জিয়া হায়দার
জিয়া হায়দার (১৮ নভেম্বর ১৯৩৬ - ২ সেপ্টেম্বর ২০০৮) একজন বাংলাদেশী লেখক, কবি, নাট্যকার, অনুবাদক ও অধ্যাপক। তার পুরো নাম শেখ ফয়সাল আব্দুর রউফ মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন হায়দার। তিনি নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং বাংলাদেশ ইনিস্টিটিউট অব থিয়েটার আর্টস (বিটা)-এর প্রতিষ্ঠাতা।[১][২][৩] তিনি ৭টি কাব্যগ্রন্থ ও ৪টি নাটক লিখেছেন এবং বেশ কিছু নাটক অনুবাদ করেছেন। সাহিত্যে অবদানের জন্য তিনি ১৯৭৭ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার এবং ২০০১ সালে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান একুশে পদক-এ ভূষিত হন।
জিয়া হায়দার | |
---|---|
জন্ম | শেখ ফয়সাল আব্দুর রউফ মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন হায়দার ১৮ নভেম্বর ১৯৩৬ দোহারপাড়া, পাবনা জেলা, ব্রিটিশ ভারত (বর্তমান বাংলাদেশ) |
মৃত্যু | ২ সেপ্টেম্বর ২০০৮ ঢাকা, বাংলাদেশ | (বয়স ৭১)
সমাধিস্থল | দোহারপাড়া, পাবনা জেলা, বাংলাদেশ |
পেশা | লেখক, কবি, নাট্যকার, অধ্যাপক |
ভাষা | বাংলা |
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
নাগরিকত্ব | বাংলাদেশ |
শিক্ষা | বাংলা |
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান | ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয় বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয় |
ধরন | কবিতা, নাটক, প্রবন্ধ |
উল্লেখযোগ্য রচনাবলি |
|
উল্লেখযোগ্য পুরস্কার | বাংলা একাডেমি পুরস্কার (২০০১) একুশে পদক (১৯৭৭) |
সক্রিয় বছর | ১৯৬৩–২০০৮ |
আত্মীয় | রশীদ হায়দার (ভাই) মাকিদ হায়দার (ভাই) দাউদ হায়দার (ভাই) জাহিদ হায়দার (ভাই) আবিদ হায়দার (ভাই) আরিফ হায়দার (ভাই) |
প্রাথমিক জীবন ও শিক্ষা
সম্পাদনাজিয়া হায়দার ১৯৩৬ সালের ১৮ নভেম্বর তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের পাবনা জেলার দোহারপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।[৪] তার বাবা হাকিমউদ্দিন শেখ ও মা রহিমা খাতুন। বাবা মায়ের সাত ছেলে ও সাত মেয়ে। তিনি ছিলেন ছেলেদের মধ্যে সবার বড়। তার ছোট ভাই রশীদ হায়দার, মাকিদ হায়দার, দাউদ হায়দার, জাহিদ হায়দার,আবিদ হায়দার ও আরিফ হায়দার - সবাই দেশের সাহিত্য-সংস্কৃতির সাথে জড়িত।[৪]
জিয়া পড়াশুনা শুরু করেন তার বাবার প্রতিষ্ঠিত আরিফপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। সেখানে দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশুনা করে তিনি ভর্তি হন পাবনা জেলা স্কুলে। পরে ১৯৫২ সালে গোপালচন্দ্র ইন্সটিটিউশন থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন এবং ১৯৫৬ সালে পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। এরপর ভর্তি হন রাজশাহী কলেজে। ১৯৫৮ সালে রাজশাহী কলেজ থেকে বাংলায় অনার্স পাস করেন। পরে ১৯৬১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে মাস্টার্স ডিগ্রী লাভ করেন। ১৯৬৮ সালে ইস্ট-ওয়েস্ট সেন্টারের বৃত্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়-এ নাট্যকলায় ভর্তি হন এবং সেখান থেকে নাট্যকলায় এম.এফ.এ ডিগ্রী অর্জন করেন। তিনি সানফ্রান্সিসকো স্টেট কলেজ ও নিউইয়র্কের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়েও তিনি নাট্যকলা বিষয়ে পড়াশুনা করেন। পরে তিনি যুক্তরাজ্যের বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে 'সার্টিফিকেট ইন শেক্সপিয়ার থিয়েটার' ডিগ্রি লাভ করেন।[৫]
কর্মজীবন
সম্পাদনাজিয়া হায়দার কর্মজীবন সাংবাদিকতা দিয়ে। ১৯৬১ সালে তিনি সাপ্তাহিক পত্রিকা 'চিত্রালি'-তে যোগ দেন। পরে তিনি নারায়ণগঞ্জের সরকারী তোলারাম কলেজ-এ অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। মাঝে কিছুদিন বাংলা একাডেমির সংস্কৃতি বিভাগের কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপরে পাকিস্তান টেলিভিশনে সিনিয়র প্রোডিউসার হিসেবে কাজ করেন। ১৯৭০ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের নাট্যকলা শাখায় সহকারী হিসেবে অধ্যাপনা শুরু করেন। তিনি টেলিভিশনে থাকাকালীন সময়ে পরিচয় হওয়া সমমনাদের নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন 'নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়' এবং ছিলেন এই প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। ১৯৮২ সাল পর্যন্ত তিনি এই দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৬ সালে এম.