২০২৪-এ বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন

বাংলাদেশে কোটা সংস্কারের দাবিতে সংগঠিত আন্দোলন

২০২৪-এর কোটা সংস্কার আন্দোলন হলো বাংলাদেশে সব ধরনের সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে কোটার ভিত্তিতে নিয়োগের প্রচলিত ব্যবস্থার সংস্কারের দাবিতে সংগঠিত একটি আন্দোলন। ২০২৪ সালের ৫ জুন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ কর্তৃক ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর সরকারি চাকরিতে নারী কোটা ১০ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ এবং জেলা কোটা ১০ শতাংশ বাতিল করে সরকার কর্তৃক জারি করা পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করার পর কোটা পদ্ধতির সংস্কার আন্দোলন ২০২৪ সালে নতুনভাবে আলোচনায় আসে।[১] ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে উক্ত পরিপত্রটি জারি করা হয়েছিল।[২]

২০২৪-এ বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন
বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন-এর অংশ
২০২৪ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলনরত শিক্ষার্থী
তারিখ৫ জুন ২০২৪ (2024-06-05)–চলমান
অবস্থান
কারণআদালত কর্তৃক কোটা পদ্ধতি পুনর্বহাল
লক্ষ্যসমূহবাংলাদেশের সকল সরকারি চাকুরিতে কোটার সংখ্যা কমানো
অবস্থাচলমান
নাগরিক সংঘাতের দলসমূহ
বাংলাদেশের বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী

পটভূমি

২০১৮ সালে কোটা সংস্কারের জন্য চাকরি প্রত্যাশী ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতৃত্বে ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে ধারাবাহিকভাবে বিক্ষোভ এবং মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। লাগাতার আন্দোলনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের ফলে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে ৪৬ বছর ধরে চলা কোটাব্যবস্থা বাতিল ঘোষণা করে সরকার। ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর সরকারি চাকরিতে নারী কোটা ১০ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ এবং জেলা কোটা ১০ শতাংশ বাতিল করে সরকার একটি পরিপত্র জারি করে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জারি করা ওই পরিপত্রে বলা হয়:[৩]

উক্ত পরিপত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০২১ সালে অহিদুল ইসলামসহ সাতজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন।[৪] ২০২৪ সালের ৫ জুন বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই পরিপত্র বাতিল করে রায় দেন। রায় প্রকাশিত হওয়ার পর ঢাকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোটা সংস্কারের দাবিতে একত্রিত হন। প্রথমদিকে আন্দোলন শুরু হওয়ার পর ঈদ ও গ্রীষ্মকালীন ছুটির কারণে আন্দোলন পিছিয়ে দেওয়া হয়। ছুটি শেষে পুনরায় শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন শুরু হলেও ক্রমে এটি ব্যাপক আকার ধারণ করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, ব্র‍্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, ইন্ডিপেন্ডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশসহ অন্যান্য সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও আন্দোলনে যোগ দেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে শিক্ষার্থীরা বাংলা ব্লকেড নামে অবরোধ কর্মসূচি পালন শুরু করেন। আন্দোলন চলাকালীন সময়েই ১০ জুলাই মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করে হাইকোর্টের দেয়া রায়ে আপিল বিভাগ চার সপ্তাহের জন্য স্থিতাবস্থা জারি করে। আদালতের রায়ের প্রতিক্রিয়ায় আন্দোলনের সাথে আদালতের কোনো সম্পর্ক নেই দাবি করে শিক্ষার্থীরা বলেছেন, তারা সরকারের কাছে কোটা সমস্যার চূড়ান্ত সমাধান চাইছেন।[৫]

সংগঠন

বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের ঐক্যবদ্ধ করতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অবদান আছে। পরবর্তীতে তারা একটি সমন্বয় কমিটি, আহবায়ক কমিটি ও কেন্দ্রীয় কমিটি নির্বাচন করে, যাদের নির্দেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সংগঠনের সদস্যরা আরও শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে যোগ দেওয়াতে ক্যাম্পাসগুলোতে বিভিন্নভাবে প্রচারণা চালায়। সংগঠকের এক সমন্বয়ের মতে তাদের সংগঠনে কোন একক উচ্চতম নেতা নেই। আগের কোটা সংস্কার আন্দোলনের কর্মী ও বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের সদস্যগণ সমন্বয়ক কমিটিতে রয়েছে। আন্দোলনের প্রয়োজনে বিতর্ক এড়াতে যেকোন রাজনৈতিক ছাত্র অঙ্গসংগঠনের সদস্যদের এই আন্দোলনে যোগ দেওয়া থেকে বিরত রাখা হয়েছে।[৬]

