শিক্ষা
শিক্ষা হল জ্ঞানলাভের একটি পদ্ধতিগত প্রক্রিয়া এবং ব্যক্তির সম্ভাবনার পরিপূর্ণ বিকাশ সাধনের অব্যাহত অনুশীলন। শিক্ষা প্রক্রিয়ায় কোনো ব্যক্তির অন্তর্নিহিত গুণাবলীর পূর্ণ বিকাশের জন্য উৎসাহ দেয়া হয় এবং তাকে সমাজের একজন উৎপাদনশীল সদস্য হিসেবে প্রতিষ্ঠালাভের জন্য যে সব দক্ষতা প্রয়োজন সেগুলি অর্জনে সহায়তা করা হয়। সাধারণ অর্থে দক্ষতা বা জ্ঞান অর্জনই হল শিক্ষা। বাংলা শিক্ষা শব্দটি এসেছে 'শাস' ধাতু থেকে, যার অর্থ শাসন করা বা উপদেশ দান করা। অন্যদিকে শিক্ষার ইংরেজি প্রতিশব্দ এডুকেশন এসেছে লাতিন শব্দ এডুকেয়ার বা এডুকাতুম থেকে, যার অর্থ বের করে আনা অর্থাৎ ভেতরের সম্ভাবনাকে বাইরে বের করে নিয়ে আসা বা বিকশিত করা।
সক্রেটিসের ভাষায় “শিক্ষা হল মিথ্যার অপনোদন ও সত্যের বিকাশ।”[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] এরিস্টটল বলেন “সুস্থ দেহে সুস্থ মন তৈরি করাই হলো শিক্ষা”[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায় “শিক্ষা হল তাই, যা আমাদের কেবল তথ্য পরিবেশনই করে না; বিশ্বসত্তার সাথে সামঞ্জস্য রেখে আমাদের জীবনকেও গড়ে তোলে।”[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
শব্দের উৎপত্তি
সম্পাদনাশিক্ষা শব্দের উৎপত্তি সংস্কৃত "শাস" শব্দ ধাতু থেকে। সাধারণভাবে বলা যায় মানুষের আচরণের কাঙ্ক্ষিত, বাঞ্চিত এবং ইতিবাচক পরির্বতনই হলো শিক্ষা। যুগে যুগে নানা মনীষী নানাভাবে শিক্ষা সংজ্ঞায়িত করেছেন । আবার সময়ের সাথে সাথে শিক্ষার সংজ্ঞা বা ধারণা ও পদ্ধতিতে পরির্বতন এসেছে।
ইংরেজিতে ব্যাকরণগতভাবে, "এডুকেশন" শব্দটি লাতিন ēducātiō (যার অর্থ প্রজনন এবং লালন পালন করা), ēducō (যার অর্থ আমি শিক্ষাদান করি, আমি প্রশিক্ষণ দেই) যা হোমোনিম ēdūcō এর সাথে সম্পর্কিত (যার অর্থ আমি এগিয়ে নিয়ে যাই, আমি উত্থাপন করি) এবং Dōcō ( যার অর্থ আমি নেতৃত্ব দেই, আমি পরিচালনা করি ) থেকে উৎপত্তি হয়েছে।[১]
প্রকৃতি এবং শিক্ষা
সম্পাদনাআদিমকালে মানুষ ছিল অসহায়। ঝড়, বৃষ্টি, গরম, ঠাণ্ডা, ভূমিকম্প, বজ্রবিদ্যুৎ ইত্যাদি প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে তাকে সবসময় লড়াই করতে হয়েছে। মানুষ তখন প্রকৃতির দিকে তাকিয়ে থাকত ভয়ে। প্রকৃতি ছিল যেন প্রভু, আর মানুষ তার দাস। হিংস্র বন্যপ্রাণীর বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে হয়েছে মানুষকে। গুহামানব বন্য পশু মেরেছে পাথর ছুঁড়ে। শিকার করা পশুর কাঁচা মাংস খেয়েছে। বনের ফল মূল ছাড়াও যে মাংস খেয়ে খিদে মেটানো যায় এই চেতনা মানুষের মনে জাগ্রত হয়েছে। পাথর ছুঁড়ে তার 'জ্ঞান' হয়েছে এই পাথর দিয়েই পশুকে তাড়ানো যায় এমনকি মেরে ফেলা যায়। আদিম মানুষের মনে 'বোধ' এসেছে যে পাথরের আঘাতে পশু মরে যেতে পারে। এই বোধ থেকে তার মনে এসেছে অন্য পশুকে পাথর ছুঁড়ে মারার পরিকল্পনা। অর্থাৎ অন্য পশুর উপর পাথর 'প্রয়োগ' করে তা মারার চেষ্টা। পাথর তো ভোঁতা হলে পশু শিকার করার অসুবিধে হয়। এটাকে যদি ধারালো বা সূঁচালো করা যায় তাহলে পশু ঘায়েল করতে খুবেই সুবিধে হয়। তাই পাথর কেটে অস্ত্র তৈরি করতে তাঁর 'দক্ষতা' এসেছে। এভাবেই জ্ঞান, বোধ, প্রয়োগ, দক্ষতার হাত ধরে শিক্ষা এগিয়ে চলেছে যুগ যুগ ধরে। শিক্ষার্থীর জ্ঞানার্জনের উৎস সম্বন্ধে সংস্কৃত সাহিত্যে বলা হয়েছে,-
"আচার্যাৎ পাদম্ আধত্তে পাদম্ শিষ্যঃ স্ব-মেধয়া; পাদম্ স্ব-ব্রহ্মচারিভ্যঃ পাদম্ কালক্রমেন চ।"[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
ব্রহ্মচারী বা শিক্ষার্থী জ্ঞানের এক চতুর্থাংশ লাভ করে আচার্য বা শিক্ষকের কাছ থেকে এক চতুর্থাংশ অর্জন করে নিজস্ব বুদ্ধিতে। এক চতুর্থাংশ লাভ করে অন্যান্য শিক্ষার্থীর সাথে আলাপ আলোচনায়। বাকি অংশ তার সমগ্র জীবন কর্মধারায় অর্জিত হয়। মানুষের জীবন এই বিশ্ব প্রকৃতির প্রাকৃতিক পরিবেশে আবৃত। মানুষের জীবন ও কর্ম বহুলাংশে নির্ভর করে প্রকৃতির উপর। বর্তমানে চার দেওয়ালে ঘেরা ব্যবস্থাকে বাদ দিয়েও শিক্ষা অর্জনের ভূমিকায় ব্যাপক ভাবে অংশ নিয়েছে প্রকৃতি-বিশ্বপ্রকৃতি। বিশ্বপ্রকৃতি যেন একজন মহান শিক্ষক। মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত প্রতিটি ঘাত প্রতিঘাতে আবৃত করে রাখে প্রকৃতি। মানুষকে ক্রিয়াশীল করে প্রকৃতি। প্রকৃতিতে আছে দুরকম বস্তু। জীব এবং জড়। জীব ও জড়ের প্রভাব সব সময়ই আবর্তিত হয় মানবজীবন প্রবাহে। তাই প্রকৃতি কোন নিষ্ক্রিয় সত্তা নয় তারও রয়েছে যেন জীবনী শক্তি! শিক্ষাবিদ রুশো বলেছেন, "Everything is good as it leaves the hand of the author of nature, everything is degenerated in the hands of man"[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] সব কিছুই ভালো যা প্রকৃতি করে। মানুষের হাতে সব কিছু যেন ধ্বংস হয়। প্রকৃতির ক্রিয়াকলাপ ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের উপলব্ধির মাধ্যমে যে শিক্ষা ঘটে তা হল প্রকৃত শিক্ষা।
শিক্ষার ব্যাপক অর্থ
সম্পাদনাপ্রাচীনকাল থেকেই মানুষের জীবনে শিক্ষা কথাটি জড়িয়ে রয়েছে। মানুষের সামাজিক, সাংস্কৃতিক সকল প্রকার অগ্রগতির পেছনে যে উপকরণ কাজে লাগে তা হল শিক্ষা। ব্যক্তির সুষ্ঠু জীবন যাপন সামাজিক উন্নয়ন এবং সভ্যতার অগ্রগতির জন্য শিক্ষা অপরিহার্য। শিক্ষা অতীতের সংস্কৃতিকে বহন করে, বর্তমান সভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে যায় এবং ভবিষ্যতের প্রগতিকে ত্বরান্বিত করে। কিন্তু শিক্ষা কি? আধুনিক চিন্তাবিদ এবং বিজ্ঞানীরা মনে করেন শিক্ষা এক ধরনের গতিশীল কাজ। অনেক সময় জ্ঞানার্জনকে স্বাভাবিক ভাবে শিক্ষা বলা হয়। অর্থাৎ যে ব্যক্তি যত জ্ঞান অর্জন করেছেন তাঁকেই আমরা তত শিক্ষিত বলি। স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন- "Education is the menifestation of perfection already in man."[২] রুশোর মতে- "Education is the unfoldment of the child. It is the skill of human behavier pattern."[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] সক্রেটিস বলেছেন - "Education is self realisation."[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
