হাজারী প্রসাদ দ্বিবেদী

হাজারী প্রসাদ দ্বিবেদী(১৯ আগস্ট  ১৯০৭  – ১৯ মে ১৯৭৯) ছিলেন হিন্দি সাহিত্যের খ্যাতনামা ঔপন্যাসিক, সাহিত্যের ইতিহাসবিদ, প্রাবন্ধিক, সমালোচক এবং পণ্ডিত। তিনি অসংখ্য উপন্যাস, প্রবন্ধ, ভারতের মধ্যযুগীয় ধর্মীয় আন্দোলনে বিশেষকরে কবীর ও নাথ সম্প্রদায়ের ঐতিহাসিক গবেষণাপত্র ও হিন্দি সাহিত্যের ইতিহাসের রূপরেখা রচনা করেছেন।

হাজারী প্রসাদ দ্বিবেদী
জন্ম(১৯০৭-০৮-১৯)১৯ আগস্ট ১৯০৭
বালিয়া, আগ্রা ও অওধের যুক্ত প্রদেশ বৃটিশ ভারত
মৃত্যু১৯ মে ১৯৭৯(১৯৭৯-০৫-১৯)
(বয়স ৭১)
দিল্লি, লেখক
পেশাপণ্ডিত, ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, সমালোচক ও সাহিত্য সমালোচক
জাতীয়তাভারতীয়
উল্লেখযোগ্য রচনাবলিকবীর বাণভট্ট কী আত্মকথা, সাহিত্য কী ভূমিকা, অলোকপর্ব
উল্লেখযোগ্য পুরস্কারপদ্মভূষণ (১৯৫৭)
সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার (১৯৭৩)

হিন্দি ছাড়াও সংস্কৃত বাংলা পাঞ্জাবী গুজরাটি   ভাষার পাশাপাশি পালি, প্রাকৃত এবং অপভ্রংশ সহ বহু ভাষাতেই তার যথেষ্ট জ্ঞান ছিল।

সংস্কৃত, পালি, প্রাকৃত এবং আধুনিক ভারতীয় ভাষার যথেষ্ট দক্ষতায় তিনি অতীত ও বর্তমানের মধ্যে এক সেতুবন্ধনের কাজ সম্পন্ন করেন। সংস্কৃতের ছাত্র হিসাবে তিনি শাস্ত্র বিষয়ে গভীর জ্ঞান অর্জন করে সাহিত্য-শাস্ত্রের নতুন মূল্যায়ন করেন এবং ভারতীয় সাহিত্যের ঐতিহ্যবাহী পাঠের মহান ভাষ্যকার হিসাবে পরিগণিত হন।

তিনি ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দে হিন্দি সাহিত্যে  বিশেষ অবদানের জন্য ভারত সরকারের  পদ্মভূষণ সম্মানে ভূষিত হন,[১] এবং প্রবন্ধ সংকলন গ্রন্থ - অলোকপ্রভা -র জন্য ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার লাভ করেন। [২]

জন্ম ও  শিক্ষা জীবন সম্পাদনা

হাজারী প্রসাদ ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দের ১৯শে আগস্ট  বৃটিশ ভারতের আগ্রা ও অওধের যুক্ত প্রদেশ অধুনা উত্তর প্রদেশের বালিয়া জেলার দুবে-কা-ছাপরা গ্রামে এক অভিজাত জ্যোতিষীর পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন [৩] তার পিতা অনামল দ্বিবেদী ছিলেন সংস্কৃত পণ্ডিত।

প্রাথমিক হতে মাধ্যমিক স্তরের পড়াশোনা তার গ্রামের স্কুলেই। ইন্টারমিডিয়েট পাশের পর জ্যোতিষশাস্ত্রে আচার্য  ও সংস্কৃতে শাস্ত্রী ডিগ্রি লাভ করেন।

কর্মজীবন সম্পাদনা

১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে হাজারী প্রসাদ দ্বিবেদী বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন। তিনি সংস্কৃত ও হিন্দি শেখাতেন এবং গবেষণা ও সৃজনশীল রচনার কাজে নিযুক্ত ছিলেন প্রায় দুই দশক। তিনি 'হিন্দি ভবন' স্থাপনায় সহায়তা করেন এবং বহু বছর এর প্রধান ছিলেন। [৪]

শান্তিনিকেতনে অবস্থানকালে, তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং বাংলা সাহিত্যের অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সান্নিধ্যে আসেন। তিনি বাংলা ভাষায় অভ্যস্ত হন। ফলে  নন্দলাল বসুর নান্দনিক সংবেদনশীলতা, ক্ষিতিমোহন সেনের রচনার অনুসন্ধান এবং গুরুদয়াল মালিকের  স্বল্প হলেও তীক্ষ্ম হাস্যরস সম্পর্কে অবহিত হন। এই প্রভাবগুলি তার পরবর্তী লেখায় স্পষ্ট।