দাবি

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সংগঠন নিম্নের দাবিগুলো সরকারের কাছে তুলে ধরেছে:[৬]

  • সরকারি চাকরিতে কার্যকর বর্তমান কোটা পদ্ধতি বাতিল
  • অনগ্রসর গোষ্ঠী ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের ন্যায্য হারে কোটা প্রদান করা
  • কোটা সর্বোচ্চ ৫% পর্যায়ে নামিয়ে সংসদে নতুন আইন পাশ করা[৭]

ঘটনাপ্রবাহ

১০ জুলাই

এই দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে জড়ো হয়ে শাহবাগে গিয়ে স্থানটি অবরোধ করে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা শিক্ষার্থীদের সামনে ব্যারিকেড দিয়ে অবস্থান করে। দুপুরে জানা যায় কোটাব্যবস্থা বাতিল করে হাইকোর্টের দেয়া রায়ে চার সপ্তাহ স্থিতাবস্থা দেওয়া হয়েছে। প্রধান বিচারপতি শিক্ষার্থীদের ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করেন। ঢাকার বিভিন্ন স্থানে অবরোধের কারণে ঢাকার পরিবহন ব্যবস্থা স্থিমিত হয়ে আসে। দূরপাল্লার বাসগুলো আন্দোলনের কারণে বন্ধ হয়ে যায়।[৮]

১১ জুলাই

বিকেল ৩টা থেকে শাহবাগ অবরোধের কথা থাকলেও বৃষ্টির ফলে শিক্ষার্থীরা শাহবাগে যাওয়ার পথে পুলিশের বাধাকে অতিক্রম করে ৪:৩০ টায় শুরু করে। ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা পুলিশি বাধার ফলে পিছিয়ে যায় এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে শাহবাগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যোগ দেয়। শাহবাগ ছাড়া ঢাকার অন্যান্য স্থানগুলো আন্দোলনের প্রভাবমুক্ত ছিল। রাত ৯টায় শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শেষ করে তাদের উপর পুলিশি হামলার প্রতিবাদে ১২ জুলাইয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের ঘোষণা দেয়।[৯]

এ দিন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপর পুলিশ হামলা করে।[১০]

১২ জুলাই

এই দিন বিকেল ৫টায় শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের সতর্কবাণী উপেক্ষা করে শাহবাগে জড়ো হয়ে অবরোধ করে।[১১]

এই দিনে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করতে থাকলে ছাত্রলীগের একদল কর্মী আক্রমণ করে বসে। এ সময় সে অবস্থায় ভিডিও করায় কলেজের এক শিক্ষার্থীকে তুলে হলে নিয়ে বেধড়ক মারধর করে ছাত্রলীগের কর্মীরা।[১২]

১৩ জুলাই

রাজশাহীতে রেলপথ অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করে।[১৩] ঢাকায় ঢাবির শিক্ষার্থীরা সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলন করেন, তারা অভিযোগ করেন ‘মামলা দিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে বাধার চেষ্টা করা হচ্ছে’।[১৪]

বগুড়া শহরের পৌর এডওয়ার্ড পার্কের শহীদ টিটু মিলনায়তনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেন:[১৫]

১৪ জুলাই

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ঢাকায় গণপদযাত্রা করে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করে।[১৬]

কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া বক্তব্যের প্রতিবাদে মধ্যরাতে শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস এলাকায় বিক্ষোভ করে। রোকেয়া হলের ছাত্রীরাও তালা ভেঙে বেরিয়ে আসেন।[১৭] সরকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ৪–জি নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দিতে অপারেটরদের নির্দেশনা দেয়।[১৮] চট্টগ্রামে রাত সাড়ে ১১টার দিকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনকারীদের উপড় হামলা চালায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।[১৯][২০]

১৫ জুলাই

কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হল, সূর্যসেন হল ও ক্যাম্পাসের বেশ কয়েকটি জায়গায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। এতে বেশ কয়েকজন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী আহত হয়। তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।[২১]