সংকীর্ণ অর্থে বিদ্যালয়ে অর্জিত জ্ঞান বা কৌশলকে শিক্ষা বলা হয়। কিন্তু কোনো মনোবিদ বা কোনো বিজ্ঞানী বিদ্যালয়ের অর্জিত জ্ঞানকে প্রকৃত শিক্ষা বলতে চাননি। বর্তমান কালে শিক্ষার ব্যাপক অর্থ খুবই কার্যকরী। শিক্ষা বিদরা মনে করেন শিক্ষা এক ধরনের জীবনব্যাপী প্রক্রিয়া যা মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত চলে। শিক্ষা কি? শিক্ষার ব্যাপক অর্থ হল:শিক্ষা মানুষের জীবনব্যাপী প্রক্রিয়া। মানুষ যতদিন বেঁচে থাকে সবসময়ই তার শিক্ষা চলে। এটি এক সামাজিক প্রক্রিয়া। সমাজ ছাড়া শিক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয় না। শিক্ষা হলো মানুষের অভিজ্ঞতার পুর্নগঠন ও পূর্ণসৃজন। যা বাস্তব সমস্যার সমাধানে সাহায্য। যা কোনো প্রাণীর আচরণের পরিবর্তন আনে তাই শিক্ষা। শিক্ষাই মানুষের সামাজিকীকরণে সাহায্য করে সমাজ সংরক্ষণ করে। যে কৌশল সমাজ ও ব্যক্তির মঙ্গল করে তাই শিক্ষা। এটি ক্রমবিকাশের ধারাকে বহন করে।শিক্ষা একধরনের উভমুখী প্রক্রিয়া যার সাহায্যে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর পারস্পরিক ভাবের আদান প্রদান চলে এবং এর ফলে উভয়ই উপকৃত হয়। শিক্ষা হল ব্যক্তির জ্ঞানমূলক, সামাজিক, মানসিক, এমনকি ব্যক্তিগত দিকের সর্বাঙ্গীন বিকাশের জীবনব্যাপী চলমান প্রক্রিয়া। যেহেতু শিক্ষা গতিশীল তাই এর অর্থ এমনকি লক্ষ্য- যুগ থেকে যুগান্তর সভ্যতার অগ্রগতির সাথে পরিবর্তিত হয়েছে।- [৩]
ইতিহাস
সম্পাদনাপ্রাগৈতিহাসিক কালে শিক্ষা শুরু হয়েছিল বয়স্ক ব্যক্তিদের দ্বারা যুবকদের সমাজের জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও দক্ষতার প্রশিক্ষণ দেয়ার মাধ্যমে। প্রাক-শিক্ষিত সমাজ মূলত মৌখিকভাবে এবং অনুকরণের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। গল্প-বলার মাধ্যমে জ্ঞান, মূল্যবোধ এবং দক্ষতা এক প্রজন্ম থেকে পরের প্রজন্মের কাছে স্থানান্তরিত হয়েছে। সাংস্কৃতিক দক্ষতা প্রসারিত হতে পারে অনুকরণের মাধ্যমে জ্ঞান অর্জন ও আনুষ্ঠানিক শিক্ষা উন্নত করার মধ্যমে। মিশরে মিডল কিংডম এর সময় স্কুল বিদ্যমান ছিল।
প্লেটো এথেন্সে একাডেমী প্রতিষ্ঠা করেছিলেন যা ছিল ইউরোপের উচ্চতর শিক্ষার প্রথম প্রতিষ্ঠান। ৩৩০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে মিশরে আলেকজান্দ্রিয়া শহরটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, এথেন্সের বুদ্ধিবৃত্তিক প্যাড হিসাবে এটি প্রাচীন গ্রিসে বিখ্যাত হয়ে ওঠেছিল। সেখানে, আলেকজান্দ্রিয়ার বৃহত্তর গ্রন্থাগারটি খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীতে নির্মিত হয়েছিল। ৪৭৬ খ্রিষ্টাব্দে রোমের পতনের পর ইউরোপীয় সভ্যতায় সাক্ষরতা এবং সংগঠনের পতন ঘটেছিল।
চীনে কনফুসিয়াস (৫৫১-৪৭৯ খ্রিস্টপূর্বাব্দ), লূ এর রাজ্যের সবচেয়ে প্রভাবশালী প্রাচীন দার্শনিক ছিলেন, যার শিক্ষাগত দৃষ্টিভঙ্গি চীনের সমাজ এবং কোরিয়া, জাপান ও ভিয়েতনামের মত প্রতিবেশী রাষ্ট্রের উপর প্রভাব বিস্তার করেছিল। কনফুসিয়াস শিষ্যদের একত্রিত করেন এবং একটি শাসককে নিরর্থকভাবে অনুসন্ধান করেন, যিনি সুশাসনের জন্য তার আদর্শগুলি গ্রহণ করবে। তার Analects অনুসরণকারীদের দ্বারা লিখিত হয়েছিল যা পূর্ব এশিয়ায় আধুনিক যুগেও শিক্ষার উপর ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে চলেছে।
রোমের পতনের পর, ক্যাথলিক চার্চ পশ্চিম ইউরোপে সাক্ষরতার ও স্কলারশিপের একমাত্র রক্ষাকর্তা হয়ে উঠেছিল। চার্চ ক্যাথিড্রাল স্কুলকে আধুনিক যুগের শিক্ষা ব্যবস্থার কেন্দ্র হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেছিল। এই প্রতিষ্ঠানগুলি শেষ পর্যন্ত মধ্যযুগীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইউরোপের বিভিন্ন আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলির অগ্রদূত হিসাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিল। উচ্চ মধ্যযুগে সময় চার্টার্স ক্যাথিড্রাল দ্বারা বিখ্যাত এবং প্রভাবশালী Chartres ক্যাথিড্রাল স্কুল পরিচালিত হয়েছিল। পশ্চিম ইউরোপের মধ্যযুগীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলি পশ্চিম ইউরোপ জুড়ে সুসংহত ছিল, যা তদন্তের স্বাধীনতাকে উত্সাহিত করে, এবং একদল পণ্ডিত ও প্রাকৃতিক দার্শনিকদের সৃষ্টি করেছিল , যেমন, নেপলস বিশ্ববিদ্যালয়ের টমাস অ্যাকুইনাস , অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির রবার্ট গ্রোসেটেস্ট এবং বৈজ্ঞানিক পরীক্ষার পদ্ধতিগত পদ্ধতির প্রারম্ভিক প্রকাশক, এবং জৈবিক গবেষণার অগ্রদূত সেন্ট অ্যালবার্ট গ্রেট ছিলেন অন্যতম। ১০৮৮ সালে প্রতিষ্ঠিত বলোনি বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রথম এবং প্রাচীনতম অপারেটিং ইউনিভার্সিটি বলে মনে করা হয়।
মধ্যযুগীয় সময়ে মধ্যপ্রাচ্যে ইসলামিক বিজ্ঞান ও গণিত সমৃদ্ধ হয়েছিল ইসলামিক খলিফার অধীনে, যা পশ্চিম আইবেরিয়ান উপদ্বীপ থেকে পূর্ব সিন্ধু পর্যন্ত এবং দক্ষিণে আলমোরাভিড রাজবংশ ও মালির সাম্রাজ্য পর্যন্ত বিস্তৃতি লাভ করেছিল।
ইউরোপে রেনেসাঁ প্রাচীন গ্রিক এবং রোমান সভ্যতার বৈজ্ঞানিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক তদন্ত এবং উপলব্ধির নতুন যুগের সূচনা করেছিল। প্রায় ১৪৫০ সালের দিকে জোহানেস গুটেনবার্গ একটি প্রিন্টিং প্রেস তৈরি করেন, যা সাহিত্যের কাজকে আরও দ্রুত ছড়িয়ে দেওয়ার অনুপ্রেরণা দিয়েছিল। ইউরোপীয় সাম্রাজ্যের যুগে ইউরোপীয় দর্শন, ধর্ম, শিল্প ও বিজ্ঞান বিষয়ক ধারণাগুলি বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল। মিশনারি ও পণ্ডিতরা অন্যান্য সভ্যতা থেকে নতুন ধারণা নিয়ে আসছিল - জেসুইট চীন মিশনের সাথে যারা চীন ও ইউরোপের মধ্যে জ্ঞান, বিজ্ঞান এবং সংস্কৃতি প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। ইউরোপ থেকে কাজগুলি অনুবাদ করে যেমন চীনের পণ্ডিতদের জন্য ইউক্লিডের এলিমেন্টস অনুবাদ এবং ইউরোপীয় শ্রোতাদের জন্য কনফুসিয়াসের চিন্তা চেতনা কথা বলা যায়। আলোকায়নের যুগের মাধ্যমে ইউরোপ আরও নিরপেক্ষ শিক্ষাগত দৃষ্টিভঙ্গির প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে ছিল।
