অশোকনগর কল্যাণগড়
অশোকনগর কল্যাণগড় পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার বারাসাত সদর মহকুমার অশোকনগর থানার অধীন একটি শহর ও একটি পৌরসভা এলাকা [২]। পৌরসভার নাম অশোকনগর কল্যাণগড় পৌরসভা।
অশোকনগর কল্যাণগড় অশোকনগর | |
---|---|
শহর | |
অবস্থান- পশ্চিমবঙ্গ, ভারত | |
স্থানাঙ্ক: ২২°৪৯′৫৯″ উত্তর ৮৮°৩৭′৫৯″ পূর্ব / ২২.৮৩৩° উত্তর ৮৮.৬৩৩° পূর্ব | |
দেশ | ভারত |
রাজ্য | পশ্চিমবঙ্গ |
জেলা | উত্তর চব্বিশ পরগনা |
নামকরণের কারণ | অশোক কুমার সেন |
সরকার | |
• ধরন | পৌরসভা |
• শাসক | অশোকনগর কল্যাণগড় পৌরসভা |
• পৌর প্রধান | প্রবোধ সরকার[১] |
• উপ পৌর প্রধান | ধীমান রায় |
• বিধায়ক | নারায়ণ গোস্বামী |
• সাংসদ | ডাঃ কাকলি ঘোষ দস্তিদার |
জনসংখ্যা (২০১১) | |
• মোট | ১,২৩,৯০৬ |
ভাষা | |
• সরকারি | বাংলা |
• সহকারী সরকারি | ইংরেজি |
সময় অঞ্চল | আইএসটি (ইউটিসি+৫:৩০) |
পিন | ৭৪৩২২২, ৭৪৩২৭২ |
টেলিফোন কোড | (এস টি ডি কোড) +৯১৩২১৬ |
লোকসভা কেন্দ্র | বারাসাত |
বিধানসভা কেন্দ্র | অশোকনগর |
ওয়েবসাইট | www |
অশোকনগর কল্যাণগড়ের এক বিরাট ঐতিহ্য আছে এখানকার রাজনৈতিক চেতনা, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক আন্দোলন প্রভৃতির জন্য। এই শহরটি তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী ডা. বিধানচন্দ্র রায় দ্বারা পরিকল্পিত। কিন্তু এর প্রধান স্থপতি প্রয়াত কংগ্রেস নেতা তরুন কান্তি ঘোষ, প্রয়াত কংগ্রেস নেতা কেশব ভট্টাচার্য, প্রয়াত সিপিআই(এম) নেতা ননী কর এবং প্রয়াত সিপিআই নেতা ডাঃ সাধন সেন।
অশোকনগর-কল্যাণগড় পৌরসভা এলাকার অধীন পর্যটক আকর্ষণ করার মতো দুটি উদ্যান রয়েছে - সংহতি পার্ক এবং মিলেনিয়াম সায়েন্স পার্ক। এখানে একটি ডিগ্রী কলেজ, দুটি হাসপাতাল, বেশ কয়েকটি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, একটি ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ম্যানেজমেন্ট কলেজ, দুটি কমিউনিটি হল, একাধিক সাব-কমিউনিটি হল, একটি স্টেডিয়াম, পিকনিক গার্ডেন, ভাল গ্রন্থাগার সহ সুইমিং পুল এবং মাল্টি জিম আছে। এখানে দুটি ইংরেজি মিডিয়াম স্কুলও আছে। অশোকনগর রেল ও সড়ক পথের মাধ্যমে কোলকাতার সঙ্গে সংযুক্ত।
এছাড়াও রেলওয়ে স্টেশনের ঠিক বিপরীতে কল্যাণী স্পিনিং মিল নামে একটি কারখানা রয়েছে। অনেক আগে এখানে আর আই সি (RIC)-র একটি ইউনিট ছিল এবং একটি রাসায়নিক কারখানাও ছিল। কিন্তু পরবর্তী কালে সেগুলো বন্ধ হয়ে যায়।
অশোকনগর কল্যাণগড় বিখ্যাত কল্যাণগড় অঞ্চলের জগদ্ধাত্রী পুজো উপলক্ষে। এই অঞ্চলের জগদ্ধাত্রী পুজো জেলায় নাম ছড়িয়েছে। এই অঞ্চলকে “দ্বিতীয় চন্দননগর” বলা হয়।।
