অন্নপূর্ণা (দেবী)
অন্নপূর্ণা এক হিন্দু দেবী। তাঁর অপর নাম অন্নদা। তিনি শক্তির এক রূপ। অন্নপূর্ণা দ্বিভুজা ত্রিনয়নী, তাঁর দুই হাতে অন্নপাত্র ও দর্বী; তিনি রক্তবর্ণা, সফরাক্ষী, স্তনভারনম্রা, বিচিত্র বসনা, নিয়ত অন্নপ্রদায়িনী ও ভবদুঃখহন্ত্রী; তাঁর মস্তকে নবচন্দ্রকলা, একপাশে ভূমি ও অন্যপাশে শ্রী। নৃত্যপরায়ণ শিবকে দেখে তিনি হর্ষিতা।[১]
অন্নপূর্ণা | |
---|---|
![]() দেবী অন্নপূর্ণা, রঙিন লিথোগ্রাফ, বঙ্গীয় চিত্রকলা, ১৮৯৫ | |
অন্তর্ভুক্তি | দেবী,আদ্যাশক্তি ,মহামায়া , পার্বতী |
আবাস | কাশী |
মন্ত্র | "হ্রীং নমো ভগবতি মাহেশ্বরি অন্নপূর্ণে স্বাহা" "অন্নপূর্ণে সদাপূর্ণে শঙ্করপ্রাণবল্লভে। জ্ঞানবৈরাগ্যসিদ্ধ্যর্থং ভিক্ষাং দেহি নমোঽস্তুতে।।" |
অস্ত্র | অন্নপাত্র, দর্বী |
সঙ্গী | শিব |
দেবী পার্বতী ভিক্ষারত শিবকে অন্নপ্রদান করে এই নামে আখ্যায়িত হন। চৈত্র মাসের শুক্লাষ্টমী তিথিতে অন্নপূর্ণার পূজা করা হয় , শান্তিপুর ধামে মাঘীপূর্ণিমা ও বৌদ্ধপূর্ণিমা তিথিতে যথাক্রমে বড়বাজারে ও আমড়াতলা বারোয়ারীতে এবং নবদ্বীপ ধামে রাস পূর্ণিমা তিথিতে বৌবাজার বারোয়ারী অন্নপূর্ণা পূজা পালন করে থাকে৷ হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী, অন্নপূর্ণার পূজা করলে গৃহে অন্নাভাব থাকে না।[২] এই দেবীর মহিমা সম্পর্কে 'অন্নদামঙ্গল'-এ ভারতচন্দ্র লিখেছেন:
“ |
যে জন করয়ে অন্নপূর্ণা উপাসনা। বিধি হরি হর তার করয়ে মাননা।। ইহলোকে নানা ভোগ করে সেই জন। পরলোকে মোক্ষ পায় শিবের লিখন।। |
” |
দক্ষিণামূর্তি সংহিতা গ্রন্থে চতুর্ভুজা এবং পদ্ম, অভয়, অঙ্কুশ ও বরদহস্তা অন্নপূর্ণার বর্ণনা রয়েছে। কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ রচিত বিভিন্ন তন্ত্রগ্রন্থের সংকলন বৃহৎ তন্ত্রসার গ্রন্থে এই পূজাপদ্ধতির বিবরণ পাওয়া যায়। এছাড়াও "অন্নদাকল্প", "শারদাতিলকতন্ত্র" প্রভৃতি তন্ত্রগ্রন্থে অন্নপূর্ণার পূজাপদ্ধতি নিবদ্ধ আছে।
কাশীতে অন্নপূর্ণার একটি বিখ্যাত মন্দির আছে; এই মন্দিরে অন্নপূর্ণা পূজা ও অন্নকূট উৎসব প্রসিদ্ধ। পশ্চিমবঙ্গে অন্নপূর্ণা পূজার বিশেষ প্রচলন রয়েছে।[৩] অন্নপূর্ণা পূজা কালী ও জগদ্ধাত্রী পূজার মতোই তান্ত্রিক পূজা।