বেশিরভাগ দেশে আজ নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত সব শিশুদের জন্য পূর্ণ-সময়ের শিক্ষা স্কুলে বা অন্যত্র বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এই কারণে বাধ্যতামূলক শিক্ষার বিস্তার ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে মিলিতভাবে, ইউনেস্কো গণনা করে লক্ষ্য করেছে যে আগামী ৩০ বছরের মধ্যে আরও মানুষ আনুষ্ঠানিক শিক্ষা লাভ করবে যা মানব ইতিহাসে বিরল ঘটনা হবে এটি।
শিক্ষার ধরন
সম্পাদনাশিক্ষা একটি জীবনব্যাপী প্রক্রিয়া। মানুষ জন্মের পর থেকে মৃত্যুর আগে মূহুর্ত পর্যন্ত শেখে। তাই শিক্ষার লাভের ধরন বিভিন্ন।যেমন:
আনুষ্ঠানিক শিক্ষা
সম্পাদনাআনুষ্ঠানিক শিক্ষা এমন একটি কাঠামোগত পরিবেশে ঘটে থাকে যার সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য হচ্ছে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদান। সাধারণত, একটি স্কুলের পরিবেশে আনুষ্ঠানিক শিক্ষা সঞ্চালিত হয় যেখানে শ্রেণীকক্ষে একাধিক শিক্ষার্থীদের জন্য একজন প্রশিক্ষিত এবং প্রত্যয়িত শিক্ষকের প্রয়োজন পড়ে বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষাদানের জন্য । বেশিরভাগ স্কুলে একটি মানসম্মত আদর্শ ডিজাইন করা হয় যার মাধ্যমে সিস্টেমে সমস্ত শিক্ষাগত পছন্দগুলি নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এই ধরনের পছন্দগুলি পাঠ্যক্রম, সাংগঠনিক মডেল, শারীরিক শিক্ষার স্থানগুলির (যেমন শ্রেণীকক্ষ) নকশা, ছাত্র-শিক্ষক ইন্টারঅ্যাকশন, মূল্যায়ন পদ্ধতি, শ্রেণীর আকার, শিক্ষাগত কর্মকাণ্ড, এবং আরও অনেক কিছু অন্তর্ভুক্ত করে।শিক্ষকদের কাছ বেল বাজাতে পারেন।
প্রাকস্কুল
সম্পাদনাপ্রাকস্কুলগুলি প্রায় তিন থেকে সাত বছর বয়স পর্যন্ত ছেলেমেয়েদের শিক্ষা প্রদান করে যা দেশের উপর নির্ভর করে যখন শিক্ষার্থীরা প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে প্রবেশ করে। এইগুলি নার্সারি স্কুল এবং কিন্ডারগার্টেন হিসাবেও পরিচিত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, যেখানে কিন্ডারগার্টেন শব্দটি প্রাথমিক শিক্ষার জন্য ব্যবহৃত শব্দ। কিন্ডারগার্টেন তিন থেকে সাত বছরের জন্য একটি শিশু-কেন্দ্রিক প্রাক পাঠ্যক্রম প্রদান করে। এখানে মূলত শিশুদের শারীরিক, বুদ্ধিবৃত্তিক এবং নৈতিক প্রকৃতির উদ্ঘাটন করার জন্য চেষ্টা করা হয়।
প্রাথমিক
সম্পাদনাপ্রাথমিক শিক্ষা আনুষ্ঠানিক ও কাঠামোগত যা প্রথম পাঁচ থেকে সাত বছর নিয়ে গঠিত। সাধারণত, প্রাথমিক শিক্ষা পাঁচ থেকে ছয় বছর এবং ছয় থেকে আট বছর বয়স পর্যন্ত পড়াশোনা করানো হয়ে থাকে, যদিও এর মধ্যে, মাঝে মাঝে দেশ ভেদে ভিন্নতা রয়েছে। বিশ্বব্যাপী, ছয় থেকে বারো বছর বয়সী প্রায় ৮৯% শিশু প্রাথমিক শিক্ষায় ভর্তি হয় এবং এই অনুপাত বেড়েই চলেছে। ইউনেস্কো দ্বারা চালিত ২০১৫ সালের মধ্যে "সবার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা" বেশিরভাগ দেশ এই প্রোগ্রাম বাস্তবায়নের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছে এবং অনেক দেশে এটি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে । প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার মধ্যে বিভাজন কিছুটা আলাদা, তবে এটি সাধারণত প্রায় এগারো বা বারো বছর বয়সের মধ্যে ঘটে। কিছু শিক্ষা ব্যবস্থায় পৃথক মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে, যেখানে চৌদ্দ বছর বয়স পর্যন্ত মাধ্যমিক শিক্ষার চূড়ান্ত পর্যায়ে স্থানান্তর করা হয় । প্রাথমিক শিক্ষা প্রদানের স্কুলগুলি প্রাথমিকভাবে প্রাথমিক বিদ্যালয় হিসাবে পরিচিত। প্রাথমিক বিদ্যালয়কে আবার শিশু এবং জুনিয়র স্কুলের মধ্যে বিভক্ত করা হয়।
ভারতে, উদাহরণস্বরূপ, বারো বছর ধরে বাধ্যতামূলক শিক্ষা, আট বছরে প্রাথমিক(elimentary) শিক্ষা, প্রাথমিক শিক্ষার জন্য পাঁচ বছর এবং উচ্চ প্রাথমিক শিক্ষার জন্য তিন বছর করা হয়েছে। ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ এডুকেশনাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং দ্বারা পরিকল্পিত একটি জাতীয় পাঠ্যক্রমের কাঠামোর উপর ভিত্তি করে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ১২ বছরের বাধ্যতামূলক স্কুল শিক্ষা প্রদান করা হয়।
মাধ্যমিক
সম্পাদনাবিশ্বের বেশিরভাগ সমসাময়িক শিক্ষা ব্যবস্থায়, মাধ্যমিক শিক্ষায় বয়ঃসন্ধির সময় আনুষ্ঠানিক শিক্ষার প্রসার ঘটে। এটি প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য সাধারণত "মাধ্যমিক উত্তর" বা "উচ্চতর" শিক্ষা (যেমন, বিশ্ববিদ্যালয়, বৃত্তিমূলক স্কুল) থেকে অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য সাধারণত প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক। এই সিস্টেমের উপর ভিত্তি করে এই সময়ের জন্য বিদ্যালয়গুলি, বা এর একটি অংশকে সেকেন্ডারি বা উচ্চ বিদ্যালয়, জিমন্যাশিয়াম, লিসিম, মধ্যম স্কুল, কলেজ বা বৃত্তিমূলক স্কুল বলা যেতে পারে। এই পদগুলির কোনও সঠিক অর্থ এক সিস্টেম থেকে অন্যটিতে পরিবর্তিত হতে পারে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার মধ্যে সঠিক সীমাও দেশ ভেদে আলাদা হতে পারে। তবে সাধারণত সপ্তম থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত স্কুলে যাওয়া হয়। মাধ্যমিক শিক্ষার প্রধানত কিশোর বয়সের মধ্যেই ঘটে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা এবং অস্ট্রেলিয়ায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার সাথে কখনও কখনও K-12 নির্দেশ করা হয় , এবং নিউজিল্যান্ডে বছরে ১-১৩ বছর পর্যন্ত ধরা হয়। মাধ্যমিক শিক্ষার উদ্দেশ্য হতে পারে সাধারণ জ্ঞান দান, উচ্চশিক্ষার জন্য প্রস্তুত করা, অথবা সরাসরি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে পেশার জন্য।