অমর নাগ
ডঃ অমর নাগ (অক্টোবর ১৯১৭ ― ৯ নভেম্বর, ১৯৬৮) একজন চিকিৎসক এবং ভারতীয় সাম্যবাদী স্বাধীনতা সংগ্রামী ছিলেন। মায়ানমারের স্বাধীনতা আন্দোলনে তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তিনি ইয়েবাউ তুন মাউং বা উ হলা নামেও পরিচিত ছিলেন।[১]
অমর নাগ | |
---|---|
জন্ম | অক্টোবর ১৯১৭ |
মৃত্যু | ৯ নভেম্বর, ১৯৬৮ |
মৃত্যুর কারণ | সেনাবাহিনী দ্বারা আক্রান্ত |
জাতীয়তা | ব্রিটিশ ভারতীয়, ভারতীয় |
নাগরিকত্ব | ব্রিটিশ ভারত (১৯৪৭ সাল পর্যন্ত) পাকিস্তান (১৯৬৪ সাল পর্যন্ত) ভারত |
শিক্ষা | ১৯৩৫ সালে রেংগুনের বেঙ্গল একাডেমি থেকে ম্যাট্রিক ১৯৪৫ সালে ডাক্তারি পাশ করেন |
পেশা | চিকিৎসক, রাজনৈতিক কর্মী |
কর্মজীবন | ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন, মায়ানমারের সাম্যবাদী আন্দোলন |
পরিচিতির কারণ | ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের কর্মী |
উল্লেখযোগ্য কর্ম | Bengal Medical Relief and Co-Ordination Committee ডাক্তার হিসেবে কাজ করেছেন |
রাজনৈতিক দল | অনুশীলন সমিতি ও যুগান্তর |
আন্দোলন | মায়ানমারের স্বাধীনতা আন্দোলনে তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা |
ছাত্র জীবন
সম্পাদনাবর্মাতে (বর্তমান মায়ানমার) ছোটবেলা কাটে অমর নাগের, পিতা ছিলেন সেদেশের উচ্চপদস্থ রাজকর্মচারী। ১৯৩৫ সালে রেংগুনের বেঙ্গল একাডেমি থেকে ম্যাট্রিক পাশ করেন। কৃতিত্বের সাথে ডাক্তারি পাশ করেন ১৯৪১ সালে। ছাত্রাবস্থাতেই অনুশীলন সমিতি ও যুগান্তর দুই বিপ্লবী গোষ্ঠীর সাথে যোগাযোগ হয়, তাদের প্রভাবে সশস্ত্র বিপ্লববাদে আকৃষ্ট হন অমর নাগ।[২]
বিপ্লবী আন্দোলনে যোগদান
সম্পাদনাকমিউনিস্ট আন্দোলনের প্রবীণ ব্যক্তিত্ব হরিনারায়ন ঘোষাল এর সংস্পর্শে কমিউনিজমে আগ্রহ হয় তার। ১৯৩৭ সালে বর্মা দেশের বিখ্যাত জননেতা অং সান (নোবেলজয়ী জননেত্রী সু-চি'র পিতা) এর ডাকে ডাঃ অমর নাগ ছাত্র আন্দোলনে যোগ দেন।[৩] ভালো ডাক্তার হওয়ার সুবাদে শ্রমিক মহলে তীব্র জনপ্রিয়তা। ১৯৪০ সালে বর্মা কমিউনিস্ট পার্টি নিষিদ্ধ ঘোষিত হলে তিনি বিভিন্ন বিপ্লবী সংগঠনগুলিকে একত্র করে গোপনে কাজ চালিয়ে যেতে থাকেন। বর্মায় ভারতীয় শ্রমিকের সংখ্যা বেশি হওয়ায় ডাক্তার নাগ তাদের মধ্যে দ্রুত প্রভাব বিস্তার করেন। ১৯৪১ সালে প্রথম গ্রেপ্তার বরণ করেন। তাকে ইনসিন জেলে রাখা হয়। বন্দী কমিউনিস্ট নেতৃবর্গকে আলাদা আলাদা জেলে পাঠানোর ব্যবস্থা করে ব্রিটিশ সরকার; অমর নাগকে স্থানান্তরিত করা হয় নিউইয়াং লোবিন জেলে। ইতিমধ্যে জাপানীদের সাহায্যে ব্রিটিশ বিতাড়নের ব্যবস্থা করতে থাকেন সে দেশের অবিসংবাদিত নেতা অং সান। ১৯৪১ এর শেষভাগে জাপান ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানায় ও ইংরেজরা এর ফলে বার্মা ছেড়ে পালাতে থাকে। অমর নাগ মুক্তি পেয়ে কলকাতায় চলে আসেন। ১৯৪১ সালের জানুয়ারি মাসে পাহাড় জঙ্গলের বিপদসংকুল রাস্তা পেরিয়ে প্রায় ২৯০ মাইল পায়ে হেঁটে ইম্ফল কোহিমা ঢাকা হয়ে কলকাতায় আসেন অমর নাগ। পথে তীব্র ঠান্ডায়, কলেরা ও ক্ষুধায় তাদের সাথী কমিউনিস্ট নেতা গোবিন্দ ব্যানার্জী মারা যান। যখন অমর নাগ বর্মা পরিত্যাগ করেন তখন তিনি ছিলেন বর্মা কমিউনিস্ট পার্টির মেডিক্যাল বাহিনীর প্রধান নেতা তথা পলিটব্যুরো মেম্বার।[২]