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে হামলা করে ছাত্রলীগ। এতে শতাধিক ছাত্রের আহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। আন্দোলনকারীদের মতে এই সংখ্যা দুইশ' এর বেশি।[২২] ১৫ জুলাই বিকেলে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির কারণে ক্যাম্পাসে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ে, এতে বেশ কয়েকজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে আহত অবস্থায় মেডিকেলের দিকে নিয়ে যেতে দেখা যায়। এ সময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হাতে রড, লাঠি, হকি স্টিকসহ বিভিন্ন অস্ত্র দেখা যায়। হেলমেট পরিহিত একদল তরুণকেও আক্রমণাত্মক ভূমিকায় দেখা যায়। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অনেকে এসময় আশপাশের ভবনে আশ্রয় নেন।[২২]

বিকাল ৩টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। বিকাল আড়াইটার দিকে আন্দোলনকারীদের মিছিলকে কেন্দ্র করে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার সূত্রপাত হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুর ৩টার দিকে বিজয় একাত্তর হলের সামনে মাইকিং করতে শুরুর করলে হল শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদের ধাওয়া দেন। এরপর কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরাও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের পাল্টা ধাওয়া দেন। অপরদিকে সূর্যসেন হলের আশপাশেও হামলা থেকে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।[২১] বিকেল সাড়ে পাঁচটার পরও শহীদুল্লাহ হলের সামনে থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনের এলাকায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া চলে।[২২] আন্দোলনকারীরা সরে যাওয়ার পর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের রড ও লাঠি নিয়ে মিছিল করতে দেখা যায়।[২২]

এর আগে, দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করে। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া বক্তব্য অপমানজনক। এই বক্তব্য আন্দোলনরত সাধারণ শিক্ষার্থীদের ক্ষুব্ধ করেছে। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, “গত রাতে বিক্ষোভ করে আমরা সোমবার ১২টার প্রধানমন্ত্রীকে তার বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছিলাম। প্রত্যাহার না হওয়ায় আমরা রাস্তায় নেমেছি”। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, কোটা সংস্কারে সরকারকে দেয়া দাবি না মানা পর্যন্ত তাদের এই আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় দুপুর ১২টা থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে শিক্ষার্থীরা রাজু ভাস্কর্যের সামনে জড়ো হতে থাকে। এই আন্দোলনকে ঘিরে শাহবাগসহ আশপাশের রাস্তায় জলকামানসহ বিপুলসংখ্যক পুলিশ অবস্থান নেয়।[২২]

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা, মারধর ও সংঘর্ষের ঘটনায় আহত অন্তত ৯১ জন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। আহত শিক্ষার্থীদের যাঁরা ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে গেছেন, তাঁদের সেখান থেকে ধাওয়া দিয়ে বের করে দেন ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা। এরপর ঢাকা মেডিকেলের সামনের সড়কে ছাত্রলীগ নেতা–কর্মীদের সঙ্গে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে।[২৩] সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে লাঠিসোঁটা নিয়ে ২০-২৫ জন ছাত্রলীগ নেতা-কর্মী হাসপাতালের ইমার্জেন্সিতে ঢুকে পড়ে। এ সময় চিকিৎসাধীন আহতদের সঙ্গে থাকা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে ছাত্রলীগ।[২৪]

১৬ জুলাই

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা ছাত্রলীগের হামলার ভয়ে উপাচার্যের বাসভবনের ভেতরে আশ্রয় নেন। রাত সোয়া ২টার দিকে ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা সেখানে ঢুকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মারধর করে।[২৫]

বিতর্ক

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ১৪ জুলাই ২০২৪ তারিখে ১১:৩০ রাতে 'চেয়েছিলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার' স্লোগান ব্যবহার করছে

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৪ জুলাই ২০২৪ তারিখে কোটা নিয়ে গণভবনে বলেন:[২৬]