ইতিহাস
সম্পাদনাব্রিটিশ আমলে অশোকনগরে একটি রয়াল এয়ার ফোর্স (RAF) স্টেশন অর্থাৎ একটি বিমানঘাঁটি ছিল। স্বাধীনতার পর পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী ডঃ বিধান চন্দ্র রায় একে একটি পরিকল্পিত শহরে উন্নীত করেন। পূর্বে এই শহর "হাবড়া আরবান কলোনি" নামে পরিচিত ছিল। পরবর্তীতে এর উত্তর-পূর্ব অংশের নামকরণ করা হয় "কল্যাণগড়" এবং দক্ষিণ-পশ্চিম অংশের নামকরণ করা হয় "অশোকনগর"।
রাজনীতি
সম্পাদনাঅশোকনগর একদা বাম রাজনীতির অন্যতম ঘাঁটি ছিল। এই এলাকা ১৯৫৯ এবং ১৯৬৬ এর খাদ্য আন্দোলন সাক্ষী ছিল। শরণার্থী, ছাত্র এবং শিক্ষকদের আন্দোলন সমাবেশ, এলাকায় রাজনৈতিকভাবে স্পন্দনশীল ছিল ১৯৭৭ পর্যন্ত । ১৯৬৭ সালে হাবড়া বিধানসভা এলাকা থেকে পৃথক হয়ে প্রথমবার গঠিত হয় ‘অশোকনগর বিধানসভা কেন্দ্র’। ১৯৬৭ সালের প্রথম নির্বাচনে সি.পি.আই এর প্রার্থী ডাঃ সাধন সেন জয়ী হয়েছিলেন। তিনি ১৯৬৯ সালেও এই আসনে জয়ী হন। সিপিআই(এম) এর ননী কর ১৯৭১,১৯৮৭, ১৯৯১ সালের নির্বাচনে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের প্রার্থী হিসেবে কেশবচন্দ্র ভট্টাচার্যকে পরাজিত করেন। এছাড়াও ১৯৭৭, ১৯৮২ সালে সিপিআইএম এর ননী কর নির্দল হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা কেশবচন্দ্রর ভট্টাচার্যকে পরাজিত করেন। এরফলে ননী কর অশোকনগর বিধানসভার পাঁচ বার বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছেন। মাঝে ১৯৭২ সালের নির্বাচনে নির্দল প্রার্থী হিসেবে কেশব ভট্টাচার্য ননী করকে পরজিত করে বিধায়ক নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালে সিপিআই(এম)-এর নীরোদ রায়চৌধুরী জাতীয় কংগ্রেসের প্রার্থী ধীমান রায়কে পরাজিত করে বিধায়ক নির্বাচিত হন। পরবর্তীকালে নীরোদ রায়চৌধুরীর আকস্মিক মৃত্যুতে, এই আসনে উপনির্বাচন হয় ১৯৯৮ সালে। উক্ত নির্বাচনে বিজেপির শ্রী বাদল ভট্টাচার্য ১৯৯৮ সালে তৃণমূল কংগ্রেসের সমর্থন দ্বারা সিপিআই(এম) প্রার্থী রেখা গোস্বামীকে পরাজিত করেন। ২০০১ সালে সিপিআই(এম) এর শর্মিষ্ঠা দত্ত সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের অশোক কৃষ্ণ দত্ত কে পরাজিত করে বিধায়ক নির্বাচিত হন। সিপিআই(এম) এর সত্যসেবী কর ২০০৬ সালে অশোকনগর বিধানসভা আসনে সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস এর ধীমান রায়কে পরাজিত করেন। ২০১১ সালে সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী ধীমান রায় বিপুল ভোটে বিধানসভা নির্বচনে সিপিআই(এম) এর প্রার্থী সত্যসেবী করকে পরাজিত করেন। ২০১৬ সালে, সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী ধীমান রায় আবারও সিপিআই(এম) ও জাতীয় কংগ্রেসের জোট প্রার্থী সত্যসেবী করকে অল্প ব্যাবধানে পরাজিত করে বিধায়ক নির্বাচিত হন। ২০২১ সালে নির্বাচনে সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী নারায়ণ গোস্বামী নিকটবর্তী বিজেপি প্রার্থী তনুজা চক্রবর্তীকে হারিয়ে বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছেন। উল্লেখযোগ্য ২০২১ এর নির্বাচনে অশোকনগরে প্রথমবার সিপিআইএম প্রার্থী দেয়নি। তার বদলে সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন আইএসএফের তাপস ব্যানার্জী।
পৌর নির্বাচন
সম্পাদনাঅশোকনগর কল্যাণগড় পৌরসভা বামফ্রন্টের অধীনে ছিল ২০১০ সাল পর্যন্ত। পৌরসভার প্রথম নির্বাচিত চেয়ারপার্সন ছিলেন শ্রী বিকাশ রায়চৌধুরী। সিপিআইএম এর বিকাশ রায় চৌধুরী ১৯৮১ থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত এই দায়িত্ব পালন করেছেন। পরবর্তীতে ১৯৯৪ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত সিপিআইএম এর শ্রীমতি শর্মিষ্ঠা দত্ত পৌরসভার প্রধান ছিলেন। উভয় সময়েই সিপিআই এর চিত্তরঞ্জন বসু ভাইস-চেয়ারম্যান ছিলেন। যিনি অবকাঠামো, বিনোদনমূলক এবং বিনোদন শিক্ষা ক্ষেত্রে বিভিন্ন উন্নয়ন করেন। পরে ওঁনার আসনটি সিপিআই অনগ্রসর বর্ণ প্রার্থীর জন্য বরাদ্দ করা হলে তিনি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছেড়ে দেন। এরপর ২০১০ সালে রাজনৈতিক পালা বদল ঘটে। তৃণমূল কংগ্রেসের শ্রী সমীর দত্ত অশোকনগর কল্যাণগড় পৌরসভার পৌর প্রধান নির্বাচিত হন। ২০১০ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত তিনি চেয়ারম্যান ছিলেন। ২০১৫ সালের পৌর নির্বাচনেও পৌরসভা তৃণমূল কংগ্রেসের দখলে যায়। তবে এবার বিদায়ী পৌরপ্রধান সমীর দত্তকে উপ পৌরপ্রধান করা হয়। অপরদিকে বিদায়ী উপ পৌরপ্রধান তৃণমূল কংগ্রেসের শ্রী প্রবোধ সরকার চেয়ারম্যান হন। ২০২০ সাল পর্যন্ত তিনি এই পদে ছিলেন। বর্তমানে নির্বাচন না হবার কারণে পৌরসভায় প্রশাসক বসানো হয়েছে।
২০২০ সালে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে পাঁচ সদস্যের পৌর প্রশাসক মন্ডলী গঠন করা হয়। মুখ্য পৌর প্রশাসক রূপে বিদায়ী পৌর প্রধান প্রবোধ সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ২০২১ সালে পাঁচ সদস্যের বদলে নতুন চার সদস্যের একটি প্রশাসক মন্ডলী গঠন করা হয় রাজ্য সরকারের তরফে। এই প্রশাসক মন্ডলীতে উৎপল তালুকদারকে মুখ্য প্রশাসকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। সেই সাথে অতীশ সরকার ঝঙ্কু কে উপ মুখ্য পৌর প্রশাসকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ২০২২ সালের নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস পুনরায় জয় লাভ করে। পুনরায় পৌরপ্রধান হন প্রবোধ সরকার।