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১৯১০ সাল পর্যন্ত মাধ্যমিক শিক্ষার প্রচলন ছিল না। বড় কর্পোরেশনের উত্থান এবং কারখানায় প্রযুক্তির অগ্রগতির সাথে দক্ষ শ্রমিকদের প্রয়োজন ছিল। এই নতুন চাকরির চাহিদা পূরণের জন্য উচ্চ বিদ্যালয়গুলি তৈরি করা হয়েছিল, কারিকুলামটি বাস্তব পেশাগত কাজের দক্ষতার উপর নিবদ্ধ ছিল যা ছাত্রদেরকে সাদা কলার বা দক্ষ নীল কলারের কাজের জন্য ভালভাবে প্রস্তুত করবে। এটি নিয়োগকর্তাদের এবং কর্মীদের উভয়ের জন্য উপকারী বলে প্রমাণিত হয়েছে, যেহেতু উন্নত মানবাধিকারের ফলে নিয়োগকর্তার খরচ কম হচ্ছিল, অন্যদিকে দক্ষ শ্রমিকরা উচ্চতর বেতন ও পাচ্ছিল।
ইউরোপে মাধ্যমিক শিক্ষার একটি দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। যেখানে ষোড়শ শতকের গোঁড়ার দিকে ব্যাকরণ স্কুল বা একাডেমী, পাবলিক স্কুলগুলির আকারে, বিনা বেতনে পড়ার জন্য স্কুল বা দাতব্য শিক্ষাগত ফাউন্ডেশনগুলির কথা উল্লেখ করা যেতে পারে যা ব্যাপকভাবে প্রচলিত ছিল।
কমিউনিটি কলেজ পরিবর্তনশীল পর্যায়ে অন্য একটি বিকল্প প্রস্তাব করে। তারা একটি নির্দিষ্ট এলাকার বাসিন্দাদের nonresidential জুনিয়র কলেজ কোর্স প্রদান করে।
উচ্চতর
সম্পাদনাউচ্চশিক্ষা হল তৃতীয় পর্যায়, বা পোষ্টসেকন্ডারি শিক্ষা, এটি একটি অ-বাধ্যতামূলক শিক্ষাগত স্তর যা উচ্চ বিদ্যালয় বা মাধ্যমিক বিদ্যালয় যেমন স্কুল সমাপ্তি অনুসরণ করে। তৃতীয়তঃ স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর শিক্ষা সহ বৃত্তিমূলক শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণ কে এর অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রধানত উচ্চ শিক্ষা প্রদান করে। সমষ্টিগতভাবে এইগুলি উচ্চ বিভাগ হিসাবে পরিচিত। উচ্চ শিক্ষা সম্পন্ন করা ব্যক্তি সাধারণত সার্টিফিকেট, ডিপ্লোমা, বা একাডেমিক ডিগ্রী প্রাপ্ত হয়ে থাকে।
উচ্চ শিক্ষা সাধারণত একটি ডিগ্রী-স্তর বা ডিগ্রী যোগ্যতা জড়িত থাকে। অধিকাংশ উন্নত দেশগুলিতে জনসংখ্যা (৫০% পর্যন্ত) এখন তাদের জীবনের কোন একটা সময় উচ্চশিক্ষায় প্রবেশ করে। জাতীয় অর্থনীতির জন্য উচ্চশিক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, উভয়ই একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্প হিসেবে বিবেচিত হয়, এবং বাকি প্রশিক্ষিত এবং শিক্ষিত কর্মীরা অর্থনীতির উৎস হিসাবে গণ্য।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা শিক্ষাদান, গবেষণা এবং সামাজিক সেবা কার্যক্রমকে অন্তর্ভুক্ত করে, এবং এটি স্নাতক পর্যায়ে উভয়ই অন্তর্ভুক্ত (কখনও কখনও উচ্চতর বিভাগ হিসাবে উল্লেখ করা হয়) এবং স্নাতক (বা স্নাতকোত্তর) স্তর (কখনও কখনও স্নাতক স্কুল হিসাবে পরিচিত)। বিশ্ববিদ্যালয় সাধারণত বেশ কিছু কলেজ নিয়ে গঠিত হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ইউনিভার্সিটিগুলি ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো ব্যক্তিগত এবং স্বাধীন হতে পারে; সরকারি এবং স্টেট নিয়ন্ত্রিত পেনসিলভানিয়া উচ্চ মাধ্যমিকের সিস্টেমের মতো রাজ্য শাসিত; বা স্বাধীন, কিন্তু ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মত স্টেট থেকে তহবিল প্রাপ্ত হতে পারে । এখন ইন্টারনেটের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কাছে সহজলভ্য বেশ কিছু ক্যারিয়ার নির্দিষ্ট কোর্স পাওয়া যায়।
উদার শিল্প শিক্ষা(liberal arts education) নামে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার একটি কোর্স আছে যাকে কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রম হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা যেতে পারে যার মূল কাজ হল সাধারণ জ্ঞান প্রদান এবং একটি পেশাদার, বৃত্তিমূলক বা কারিগরি পাঠ্যক্রমের বিপরীতে সাধারণ বুদ্ধিবৃত্তিক ক্ষমতা বিকাশের লক্ষ্যে শিক্ষাদান করা। ইউরোপে উদার শিল্প শিক্ষার (liberal arts education) সূচনা হয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্রে liberal arts college শব্দটির সাথে যুক্ত।
বৃত্তিমূলক
সম্পাদনাবৃত্তিমূলক শিক্ষা হচ্ছে সরাসরি এবং বাস্তব প্রশিক্ষণের উপর নিবদ্ধ শিক্ষার একটি ফর্ম। পেশাগত শিক্ষা একটি শিক্ষানবিশ বা ইন্টার্নশিপের পাশাপাশি চলতে পারে এমন একটি কাঠামো যেমন, কৃষি, প্রকৌশল, ঔষধ, স্থাপত্য এবং কলা এর অন্তর্ভুক্ত।
বিশেষ
সম্পাদনাঅতীতে অক্ষম ছিল তারা প্রায়ই সরকারি শিক্ষার জন্য যোগ্য ছিল না। প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য শিক্ষা বার বার চিকিৎসক বা বিশেষ টিউটর দ্বারা অস্বীকৃত হত। এই প্রারম্ভিক চিকিৎসক (ইটারড, সেগোইন, হাউ, গালাদেডের মত মানুষ) আজকে বিশেষ শিক্ষার ভিত্তি স্থাপন করেছে। তারা স্বতন্ত্র এবং কার্যকরী দক্ষতার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করেন। তার প্রাথমিক বছরগুলিতে, বিশেষ শিক্ষা শুধুমাত্র গুরুতর অক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য প্রদান করা হয়েছিল, কিন্তু সম্প্রতি এটি সবার জন্য খোলা হয়েছে।
অন্যান্য শিক্ষা ব্যবস্থা