প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া হিসেবে, শিক্ষার্থীরা ব্যাঙ্গ করে "তুমি কে? আমি কে? রাজাকার, রাজাকার; কে বলেছে? কে বলেছে? সরকার, সরকার" এবং "চাইতে গেলাম অধিকার; হয়ে গেলাম রাজাকার" স্লোগান ব্যবহার করা শুরু করে।[২৭] আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া বক্তব্য অপমানজনক। এই বক্তব্য আন্দোলনরত সাধারণ শিক্ষার্থীদের ক্ষুব্ধ করেছে। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, “গত রাতে বিক্ষোভ করে আমরা সোমবার ১২টার প্রধানমন্ত্রীকে তার বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছিলাম। প্রত্যাহার না হওয়ায় আমরা রাস্তায় নেমেছি”। পূর্ব ঘোষণা অনুয়ায়ী ১৫ জুলাই দুপুর ১২টা থেকে ঢাবির বিভিন্ন হলের শিক্ষার্থীরা রাজু ভাস্কর্য এলাকায় জড়ো হতে থাকেন। এ সময় আন্দোলনকারীরা বিভিন্ন স্লোগান দেন। রাজু ভাস্কর্যের সামনে এদিন শিক্ষার্থীরা ‘চেয়েছিলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার’সহ নানা ধরনের স্লোগান দিতে থাকে। আন্দোলনে অংশ নেয়া এক শিক্ষার্থী বলেন, প্রধানমন্ত্রী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মনে আঘাত দিয়েছেন। মুক্তিযোদ্ধাদের বাইরে সবাইকে রাজাকার বলেছেন। আমরা তার বক্তব্য প্রত্যাহার ও যৌক্তিকভাবে কোটা সংস্কারের দাবি জানাই।

বাংলাদেশ ছাত্রলীগ হুমকি দিয়েছিল যে, কোনো বিক্ষোভকারী এই স্লোগান ব্যবহার করলে তাকে মুক্তিযুদ্ধের বিপরীত শক্তি পাকিস্তানে পাঠানো হবে। সংগঠনটি বলে যে বিক্ষোভকারীরা স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং স্বাধীনতা সংগ্রামীদের চেতনাকে আঘাত করেছে এবং ১৫ জুলাইয়ের পরে যাতে তাদের দেখা না যায়। এই স্লোগানগুলোর ব্যবহার বন্ধ না হলে তারা বিক্ষোভ করার ঘোষণা দেয়। ১৫ জুলাই ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন আন্দোলনকারীদের ‘তাদের শেষ দেখিয়ে ছাড়ব’ বলে হুংকার দেন।[২৮] বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশ্যে সমাজকল্যাণ মন্ত্রী দীপু মনি বলেন:[২৯]

এই ঘটনাগুলোর কারণে প্রধানমন্ত্রী বিক্ষোভকারীদের শিক্ষা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এবং তাদের আচরণকে "অত্যন্ত দুঃখজনক" বলে অভিহিত করেন।[৩০]

