হাসানউজ্জামান খান

বাঙালি সাংবাদিক

হাসানউজ্জামান খান (৫ সেপ্টেম্বর ১৯২৬ - ১৮ মে ২০১৫) ছিলেন একজন বাংলাদেশি সাংবাদিক। তার ৬০ বছরের দীর্ঘ কর্মজীবনে তিনি দৈনিক আজাদ, স্বাধীনতা, পাকিস্তান অবজারভার, নিউ নেশন, বাংলাদেশ টুডে এবং ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেস পত্রিকায় কাজ করেন। সাংবাদিকতায় অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে ১৯৯৪ সালে একুশে পদকে ভূষিত করে।[১]

হাসানউজ্জামান খান
জন্ম(১৯২৬-০৯-০৫)৫ সেপ্টেম্বর ১৯২৬
মৃত্যু১৮ মে ২০১৫(2015-05-18) (বয়স ৮৮)
ঢাকা, বাংলাদেশ
মৃত্যুর কারণহৃদরোগ
সমাধিশহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থান, মিরপুর, ঢাকা
জাতীয়তাব্রিটিশ ভারতীয়
পাকিস্তানি
বাংলাদেশি
পেশাসাংবাদিকতা
কর্মজীবন১৯৪৫-২০১৫
উল্লেখযোগ্য কর্ম
এগ্রিকালচার ইন বাংলাদেশ
আদি নিবাসমানিকগঞ্জ জেলা
দাম্পত্য সঙ্গীআয়েশা সিদ্দিকা
সন্তান১ কন্যা, ২ পুত্র
আত্মীয়আবদুর রাজ্জাক (মামা)
পুরস্কারএকুশে পদক

প্রারম্ভিক জীবন সম্পাদনা

হাসান ১৯২৬ সালের ৫ সেপ্টেম্বর ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জ উপজেলার কলাতিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক নিবাস মানিকগঞ্জ জেলার মূলজান গ্রামে।[২] হাসানউজ্জামান খান ১৯৪৩ সালে ঠাকুরগাঁও ইংরেজি হাই স্কুল (বর্তমানে ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়) থেকে প্রবেশিকা পাস করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় দেশে দুর্ভিক্ষ দেখা দিলে তিনি চাকরির সন্ধানে কলকাতায় চলে যান এবং সেখানে রেশনিং কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন।[৩]

কর্মজীবন সম্পাদনা

হাসান ১৯৪৫ সালে কলকাতার দৈনিক আজাদে সাংবাদিক হিসেবে যোগদান করেন।[২] সাংবাদিকতার পাশাপাশি তিনি কমিউনিস্ট পার্টির সাথে যুক্ত হয়ে পড়েন। তার কমরেড মোজাফফর আহমদ এবং মণি সিংহদের সাথে সাক্ষাতের সৌভাগ্য মিলে। ১৯৫০ সালে পার্টির গোপন নথি নিয়ে দেশে আসার পথে তিনি পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। ১৯৫০ থেকে ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রাজবন্দী ছিলেন। জেলে তার মুনীর চৌধুরী, সরদার ফজলুল করিম, ব্যারিস্টার আমীর-উল-ইসলাম, সৈয়দ আলী আকসাদের সাক্ষাৎ লাভ করেন এবং তাদের সাথে তার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ১৯৫৫ সালে জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর তার মামা আবদুর রাজ্জাক তাকে তার শান্তিনগরের বাসায় নিয়ে যান।[৩]

হাসান পুনরায় সাংবাদিকতা শুরু করেন। প্রথমে মিল্লাতে যোগদান করেন, পরে একে একে দৈনিক ইত্তেফাক, পাকিস্তান অবজারভার, দৈনিক আজাদ এবং মর্নিং নিউজে কাজ করেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর মর্নিং নিউজ বন্ধ হয়ে গেলে তিনি বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থায় (বাসস) যোগ দেন। ১৯৯০-এর দশকে অবসর গ্রহণের পূর্ব পর্যন্ত তিনি সেখানে নিযুক্ত ছিলেন। ১৯৭৩-৭৪ সালের দিকে সাংবাদিক ফয়েজ আহমেদ তাকে বঙ্গবার্তা পত্রিকায় সাথে যুক্ত করেন। কিন্তু বছর খানেক সেখানে থাকার পর দুজনেই আবার বাসসে যোগ দেন। অবসর গ্রহণের পরেও তিনি ইংরেজি দৈনিক ডেইলি নিউ নেশন এবং বাংলাদেশ টুডেতে কয়েক বছর কাজ করেন এবং পরে বাসসে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ লাভ করেন। দুই বছর সেখানে কাজ করার পর ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেস-এ যোগ দেন এবং মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত এই পত্রিকার সাথে যুক্ত ছিলেন।[৩]

ব্যক্তিগত জীবন সম্পাদনা

হাসান আয়েশা সিদ্দিকার সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।[৩] এই দম্পতির এক কন্যা - মনিদীপা এবং দুই পুত্র।[১] জাতীয় অধ্যাপক জ্ঞানতাপস আবদুর রাজ্জাক তার মামা।[৩]

মৃত্যু সম্পাদনা

খান ২০১৫ সালের ১৮ মে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ঢাকার জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে মৃত্যুবরণ করেন।[১] ১৯ মে যোহরের নামাজের পর জাতীয় প্রেস ক্লাবে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে তাকে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।[২][৪]

প্রকাশিত গ্রন্থ সম্পাদনা

  • এগ্রিকালচার ইন বাংলাদেশ, সম্পাদিত।

সম্মাননা সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Journalist Hasanuzzaman passes away"দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ১৯ মে ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭ 
  2. "প্রবীণ সাংবাদিক হাসানউজ্জামান খান আর নেই"দৈনিক ইত্তেফাক। ১৯ মে ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭ 
  3. সিদ্দিকা, আয়েশা (১৮ মে ২০১৬)। "হাসানকে যেমন দেখেছি"দৈনিক প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭ 
  4. "Hasanuzzaman Khan laid to rest"দ্য বাংলাদেশ অবজার্ভার (ইংরেজি ভাষায়)। ২০ মে ২০১৫। ২৭ এপ্রিল ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