অন্নপূর্ণার মাহাত্ম্য্য বর্ণনা করে অন্নদামঙ্গল কাব্য রচনা করেছিলেন। অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে:
“ | অন্নদামঙ্গলকাব্য অষ্টাদশ শতাব্দীর সর্বশ্রেষ্ঠ কাব্য, সমগ্র বাংলা সাহিত্যের উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের অন্যতম। ... মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র কর্তৃক অন্নপূর্ণা পূজা উপলক্ষে মহারাজের নিজ কীর্তি এবং তাঁহার পূর্বপুরুষ ভবানন্দ মজুমদারের রাজ্য ও রাজা উপাধি লাভের কাহিনী বর্ণনাই ছিল কবির প্রধান উদ্দেশ্য। দেবী অন্নদা (অন্নপূর্ণা) কীভাবে ভবানন্দ মজুমদারকে কৃপা করিলেন, এবং ভবানন্দ কীভাবে জাহাঙ্গীরের দ্বারা অন্নপূর্ণা পূজা করাইয়া রাজত্ব ও রাজা খেতাব লাভ করিলেন – ইহার বর্ণনাই ছিল কবির প্রচ্ছন্ন উদ্দেশ্য। কিন্তু কবি পৌরাণিক অংশ বিশেষ ফলাও করিয়া বর্ণনা করিয়াছেন।[৪] | ” |
মাইকেল মধুসূদন দত্ত দেবী অন্নপূর্ণা ও অন্নদামঙ্গল কাব্যের প্রশস্তি করেছেন তার "অন্নপূর্ণার ঝাঁপি" কবিতায়।
পৌরাণিক উপাখ্যান
সম্পাদনামার্কণ্ডেয় পুরাণের কাশীখণ্ড, দেবী ভাগবত পুরাণ ও অন্যান্য পুরাণ এবং কাশীপরিক্রমা ইত্যাদি গ্রন্থে দেবী অন্নপূর্ণা সংক্রান্ত নানা কাহিনি প্রচারিত হয়েছে। এগুলির মধ্যে দুটি কাহিনি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য – কাশীপ্রতিষ্ঠার উপাখ্যান ও ব্যাসকাশী প্রতিষ্ঠার উপাখ্যান। এছাড়া অন্নদামঙ্গল কাব্যেও অন্নপূর্ণা সংক্রান্ত কয়েকটি লৌকিক কাহিনি বর্ণিত হয়েছে।
কাশীপ্রতিষ্ঠার উপাখ্যান
সম্পাদনাবিবাহের পর কৈলাশ শিখরে শিব ও পার্বতী বেশ সুখেই দাম্পত্যজীবন কাটাচ্ছিলেন। শিব ছিলেন দরিদ্র। আর্থিক অনটনের জেরে বেশ কিছুদিন পরই শুরু হয় দাম্পত্যকলহ। একদিন পাশা খেলা রত শিব পার্বতীকে মায়া বা কুহক বলে অপমান করেন । দেবাদিদেব মহাদেব বলেন যেহেতু পার্বতী মহামায়া তাই তাঁর প্রকৃত কোনো অস্তিত্বই নেই । রাগে পার্বতী কৈলাস ত্যাগ করেন। আদ্যাশক্তি মহামায়ার কৈলাস ত্যাগে ত্রিলোক জুড়ে শুরু হয় মহামারি, অন্নের হাহাকার। ভক্তকে রক্ষা করতে ভগবান শিব অন্নের সন্ধান শুরু করেন ছদ্মবেশে। মহামায়া পার্বতীর মায়ায় তিনি যে ভিক্ষে পাচ্ছিলেন না, তা গুণাক্ষরেও টের পাননি শিব। পরে তিনি কাশীতে এক নারীর কথা শোনেন, যিনি সকলকে অন্নদান