ভূগোল
সম্পাদনাঅশোকনগরের ভৌগোলিক অবস্থান :- ২২°৪৯'৫৯" উত্তর ৮৮°৩৭'৫৯" পূর্ব/২২.৮৩৩° উত্তর ৮৮.৬৩৩° পূর্ব
জলবায়ু
সম্পাদনাজলবায়ু গ্রীষ্মমণ্ডলীয় - গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের ন্যায়। বর্ষা - জুনের শুরু থেকে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে। শীতকালে আবহাওয়া শুষ্ক থাকে (নভেম্বর নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি) এবং গ্রীষ্মকালে আর্দ্রতা থাকে।
তাপমাত্রা: মে মাসে (সর্বোচ্চ) ৩৯.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং জানুয়ারীতে (ন্যূনতম) ১০.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস
আপেক্ষিক আর্দ্রতা: মার্চ মাসে ৫৫% এবং জুলাইতে ৯৮% এর মধ্যে থাকে
বৃষ্টিপাত: ৩১ মিমি (সাধারণত)
জনসংখ্যার পরিসংখ্যান
সম্পাদনা২০১১ সালে ভারতের আদমশুমারি অনুযায়ী অশোকনগরের জনসংখ্যা ছিল ১,২৩,৯০৬। এর মধ্যে পুরুষ ৬২,৫৫৪ জন এবং নারী ৬১,৩৫২। ০ থেকে ৬ বছর বয়সীদের সংখ্যা ছিল ৮৮৮৫। অশোকনগরের সাক্ষরতার গড় হার ছিল ৯২.৪৫ % [৩]।
শিক্ষা
সম্পাদনাএখানকার সাক্ষরতার হার ৯২.৪৫ % (২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী) [৩]। অশোকনগর-কল্যাণগড় পৌর এলাকায় মেয়েদের ও ছেলেদের জন্য বেশ কয়েকটি উচ্চবিদ্যালয় এবং প্রচুর প্রাথমিক বিদ্যালয় (সরকারি ও বেসরকারি) আছে। এগুলোর মধ্যে অশোকনগর বিদ্যাসাগর বাণীভবন, কল্যাণগড় বিধানচন্দ্র বিদ্যাপীঠ, কল্যাণগড় বিদ্যামন্দির, অশোকনগর বয়েজ সেকেন্ডারি স্কুল, প্রফুল্ল নগর বিদ্যামন্দির ,প্রফুল্লনগর গার্লস হাই স্কুল , হাবড়া হাই স্কুল,হাবড়া মডেল স্কুল ,অশোকনগর বাণীপীঠ গার্লস হাই স্কুল, অশোকনগর আদর্শ বালিকা বিদ্যালয়, কল্যাণগড় বালিকা বিদ্যালয়, হরিপুর সংস্কৃতি সংঘ, কালিতলা বাণীমন্দির, দেবীনগর গৌরাঙ্গ বিদ্যাপীঠ, অশোকনগর বিবেকানন্দ বিদ্যামন্দির, শক্তিগড় আচার্য্য দুর্গাপ্রসন্ন শিক্ষা নিকেতন, কাজলা রবীন্দ্র শিক্ষা নিকেতন, কমলা নেহেরু আদর্শ বিদ্যামন্দির, সেন্ট ফ্রান্সিস স্কুল, নেতাজি শতবার্ষিকী মহাবিদ্যালয়, শ্রী চৈতন্য মহাবিদ্যালয় প্রধান।
অর্থনীতি
