হাঁসাড়া কালী কিশোর স্কুল এন্ড কলেজ
হাঁসাড়া কালী কিশোর স্কুল এন্ড কলেজ মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগর উপজেলার অন্যতম প্রাচীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।[১] ১৮৭৯ সালে তৎকালীন জমিদার কালী কিশোর সেন চৌধুরি এলাকার শিক্ষার প্রসারের লক্ষ্যে এই বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন।[১] ১৯১৫ সালে বিদ্যালয়টির মাধ্যমিক শাখা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী স্বীকৃতি লাভ করে, যা প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষাগত মান ও স্থায়িত্বকে নিশ্চিত করে। ২০১৪ সালে বিদ্যালয়টি কলেজে উন্নীত হয় এবং বাংলাদেশ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন লাভ করে, যার ফলে এটি উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাও প্রদান করতে সক্ষম হয়।
Hasara Kali Kishore School and College হাঁসাড়া কালী কিশোর স্কুল এন্ড কলেজ | |
---|---|
ঠিকানা | |
হাঁসাড়া ১৫৫৩ | |
স্থানাঙ্ক | ২৩°৩৫′৩২″ উত্তর ৯০°১৮′৫৭″ পূর্ব / ২৩.৫৯২১৬৮° উত্তর ৯০.৩১৫৮২৮° পূর্ব |
তথ্য | |
অন্য নাম | হাঁসাড়া কালী কিশোর স্কুল এন্ড কলেজ |
প্রাক্তন নাম | হাঁসাড়া কালী কিশোর উচ্চ বিদ্যালয় |
বিদ্যালয়ের ধরন | মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক (এমপিওভুক্ত) |
নীতিবাক্য | হে প্রভু, আমাকে জ্ঞান দাও (O Lord, give me knowledge) |
ধর্মীয় অন্তর্ভুক্তি | ধর্মনিরপেক্ষ |
প্রতিষ্ঠাকাল | ২৬ মে ১৮৭৯ |
প্রতিষ্ঠাতা | কালী কিশোর সেন চৌধুরি |
বিদ্যালয় বোর্ড | মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, ঢাকা |
বিদ্যালয় জেলা | মুন্সিগঞ্জ জেলা |
শিক্ষাবিষয়ক কর্তৃপক্ষ | মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, ঢাকা |
বিদ্যালয় নম্বর | ৩৫৬৫ |
কলেজ কোড | ৩৬০৩ |
ইআইআইএন | ১১১২১৪ |
সভাপতি | মো. আখতার হোসেন |
অধ্যক্ষ | মো. জালাল উদ্দীন |
প্রধান শিক্ষক | মো. আব্দুল বারেক (সহকারী প্রধান শিক্ষক) |
শ্রেণী | ৬-১২ |
লিঙ্গ | বালক ও বালিকা |
বয়সসীমা | ১১-১৮ |
ভর্তি | ২০০০+ |
ভাষা | বাংলা |
সময়সূচির ধরন | প্রভাতী ও দিবা |
আয়তন | ১৪.৬৫ একর |
ক্যাম্পাসের ধরন | গ্রামীণ |
রং | সাদা এবং নীল |
ওয়েবসাইট | প্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইট লিংক |
অবস্থান
সম্পাদনাপ্রতিষ্ঠানটি মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগর উপজেলার ২নং হাঁসাড়া ইউনিয়নের হাঁসাড়া গ্রামের অবস্থিত। ঢাকা শহর থেকে বিদ্যালয়টির দূরত্ব ২০ কিলোমিটার। এটি ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের সংলগ্নেই হাঁসাড়া হাইওয়ে থানা পুলিশ ফাঁড়ির পূর্ব দিকে অবস্থিত।
ইতিহাস
সম্পাদনাঅতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান, বিজ্ঞানাচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ, বিদুষী নারী সরোজিনী নাইডু, কৃতী সাঁতারু ব্রজেন দাস প্রমুখ পৃথিবী বিখ্যাত মনীষীদের স্মৃতিবিজড়িত বিক্রমপুর (বর্তমান নাম: মুন্সিগঞ্জ)।[২] বিক্রমপুর একসময় ছিল শিক্ষা-দীক্ষা, জ্ঞানে- ধনে অনন্য। পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চল থেকে জ্ঞানপিপাসুরা এখানে আসতো জ্ঞান আহরণ করার জন্য। সেই বিক্রমপুরের (মুন্সিগঞ্জ) সবচেয়ে প্রাচীনতম বিদ্যাপীঠের নাম হাঁসাড়া কালী কিশোর উচ্চ বিদ্যালয়, যার বর্তমান নাম 'হাঁসাড়া কালী কিশোর স্কুল এন্ড কলেজ' স্থাপিত হয় ২৬মে, ১৮৭৯ সালে।