সম্পাদনাযদিও আজকাল তা "বিকল্প" হিসাবে বিবেচিত, অধিকাংশ বিকল্প শিক্ষা ব্যবস্থা প্রাচীন কাল থেকেই বিদ্যমান ছিল। উনবিংশ শতকের প্রথম দিকে পাবলিক স্কুল ব্যবস্থার ব্যাপকভাবে উন্নত হওয়ার পর, কিছু বাবা-মা নতুন ব্যবস্থা নিয়ে অসন্তুষ্ট হয়। অনুন্নত সীমাবদ্ধতার প্রতিক্রিয়া এবং ঐতিহ্যগত শিক্ষার ব্যর্থতার অংশ হিসেবে বিকল্প শিক্ষাটি উন্নত হয় । বিস্তৃত পরিসরে শিক্ষার প্রসার ঘটেছে বিকল্প বিদ্যালয় সহ , স্ব-শিক্ষণ, গৃহে শিক্ষাদান এবং বিদ্যালয়ের বাহিরে শিক্ষাদান। বিকল্প স্কুলের মধ্যে মন্টেসরি স্কুল, ওয়াল্ডর্ফ স্কুল (বা স্টেনার স্কুল), ফ্রেন্ডস স্কুল, স্যান্ডস স্কুল, সামারলিল স্কুল, ওয়ালডেনের পথ, পিপল গ্রোভ স্কুল, সডবেরি ভ্যালি স্কুল, কৃষ্ণমূর্তি স্কুল এবং ওপেন ক্লাসরুম স্কুল রয়েছে। চার্টার স্কুল বিকল্প শিক্ষার অন্য একটি উদাহরণ, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সাম্প্রতিক বছরগুলিতে যুক্ত হয়েছে এবং পাবলিক শিক্ষা ব্যবস্থায় তা অধিক গুরুত্ব পেয়েছে।
সময়ের সাথে সাথে, এই পরীক্ষা এবং দৃষ্টান্তের চ্যালেঞ্জ থেকে কিছু ধারণা শিক্ষা ক্ষেত্রে আদর্শ হিসাবে গ্রহণ করা যেতে পারে, ঠিক যেমন উনবিংশ শতকের জার্মানিতে ফ্রেডরিখ ফ্রোবেলের শৈশব শিক্ষার দৃষ্টিভঙ্গি সমসাময়িক কিন্ডারগার্টেন শ্রেণীকক্ষে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে । অন্যান্য প্রভাবশালী লেখক ও চিন্তাবিদরা সুইস মানবতাবাদী জোহান হেনরিচ পেস্টলজ্জীকে অন্তর্ভুক্ত করেছেন; আমেরিকান ট্রানস্যানডেন্টালিস্ট আমোস ব্রোনসন অ্যালকোট, রালফ ওয়াল্ডো এমারসন এবং হেনরি ডেভিড থোরো; প্রগতিশীল শিক্ষা প্রতিষ্ঠাতা, জন ডুয়ি এবং ফ্রান্সিস পার্কার; এবং মারিয়া মন্টেসরি এবং রুডলফ স্টিনারের মত শিক্ষাবিদদের অগ্রদূত, এবং সম্প্রতি জন কেলডওয়েল হোল্ট, পল গুডম্যান, ফ্রেডেরিক মেয়ার, জর্জ ডেনিসন এবং ইভান ইলিচ।
আদিবাসী
সম্পাদনাআদিবাসী শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে আদিবাসী জ্ঞান, মডেল, পদ্ধতি, আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যবস্থা প্রচলিত আছে । উপনিবেশ উত্তর প্রেক্ষাপটে, উপনিবেশবাদ প্রক্রিয়ায় আদিবাসী শিক্ষা পদ্ধতির বর্ধিত স্বীকৃতি এবং ব্যবহারের মাধ্যমে আদিবাসী জ্ঞান জ্ঞান চর্চা বেড়ে যেতে পারে। অধিকন্তু, এটি আদিবাসী সম্প্রদায়গুলিকে তাদের ভাষা ও সংস্কৃতির পুনর্নির্মাণ এবং পুনর্বিন্যস্ত করতে পারে এবং আদিবাসী ছাত্রদের শিক্ষাগত সাফল্যের উন্নতি সাধন করতে পারে।
অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা
সম্পাদনাইকোনোমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ওইসিডি) সংস্থা দ্বারা নির্ধারিত শিক্ষার তিনটি পদ্ধতির মধ্যে অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা অন্যতম । অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা বিভিন্ন জায়গায় যেমন বাড়িতে, কাজের মধ্যে , এবং দৈনিক ইন্টারঅ্যাকশন যা সমাজের সদস্যদের মধ্যে শেয়ারে মাধ্যমে পরিচালিত হয় । অনেক শিক্ষার্থীর জন্য ভাষা অধিগ্রহণ, সাংস্কৃতিক নিয়ম এবং আচরণকে অন্তর্ভুক্ত করা যায় । অল্পবয়সী ছেলেমেয়েদের জন্য অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা একটি চলমান প্রক্রিয়া যা বিভিন্ন জায়গায় , যেমন স্কুলের সময়ের বাহিরে , কমিউনিটি সেন্টারে এবং মিডিয়া ল্যাবগুলিতে পরিচালিত হয়ে থাকে।
অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা সাধারণত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাহিরে ঘটে থাকে যা নির্দিষ্ট পাঠ্যক্রমের অনুসরণ করে না । বিশেষ করে বাস্তবের পরিবর্তনের সাথে ব্যবহারিক প্রয়োজনীয়তার উপর ভিত্তি করে এর উৎপত্তি ঘটতে পারে । এটা অপরিহার্যভাবে তথাকথিত শিক্ষা ব্যবস্থাকে অনুসরণ করেনা। শিক্ষণীয়ভাবে সচেতন, নিয়মানুবর্তিতা এবং বিষয় অনুযায়ী, কিন্তু অজ্ঞানভাবে আনুষ্ঠানিক, holistically সমস্যা সম্পর্কিত, এবং পরিস্থিতি ব্যবস্থাপনা এবং জীবনের জন্য ফিটনেস সম্পর্কিত পরিকল্পনা করা হয় না। এটা মানুষ তার দৈনন্দিন জীবনের সরাসরি অভিজ্ঞতা থেকে অর্জন করে।
উনবিংশ শতকে শৈশবের বিকাশে 'বিনোদন দ্বারা শিক্ষা' ধারণার প্রয়োগ করা হয়েছিল। বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে তরুণ প্রজন্মকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য ধারণাটি আরও বিস্তৃত করা হয়েছিল কিন্তু বেশি জোর দেওয়া হয়েছিল শারীরিক কার্যকলাপের উপর । এল.পি জ্যাকস, জীবনযাত্রার শিক্ষার প্রথম প্রবর্তক, বিনোদন দ্বারা শিক্ষার বর্ণনা দিয়েছেন: "জীবন যাপনের শিল্পে একজন মাস্টার তার কাজের এবং খেলার মধ্যে, তার শ্রম এবং অবসরের মধ্যে , তার মন এবং শরীরের মধ্যে , তার শিক্ষা এবং বিনোদনের মধ্যে কোন পার্থক্য খোঁজেন না । তিনি জানেননা যে তিনি কী কাজ করছেন । এবং অন্য যে কোনও কাজ তিনি করেন বা খেলেন তা ছেড়ে দিয়ে তিনি নিজের শ্রেষ্ঠত্বের দৃষ্টিভঙ্গি অনুধাবন করার জন্য চেষ্টা করেন। নিজের জন্য তিনি সবসময়ই উভয় কাজ করছেন বলে মনে করেন। যা করছেন তা নিজের জন্য ভাল । বিনোদনের মাধ্যমে শিক্ষা একটি সুযোগ যেখানে জীবনের সমস্ত কর্মের মাধ্যমে মানুষ অনেক কিছু শিখতে পারে । চিকিৎসা বিজ্ঞানের ছাত্রদের এনাটমি শিক্ষা দেওয়ার জন্য ওয়েস্টার্ন অন্টারিওর ইউনিভার্সিটি এই ধারণাটি পুনর্বিন্যস্ত করেছে।
স্ব-নির্দেশিত শিক্ষা
সম্পাদনাঅটোডাইডেকটিক্সিজম একটি চিত্তাকর্ষক গ্রহণ প্রক্রিয়া যেখানে "নিজে নিজে শেখা" বা "নিজের দ্বারা" বা স্ব-শিক্ষক হিসাবে ভূমিকা পালন করতে হয় । কিছু অটোডাইডেক্টস( স্ব-শিক্ষায় শিক্ষিত) প্রচুর সময় ব্যয় করে লাইব্রেরী ও শিক্ষাগত ওয়েবসাইটগুলির সম্পদগুলি পর্যালোচনা করার মাধ্যমে । একজন লোক তার জীবনের প্রায় যেকোনো সময় অটোডাইডেক্ট হতে পারে। যদিও কেউ কেউ একটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে এবং একটি প্রচলিত পদ্ধতিতে তারা নিজেদেরকে আনরিলেটেড বিষয় অবহিত করতে পারে । উল্লেখযোগ্য অটোডাইডেক্টসের( স্ব-শিক্ষায় শিক্ষিত) মধ্যে আব্রাহাম লিঙ্কন (ইউএস প্রেসিডেন্ট), শ্রীনিবাস রামানুজন (গণিতবিদ), মাইকেল ফ্যারাডে (রসায়নবিদ ও পদার্থবিজ্ঞানী), চার্লস ডারউইন (প্রফেসর), টমাস আলভা এডিসন (আবিষ্কারক), তাদো আন্ডো (স্থপতি), জর্জ বার্নার্ড শ (নাট্যকার), ফ্রাঙ্ক জাপ্পা (সুরকার, রেকর্ডিং প্রকৌশলী, চলচ্চিত্র পরিচালক) এবং লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি(প্রকৌশলী, গণিতবিদ) অন্যতম ।
