প্যাঁচা
প্যাঁচা, পেঁচা, বা পেচক এক প্রকার নিশাচর শিকারী পাখি। স্ট্রিজিফর্মিস বর্গভূক্ত এই পাখিটির এখনও পর্যন্ত প্রায় ২০০টি প্রজাতি টিকে আছে। বেশীরভাগ প্যাঁচা ছোট ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণী যেমন ইঁদুর এবং কীটপতঙ্গ শিকার করে, তবে কিছু প্রজাতি মাছও ধরে। প্যাঁচা উপর থেকে ছোঁ মেরে শিকার ধরতে অভ্যস্ত। শিকার করা ও শিকার ধরে রাখতে এরা বাঁকানো ঠোঁট বা চঞ্চু এবং নখর ব্যবহার করে।
প্যাঁচা | |
---|---|
উত্তুরে ফুটকি প্যাঁচা Strix occidentalis caurina | |
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস | |
জগৎ: | প্রাণীজগৎ |
পর্ব: | কর্ডাটা |
শ্রেণী: | পক্ষী |
বর্গ: | Strigiformes |
পরিবার | |
স্ট্রিজিডি | |
সকল প্রজাতির বিস্তৃতি |
কুমেরু, গ্রীনল্যান্ড এবং কিছু নিঃসঙ্গ দ্বীপ ছাড়া পৃথিবীর সব স্থানেই প্যাঁচা দেখা যায়। বাংলাদেশে ১৭টি প্রজাতির (মতান্তরে ৮ গণে ১৫ প্রজাতি)[১] প্যাঁচা পাওয়া যায়, যার মধ্যে ২৫টি স্থায়ী এবং ২টি পরিযায়ী।[২] প্যাঁচা মূলত নিঃসঙ্গচর। এরা গাছের কোটর, পাহাড় বা পাথরের গর্ত বা পুরনো দালানে থাকে।
পেঁচা কবে আমাদের এই পৃথিবীতে এসেছে তা নিয়ে নিশ্চিত করে বলা না গেলেও গবেষকদের দাবী আমাদের পৃথিবীতে মানুষের আগমনের অনেক আগেই পেঁচা এই পৃথিবীতে এসেছে। এই আগে কতো বছর আগে তাও সঠিক ভাবে জানা না গেলেও ধারণা করা হয় ডাইনোসরদের ৩৫০০ বছর আগে পেঁচার জন্ম হয়েছে আমাদের এই পৃথিবীতে। পেঁচার জীবাষ্ম গবেষণা করে গবেষকরা অনুমান করেন আজ থেকে প্রায় ছয় কোটি বছর আগে পেঁচার জন্ম হয়েছে।[৩]
বর্ণনা
সম্পাদনাপ্যাঁচার মাথা বড়, মুখমন্ডল চ্যাপ্টা এবং মাথার সম্মুখদিকে চোখ। প্যাঁচার চোখের চারিদিকে সাধারণত বৃত্তাকারে পালক সাজানো থাকে যাকে ফেসিয়াল ডিস্ক বলে। এদের অক্ষিগোলক সামনের দিকে অগ্রসর থাকায় এরা দ্বিনেত্র দৃষ্টির অধিকারী।
প্যাঁচার দূরবদ্ধদৃষ্টি আছে ফলে এরা চোখের কয়েক ইঞ্চির মধ্যে অবস্থিত কোন বস্তু পরিষ্কারভাবে দেখতে পায় না। এরা এদের ধরা শিকারকে চঞ্চু এবং নখরে অবস্থিত বিশেষ এক ধরনের পালক দ্বারা অনুভব করতে পারে। প্যাঁচা তার মাথাকে একদিকে ১৩৫ ডিগ্রী কোণে ঘোরাতে পারে। তাই দুই দিক মিলে এদের দৃষ্টিসীমা ২৭০ ডিগ্রী। ফলে এরা নিজের কাঁধের উপর দিয়ে পেছনে দেখতে পায়।[৪]
প্যাঁচার শ্রবণশক্তি খুব প্রখর। শুধু শব্দ দ্বারা চালিত হয়ে এরা নিরেট অন্ধকারে শিকার ধরতে পারে। সামান্য মাথা ঘুরালে প্যাঁচা অনুচ্চ শব্দ যেমন ইঁদুরের শষ্যদানা চিবানোর আওয়াজও শুনতে পায়, এর কারণ হচ্ছে মাথার গড়ন রূপান্তরিত হওয়ার জন্য প্যাঁচার দুই কানে সামান্য আগে পরে শব্দ পৌঁছায়।[২] । এরা বাতাসে উড়ার সময় কোনো রকম শব্দ করে না। প্যাঁচার ফেসিয়াল ডিস্ক শিকারের করা শব্দকে শ্রবনে সহায়তা করে। অনেক প্রজাতির প্যাঁচার ফেসিয়াল ডিস্ক অসমভাবে সাজানো থাকে যাতে শিকারের অবস্থান নির্ণয় করা সহজ হয়[৫]
প্রজাতি
সম্পাদনাএখনও পর্যন্ত যেসব প্যাঁচার দেখা পাওয়া যায় তাদেরকে দুটো গোত্রে ভাগ করা হয়েছে: সাধারণ প্যাঁচা বা স্ট্রিগিডি এবং লক্ষ্মীপ্যাঁচা বা টাইটোনিডি।