সম্পাদনাবাংলার অর্থনীতির মানচিত্রে অশোকনগরের তৈলক্ষেত্র এখন উজ্জ্বল নক্ষত্র। রাজ্যের রাজধানী কলকাতা থেকে তেলক্ষেত্রটির দূরত্ব ৪৭ কিলোমিটার। তেলক্ষেত্রটি ভারতের ওএনজিসি সংস্থার অনুষন্ধানে ২০১৮ সালে অবিষ্কৃত হয়। এটিই পশ্চিমবঙ্গ তথা পূর্ব ভারতে প্রথম খনিজ তেলের খনি। অশোকনগরে গ্যাস ও তেলের সন্ধান করার জন্য ২০০৯ সালের ডিসেম্বর মাসে ওএনজিসি-অয়েল ইন্ডিয়া ব্লক পায়। প্রথমে সাড়ে তিন একর জমির উপর কুয়ো খনন করে তারা সন্ধানের কাজ শুরু করে। ২০১৪ সালে প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ হওয়ার পর শুরু হয় অগ্রণী প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ। ২০১৭ সালে দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই সেখানে ভূগর্ভস্থ তেল ও গ্যাসের মজুত ভাণ্ডার সম্পর্কে নিশ্চিত হয় কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাটি। অনুসন্ধান চালাতে প্রাথমিক ভাবে পাঁচটি কুয়ো খননের পরিকল্পনা করে ওএনজিসি। তবে তৃতীয়টি খোঁড়ার পরেই ২০১৮ সালের ২০ অগস্ট প্রথম গ্যাসের উপস্থিতির বিপুল মজুতের খোঁজ মেলে এবং তার কয়েক দিন পরেই পাওয়া যায় তেলের ভাণ্ডার।
অশোকনগর তেলক্ষেত্রের খনিজ তেলের গুণগত মান পরীক্ষার জন্য হলদিয়ায় ইন্ডিয়ান অয়েলের শোধনাগারে প্রায় ৩০,০০০ লিটার অপরিশোধিত তেল পাঠানো হয়। যে তেলের গুণমান অত্যন্ত ভালো ও তা বাণিজ্যিক ভাবে উত্তোলন লাভজনক হবে বলে জানাযায় শোধনাগার থেকে। এর পরে অশোকনগর তেলক্ষেত্রের বাইগাছিতে বাণিজ্যিক ভাবে খনিজ তেল উত্তোলনের কার্যক্রম শুরু হয়।
অশোকনগরের বাইগাছিতে ২০২০ সালের ২০ ডিসেম্বর বাণিজ্যিক তেল উত্তোলন কেন্দ্রের উদ্বোধন করলেন কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়ামমন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান। তিনি রাজ্যের প্রথম তৈলকূপ প্রকল্পকে দেশের উদ্দেশে উৎসর্গ করলেন। উদ্বোধনের পরে পশ্চিমবঙ্গের প্রথম খনিজতেলের কুয়ো অশোকনগর-১ কুয়োটি খনিজ তেল উত্তোলন শুরু করে।
এই তেলক্ষেত্রটি বেঙ্গল বেসিনে অশোকনগরে ভূপৃষ্ঠ থেকে ৩.২ কিলোমিটার নীচে প্রাকৃতিক গ্যাস ও তেলের বিপুল ভাণ্ডার নিয়ে গঠিত। এখানে যে ভাণ্ডার রয়েছে, তাতে একটি গ্যাসের কুয়ো থেকে প্রতি দিন এক লক্ষ ঘন মিটারের কিছু বেশি গ্যাস ও তেলের কুয়ো থেকে দিনে ১৫-১৮ ঘন মিটার (এক ঘন মিটার = এক হাজার লিটার) অপরিশোধিত তেল উৎপাদন করা সম্ভব।
তেলক্ষেত্রটি থেকে খনিজ তেল উত্তোলনের জন্য ২০২০ সালে জমি অধিগ্রহণ ও যন্ত্রপাতি স্থাপনের কাজ শুরু হয়। ওএনজিসি সূত্রে জানা গেছে আগামী তিন বছরে ৩০টি কুয়ো থেকে তেল ও গ্যাস উত্তোলন করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। পরে তেল ও গ্যাস উৎপাদন করার জন্য কুয়ো সংখ্যা বৃদ্ধি করে ১০০টি কুয়ো স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