উন্মুক্ত শিক্ষা ও ইলেকট্রনিক প্রযুক্তি
সম্পাদনা২০১২ সালে ইলেকট্রনিক শিক্ষাগত প্রযুক্তি (ই-লার্নিং নামেও পরিচিত) এর আধুনিক ব্যবহারটি প্রথাগত শিক্ষার হার থেকে ১৪ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে । ওপেন এডুকেশন ক্রমবর্ধমান শিক্ষা ব্যবস্থা হিসেবে পরিণত হয়েছে । ঐতিহ্যগত শিক্ষা পদ্ধতির তুলনায় তার দক্ষতা এবং ফলাফলই তার মূল কারণ । শিক্ষার খরচ সমগ্র ইতিহাস জুড়ে একটি সমস্যা হিসেবে বিবেচিত হয়েছে, এবং এটি এখন বেশিরভাগ দেশের একটি প্রধান রাজনৈতিক বিষয় । অনলাইন কোর্স প্রায়ই মুখোমুখি ক্লাসের চেয়ে বেশি ব্যয়বহুল হতে পারে। ২০০৯সালে মোট ১৮২ টিরও বেশি কলেজের উপর জরিপ করে দেখা যায় যে প্রায় অর্ধেক সংখ্যক লোকই বলেছে যে অনলাইন ভিত্তিক শিক্ষার খরচ ক্যাম্পাস ভিত্তিক শিক্ষার চেয়ে উচ্চতর ছিল । অনেক বড় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠানগুলি বর্তমানে হার্ভার্ড, এমআইটি এবং বার্কলে যেমন ফ্রি বা প্রায় বিনামূল্যে বিনামূল্যে কোর্স অফার করছে EDX গঠন করার জন্য । উন্মুক্ত শিক্ষা প্রদানের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় হল স্ট্যানফোর্ড, প্রিন্সটন, ডিউক, জনস হপকিন্স, এডিনবার্গ, ইউ. পেন, ইউ.মিশিগান, ইউ ভার্জিনিয়া, ইউ.ওয়াশিংটন, এবং ক্যালটেক । মুদ্রণযন্ত্র প্রকাশ হবার পর থেকে এই ব্যবস্থার মধ্যে শিক্ষা ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় পরিবর্তন হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে । কার্যকারিতার উপর অনুকূল পরিবেশ থাকা সত্ত্বেও অনেক মানুষ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কারণে ঐতিহ্যবাহী ক্যাম্পাসকে শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে নির্বাচন করতে চায়।
উন্মুক্ত শিক্ষার ডিগ্রী প্রদান প্রচলিত মেধা-পদ্ধতির ডিগ্রী প্রদানের মতো সাধারণ নয় এমনকি এটি ক্যাম্পাস ভিত্তিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো ও নয়। যদিও কিছু উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ইতোমধ্যে ইউনাইটেড কিংডমে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মত প্রচলিত ডিগ্রী প্রদান করে আসতেছে। বর্তমানে বেশিরভাগ উন্মুক্ত শিক্ষা উৎসগুলি তাদের নিজস্ব গঠনের সনদপত্র প্রদান করে। উন্মুক্ত শিক্ষার জনপ্রিয়তার কারণে, এই নতুন ধরনের একাডেমিক সার্টিফিকেটগুলি ঐতিহ্যগত ডিগ্রির মতো আরও সম্মান এবং সমান "একাডেমিক মূল্য" অর্জন করছে। অনেক উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের জন্য মান সংবলিত পরীক্ষা এবং ঐতিহ্যগত ডিগ্রী প্রদান করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে।
একটি নতুন সংস্কৃতি শুরু হচ্ছে এমন ব্যক্তিদের জন্য যারা ঐতিহ্যবাহী ক্যাম্পাসে আসক্ত সামাজিক সংযোগগুলি খুঁজছেন। উদাহরণস্বরূপ, শিক্ষার্থীরা অধ্যয়নের জন্য গ্রুপ তৈরি করতে পারে, মিলিত হতে পারবে যেমন তারা UnCollege নাম কলেজ তৈরি করতে পারে।
উন্নয়নের লক্ষ্য
সম্পাদনা১৯০৯ সাল থেকে উন্নয়নশীল বিশ্বের শিশুদের স্কুলে অংশগ্রহণের অনুপাত বৃদ্ধি পেয়েছে । এর আগে, ছেলেদের একটি ছোট্ট অংশ স্কুলে পড়ত। একবিংশ শতকের শুরুতে বিশ্বের অধিকাংশ অঞ্চলে অধিকাংশ শিশু স্কুলে যেতে শুরু করে ।
ইউনিভার্সাল প্রাইমারী এডুকেশন আটটি আন্তর্জাতিক মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল এর মধ্যে একটি, যা পূর্ববর্তী দশকে যে অগ্রগতি হয়েছে, তারপরেও কিছু বাধা এখনও অব্যাহত রয়েছে। সম্ভাব্য দাতাদের কাছ থেকে দাতব্য তহবিল সুরক্ষিত করা একটি স্থায়ী সমস্যা । ওভারসিজ ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউটের গবেষকরা দেখিয়েছেন যে শিক্ষার জন্য তহবিলের প্রধান বাধাগুলির মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সমস্যাযুক্ত দাতাদের অগ্রাধিকার দেয়া, সাহায্য প্রদানের অপরিপক্ষ ব্যবস্থাপনা এবং এই বিষয়ের পক্ষে প্রমাণ সমর্থনের অভাব । এ ছাড়া, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল আফ্রিকার সার্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা অর্জনের জন্য একটি প্রধান বাধা হিসেবে শিক্ষা খাতে দুর্নীতির বিষয়টিকে চিহ্নিত করেছে । উপরন্তু, উন্নয়নশীল বিশ্বের উন্নততর শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রবেশাধিকারের জন্য বিদেশীরা যা আশা করে চাহিদার তা এখনও অপ্রতুল । আদিবাসী সরকার চলমান শিক্ষার জন্য যে খরচ হয় তার দায়ভার নিতে অনিচ্ছুক । কিছু পিতামাতার কাছ থেকে অর্থনৈতিক চাপও রয়েছে, যারা তাদের সন্তানদের শিক্ষার দীর্ঘমেয়াদি উপকারের পরিবর্তে স্বল্প মেয়াদী অর্থ উপার্জন করাকে বেশি অগ্রাধিকার দেয় ।
ইউনেস্কোর ইন্টারন্যাশনাল ইন্সটিটিউট ফর এডুকেশনাল প্ল্যানিং দ্বারা পরিচালিত একটি গবেষণায় ইঙ্গিত দেয় যে, শিক্ষাগত পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনায় শক্তিশালী ক্ষমতা শিক্ষা কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে । স্থায়ী ক্ষমতা বিকাশের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক, সাংগঠনিক ও স্বতন্ত্র পর্যায়ে জটিল হস্তক্ষেপের প্রয়োজন যা কিছু মৌলিক নীতির উপর ভিত্তি করে হতে পারে:
জাতীয় নেতৃত্ব এবং মালিকানা যেকোনো হস্তক্ষেপের টাচস্টোন হওয়া উচিত; কৌশলগুলিকে প্রাসঙ্গিক এবং নির্দিষ্ট করা আবশ্যক; পরিকল্পনাগুলিতে একটি সমন্বিত পদক্ষেপের প্রয়োজন , যদিও পদক্ষেপের মধ্যে বাস্তবায়ন মুখ্য ভূমিকা পালন করতে পারে; অংশীদারদের ক্ষমতা উন্নয়নে একটি দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ করা উচিত, স্বল্প মেয়াদী লক্ষ্য অর্জনের জন্য নয়; বাইরের হস্তক্ষেপের বিভিন্ন স্তরে জাতীয় ক্ষমতার প্রভাব মূল্যায়ন শর্তাধীন হওয়া উচিত; শিক্ষার্থীদের নির্দিষ্ট শতাংশ শিক্ষার সংস্কারের জন্য সরানো উচিত (সাধারণত দশম শ্রেণির তা পরে স্কুলগুলিতে অনুশীলন করা হয়) ।