ভিন্ন প্রজাতির প্যাঁচার ডাক ভিন্ন রকম। ডাকের ভিন্নতা অনুযায়ী বাংলায় বিভিন্ন প্যাঁচার বিভিন্ন নামকরণ হয়েছে। যেমন: হুতুম প্যাঁচা (Bubo bengalensis), ভূতুম প্যাঁচা (Ketupa zeylonensis), লক্ষ্মীপ্যাঁচা (Tyto alba), খুঁড়ুলে প্যাঁচা (Athene brama), কুপোখ (Ninox scutulata), নিমপোখ (Otus lepiji) ইত্যাদি।[২]
প্রচলিত বিশ্বাসবোধ
সম্পাদনাপ্যাঁচার অদ্ভুত রকমের ডাক এবং নিশাচর স্বভাব একে নানা কুসংস্কার এবং অলৌকিক চিন্তার সাথে যুক্ত করেছে। কেনিয়ার কিকুয়ু উপজাতিগোষ্ঠী বিশ্বাস করে যে, প্যাঁচা মৃত্যুর আগমনের কথা জানিয়ে দেয়। যদি কেউ একটি প্যাঁচা দেখে কিংবা তার আওয়াজ শোনে তাহলে সে মৃত্যুমুখে পতিত হবে। প্রচলিত বিশ্বাসবোধে প্যাঁচাকে মন্দ ভাগ্য, শারীরিক অসুস্থতা অথবা মৃত্যুর প্রতিচ্ছবি হিসেবে গণ্য করা হয়। প্রাচীনকাল থেকেই এই বিশ্বাস অদ্যাবধি প্রচলিত রয়েছে।[৬]
গ্যালারি
সম্পাদনা-
A Great Horned Owl (Bubo virginianus) sleeping at daytime in a hollow tree
-
Moche Owl. 200 A.D. Larco Museum Collection Lima, Peru
-
হাসি পেঁচা
-
লক্ষ্মীপেঁচা (Tyto alba)
-
ঈগল-পেঁচা
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ জিয়া উদ্দিন আহমেদ (সম্পা.) (২০০৯)। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ: খণ্ড ২৬ (পাখি)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ১১৫। আইএসবিএন 9843000002860
|আইএসবিএন=
এর মান পরীক্ষা করুন: invalid prefix (সাহায্য)। - ↑ ক খ গ বাংলাপিডিয়া[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ "পেঁচা সম্পর্কে অজানা তথ্য যা আগে কখনো শুনেন নি"। Familiarity with Animals-FWA। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৯-০৬।
- ↑ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ২৫ জানুয়ারি ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ জুলাই ২০০৯।
- ↑ Cotty, 2008.
- ↑ "Owls in Lore and Culture - The Owl Pages". Owlpages.com. Retrieved 2009-07-29.
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনাসাধারণ
- Owl species of the World
- Animal Diversity Web Page: Owls
- Owl Brain Atlas
- Smithsonian Snowy Owl Info ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৭ নভেম্বর ১৯৯৯ তারিখে
- Owls of the Harry Potter movies - learn about the owls featured in the films, threats to the species, and conservation activities
- World Owl Trust
- Owl Physiology, 'The Owl Pages' website.
- Migratory Bird Treaty Act of 1918
- Athenian Owl coins
- Silent kill: The kingdom of owl, photos of different owl species with music - by Liagen
ইউরেশিয়া
- World of Owls - Northern Irelands only Owl, Bird of Prey and Exotic Animal Centre.
- Current Blakiston's Fish Owl Research in Russia
উত্তর আমেরিকা
- List of Owl Species Breeding In North American and Owl Photos
- South Okanagan Rehabilitation Centre For Owls (British Columbia)
অস্ট্রেলিয়া
- Australian Owls and Frogmouths ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৮ ফেব্রুয়ারি ২০০৭ তারিখে