করছেন। পদ্মাসীনা সেই নারী যে আদ্যাশক্তি পার্বতী তা বুঝতে পারেন শিব। দেবী মহিমা প্রচারের জন্য কাশী নির্মাণ করে সেখানে অন্নপূর্ণার মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন শিব। চৈত্রমাসের শুক্লা অষ্টমী তিথিতে সেই মন্দিরে দেবী অবতীর্ণ হলেন। সেই থেকেই দেবী অন্নপূর্ণার পূজার প্রচলন বাড়ে।
কাশীতে দেবী অন্নপূর্ণার বিখ্যাত মন্দির রয়েছে। সেখানে প্রতি বছর এই দিনটিতে দেবীর ধুমধাম করে পুজো হয়ে থাকে। এই মন্দিরে অন্নকূট উৎসব বিখ্যাত। এছাড়া হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে এই পুজো অতি প্রসিদ্ধ।
ব্যাসকাশী প্রতিষ্ঠার উপাখ্যান
সম্পাদনাদেবী অন্নপূর্ণা কর্তৃক ব্যাসকাশী প্রতিষ্ঠার উপাখ্যানটি কাশীখণ্ডে নেই। এটি অর্বাচীন সংস্কৃত গ্রন্থ কাশীপরিক্রমা থেকে গৃহীত।[৫] কাহিনিটি নিম্নরূপ:
পরম বৈষ্ণব ব্যাসদেব বিষ্ণুর নিকট শিবের নিন্দা করায় বিষ্ণু কর্তৃক তিরস্কৃত হন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি শিবের নিকট গিয়ে বিষ্ণুর নিন্দা করেন। তখন শিবও তাঁকে তিরস্কার করেন। এরপর শিব তাঁকে পর্ব ব্যতীত কাশী পরিক্রমা করতে নিষেধ করলে অপমানিত ব্যাসদেব দ্বিতীয় কাশী নির্মাণ করতে উদ্যত হন। কিন্তু কোনো দেবতাই তাঁর এই গর্হিত কর্মের ভাগীদার হতে চাইলেন না। শেষে ব্যাসদেব দেবী অন্নপূর্ণার ধ্যানে নিমগ্ন হলেন। অন্নপূর্ণা এক যুবতীর ছদ্মবেশে উপস্থিত হয়ে বারংবার তাকে প্রশ্ন করতে থাকেন, “কি হইবে এখানে মরিলে?” ব্যাসদেব বিরক্ত হয়ে বলে ফেলেন, “গর্দভ হইবে বুড়ি এখানে মরিলে।” দেবীর ছলনা সফল হল। তিনি ‘তথাস্তু’ বলে অন্তর্হিত হলেন। কাশীমহিমা রক্ষিত হল। ব্যাসকাশী গর্দভ-বারাণসী নামে উপস্থাপিত হল।
শঙ্করাচার্য কৃত অন্নপূর্ণা স্তোত্র
সম্পাদনাঅথ শ্রী অন্নপূর্ণা স্তোত্রং।
ওঁ নিত্যানন্দকরী বরাভয়করী সৌন্দর্যরত্নাকরী
নির্ধূতাখিলঘোরপাবনকরী প্রত্যক্ষমাহেশ্বরী।
প্রালেয়াচলবংশপাবনকরী কাশীপুরাধীশ্বরী
ভিক্ষাং দেহি কৃপাবলম্বনকরী মাতান্নপূর্ণেশ্বরী ॥১॥
নানারত্নবিচিত্রভূষণকরী হেমাম্বরাড়ম্বরী
মুক্তাহার-বিলম্বমান বিলসদ্বক্ষোজ-কুম্ভান্তরী।
কাশ্মীরাগরুবাসিতা রুচিকরী কাশীপুরাধীশ্বরী
ভিক্ষাং দেহি কৃপাবলম্বনকরী মাতান্নপূর্ণেশ্বরী ॥২॥
যোগানন্দকরী রিপুক্ষয়করী ধর্ম্মৈকনিষ্ঠাকরী
