অনাথবন্ধু পাঁজা (২৯ অক্টোবর, ১৯১১ - ২ সেপ্টেম্বর, ১৯৩৩) ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন অন্যতম ব্যক্তিত্ব। তিনি গোপন বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স দলের সদস্য ছিলেন। পেডি ও ডগলাস নিহত হবার পর বার্জ নামে এক ইংরেজ মেদিনীপুরের ম্যাজিস্ট্রেট হয়ে আসেন। ১৯৩৩ সালে ২ সেপ্টেম্বর অনাথবন্ধু পাঁজা এবং তার সঙ্গী মৃগেন্দ্রনাথ দত্ত কর্তৃক বার্জ নিহত হয়। কিন্তু পুলিসের গুলিতে তিনি ঘটনাস্থলেই এবং মৃগেন্দ্রনাথ পরদিন মারা যান।[১]

অনাথবন্ধু পাঁজা
অনাথবন্ধু পাঁজা
জন্ম২৯ অক্টোবর, ১৯১১
মৃত্যু২ সেপ্টেম্বর, ১৯৩৩
আন্দোলনব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলন

জন্ম শিক্ষাজীবন সম্পাদনা

অনাথবন্ধু পাঁজার জন্ম মেদিনীপুরের জেলার সবং-এর জলবিন্দু গ্রামে। তার পিতার নাম সুরেন্দ্রনাথ পাঁজা।[২] অনাথের তিন বৎসর বয়সের সময় তার পিতা মারা যান। তার মা কুমুদিনী দেবী ও জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা তাকে প্রতিপালন করেন। [৩] তিনি প্রাথমিক পাঠ গ্রামের ভুবন পালের পাঠশালায় শেষ করে মায়ের সঙ্গে মেদিনীপুর শহরে যান এবং সুজাগঞ্জ প্রাইমারি স্কুলে ভর্তি হন। কিন্তু আর্থিক কারণে পড়াশোনা আর করতে পারেন নি। তিনি বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্সে যোগ দেন এবং দলের নির্দেশে ও সহযোগিতায় প্রথমে মেদিনীপুর টাউন স্কুল এবং পরে মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুলে ভরতি হন।[৪] মেদিনীপুর গোপন বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স দলে যুক্ত হয়ে রিভলভার চালনা শেখার জন্য তিনি এবং মৃগেন্দ্রনাথ, নির্মলজীবন ঘোষ, ব্রজকিশোর চক্রবর্তীরামকৃষ্ণ রায় কলকাতায় যান। শিক্ষাশেষে পাঁচটি রিভলভারসহ তারা মেদিনীপুরে ফিরে আসেন। এই সময়ে মেদিনীপুরের ম্যাজিস্ট্রেট বার্জ বিপ্লবীদের প্রতি অকথ্য নির্যাতন শুরু করলে উক্ত পাঁচজন যুবকের উপর বার্জ হত্যার দায়িত্ব অর্পিত হয়।[১]

বার্জ হত্যাকাণ্ড সম্পাদনা

১৯৩৩ সালের ২ সেপ্টেম্বর শ্বেতাঙ্গ ম্যাজিস্ট্রেট বার্জ সাহেব মেদিনীপুর কলেজ মাঠে মোহামেডান স্পোর্টিং-এর বিরুদ্ধে মেদিনীপুর ক্লাবের হয়ে ফুটবল খেলতে নামেন। খেলা প্রাকটিসের ছল করে বল নিয়ে মাঠে নামেন অনাথবন্ধু ও মৃগেন্দ্রনাথ দত্ত। মাঠেই দুই বন্ধু বার্জ সাহেবকে আক্রমণ করলে তিনি মারা যান। জোন্স নামে একজন আহত হন। পুলিস প্রহরী দুজনের উপর পাল্টা গুলি চালায়। এতে তারা দুজন নিহত হন এবং অপর সঙ্গীরা পলায়ন করতে সক্ষম হন। এই ঘটনার পর ব্রজকিশোর চক্রবর্তী, রামকৃষ্ণ রায়, নির্মলজীবন ঘোষ, নন্দদুলাল সিং, কামাখ্যা ঘোষ, সুকুমার সেন, সনাতন রায়ের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের মামলা হয়। বিচারে ব্রজকিশোর, রামকৃষ্ণ ও নির্মলজীবনের ফাঁসি হয়। নন্দদুলাল, কামাখ্যা ঘোষ, সুকুমার সেন এবং সনাতন রায়-এর যাবজ্জীবন দ্বীপান্তর দণ্ড হয়।[৫]

উত্তরাধিকার সম্পাদনা

অনাথবন্ধু পাঁজার স্মৃতিতে তার গ্রামের অদূরে হরিরহাট অনাথ স্মৃতি বালিকা বিদ্যালয় নামাঙ্কিত হয়েছে।[৬]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. সুবোধ সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, প্রথম খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, নভেম্বর ২০১৩, পৃষ্ঠা ২০, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-১৩৫-৬
  2. রায়, প্রকাশ। "বিস্মৃত বিপ্লবী"। বিপ্লবীদের জীবনী 
  3. http://www.indiaculture.nic.in/sites/default/files/pdf/Martyrs_Vol_4_06_03_2019
  4. "-Bengal Volunteers of Midnapore"। সংগ্রহের তারিখ অক্টোবর ২৮, ২০২১ 
  5. ত্রৈলোক্যনাথ চক্রবর্তী, জেলে ত্রিশ বছর, পাক ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম, ধ্রুপদ সাহিত্যাঙ্গণ, ঢাকা, ঢাকা বইমেলা ২০০৪, পৃষ্ঠা ১৮১।
  6. https://local.infobel.in/IN101851904-03222249203/harirhat_anath_smriti_girls_high_school-midnapore.html