চিত্রশালা

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. "মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের পরিপত্র অবৈধ: হাই কোর্টের রায়"বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। সংগ্রহের তারিখ ১১ জুলাই ২০২৪ 
  2. "২০১৮ সালের পরিপত্র অবৈধ : সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল"বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা। সংগ্রহের তারিখ ১১ জুলাই ২০২৪ 
  3. "সরকারি দপ্তর, স্বায়ত্তশাসিত/আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন কর্পোরেশনের চাকুরিতে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকারের বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি সংশোধন" (পিডিএফ)। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ সরকার। সংগ্রহের তারিখ ১৫ জুলাই ২০২৪ 
  4. "মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের পরিপত্র অবৈধ: হাই কোর্টের রায়"বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। সংগ্রহের তারিখ ১৫ জুলাই ২০২৪ 
  5. "কোটা আন্দোলন: মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল করে হাইকোর্টের রায়ে স্থিতাবস্থা আপিল বিভাগের"বিবিসি বাংলা। ২০২৪-০৭-১০। সংগ্রহের তারিখ ১১ জুলাই ২০২৪ 
  6. আজাদ, আবুল কালাম (১২ জুলাই ২০২৪)। "কোটা বিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছে কারা?"বিবিসি বাংলা 
  7. "সরকারি সব চাকরির কোটা সংস্কারের নতুন দাবি, আজ আবারও বাংলা ব্লকেড"প্রথম আলো। ১১ জুলাই ২০২৪। 
  8. "কোটা সংস্কার আন্দোলনে সারাদিন যা হয়েছে"বিবিসি বাংলা। ১০ জুলাই ২০২৪। 
  9. "সংসদে আইন পাস না করা পর্যন্ত আন্দোলন, কাল বিক্ষোভ"প্রথম আলো। ১১ জুলাই ২০২৪। 
  10. "কুমিল্লায় কোটা আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশের হামলা, দুই সাংবাদিক আহত"বাংলা ট্রিবিউন। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৭-১২ 
  11. "কোটা সংস্কার আন্দোলন: শাহবাগ মোড় অবরোধ করেছে শিক্ষার্থীরা"ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভি। ১২ জুলাই ২০২৪। 
  12. "কোটা আন্দোলনের ভিডিও করায় শিক্ষার্থীকে তুলে নিয়ে বেধড়ক পিটুনি"banglanews24.com। ২০২৪-০৭-১২। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৭-১৪ 
  13. ডেস্ক, ভিডিও (১৩ জুলাই ২০২৪)। "ছুটির দিনেও রেলপথ অবরোধ করে রাজশাহীতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ"প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ১৪ জুলাই ২০২৪ 
  14. ডেস্ক, ভিডিও (১৩ জুলাই ২০২৪)। "'মামলা দিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে বাধার চেষ্টা করা হচ্ছে'"প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ১৪ জুলাই ২০২৪ 
  15. "কোটা সমাধান আদালতেই হতে হবে : পররাষ্ট্রমন্ত্রী"প্রথম আলো। ১৩ জুলাই ২০২৪। সংগ্রহের তারিখ ১৪ জুলাই ২০২৪ 
  16. "রাষ্ট্রপতিকে দেওয়া স্মারকলিপিতে যা বলেছেন আন্দোলনকারীরা"প্রথম আলো। ১৪ জুলাই ২০২৪। সংগ্রহের তারিখ ১৪ জুলাই ২০২৪ 
  17. "রোকেয়া হলের তালা ভেঙে রাজু ভাস্কর্যে ছাত্রীরা"সময় টিভি। সংগ্রহের তারিখ ১৪ জুলাই ২০২৪ 
  18. "ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মোবাইলে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ"প্রথম আলো। ১৫ জুলাই ২০২৪। সংগ্রহের তারিখ ১৪ জুলাই ২০২৪ 
  19. "চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় রাতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের বিক্ষোভে হামলা"প্রথম আলো। ১৫ জুলাই ২০২৪। সংগ্রহের তারিখ ১৪ জুলাই ২০২৪ 
  20. ডিজিটাল ডেস্ক, ইত্তেফাক (২০২৪-০৭-১৫)। "চবিতে-কোটাবিরোধী-আন্দোলনকারীদের-ওপর-ছাত্রলীগের"দৈনিক ইত্তেফাক। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৭-১৫ 
  21. "ঢাবিতে কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া"দৈনিক যুগান্তর। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৭-১৫ 
  22. "ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা আন্দোলকারীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা, শতাধিক আহত"বিবিসি বাংলা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ জুলাই ২০২৪ 
  23. প্রতিবেদক, নিজস্ব। "হামলায় আহত শতাধিক ঢাকা মেডিকেলে"প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ১৫ জুলাই ২০২৪ 
  24. ডিজিটাল ডেস্ক, ইত্তেফাক (২০২৪-০৭-১৫)। "ঢামেকের জরুরি বিভাগে ঢুকে শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা"দৈনিক ইত্তেফাক। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৭-১৫ 
  25. "গভীর রাতে জাহাঙ্গীরনগরে আন্দোলনকারীদের মারধর,পরে ছাত্রলীগকে ধাওয়া"প্রথম আলো। ১৬ জুলাই ২০২৪। সংগ্রহের তারিখ ১৫ জুলাই ২০২৪ 
  26. "মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে এত ক্ষোভ কেন, কোটা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী"আজকের পত্রিকা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ জুলাই ২০২৪ 
  27. "'তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার' স্লোগানে প্রকম্পিত ঢাবি"বাংলা ট্রিবিউন। সংগ্রহের তারিখ ১৫ জুলাই ২০২৪ 
  28. "'তাদের শেষ দেখিয়ে ছাড়ব' ছাত্রলীগ সভাপতির হুঙ্কার"দৈনিক যুগান্তর। সংগ্রহের তারিখ ১৫ জুলাই ২০২৪ 
  29. "'যারা নিজেদের রাজাকার বলে, তাদের পতাকা হাতে মিছিল করার অধিকার নেই'"দৈনিক যুগান্তর। সংগ্রহের তারিখ ১৫ জুলাই ২০২৪ 
  30. "নিজেদের রাজাকার বলতে তাদের লজ্জাও করে না : প্রধানমন্ত্রী"প্রথম আলো। ১৫ জুলাই ২০২৪। সংগ্রহের তারিখ ১৫ জুলাই ২০২৪ 

বহিঃসংযোগ