চন্দ্রার্কানলভাসমানলহরী ত্রৈলোক্যরক্ষাকরী।
সর্ব্বৈশ্বর্য্যসমস্তবাঞ্ছনকরী কাশীপুরাধীশ্বরী
ভিক্ষাং দেহি কৃপাবলম্বনকরী মাতান্নপূর্ণেশ্বরী ॥৩॥
কৈলাসাচলকন্দরালয়করী গৌরী উমা শঙ্করী
কৌমারী নিগমার্থগোচরকরী ওঙ্কারবীজাক্ষরী।
মোক্ষদ্বারকবাটপাটনকরী কাশীপুরাধীশ্বরী
ভিক্ষাং দেহি কৃপাবলম্বনকরী মাতান্নপূর্ণেশ্বরী ॥৪॥
দৃশ্যাদৃশ্যবিভূতিভাবনকরী ব্রহ্মাণ্ডভাণ্ডোদরী
লীলানাটকসূত্রভেদনকরী বিজ্ঞানদীপাঙ্কুরী।
শ্রীসচ্চিদানন্দময়ী পরমেশ্বরী কাশীপুরাধীশ্বরী
ভিক্ষাং দেহি কৃপাবলম্বনকরী মাতান্নপূর্ণেশ্বরী ॥৫॥
উর্ব্বী সর্ব্বজনেশ্বরী ভগবতী মাতান্নপূর্ণেশ্বরী
বেণীনীল-সমানকুন্তলধরী নিত্যান্নদানেশ্বরী।
সর্ব্বানন্দকরী সদা শিবকরী কাশীপুরাধীশ্বরী।
ভিক্ষাং দেহি কৃপাবলম্বনকরী মাতান্নপূর্ণেশ্বরী ॥৬॥
আদিক্ষান্তসমস্তবর্ণনকরী চন্দ্রপ্রভাভাস্করী
কাশ্মীরা ত্রিপুরেশ্বরী ত্রিলহরী নিত্যাঙ্কুরী শর্ব্বরী।
কামাকাঙ্ক্ষ্যকরী মহোৎসবকরী কাশীপুরাধীশ্বরী
ভিক্ষাং দেহি কৃপাবলম্বনকরী মাতান্নপূর্ণেশ্বরী ॥৭॥
দর্বীপাকসুবর্ণরত্নঘটিকা দক্ষে করে সংস্থিতা
বামে চারুপয়োধরী রসভরী সৌভাগ্যমাহেশ্বরী।
ভক্তাভীষ্টকরী ফলপ্রদকরী কাশীপুরাধীশ্বরী
ভিক্ষাং দেহি কৃপাবলম্বনকরী মাতান্নপূর্ণেশ্বরী ॥৮॥
চন্দ্রার্কানলকোটিপূর্ণবদনা বালার্কবর্ণেশ্বরী
চন্দ্রার্কাগ্নিসমানকুণ্ডলধরী চন্দ্রার্কবিম্বাধরী।
মালাপুস্তকপাশকাঙ্কুশধরী কাশীপুরাধীশ্বরী
ভিক্ষাং দেহি কৃপাবলম্বনকরী মাতান্নপূর্ণেশ্বরী ॥৯॥
সর্ব্বত্রাণকরী মহাভয়হরী মাতা কৃপাসাগরী
সাক্ষান্মোক্ষকরী সদা শিবকরী বিশ্বেশ্বরী শ্রীধরী।
দাক্ষানন্দকরী নিরাময়করী কাশীপুরাধীশ্বরী
ভিক্ষাং দেহি কৃপাবলম্বনকরী মাতান্নপূর্ণেশ্বরী ॥১০॥
অন্নপূর্ণে সদাপূর্ণে শঙ্করপ্রাণবল্লভে।
জ্ঞানবৈরাগ্যসিদ্ধ্যর্থং ভিক্ষাং দেহি চ পার্বতি ॥১১॥
মাতা চ পার্বতী দেবী পিতা দেবো মহেশ্বরঃ।
বান্ধবাঃ শক্তিভক্তাশ্চ স্বদেশো ভুবনত্রয়ম্ ॥১২॥
॥ইতি শ্রীমচ্ছঙ্করাচার্য্যবিরচিতং অন্নপূর্ণাস্তোত্রং সম্পূর্ণম্॥
মন্ত্র
সম্পাদনাধ্যান মন্ত্র
সম্পাদনাওঁ রক্তাং বিচিত্র-বসনাং নবচন্দ্রচূড়ামন্নপ্রদাননিরতাং স্তনভারনম্রাম্।
নৃত্যন্তমিন্দুশকলাভরণং বিলোক্য হৃষ্টাং ভজে ভগবতীং ভবদুঃখহন্ত্রীম্॥
পূজা মন্ত্র
সম্পাদনাওঁ সায়ুধায়ৈ সবাহনায়ৈ সালঙ্কারায়ৈ সপরিবারায়ৈ ওঁ হ্রীং অন্নপূর্ণায়ৈ পরমেশ্বর্য্যৈ নমঃ॥
আবাহন মন্ত্র
সম্পাদনাওঁ দেবেশি ভক্তিসুলভে পরিবারসমন্বিতে।
যাবত্ত্বাং পূজয়িষ্যামি তাবত্ত্বং সুস্থিরা ভব॥
ওঁ হ্রীং ভগবতি অন্নপূর্ণে দেবি পরিবারাদিভিঃ সহ ইহাগচ্ছ ইহাগচ্ছ ইহ তিষ্ঠ ইহ তিষ্ঠ ইহ সন্নিহিতা ভব ইহ সন্নিরুধ্যস্ব অত্রাধিষ্ঠানং কুরু মম পুজাং গৃহাণ।
(এর পর প্রাণ প্রতিষ্ঠা, চক্ষুর্দান প্রভৃতি করা হয়)
স্বাগত
সম্পাদনাওঁ অন্নপূর্ণে স্বাগতং তে সুস্বাগতমিদন্তব।
আসনঞ্চেদমপ্যস্মিন্ আস্যতাং পরমেশ্বরি॥
বীজ মন্ত্র
সম্পাদনাওঁ হ্রীং নমো ভগবতি মাহেশ্বরি অন্নপূর্ণে স্বাহা॥
প্রণাম মন্ত্র
সম্পাদনাঅন্নপূর্ণে নমস্তুভ্যং নমস্তে পরমম্বিকে।
তচ্চারুচরণে ভক্তিং দেহি দীনদয়াময়ি॥
অন্নপূর্ণে সদাপূর্ণে শঙ্করপ্রাণবল্লভে।
জ্ঞানবৈরাগ্যসিদ্ধ্যর্থং ভিক্ষাং দেহি নমোঽস্তুতে॥
অন্নপূর্ণা গায়ত্রী
সম্পাদনাওঁ ভগবত্যৈ চ বিদ্মহে মাহেশ্বর্য্যৈ চ ধীমহি।
তন্নোঽন্নপূর্ণা প্রচোদয়াৎ॥
পূজা প্রচলন
সম্পাদনাপ্রচলিত কিংবদন্তি, নদিয়া রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা ভবানন্দ মজুমদার বাংলায় অন্নপূর্ণা পুজোর প্রচলন করেন।[৬]
কিছু বিখ্যাত পূজা
সম্পাদনা১৮৪৭-এ রানি রাসমণি তাঁর জামাই মথুরমোহন বিশ্বাস, আত্মীয়স্বজন ও অন্যান্যদের সঙ্গে কাশীযাত্রা করেছিলেন। রাতে নৌকায় তিনি দেবীর স্বপ্নাদেশ পান, কাশী না গিয়ে গঙ্গার পূর্ব পাড়ে দেবীর মন্দির প্রতিষ্ঠা করার। এর পরে রানি রাসমণি কাশীযাত্রা স্থগিত করে দক্ষিণেশ্বরে ১৮৫৫ সালে ভবতারিণীর মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন।[৭] শোনা যায়, কাশীর অন্নপূর্ণা দর্শনে বিঘ্ন ঘটায় মথুরমোহন বিশ্বাসের মনে ইচ্ছে ছিল দেবী অন্নপূর্ণার মন্দির প্রতিষ্ঠা করার। তাঁর সেই স্বপ্নপূরণ করেছিলেন তাঁর স্ত্রী, রানি রাসমণির ছোট মেয়ে জগদম্বাদেবী। [৮] ১৮৭৫-এর ১২ এপ্রিল সেদিনের চাণক-এ,আজকের ব্যারাকপুর অন্নপূর্ণা মন্দির প্রতিষ্ঠা হয়। এই মন্দির প্রতিষ্ঠার যাবতীয় ব্যবস্থা করেছিলেন তাঁদের পুত্র দ্বারিকানাথ বিশ্বাস।[৯] এই মন্দিরে মূল অন্নকূট উৎসব হয় কালীপুজোর পরের দিন। এ ছাড়াও এই মন্দিরে অন্নকূট হয় অন্নপূর্ণা পুজোর দিন।[১০]