১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে তিনি শান্তি নিকেতন থেকে চলে যান বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের  হিন্দি বিভাগের রিডার হন। এই সময়ে অধ্যাপক  ড. জগন্নাথ প্রসাদ শর্মা  ছিলেন বিভাগীয় প্রধান। অধ্যাপক দ্বিবেদী ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এখানে ছিলেন এবং ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে  ভারত সরকার  দ্বারা গঠিত অফিসিয়াল ল্যাঙ্গুয়েজ কমিশনের সদস্য নিযুক্ত হন।।

১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে তিনি চণ্ডীগড়ের পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক হিসাবে যোগ দিয়ে পরবর্তীকালে বিভাগীয় প্রধান হন এবং অবসর গ্রহণ করেন।

রচনাবলী সম্পাদনা

হাজারী প্রসাদ স্বকীয় রচনাধর্মী জন্য  এবং ভারতীয় সাহিত্যে সৃজনশীল ও সমালোচনামূলক রচনার জন্য অত্যন্ত সুবিদিত ছিলেন।

তিনি সাহিত্যের ইতিহাস ও সমালোচনা সম্বন্ধীয় যে সমস্ত পুস্তক রচনা করেছেন, সেগুলি হল:

  • সাহিত্য কী ভূমিকা
  • হিন্দি সাহিত্য কা আদিকলা

তার উপরিউক্ত এই রচনাদুটি সাহিত্যের ইতিহাসে ও সমালোচনায় নতুন এক দিশা প্রদান করেছে।

তিনি ভারতের মধ্যযুগের ধর্মীয় জীবন সম্পর্কে আলোকপাত করেছেন সেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলি হল -

  • কবীর
  • মধ্যকালীন ধর্ম সাধনা
  • নাথ সম্প্রদায়

মধ্যযুগীয় সন্ত কবীর এর উপর রচনা গ্রন্থটি প্রামাণ্যগ্রন্থ হিসাবে গণ্য হয়। বইটিতে কবীরের চিন্তা-ভাবনা, রচনা ও শিক্ষার উপর তার গবেষণার বিষয় বিশ্লেশিত হয়েছে।

হাজারী প্রসাদ একজন বিশিষ্ট ঔপন্যাসিক ছিলেন। তার উপন্যাসে ঐতিহাসিক বাস্তবতায় চরিত্রসমূহ আবর্তিত হওয়ায় এক ক্লাসিক মাত্রা পেয়েছে। অন্যতম গ্রন্থগুলি হল -

  • বাণভট্ট কী আত্মকথা (১৯৪৬)
  • অনামদাস কা পোথা
  • পুনর্নভা
  • চারু-চন্দ্র-লেখা

শ্রেষ্ঠ প্রাবন্ধিক হিসাবেও তার পরিচিতি ছিল। উল্লেখযোগ্য প্রবন্ধগুলি হল -

  • কল্পলতা (শিরীষ কে ফুল এবং অন্যান্য প্রবন্ধ) 'শিরীষ কে ফুল' প্রবন্ধটি এনসিআরটি'র দ্বাদশ শ্রেণীর হিন্দি ভাষায় পাঠ্য।
  • নখ কিঁয়ু বাড়তে হ্যাঁয় (নখ কেন বাড়ে)
  • অশোক কে ফুল
  • কুতাজ
  • অলোকপর্ব (সংকলন)

তিনি ইংরাজী ও অন্যান্য ভাষা হতে হিন্দিতে অনুবাদও করেছেন। যেমন -

  • প্রবন্ধ-চিন্তামণি (প্রাকৃত হতে)
  • পুরাতন প্রবন্ধ সংগ্রহ
  • বিশ্বপরিচয়
  • লাল কানের
  • মৌথি মর থী হুয়া মারা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Padma Awards" (পিডিএফ)। Ministry of Home Affairs, Government of India। ২০১৫। ১৫ নভেম্বর ২০১৪ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ জুলাই ২০১৫ 
  2. Acharya Hazari Prasad Dwivedi Collection Indira Gandhi National Centre for the Arts (IGNCA) website. A collection of 10,000 volumes of Acharya Hazari Prasad Dwivedi has been donated by his children to IGNCA.
  3. Hazari Prasad Dwivedi
  4. "Hazariprasad Dwivedi (1907-1979)"। Visva Bharati। সংগ্রহের তারিখ ২৩ আগস্ট ২০১৯