শিল্প সূত্রগুলি জানায়, যে উত্তর চব্বিশ-পরগনা জেলার তেল উৎপাদন ব্লকের বাণিজ্যিক উৎপাদন ২০২০-২০২১ অর্থবছরের শেষের আগেই শুরু হতে পারে এবং প্রাথমিক উৎপাদনের পরিমাণ ১২০ ঘনমিটার হতে পারে।
২০২০ সালের ২০ ডিসেম্বর অশোকনগর তেলক্ষেত্রে বাইগাছি উৎপাদন কেন্দ্রের প্রথম কুয়ো থেকে তেল উৎপাদন শুরু হয়।
ব্যাঙ্কসমূহ
সম্পাদনা- ভারতীয় স্টেট ব্যাঙ্ক
- ইউনিয়ন ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া
- ইউনাইটেড ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া
- অ্যাক্সিস ব্যাঙ্ক
- ইউকো ব্যাঙ্ক
- এলাহাবাদ ব্যাঙ্ক
- ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া
- বঙ্গীয় গ্রামীণ বিকাশ ব্যাঙ্ক
স্বাস্থ্য পরিষেবা
সম্পাদনাহাসপাতাল
সম্পাদনা- অশোকনগর রাজ্য সাধারণ হাসপাতাল
- সরস্বতী সেবাসদন
- প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র ১ এবং ২
নার্সিংহোম
সম্পাদনা- ব্লু প্রিন্ট নার্সিংহোম
পরিবহন
সম্পাদনাঅশোকনগর পূর্ব রেল-এর শিয়ালদহ - বনগাঁ লাইনে শিয়ালদহ স্টেশন থেকে ৪১ কিলোমিটার (২৫ মাইল) এবং বারাসাত স্টেশন থেকে ২৩ কিমি [৪]। অশোকনগর সড়ক পথে সরাসরি NH 35 /যশোহর রোড-এর সঙ্গে সংযুক্ত।
হাবড়া বাস টার্মিনাল থেকে প্রত্যহ বাস যায় নৈহাটি , হাবড়া, মছলন্দপুর, বনগাঁ, বারাসাত , মধ্যমগ্রাম, কল্যাণী , বসিরহাট, বাগদা, চাকদহ, কলকাতা,দীঘা, দুর্গাপুর , ব্যান্ডেল , বারুইপুর, হাওড়া , কৃষ্ণনগর প্রভৃতি জায়গায়। অশোকনগর বাইপাস রোড সরাসরি সংযুক্ত NH 35 (যশোহর রোড) এবং NH 34(শিলিগুড়ি থেকে কলকাতা)-এর সঙ্গে।
সংস্কৃতি
সম্পাদনাসংস্কৃতির অন্যতম প্রতিষ্ঠান হিসাবে গণ্য করা হয় অশোকনগর কে। ফুটবলার সমরেশ চৌধুরী ( পিন্টু চৌধুরী ), শঙ্কর সাঁধূ, অসীম বিশ্বাস ও ক্রীড়াবিদ তড়িৎ বাবু এই এলাকার বাসিন্দা। এছাড়াও রয়েছে অভিযাত্রী নাট্যোৎসব কমিটি, নাট্যমুখ, সমাঙ্গণ, আদরের নৌকো।
সিনেমা হল/অডিটোরিয়াম
সম্পাদনা- নটরাজ সিনেমা হল
- শহীদ সদন
উৎসব
সম্পাদনাএখানে দুর্গোৎসব, শ্যামা পূজার পাশাপাশি জগদ্ধাত্রী পুজো বেশ সমারোহে পালিত হয়।
কল্যাণগড়ের জগদ্ধাত্রী পুজোর ইতিহাস
সম্পাদনাঅশোকনগর নয়, প্রথমে তৈরী হয় কল্যাণগড়। কল্যাণগড়ে যাঁরা পুনর্বাসন পেয়েছিলেন তাঁদের বিগত দিনের পারিবারিক কাজের উপর ভিত্তি করে তাদের জন্য বিশেষ রুরাল কলোনী তৈরী করে দেওয়া হয়। ১০ কাটা করে পরিবার পিছু জমি দেওয়া হয়। এভাবে বেশকিছু প্লট এক করে তৈরী হয় ওয়ার্ড। সেই প্রতি ওয়ার্ড পিছু পুকুর যেখানে মাছ চাষও করতে পারবেন। থাকল হাট বাজার বিদ্যালয় এর জন্য জায়গা। এর মধ্যে কিছু অঞ্চলে বিশেষ কিছু জনগোষ্ঠীর মানুষজন এসে বসবাস শুরু করেন। এরমধ্যে অন্যতম কয়াডাঙ্গা অঞ্চলের নট্ট গোষ্ঠী। ঢাক, ঢোলসহ বিভিন্ন সঙ্গীত বাজনা বাজানোই ছিল তাঁদের মূল পেশা। বিভিন্ন স্থানে দুর্গা পুজোর সময় ডাক পরতো তাদের বিভিন্ন বাড়ির পুজোয় বা বারোয়ারীতে। বাড়িতে থাকা হতো না পুজোর সময়, ফেরার পরও কালীপুজোতেও থাকেতে পারতেন না বাড়ির মানুষগুলোর সাথে। উৎসবের সময় বাড়ির অন্য সদস্যরাও অভাব অনুভব করতেন তাঁদের। এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে তাঁরা ভাবলেন এমন কিছু যাতে তাঁরা থাকতে পারবেন পরিবারের সাথে আবার দুর্গা পুজোর স্বাদও পাবেন। যেই ভাবা সেই কাজ। খোঁজ শুরু শাস্ত্র পন্ডিতদের। তাঁদের বিধান অনুযায়ী খোঁজ মিলল দেবী দুর্গার অপর রূপের দেবী জগদ্ধাত্রী। দুর্গা সপ্তমীর এক মাস দুই দিন পর নবমী তিথিতে হয় এই দেবীর আরাধনা। সেই শুরু।
কয়াডাঙ্গা নট্ট কলোনীতে শুরু হয় জগদ্ধাত্রী পুজা। সেখান থেকে কল্যাণগড় বাজার নেতাজী বাগ, হরিপুর অঞ্চলে, দেবীনগর অঞ্চলে।
আগে দু চারটে পুজো শুরু হলেও বর্তমান সময়ের মতো পুজো শুরু হয় গত শতাব্দীর শেষ দশকের মাঝামাঝি সময়ে। সে সময়ে কল্যাণগড় ৬০ ফুট মোড়ে পুজো শুরু করে অরুণোদয় ক্লাব। পুজো শুরুর কয়েক বছর পর থেকে এই অঞ্চলে অভিনব মণ্ডপের চিন্তাধারার কাজ অর্থাৎ থিমের কাজ তাদের হাত ধরেই শুরু হয়। সেই ধারা যুগের তালে ছড়িয়ে পড়ে অন্যত্র। এর ফলে অন্য মাত্রা নেয় কল্যাণগড়ের জগদ্ধাত্রী উৎসব। যেমন, নবোদয়- রকেট মোড়ের অভিনবত্ব দেখার জন্য সকল দর্শনার্থীদের মধ্যে একটা চাপা উত্তেজনা কাজ করে সবসময়ই। ভ্রাতৃ সংঘ বেকারী মোড়, ফুটবল কোচিং সেন্টার বা নবজাগ্রত সংঘ তাদের নিজেদের সবসময়ই কিছু না কিছুতে অন্যদের থেকে নিজেদের সেরাটা দিয়ে থাকে। প্রতিরোধ কমিটি নামে শুরু করলেও বর্তমানে রামকৃষ্ণ সেবা সমিতি যে জগদ্ধাত্রী পূজা পরিচালনা করে তা কল্যাণগড়ের বিশেষ এক পুজোর স্থান হিসেবে বিবেচিত হয়। কারণ এই পুজো সেবা সমিতির নিজস্ব ময়দানে অনুষ্ঠিত হয় যা কল্যাণগড়ের “ম্যাডক্স স্কোয়ার” নামে পরিচিত হয়ে উঠছে। মেলা মাঠে জমজমাট পুজো বর্তমানে একই রাস্তার উপর হলেও ছড়িয়ে পড়ছে ধীরে ধীরে। চন্দনগর বা কৃষ্ণনগরের সাথে তুলনা হয় ঠিকই, তবে তুলনা নয়, এই কল্যাণগড় নিজের ঐতিহ্যে স্বতন্ত্র। শুরু হয় হরিপুর অঞ্চলে আমরা সবাই, সিটি সেন্টারের মত পুজো দিয়ে। শেষে দেশবন্ধু ক্লাব পর্যন্ত মানুষ যে দীর্ঘ ২ কিমি পথ হেঁটে যান তা কিন্তু তাদের শৈল্পীক চিন্তনের আকর্ষণে। সবুজ সংঘ, জাগরনী, দ্বাদশ পল্লীর মতো নতুন পুজো কমিটি গুলো প্রথম বারেই যে চমক দিয়ে পুজো শুরু করেছিল তাতে নতুন পুজো হলেও বহু দূরের দর্শনারা যখন দ্বিতীয় বছর এই উৎসবে সামিল হয়েছিলেন সেই থেকে প্রতিবারই এই পুজো গুলোকে খুঁজে নিয়েছেন।।