দেবী অন্নপূর্ণার আরও একটি মন্দির রয়েছে বেহালার বড়িশায়। সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবারের চন্দ্রকান্ত রায়চৌধুরী সেই সময়ের বড়িশা গ্রামে বড়বাড়ির মধ্যে ১৮৫০ সালে একটি পঞ্চরত্ন মন্দিরে অষ্টধাতুর দেবীমূর্তি এবং রুপোর শিবমূর্তি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।[১১] শোনা যায়, চন্দ্রকান্তের কোনও পুত্রসন্তান না থাকায় তাঁর দুই স্ত্রী প্রতিজ্ঞা করেছিলেন স্বামীর মৃত্যুর পর তাঁরা কাশীবাসী হবেন। তাঁরা যাতে কাশী না যান - সেজন্যই চন্দ্রকান্ত তাঁদের কাশী যাওয়া আটকাতে বাড়িতেই দেবীর মন্দির নির্মাণ করান।[১২] অন্নপূর্ণা পুজো উপলক্ষে বিশেষ পুজোর আয়োজন করা হয় এখানে।
বিডন স্ট্রিটের ‘মিত্রাশ্রম’-এও রয়েছে মাতৃ মূর্তি। অতীতে শিমুলিয়ার নিজ গ্রামে দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও গিরীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছ থেকে বাড়িটি কিনেছিলেন বিশ্বনাথ মিত্র।[১৩] পরে রাস্তাটির নামকরণ হয় বিডন স্ট্রিট। এই পরিবারের বধূ শিবসুন্দরী মিত্র ১৯০৪ সালে নীলকমলেশ্বর শিব ও দেবীর মূর্তি প্রতিষ্ঠা করেন। মূর্তিটি ম্যানচেস্টারের প্রসিদ্ধ স্টুয়ার্ট কোম্পানি থেকে তৈরি করিয়ে আনা হয়েছিল।[১৪]
বলরাম দে স্ট্রিটের খান পরিবারেরও অন্নপূর্ণা পুজো হয়ে। পুজো শুরু করেছিলেন বৈদ্যনাথ খান।[১৫]
ভাদুড়ী মহাশয়- মহর্ষি নগেন্দ্রনাথ- এর শেষ জীবনের শেষ জীবনের সাধন-ভূমি কলকাতার রামমোহন রায় রোডের সনাতন ধর্ম প্রচারিণী সভা ও শ্রীশ্রী নগেন্দ্র মঠ এবং নগেন্দ্র মিশনেও দেবী অন্নপূর্ণার পূজার আয়োজন হয়। থাকে অন্নকূটও।[১৬]
অন্নপূর্ণা পূজায় বাংলায় অন্নকূট
সম্পাদনারানি রাসমণির কনিষ্ঠা কন্যা জগদম্বা ১৮৭৫ খ্রিস্টাব্দে ব্যারাকপুরে দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের আদলে অন্নপূর্ণা মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। এই মন্দিরে বিরাজমান অষ্টধাতুর অন্নপূর্ণা ও মহাদেব। এই মন্দিরে অন্নপূর্ণা পুজোর দিন হয় অন্নকূট মহোৎসব।[১৭]
উত্তর কলকাতার শ্যামপুকুরের বলরাম ঘোষ স্ট্রিটের ভট্টাচার্য বাড়িতেও দেবী অন্নপূর্ণার অন্নকূট মহাসমারোহে উদযাপিত হয়।[১৮]