আন্তর্জাতিকীকরণ
সম্পাদনাপ্রায় সব দেশে এখন সার্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা রয়েছে।
সমতা-পদ্ধতিতে বা এমনকি ধারণাগুলি-যেগুলি আন্তর্জাতিকভাবে আন্তর্জাতিক স্কুলগুলিতে আন্তর্জাতিক ছাত্র বিনিময় বৃদ্ধি করেছে । ইউরোপীয় সক্রেটিস-ইরাসমাস প্রোগ্রাম ইউরোপীয় বিশ্ববিদ্যালয় জুড়ে বিনিময় সহজতর করে তুলেছে । সোরোস ফাউন্ডেশন কেন্দ্রীয় এশিয়া ও পূর্ব ইউরোপের শিক্ষার্থীদের জন্য অনেক সুযোগ সুবিধা প্রদান করে । International Baccalaureate প্রোগ্রামের মতো প্রোগ্রামগুলি শিক্ষার আন্তর্জাতিকীকরণে ব্যাপক অবদান রেখেছে । আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়গুলির নেতৃত্বে পরিচালিত The global campus online, প্রকৃত ক্লাস চলাকালে ক্লাস সামগ্রী এবং রেকর্ডকৃত বক্তৃতার ফাইলগুলিতে বিনামূল্যে প্রবেশের অনুমতি দেয় ।
উন্নয়নশীল দেশে শিক্ষা ও প্রযুক্তি
সম্পাদনাদরিদ্র এলাকায় এবং উন্নয়নশীল দেশের বাসিন্দাদের জন্য শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রবেশাধিকার উন্নত করার ক্ষেত্রে প্রযুক্তি ক্রমবর্ধমান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসতেছে । One Laptop per Child এর মতো দাতব্য প্রতিষ্ঠানগুলি অবকাঠামো প্রদানের জন্য নিবেদিত যার মাধ্যমে সুবিধা-বঞ্চিত ছেলেমেয়েরা শিক্ষাগত সামগ্রীগুলি সহজেই হাতের কাছে পেতে পারে ।
OLPC ফাউন্ডেশন MIT Media Lab এর একটি গ্রুপ যা বেশ কয়েকটি বড় কর্পোরেশনের দ্বারা সমর্থিত যাদের একটি উল্লেখযোগ্য লক্ষ্য হলো $১০০ ডলারের ল্যাপটপ শিক্ষা সফটওয়্যার জন্য প্রদান করা । ২০০৪ সালে ল্যাপটপগুলি সব জায়গায় পাওয়া যেত । তারা দানের দামের উপর ভিত্তি করে বিক্রি হয় ।
আফ্রিকাতে, দ্য নিউ পার্টনারশিপ ফর আফ্রিকার ডেভেলপমেন্ট (এনইপিএডি) "ই-স্কুল প্রোগ্রাম" চালু করেছে ১০ বছরের মধ্যে ৬০০০০০ প্রাথমিক ও উচ্চ বিদ্যালয়কে কম্পিউটার সরঞ্জাম, শেখার সামগ্রী এবং ইন্টারনেট এক্সেস সহ আনুষঙ্গিক সুযোগ সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে । এনবিইউইউ ডটকম নামে একটি আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা প্রকল্প যা সাবেক আমেরিকান প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের সহায়তায় শুরু হয়েছিল , এটি মূলত সামাজিক উন্নয়ন বিষয়ক কাজে যারা জড়িত তাদের ইন্টারনেট ব্যবহার করার সহযোগিতা প্রদানের লক্ষ্যে কাজ করে ।
ভারত প্রযুক্তিগুলিকে বিকশিত করতেছে যা সরাসরি স্থল-ভিত্তিক টেলিফোন এবং ইন্টারনেট অবকাঠামোর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে শিক্ষামূলক বিষয়গুলো প্রচার করবে । ২০০৪ সালে ভারতীয় স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশন এডুসেট নামে একটি সাবস্ক্রিপশন উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করে, যা শিক্ষাগত উপকরণগুলি অনেক কম খরচে শিক্ষার্থীদের মধ্যে পৌঁছাতে পারবে।ফলে শিক্ষিতের হার বৃদ্ধি পাবে।
শিক্ষাগত তত্ত্ব
সম্পাদনাশিক্ষাগত মনোবিজ্ঞান হচ্ছে কীভাবে মানুষ কীভাবে শিক্ষাগত পদ্ধতিগুলো, শিক্ষামূলক হস্তক্ষেপের কার্যকারিতা, শিক্ষার মনোবিজ্ঞান এবং স্কুলগুলি সামাজিক মনোবিজ্ঞান হিসাবে কীভাবে সংগঠিত হয় তা শিখে । যদিও "শিক্ষাগত মনোবিজ্ঞান" এবং "স্কুল মনোবিজ্ঞান" শব্দগুলি প্রায়ই স্বতঃস্ফূর্তভাবে ব্যবহার করা হয়, তবে গবেষকরা এবং থিয়োরিস্টরা শিক্ষামূলক মনোবৈজ্ঞানিক হিসাবে চিহ্নিত হতে পারে, যদিও স্কুল বা স্কুল-সম্পর্কিত সেটিংসের অনুশীলনকারীদের স্কুল মনোবৈজ্ঞানিক হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। শিক্ষাগত মনোবিজ্ঞান সাধারণ জনসংখ্যার মধ্যে শিক্ষাগত অর্জনের প্রক্রিয়ায় এবং উপ-জনসংখ্যার যেমন প্রতিভাধর শিশুদের এবং নির্দিষ্ট অক্ষমতার সাথে যারা সম্পর্কিত তাদেরকে নির্দেশ করে । শিক্ষাগত মনোবিজ্ঞান অন্যান্য শাখায় সঙ্গে তার কেমন সম্পর্ক তার মাধ্যমে বোঝা যাবে । এটা মূলত মনোবিজ্ঞান দ্বারা জানানো হয়, এটি এমন একটি সম্পর্ক বহন করে যা চিকিৎসা বিজ্ঞান এবং জীববিদ্যা মধ্যে যে সম্পর্ক তার অনুরূপ । শিক্ষাগত মনোবিজ্ঞান একটি বিস্তৃত বিশেষত্বকে বুঝায় যা শিক্ষামূলক নকশা, শিক্ষাগত প্রযুক্তি, পাঠ্যক্রম উন্নয়ন, সাংগঠনিক শিক্ষা, বিশেষ শিক্ষা এবং শ্রেণীকক্ষ ব্যবস্থাপনা সহ শিক্ষাগত গবেষণার মাধ্যমে প্রতিফলিত হয় । শিক্ষাগত মনোবিজ্ঞান cognitive science এবং learning sciences থেকে উদ্ভূত । বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে, শিক্ষাগত মনোবিজ্ঞান বিভাগগুলি সাধারণত শিক্ষার অনুষদগুলির মধ্যেই থাকে, যা সম্ভবত প্রচলিত মনোবিজ্ঞান এর প্রতিনিধিত্ব মূলক যে লেকনেছ আছে তা অনুসন্ধান করে উদাহরণস্বরূপ পরিচিতিমূলক মনোবিজ্ঞান সংক্রান্ত পাঠ্যপুস্তক (লুকা, ব্লেজ, এবং রালে, ২০০৬) এর কথা উল্লেখ করা যায় ।
মন, মস্তিষ্ক এবং শিক্ষা
সম্পাদনাশিক্ষাগত স্নায়ুবিজ্ঞান একটি উদ্ভূত বৈজ্ঞানিক ক্ষেত্র যা জৈবিক প্রক্রিয়া ও শিক্ষার মধ্যে মিথস্ক্রিয়া খোঁজার জন্য জ্ঞানীয় স্নায়ুবিজ্ঞান, বিকাশমূলক জ্ঞানীয় স্নায়ুবিজ্ঞান, শিক্ষাগত মনোবিজ্ঞান, শিক্ষাগত প্রযুক্তি, শিক্ষা তত্ত্ব এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোকে একত্রিত করে । শিক্ষাগত স্নায়ুবিজ্ঞান গবেষকরা স্নায়োবিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পড়াশোনা, সংখ্যাসূচক চেতনা, মনোযোগ এবং ডিসলেকসিয়া, ডিসক্যালকুলিয়া এবং এডিএইচডি সহ তাদের সহকারী সমস্যাগুলি অনুসন্ধান করে যা শিক্ষার সাথে সম্পর্কযুক্ত। সারা বিশ্বে বেশ কয়েকটি একাডেমিক প্রতিষ্ঠান শিক্ষাগত স্নায়ুবিজ্ঞান গবেষণা প্রতিষ্ঠার জন্য অর্থ বিনিয়োগ করতে শুরু করেছে ।
শিক্ষার দর্শন
