হানবালী (মাযহাব)

সুন্নি ইসলামের একটি মাযহাব

হানবালী (বানানভেদে হাম্বলি, হাম্বালী, হানবালি) সুন্নী ইসলামের অন্যতম চারটি মাযহাবের (আইনি চিন্তাগোষ্ঠী) মধ্যে একটি। [] এটি ইরাকি ইসলামী আইনবেত্তা পণ্ডিত ইমাম আবু আব্দুল্লাহ আহমাদ বিন মুহাম্মাদ বিন হানবাল আশ-শাইবানির নামে নামকরণ করা হয়েছে, আর এটির প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছেন তাঁর শিষ্যরা। চার মাযহাবের মধ্যে একমাত্র হানবালী মাযহাবকে একই সাথে ফিকহআকীদার মাযহাবরূপে গণ্য করা হয়। হানবালী মাযহাবের আকীদাকে ক্ষেত্রবিশেষে আহলুস সুন্নাহ, হানবালী বা মাযহাবে হানবালী আকীদা বলেও পরিচয় দেওয়া হয়।

মুসলিম বিশ্বের মানচিত্র, যেখানে হানবালী মাযহাবের অনুসারীদের সংখ্যাগরিষ্ঠ উপস্থিতি গাঢ় সবুজ রঙে চিহ্নিত।

সুন্নী ইসলামের চারটি মাযহাবের মধ্যে হানবালী মাযহাবের অনুসারী সংখ্যাই সবচেয়ে কম। [][] হানবালি মাযহাবের অনুসারী প্রধানত সৌদি আরবকাতার-এ পাওয়া যায়; এদুটি দেশে হানবালি ফিকাহ অফিশিয়াল ফিকাহ হিসেবে রয়েছে। [][] আরব আমিরাত-এর চারটি আমিরাত: শারজাহ, উম্ম আল-কুওয়ায়িন, রাস আল-খাইমাহ এবং আজমানে এই ফিকাহের অনুসারীরা সংখ্যাগরিষ্ট। [] এছাড়া মিশর, বাহরাইন, সিরিয়া, ইরাক ও ইয়েমেনেও এ মাযহাবের কিছু অনুসারী রয়েছে। [] অধুনা পশ্চিমা বিশ্ব, কাশ্মির, এমনকি বাংলাদেশেও এ মাযহাবের অনুসারী পাওয়া যায়, যদিও বাংলাদেশে এর সংখ্যা এখনও খুব কম।

স্বকীয় নিয়ম

সম্পাদনা
  • অযু: যে ৭টি বিষয় অযু ভেঙ্গে দেয় তার মধ্যে অন্যতম একটা হলো শারীরিক চাহিদাবশত বিপরীত লিঙ্গের কারও ত্বক স্পর্শ করা [], যেটা অনেকটা মালিকী মাযহাবের সাথে মিলে যায়। অন্যদিকে শাফেঈ মাযহাবে বিপরীত লিঙ্গের কাউকে স্পর্শ করলেই অযু ভেঙ্গে যায়, যেখানে হানাফী মাযহাবে শুধুমাত্র কাউকে স্পর্শ করলে অযু ভাঙ্গে না।
  • রুকু: রুকুতে যাওয়ার আগে এবং রুকু থেকে দাঁড়ানোর সময় হাত তোলা (রাফউল ইয়াদাইন) সুন্নত, যেখানে শাফাঈ মাযহাবের সাথে সাদৃশ্য রয়েছে। এবং রুকু থেকে দাঁড়ানোর পর নামাযরত ব্যক্তি চাইলে আগের মত হাত বাঁধতে পারে। [] যেখানে অন্য মাযহাবে হাত দু পাশে ছেড়ে দাঁড়ানোই নিয়ম।
  • তাশাহুদ: আল্লাহর নাম উচ্চারণের সময় আঙুল উঠাতে ও নামাতে হয়। [১০]
  • তাসমিয়া বা বিসমিল্লাহ বলা: ওযু, গোসল ও তয়াম্মুমে বিসমিল্লাহ বলা এ মাযহাবে ওয়াজিব বলে বিবেচিত। [১১]
  • কোনো ওজর না থাকলে, পুরুষের জন্য জামায়াতে নামায পড়া ওয়াজিব (বাধ্যতামূলক) বলে বিবেচিত।[১২]

প্রসিদ্ধ আলিমগণ

সম্পাদনা

আরও পড়ুন

সম্পাদনা

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. Ramadan, Hisham M. (২০০৬)। Understanding Islamic Law: From Classical to ContemporaryRowman Altamira। পৃষ্ঠা 24–29। আইএসবিএন 978-0-7591-0991-9 
  2. Gregory Mack, Jurisprudence, in Gerhard Böwering et al (2012), The Princeton Encyclopedia of Islamic Political Thought, Princeton University Press, আইএসবিএন ৯৭৮-০-৬৯১-১৩৪৮৪-০, p. 289
  3. "Sunnite"Encyclopædia Britannica। ২০১৪। 
  4. Daryl Champion (2002), The Paradoxical Kingdom: Saudi Arabia and the Momentum of Reform, Columbia University Press, আইএসবিএন ৯৭৮-০-২৩১-১২৮১৪-৮, p. 23 footnote 7
  5. State of Qatar School of Law, Emory University
  6. Barry Rubin (2009), Guide to Islamist Movements, Volume 2, ME Sharpe, আইএসবিএন ৯৭৮-০-৭৬৫৬-১৭৪৭-৭, p. 310
  7. Mohammad Hashim Kamali (2008), Shari'ah Law: An Introduction, আইএসবিএন ৯৭৮-১-৮৫১৬৮-৫৬৫-৩, Chapter 4
  8. মারঈ আল-কারমি, দলিলুত তালিব লি নাইলিল মাতালিব, পৃ. ১৪
  9. মনসুর আল-বাহুতি, দাক্বাইকু উলিউন নুহা লি শারহিল মুনতাহা, পৃ. ১৯৬
  10. মনসুর আল-বাহুতি, দাক্বাইকু উলিউন নুহা লি শারহিল মুনতাহা, পৃ. ২০১
  11. মারঈ আল-কারমি, দলিলুত তালিব লি নাইলিল মাতালিব, পৃ. ১০, ১৭ ও ২০
  12. মারঈ আল-কারমি, দলিলুত তালিব লি নাইলিল মাতালিব, পৃ. ৪৫