লঘিমা সিদ্ধ মহাযোগী ভাদুড়ী মহাশয় - মহর্ষি নগেন্দ্রনাথ- এর শেষ সাধনভূমি কলকাতা-র রামমোহন রায় রোডের শ্রীশ্রীনগেন্দ্র মঠ এবং নগেন্দ্র মিশনেও অন্নপূর্ণা পূজা উপলক্ষে আয়োজিত হয় অন্নকূট উৎসব।[১৯]
আরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ অন্নপূর্ণার ধ্যান ও প্রণাম, স্তবকবচমালা ও ধ্যানমালা, পণ্ডিত বামদেব ভট্টাচার্য সম্পাদিত, অক্ষয় লাইব্রেরী, কলকাতা, পৃ. ৩০৬-০৭
- ↑ Hindu Gods and Goddesses, Swami Harshananda, Sri Ramakrishna Math, Chennai, 2005, pp. 122
- ↑ পৌরাণিকা: বিশ্বকোষ হিন্দুধর্ম, অমলকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, ফার্মা কেএলএম প্রাঃ লিঃ, কলকাতা, ২০০১, পৃ. ৫৯
- ↑ বাংলা সাহিত্যের ইতিবৃত্ত, তৃতীয় খণ্ড: দ্বিতীয় পর্ব, অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, মডার্ন বুক এজেন্সি প্রাঃ লিঃ, কলকাতা, ২০০১ সংস্করণ, পৃ. ১৪৭-৪৯
- ↑ বাংলা সাহিত্যের ইতিবৃত্ত, তৃতীয় খণ্ড: দ্বিতীয় পর্ব, পৃ. ১৫১
- ↑ "মঙ্গলকাব্যের প্রভাবেই বাংলায় শুরু হয় অন্নপূর্ণা আরাধনা"।
- ↑ "মঙ্গলকাব্যের প্রভাবেই বাংলায় শুরু হয় অন্নপূর্ণা আরাধনা"।
- ↑ "মঙ্গলকাব্যের প্রভাবেই বাংলায় শুরু হয় অন্নপূর্ণা আরাধনা"।
- ↑ "মঙ্গলকাব্যের প্রভাবেই বাংলায় শুরু হয় অন্নপূর্ণা আরাধনা"।
- ↑ "মঙ্গলকাব্যের প্রভাবেই বাংলায় শুরু হয় অন্নপূর্ণা আরাধনা"।
- ↑ "মঙ্গলকাব্যের প্রভাবেই বাংলায় শুরু হয় অন্নপূর্ণা আরাধনা"।
- ↑ "মঙ্গলকাব্যের প্রভাবেই বাংলায় শুরু হয় অন্নপূর্ণা আরাধনা"।
- ↑ "মঙ্গলকাব্যের প্রভাবেই বাংলায় শুরু হয় অন্নপূর্ণা আরাধনা"।
- ↑ "মঙ্গলকাব্যের প্রভাবেই বাংলায় শুরু হয় অন্নপূর্ণা আরাধনা"।
- ↑ "মঙ্গলকাব্যের প্রভাবেই বাংলায় শুরু হয় অন্নপূর্ণা আরাধনা"।
- ↑ "অন্নপূর্ণা পূজায় বাংলায় অন্নকূট, Annapurna Puja 2025 Date Time Fixture: ভক্তি মনে দেবীর পুজো করলে বাড়িতে অন্নের অভাব হয় না, জানুন অন্নপূর্ণা পুজোর মন্ত্র- নির্ঘণ্ট"।
- ↑ "অন্নের পর্বতে শাক ভাজা লুচি সন্দেশের অলঙ্করণ"।
- ↑ "অন্নের পর্বতে শাক ভাজা লুচি সন্দেশের অলঙ্করণ"।
- ↑ "অন্নপূর্ণা পূজায় বাংলায় অন্নকূট, Annapurna Puja 2025 Date Time Fixture: ভক্তি মনে দেবীর পুজো করলে বাড়িতে অন্নের অভাব হয় না, জানুন অন্নপূর্ণা পুজোর মন্ত্র- নির্ঘণ্ট"।