সম্পাদনাএকটি একাডেমিক ক্ষেত্র হিসাবে, শিক্ষা দর্শন হল "শিক্ষা এবং এর সমস্যাগুলির দার্শনিক অধ্যয়ন । এর কেন্দ্রীয় বিষয় হল শিক্ষা, এবং এর পদ্ধতিগুলো হল দর্শনের বিষয় ।" শিক্ষার দর্শন মূলত শিক্ষার প্রক্রিয়ার দর্শন বা শিক্ষার শৃঙ্খলার দর্শন হতে পারে। শৃঙ্খলা, লক্ষ্য, গঠন, পদ্ধতি বা ফলাফলগুলির সাথে সংশ্লিষ্ট হওয়ার অনুভূতিই হল শিক্ষা দর্শনের আলোচ্য বিষয় । শিক্ষার প্রসার বা শিক্ষিত হওয়া, অথবা শিক্ষার ধারণা, লক্ষ্য ও পদ্ধতির সাথে সংশ্লিষ্টতার পরিপ্রেক্ষিতে এটি মেটাডিসিপ্লিনারি হতে পারে। " যেমন, এটি শিক্ষার ক্ষেত্র এবং শিক্ষাদান পদ্ধতির সাথে জড়িত এমনকি শিক্ষা নীতি এবং পাঠ্যক্রমের পাশাপাশি শেখার প্রক্রিয়া সম্পর্কে প্রশ্ন করার জন্য দর্শনশাস্ত্রের ক্ষেত্র, আধ্যাত্মিকতার ক্ষেত্রসমূহ, প্রবন্ধমালা, এবং দার্শনিক পন্থা (অনুমানমূলক, প্রবিধানিক বা বিশ্লেষণাত্মক) থেকে সাহায্য নিতে পারে । উদাহরণস্বরূপ, এটি কীভাবে শিক্ষা ব্যবস্থা বেড়ে ওঠে তা পর্যালোচনা করতে পারে যা উন্নত ও শিক্ষামূলক প্রথাগুলির মাধ্যমে শিক্ষার মানদণ্ড এবং শিক্ষার বৈধতা, এবং শিক্ষার তত্ত্ব ও অনুশীলনের মধ্যে সম্পর্কের মাধ্যমে প্রকাশিত মূল্যবোধ ও নিয়মসমূহকে অধ্যয়ন করতে সাহায্য করে ।
শিক্ষা অর্থনীতি
সম্পাদনাএটি যুক্তি প্রদান করেছে যে, উচ্চ মাত্রার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য দেশে উচ্চ শিক্ষার হার অপরিহার্য । সমালোচকদের বিশ্লেষণ ও তাত্ত্বিক জ্ঞান পূর্বাভাস দেয় যে, দরিদ্র দেশগুলিকে ধনী দেশগুলির তুলনায় দ্রুততর হওয়া উচিত কারণ তারা অত্যাধুনিক প্রযুক্তিগুলি ইতিমধ্যে ধনী দেশগুলির দ্বারা পরীক্ষিত এবং পরিচালিত হয়েছে তা সহজেই গ্রহণ করতে পারে । যাইহোক, প্রযুক্তি স্থানান্তরের জন্য নতুন মেশিন বা উৎপাদন পদ্ধতি পরিচালনা করতে সক্ষম এমন জ্ঞানী পরিচালকদের এবং ইঞ্জিনিয়ারদের প্রয়োজন হয় যার মাধ্যমে অনুকরণ করার ফাঁকটা বন্ধ করা যাবে । অতএব একটি দেশ শিক্ষক থেকে যা শিখতে পারে একে "human capital" বলে মনে করা হয় । সমষ্টিগত অর্থনৈতিক বৃদ্ধির নির্ধারকদের সাম্প্রতিক গবেষণার মাধ্যমে মৌলিক অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলির গুরুত্ব এবং জ্ঞানীয়(cognitive) দক্ষতার ভূমিকার উপর জোর দেয়া হয়েছে ।
ব্যক্তিগত স্তরে, একটি বড় সাহিত্য আছে যা জ্যাকব মিন্সারের কাজের সাথে সম্পর্কিত যা শিক্ষার এবং অন্যান্য মানব মূলধনের সাথে কীভাবে আয়ের সম্পর্ক আছে তা পর্যালোচনা করে । এই কাজটির মাধ্যমে বেশ কয়েকটি গবেষণা অনুপ্রাণিত হয়েছে, কিন্তু বিতর্কিতও বটে । প্রধান বিতর্কগুলি হচ্ছে কীভাবে শিক্ষার প্রভাব ব্যাখ্যা করতে হয় । কিছু শিক্ষার্থী আছে যারা উচ্চ বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন হয়ে থাকে কিন্তু আর্থিক সমস্যার কারণে তাদের পূর্ণ একাডেমিক সম্ভাবনা অর্জন করতে পারে না।
অর্থনীতিবিদ শ্যামুয়েল বোলস এবং হরবার্ট গিন্টস ১৯৭৬ সালে যুক্তি দেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণের সাম্যবাদী লক্ষ্য এবং পুঁজিবাদী উৎপাদন অব্যাহত মুনাফা দ্বারা প্রভাবিত বৈষম্যগুলির মধ্যে একটি মৌলিক দ্বন্দ্ব অব্যাহত আছে ।
প্রতিযোগিতা
সম্পাদনাশিক্ষা ব্যবস্থায় প্রতিযোগিতা প্রধান উপাদান হিসেবে কাজ করে। বৈশ্বিক কিংবা জাতীয় শিক্ষা পদ্ধতিতে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে নিজেকে তুলে ধরতে প্রতিযোগিতামূলক মনোভাবের সৃষ্টি করা হয়। এক্ষেত্রে বৃত্তি প্রদান অন্যতম মানদণ্ডস্বরূপ। ইংল্যান্ড এবং সিঙ্গাপুরের ন্যায় উন্নত দেশগুলোয় বিশেষ শিক্ষা ব্যবস্থায় বিশেষ ছাত্রদেরকে নির্বাচিত করে শিক্ষা ব্যয় থেকে অব্যহতি দেয়া হয়। শিক্ষাক্রমিক ফলাফলে ছাত্রদের মাঝে প্রতিযোগিতার মনোভাব সৃষ্টি করে সেরা ছাত্রকে গ্রেডের মাধ্যমে নির্ধারণ করা হয়।
অনেকক্ষেত্রে কিছুসংখ্যক দেশে অতি উচ্চমাত্রায় চাপ প্রয়োগের ফলে ছাত্রদের মাঝে বুদ্ধি-বৃত্তি চর্চায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। অনেকসময় পরীক্ষায় অকৃতকার্যতার দরুন তা আত্মহত্যার পর্যায়ে এসে পৌঁছে যায়। এক্ষেত্রে জাপানের শিক্ষাপদ্ধতি প্রধান উদাহরণ হিসেবে বিবেচ্য। আলফি কন শিক্ষা ব্যবস্থায় এজাতীয় প্রতিযোগিতার সমালোচনা করেছেন। তার মতে, ‘ছাত্রদের যোগ্যতা নির্ধারণে প্রতিযোগিতা প্রকৃতপক্ষে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে এবং এটি আমাদের সবাইকে পরাজয়ের দিকে নিয়ে যায়’। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ রিচার্ড লেয়ার্ডও প্রতিযোগিতার ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘প্রতিযোগিতার ফলে ছাত্ররা এক ধরনের চাপ উপলদ্ধি করে। তারা মনে করে যে তাদের জীবনের প্রধান উদ্দেশ্যই হচ্ছে অন্যান্যদের তুলনায় সেরা হওয়া। তরুণেরা তাদের প্রাত্যহিক বিদ্যালয় জীবনে কি শিখছে তাই মুখ্য বিষয়। এবং এ ধরনের প্রতিযোগিতা সমাজের জন্য কল্যাণ বয়ে নিয়ে আসে না।[৪]
আরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ educate. Etymonline.com. সংগৃহীত ২০১৭
- ↑ শিক্ষা প্রসঙ্গ: বিবেকানন্দ: উদ্বোধন কার্যালয়,১৪২৩, ISBN 81-8040-123-5 পৃঃ ১
- ↑ বই:পরম পরশ|শিরোনাম:জীবন, মানুষ এবং শিক্ষা|লেখক-তুষারকান্তি ষন্নিগ্রহী|প্রকাশক- শ্রীভূমি পাবলিশিং কোম্পানি, কলকাতা|ISBN 978-93-341-3673-9| বছর- ২০০৯| পৃঃ ১১,১২
- ↑ Group dedicated to happiness launched in UK, BBC video, April 12, 2011
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনা- কার্লিতে Education (ইংরেজি)
- Educational Resources from UCB Libraries GovPubs
- UNESCO Institute for Statistics: International comparable statistics on education systems ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৫ মে ২০০৭ তারিখে
- OECD education statistics
- Planipolis: a portal on education plans and policies
- IIEP Publications on Education Systems