কলকাতায় শ্রমিক আন্দোলন
সম্পাদনাদেশে ফিরে আরাম আয়েসে জীবন কাটাবার পরিবর্তে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (অবিভক্ত)র কাজে আত্মনিয়োগ করেন তিনি, দুর্ভিক্ষ ও মহামারী আক্রান্ত বাংলায় ত্রাণ কমিটি গড়ে প্রচুর চিকিৎসা কেন্দ্রও স্থাপন করেন, তার অন্যতম সহযোগী ছিলেন ডা:দ্বারকানাথ কোটনিস এর সাথী ডাঃ বিজয় কুমার বসু। ডা: বিধানচন্দ্র রায় এর পরিচালনায় Bengal Medical Relief and Co-Ordination Committee এর ডাক্তার হিসেবে কাজ করেছেন। ট্রামওয়ে ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের পার্ক সার্কাস শাখায় সংগঠনের কাজ করেছেন বিখ্যাত কমিউনিস্ট নেতা রনেন সেনের পরামর্শে[৪]। এছাড়া A.R.P. এর বেসামরিক প্রতিরক্ষা ইত্যাদি কাজেও যুক্ত ছিলেন তিনি।[২]
বার্মার বিপ্লবী আন্দোলনের শেষ পর্ব
সম্পাদনাজাপানীরা তাদের ফ্যাসিস্ট শাসন অব্যাহত রাখলে আউং সান দেশজোড়া গন আন্দোলনের ডাক দেন ১৯৪৫ সালের মার্চ মাসে রেঙ্গুনের জনসভায়। অং সান ঘাতক বাহিনীর হাতে নিহত হন, জাপানের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে শোচনীয় পরাজয় ঘটে। কিন্তু বর্মার বিপ্লবী আন্দোলনের রাশ হাতে তুলে নেন বাঙ্গালী বিপ্লবীরাই, তাদের অন্যতম পাঁচজনের মধ্যে ছিলেন অমর নাগ। ১৯৪৬ সালে তিনি ফের বর্মায় পদার্পণ করেন। Anti Fascist Liberation Front তৈরী হয়। বিপুল গণ আন্দোলন দমনে সরকার গুমখুন, ফাঁসি, বিনা বিচারে জেল ও নানা নিপীড়নমূলক পদ্ধতি অবলম্বন করে, অমর নাগ ও তার সাথীরা গা ঢাকা দিয়ে গোপন সংগঠন চালাতে থাকেন। ১৯৪৮ সালে ৪ ঠা এপ্রিল নাগাদ প্রোম শহর দখল করে বিপ্লবী জনতা জেল থেকে বন্দীদের মুক্ত করে। রাজধানী রেঙ্গুন ছাড়া প্রায় সর্বত্র বিপ্লবী সরকার শাসকদের বিরুদ্ধে বিক্ষিপ্ত আন্দোলন জারি রেখেছিল তীব্র দমনপীড়নের মধ্যেও। পাঁচজন বাঙ্গালী বিপ্লবী যারা বার্মা কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠাতাদের ভেতর ছিলেন তাদের চারজনই ১৯৬০ সালের মধ্যে মারা যান। অমর নাগ তার পরেও আট বছর পাহাড় জংগলে গেরিলা বাহিনী নিয়ে লড়াই চালিয়ে গেছেন।
মৃত্যু
সম্পাদনা১৯৬৮ সালের ৯ নভেম্বর তার গোপন ঘাঁটি সেনাবাহিনী দ্বারা আক্রান্ত হয়, একা সম্মুখসমরে প্রান দেন এই বাঙ্গালী সর্বস্বত্যাগী বিপ্লবী, ডাক্তার অমর নাগ।[২]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ এম সাখাওয়াত হোসেন। "কমিউনিস্ট পার্টি অব বর্মার উত্থান ও পতন"। dainikamadershomoy.com। ১ জানুয়ারি ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ ডিসেম্বর ২০১৭।
- ↑ ক খ গ ঘ প্রথম খন্ড, সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত (২০০২)। বাঙালি সংসদ চরিতাভিধান। কলকাতা: সাহিত্য সংসদ। পৃষ্ঠা ২৬। আইএসবিএন 81-85626-65-0।
- ↑ Cakrabartī, Jñāna (১৯৭৭)। Krshaka neta Jitena Ghosh। Samsul Hak।
- ↑ সাধন ব্যানার্জী (সেপ্টেম্বর ২০০২)। দাঙ্গা প্রতিরোধে ট্রাম শ্রমিকদের অসামান্য বীরগাথা। কলকাতা: উজানে, ত্রৈমাসিক। পৃষ্ঠা ১১৫।