অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়
অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় (৩রা জুন, ১৯২০ – ২১শে মার্চ, ২০০৩) বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসকার, বিশিষ্ট অধ্যাপক, গবেষক ও পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমির ভূতপূর্ব সভাপতি। নয় খণ্ডে প্রকাশিত তার বাংলা সাহিত্যের ইতিবৃত্ত একটি হিমালয়-প্রতিম কীর্তি এবং এই গ্রন্থখানির জন্য তিনি সারস্বত সমাজে শ্রদ্ধার বিশেষ শ্রদ্ধার আসন অধিকার করেন। [১]
অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় | |
---|---|
জন্ম | ৩রা জুন, ১৯২০ নকফুল, বনগাঁ মহকুমা, উত্তর ২৪ পরগণা জেলা, অবিভক্ত ভারতবর্ষ |
মৃত্যু | ২১শে মার্চ, ২০০৩ |
পেশা | ঐতিহাসিক, অধ্যাপক, গবেষক |
জাতীয়তা | ভারতীয় |
নাগরিকত্ব | ভারতীয় |
ধরন | গবেষণা |
উল্লেখযোগ্য রচনাবলি | বাংলা সাহিত্যের ইতিবৃত্ত, ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধ ও বাংলা সাহিত্য, বাংলা সাহিত্যে বিদ্যাসাগর, সাহিত্য জিজ্ঞাসায় রবীন্দ্রনাথ |
জীবন
সম্পাদনাঅসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্ম বর্তমান উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার বনগাঁ মহকুমার নকফুলে মাতুলালয়ে। পিতা অক্ষয়কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, মাতা চারুবালা দেবী। ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দ থেকে তারা হাওড়ায় বসবাস করতে থাকেন। ১৯৩৮ সালে হাওড়া জিলা স্কুল থেকে বাংলায় ৭৭% নম্বর সহ জেলায় এই বিষয়ে প্রথম হয়ে ম্যাট্রিক পাশ করেন। এরপর রিপন কলেজ (অধুনা সুরেন্দ্রনাথ কলেজ) থেকে আইএ পরীক্ষায় বাংলা ও আসামের পরীক্ষার্থীদের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করেন। তারপর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্য নিয়ে বিএ ও এমএ পরীক্ষায় (১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে) প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে স্বর্ণপদক লাভ করেন। কলেজ জীবনেই ১৯৪১-৪২ সালে সায়গণ থেকে প্রদত্ত নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর বক্তৃতাগুলো বঙ্গানুবাদ করে ফরোয়ার্ড পত্রিকায় ছাপতে থাকেন। ছাত্রাবস্থাতেই তার গল্প দেশ ও অদ্বৈত মল্লবর্মণের ‘নবশক্তি’ পত্রিকায় প্রকাশিত হতে থাকে। ১৯৪৫ সালে এমএ পাশ করে সেই বছরেই নবদ্বীপ বিদ্যাসাগর কলেজে অধ্যাপনা শুরু করেন। পরে রিপন কলেজে ও ১৯৫৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে যোগ দেন। উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় অধ্যাপক হয়েছিলেন তিনি। ১৯৮৫ সালে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসর নেন অসিতকুমার। ২০০২ সালে অন্নদাশঙ্কর রায়ের মৃত্যুর পর পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমির সভাপতির পদে বৃত হন ও আমৃত্যু সেই পদে বহাল থাকেন।
গ্রন্থাবলি
সম্পাদনাঅসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের শ্রেষ্ঠ কীর্তি বাংলা সাহিত্যের ইতিবৃত্ত, নয় খণ্ডে প্রকাশিত বাংলা সাহিত্যের বিস্তারিত ইতিহাসগ্রন্থ। এই গ্রন্থের দুটি সহজপাঠ্য সংস্করণ বাংলা সাহিত্যের সম্পূর্ণ ইতিবৃত্ত ও বাংলা সাহিত্যের সংক্ষিপ্ত ইতিবৃত্তও তার রচনা। তার রচিত অন্যান্য গ্রন্থগুলি বাংলার নবজাগরণ বিষয়ে রচিত। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য – ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধ ও বাংলা সাহিত্য, বাংলা সাহিত্যে বিদ্যাসাগর, সাহিত্য জিজ্ঞাসায় রবীন্দ্রনাথ হাওড়া শহরের ইতিহাস(২ খণ্ড) ইত্যাদি। তার সম্পাদিত গ্রন্থগুলির মধ্যে শ্রেষ্ঠ গল্প শ্রেষ্ঠ লেখক, জীবনের গল্প গল্পের জীবন, সত্যেন্দ্র রচনাবলী, বিদ্যাসাগর রচনাবলী, সঞ্জীব রচনাবলী উল্লেখযোগ্য। স্মৃতি বিস্মৃতির দর্পনে নামে তার একটি আত্মকথাও রয়েছে। এছাড়া ভারতীয় পণ্ডিত বেদ প্রকাশ উপাধ্যায় রচিত কল্কি অবতার ও মোহাম্মদ সাহেব বইটি গবেষণা পূর্বক হিন্দুধর্মগ্রন্থ বেদ ও পুরাণে মুহাম্মদ নামে অনুবাদ ও সম্প্রসারণ করেন তিনি।
সম্মাননা
সম্পাদনাপশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমির সভাপতিত্ব করা ছাড়াও তিনি এশিয়াটিক সোসাইটির বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় গবেষক ছিলেন। একাধিকবার সম্মেলন উপলক্ষে ও অতিথি-অধ্যাপনার জন্য বিদেশেও গিয়েছেন। ১৯৮১ সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক বুদ্ধমহাভাব মহাসম্মেলনে যোগ দেন এবং ১৯৯৬ সালে অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিথি অধ্যাপক হিসাবে ভাষণ দেন। চিন্তাবিদ ও গবেষক হিসাবে একাধিক পুরস্কার ও সম্মানে ভূষিত হয়েছেন অসিতকুমার। তার স্ত্রী হাওড়া গার্লস কলেজের ইতিহাসের অধ্যাপিকা বিনীতা গঙ্গোপাধ্যায় (২৯/০১/১৯২৫ - ১৫/০৪/২০০৬) ঐতিহাসিক উপন্যাস,গল্প ভ্রমণকাহিনী লিখেছেন সুকন্যা ছদ্মনামে ।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, দ্বিতীয় খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, জানুয়ারি ২০১৯ পৃষ্ঠা ৪৩, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-২৯২-৬
- বাঙালি চরিতাভিধান, দ্বিতীয় খণ্ডের সংযোজন, অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, ২০০৪