দুর্গা পূজা শেষেই শুরু হয়ে যায় তৎপরতা, নবমী তিথিতে মায়াতন্ত্র মতে একদিনে সপ্তমী, অষ্ঠমী ও নবমী পুজো হয়। দশমীর দিন শাস্ত্র মতে হয় বিসর্জন। তবে চারদিন উৎসব চলার পর প্রতিমা নিরঞ্জনের মধ্যদিয়ে শেষ হয় এই উৎসব পর্ব। বিভিন্ন পুজো প্রাঙ্গণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সামাজিক ক্রিয়াকলাপ সম্পন্ন হয় প্রতি বছর।
কয়েক হাজার মানুষের ঢল নামে এখানকার রাস্তায়। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিশেষ নিরিপত্তার ব্যবস্থা করা হয়। চালু করা বিশেষ মোবাইল অ্যাপস্। দফায় দফায় মিটিং হয় কমিটি গুলোর সাথে। কমিটিগুলো তৈরী করেন নিজেদের অনুসন্ধান কেন্দ্র। নিরাপত্তায় সিসি ক্যামেরায় মুরে ফেলা হয় চারিধার। জনপ্রতিনিধিরা , দমকল, বিদ্যুৎ দপ্তর সবরকম সহযোগিতা করেন কল্যাণগড়ের এই উৎসবকে। যদিও করোনা মহামারী ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বিগত কয়েক বছরে উৎসবের ঝাকঝমকে কিছুটা ভাটা পরেছে।
তবুও ধারে ভারে সন্মানে জগদ্ধাত্রী উৎসব কল্যাণগড় অঞ্চলে হয়ে উঠেছে অন্যন্য। জেলার বুকে যা অন্যতম বৃহৎ উৎসবের মর্যাদা পেয়েছে। যা নিয়ে বৃহৎ অশোকনগরবাসী গর্ব করতেই পারেন।
খেলাধুলা
সম্পাদনাডা. বিধানচন্দ্র রায় ক্রীড়াঙ্গন বা '৩নং' স্টেডিয়াম হলো এখানকার প্রধান ক্রীড়া মাঠ ।যেখানে বসার জন্য দুটি গ্যালারি রয়েছে। "অশোকনগর স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশন (এএসএ)" এর পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছেন। তারা এখানে ক্রিকেট ও ফুটবল সহ অন্যান্য বিভিন্ন খেলার আয়োজন করে থাকেন। এই অঞ্চল থেকে বিভিন্ন বিভাগের বেশ কয়েকজন নামকরা খেলোয়াড়ের আবির্ভাব হয়েছে, যারা দেশকে গর্বিত করেছেন। এখানে দুটি সুইমিং পুলের পাশাপাশি একটি সুসজ্জিত জিমনেসিয়াম "সুতনু" রয়েছে। যা পৌরসভা পরিচালিত। এছাড়াও এখানে সরকারের সহায়তায় অনেক ক্লাবেও শরীরচর্চার আধুনিক সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। পাশাপাশি অ্যাথলিট এবং ক্যারাটে প্রশিক্ষণ শিবির আছে।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "Official District Administration site"। ১৫ জানুয়ারি ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ জুন ২০১৫।
- ↑ District-wise list of statutory towns
- ↑ ক খ "Census of India 2001: Data from the 2001 Census, including cities, villages and towns (Provisional)"। Census Commission of India। ২০০৪-০৬-১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-১১-০১।
- ↑ Eastern Railway time table