ্য গ্রিক। রহমান রবীন্দ্র সঙ্গীতের অনুরাগী। তার কাছে ১৯০৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত যত রবীন্দ্র সঙ্গীত রেকর্ড হয়েছে তার একটি বড় সংগ্রহ আছে।[৬]
নির্দেশিত মঞ্চ নাটক
সম্পাদনা- দ্বিজেন্দ্রলাল রায় রচিত শাজাহান
- স্যামুয়েল বেকেট রচিত ওয়েটিং ফর গোডো
- আরভিন শ রচিত বিউরি দ্য ডেড
- বার্থল্ড ব্রেচট রচিত গ্যালিলিও
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত রক্তকরবী
পুরস্কার
সম্পাদনা- স্বাধীনতা পুরস্কার (২০২১) [১২]
- শহীদ মুনীর চৌধুরী পুরস্কার
- শ্রেষ্ঠ মঞ্চ নির্দেশনার জন্য চক্রবাক পুরস্কার
- মঞ্চ নির্দেশনার জন্য লোক নাট্যদল স্বর্ণ পদক
- আন্যদিন ও ইমপ্রেস টেলিফিল্ম পুরস্কার
- মঞ্চনাটকে অবদানের জন্য অঁলিয়ো ফ্রঁসোয়া পুরস্কার
- চ্যানেল আই রবীন্দ্রমেলা আজীবন সম্মাননা পুরস্কার
- কাজী মাহবুবুল্লাহ আজীবন সম্মাননা পুরস্কার
- বাংলা একাডেমির ফেলো
- মঞ্চনাটকে অবদানের জন্য একুশে পদক (২০০১)
- আরটিভি স্টার অ্যাওয়ার্ডস আজীবন সম্মাননা পুরস্কার (২০১৯)[১৩]
- ১৯৯২ সালে পাকিস্তান সরকার কর্তৃক প্রাইড অফ পারফরম্যান্স পুরস্কার প্রদান করেন সাহিত্যে এ উলেখ্যযোগ্য অবদান এর জন্য।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "জন্মদিনে ফুলেল ভালোবাসায় সিক্ত হলেন শিল্পী আতাউর রহমান"। দৈনিক কালের কণ্ঠ। ১৯ জুন ২০১১। সংগ্রহের তারিখ ১৩ আগস্ট ২০১৭।
- ↑ "Stars share their views"। দ্য ডেইলি স্টার। ১৬ জানুয়ারি ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ১৩ আগস্ট ২০১৭।
- ↑ ""Not enough works on psychological conflict during Liberation War" -- Ataur Rahman"। দ্য ডেইলি স্টার। ৪ এপ্রিল ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ১৩ আগস্ট ২০১৭।
- ↑ ক খ "৭৫তম জন্মদিনে মঞ্চসারথি আতাউর রহমান"। জাগো নিউজ। ১৮ জুন ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ১৩ আগস্ট ২০১৭।
- ↑ ক খ গ Saurav Dey (১৮ জুন ২০১৪)। "Theatre fest marking Ataur Rahman's birthday"। দ্য ডেইলি স্টার। সংগ্রহের তারিখ ১৩ আগস্ট ২০১৭।
- ↑ ক খ গ মলয় গাঙ্গুলী (৪ ডিসেম্বর ২০১৩)। "জীবন থেকে শিখতে পছন্দ করি: আতাউর রহমান"। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। ২৭ জুন ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ আগস্ট ২০১৭।
- ↑ ক খ Zahangir Alom (২০ জুন ২০১৩)। "Paeans to Ataur Rahman"। দ্য ডেইলি স্টার। সংগ্রহের তারিখ ১৩ আগস্ট ২০১৭।
- ↑ "থিয়েটারে পারিবারিক উত্তরাধিকার"। বাংলাদেশ প্রতিদিন। ১৮ নভেম্বর ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ১৩ আগস্ট ২০১৭।
- ↑ "Bangladeshi theatre is well appreciated in international arena --Ataur Rahman"। দ্য ডেইলি স্টার। ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০০৮। সংগ্রহের তারিখ ১৩ আগস্ট ২০১৭।
- ↑ ক খ Rifat Munim (৩ জুন ২০১১)। "Thriving Theatre Fest"। দ্য ডেইলি স্টার। ২১ এপ্রিল ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ আগস্ট ২০১৭।
- ↑ ক খ "জন্মদিনে ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত আতাউর রহমান"। দৈনিক মানবজমিন। ২০ জুন ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ১৩ আগস্ট ২০১৭।
- ↑ "স্বাধীনতা পুরস্কার পেলেন যারা, ইত্তেফাক, ৭ মার্চ ২০২১"। ৮ মার্চ ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ মার্চ ২০২১।
- ↑ "'আরটিভি স্টার অ্যাওয়ার্ড-২০১৯' পেলেন যারা"। আরটিভি অনলাইন। ২৯ ডিসেম্বর ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ২৯ ডিসেম্বর ২০১৯।