এফ.এ ডিগ্রি চালু করেন। এরই মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে বিদ্যায়তনিক নাট্যকলা শিক্ষার সূত্রপাত হয়। অধ্যাপনার পাশাপাশি তিনি সিলেবাস প্রণয়ন, নাটকের ইতিহাস, তথ্য, প্রকার ও প্রকরণ অনুবাদ করেন বাংলায়। ১৯৯১ সালে তার প্রচেষ্টায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নাট্যকলা শাখায় অনার্স শুরু হয়। তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন বাংলাদেশ ইনিস্টিটিউট অব থিয়েটার আর্টস (বিটা)। ২০০১ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক থাকাকালীন অবসর নেন।[৬]
সাহিত্যকর্ম
সম্পাদনাজিয়া হায়দারের প্রথম কাব্যগ্রন্থ একতারাতে কান্না ১৯৬৩ সালে প্রকাশিত হয়।[৪] তার অন্যান্য কবিতার বইয়ের মধ্যে কৌটার ইচ্ছেগুলো, দূর থেকে দেখা, আমার পলাতক ছায়া, দুই ভুবনের সুখ দুঃখ, লোকটি ও তার পেছনের মানুষেরা, ভালোবাসার পদ্য উল্লেখযোগ্য। তার রচিত প্রথম নাটক শুভ্রা সুন্দর কল্যাণী আনন্দ। অন্যান্য নাটকগুলো হল এলেবেলে, সাদা গোলাপে আগুন ও পঙ্কজ বিভাস। তার পঙ্কজ বিভাস নাটকে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে নির্যাতিত এক নারীকে নিয়ে ঘটনা প্রবাহিত হয়েছে।[১] তিনি রচনা করেন রূপান্তরিত নাটক - প্রজাপতি নির্বন্ধ, তাইরে নাইরেনা, উন্মাদ সাক্ষাৎকার, মুক্তি মুক্তি। এছাড়া অনুবাদ করেন নাটক দ্বার রুদ্ধ, ডক্টর ফস্টাস, এ্যান্টিগানে। বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়সহ রবীন্দ্রভারতীতে তার রচিত বই পড়ানো হয়।
মৃত্যু
সম্পাদনাজিয়া হায়দার শেষ জীবনে ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। ২০০৮ সালের ২ সেপ্টেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।[৪] তাকে পাবনা জেলায় তার নিজ গ্রাম দোহারপাড়া সংলগ্ন পাবনা সদর গোরস্থানে(আরিফপুর গোরস্থান নামে খ্যাত) সমাহিত করা হয়।
গ্রন্থতালিকা
সম্পাদনাকাব্যগ্রন্থ
- একতারাতে কান্না (১৯৬৩)
- কৌটার ইচ্ছেগুলো (১৯৬৪)
- দূর থেকে দেখা (১৯৭৭)
- আমার পলাতক ছায়া (১৯৮২)
- দুই ভুবনের সুখ দুঃখ
- লোকটি ও তার পেছনের মানুষেরা
- ভালবাসার পদ্য
নাটক
- শুভ্রা সুন্দর কল্যাণী আনন্দ (১৯৭০)
- এলেবেলে
- সাদা গোলাপে আগুন
- পঙ্কজ বিভাস (১৯৮২)
রূপান্তরিত নাটক
- প্রজাপতি নির্বন্ধ
- তাইরে নাইরে না
- উন্মাদ সাক্ষাৎকার
- মুক্তি মুক্তি
অনুদিত নাটক
- দ্বার রুদ্ধ
- ডক্টর ফস্টাস
- এ্যান্টিগানে
প্রবন্ধ
- নাট্য বিষয়ক নিবন্ধ
- থিয়েটারের কথা (১ম খণ্ড)
- থিয়েটারের কথা (২য় খণ্ড)
- থিয়েটারের কথা (৩য় খণ্ড)
- থিয়েটারের কথা (৪র্থ খণ্ড)
- থিয়েটারের কথা (৫ম খণ্ড)
- বাংলাদেশের থিয়েটার ও অন্যান্য রচনা
- স্ট্যানিসলাভস্কি ও তার অভিনয় তত্ত্ব
- নাট্যকলার বিভিন্ন ইজম
- এপিক থিয়েটার এবং বিশ্বনাটক
পুরস্কার ও সম্মাননা
সম্পাদনা- বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৭৭)
- লোকনাট্যদলের স্বর্ণপদক (১৯৯৬)
- একুশে পদক (২০০১)
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ শুভ্রা বিশ্বাস (২ সেপ্টেম্বর ২০০৮)। "জিয়া হায়দার : মনে পড়ে"। দৈনিক আজাদী। ঢাকা, বাংলাদেশ। সংগ্রহের তারিখ ১ অক্টোবর ২০১৬।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ "জিয়া হায়দার ছিলেন নাট্যকলার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার অগ্রপথিক"। ২০২০-০৫-০১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১১-১৬।
- ↑ "চট্টগ্রামে নাট্যকার জিয়া হায়দার স্মারক বক্তৃতা"। samakal.com।
- ↑ ক খ গ ঘ "জিয়া হায়দারের ৮০তম জন্মদিনে আনন্দ-উৎসব -- উপ-সম্পাদকীয় -- জনকন্ঠ"।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ "জিয়া হায়দার"। উত্তরবাংলা। ২ সেপ্টেম্বর ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ১ অক্টোবর ২০১৬।
- ↑ চন্দন সাহা রায়। "জিয়া হায়দার"। গুণীজন। ১৫ জুলাই ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ অক্টোবর ২০১৬।
গ্রন্থপঞ্জি
সম্পাদনা- 'জিয়া হায়দার: আমাদের সোনাভাই', রশীদ হায়দার, বাংলা একাডেমি, ঢাকা।