[২] প্রতিষ্ঠানটি তার সৃষ্টিলগ্ন থেকেই এই অঞ্চলের শিক্ষার আলো বিস্তারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে চলেছে। আর এই সুমহান প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা হলেন কালী কিশোর সেন চৌধুরি শিক্ষার প্রতি তিনি এতটাই অনুরাগী ছিলেন যে, জীবিত অবস্থায়ই তিনি তার সমুদয় সম্পত্তির অর্ধেক স্কুলের নামে উইল করে যান। বাকি অর্ধেক স্ত্রী ও সন্তানদের নামে দিয়ে যান। এ ছাড়াও তিনি অনেক জমি ক্রয় করে প্রতিষ্ঠানের নামে দিয়েছিলেন। এই মহান শিক্ষানুরাগী, দানবীর কালী কিশোর সেনের পিতার নাম পিতাম্বর সেন এবং মাতার নাম শ্রীযুক্তা ঈশ্বরী।
ঢাকা মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে সংলগ্ন হাঁসাড়া নামক স্থানে অত্যন্ত মনোরম পরিবেশে-এর অবস্থান। ঢাকা থেকে দূরত্ব মাত্র ২০ কিলোমিটার। প্রধান সড়ক সংলগ্ন গাছপালায় ঘেরা ঘন-সবুজের মাঝে সুদৃশ্য গেট সবার দৃষ্টি কেড়ে নেয়। প্রতিষ্ঠানের রয়েছে প্রায় ১৪.৬৫ একর সম্পত্তি। আছে ছোটবড় ছয়টি পুকুর, বিশাল খেলার মাঠ।
সূচনালগ্নে বিদ্যালয়টি ছিল দোতলা, আর এতে কক্ষ ছিল ১৫-১৬টি। এর স্থাপত্য শৈলী ছিল খুবই আকর্ষণীয়। তবে ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ায় ঐতিহ্য হিসেবে সংরক্ষণ না করে ১৯৮৭ সালে এটি ভেঙে ৪২ কক্ষবিশিষ্ট তিন তলা ভবন নির্মাণ করা হয়।
এই প্রতিষ্ঠানে বিজ্ঞানাগার, কম্পিউটার ল্যাব, লাইব্রেরি, শিক্ষক বিশ্রামাগার, পরিচালকদের বসার কক্ষ, পৃথক নামাজঘর ইত্যাদি রয়েছে। শিক্ষার পাশাপাশি নিয়মিত খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের মধ্যে যে পারস্পরিক সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক, তা অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাছে একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হতে পারে। প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ অধ্যাপক পুলিন পাল (সাবেক ভিসি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়), স্বনামধন্য রাজনীতিবিদ কফিল উদ্দিন চৌধুরী (সাবেক রাষ্ট্রপতি একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী পিতা), স্বরাজ শান্তিরঞ্জন ঘোষ, প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ সিদ্ধার্থশঙ্কর রায় (পশ্চিমবঙ্গের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী), মো. মোয়াজ্জেম হোসেন (ইঞ্জিনিয়ার) প্রমুখ ছিলেন এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেরই শিক্ষার্থী। ১১ সদস্যবিশিষ্ট পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি হলেন মো. আখতার হোসেন,[৩] যিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির বন ও পরিবেশ বিষয়ক উপকমিটির সহ-সম্পাদক। ঐতিহ্যবাহী এই প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার মানোন্নয়নে তিনি আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। ২০১২ সালে শিক্ষার্থীদের চাপে স্কুলটির শিফটিংয়ের কার্যক্রম শুরু করা হয় এবং ২০১৪ সালে বিদ্যালয়টি উচ্চমাধ্যমিকে উন্নীত হয় ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন লাভ করে। পরবর্তীতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির পূর্বের নাম পরিবর্তন করে 'হাঁসাড়া কালী কিশোর স্কুল এন্ড কলেজ' নামকরণ করা হয়। উপজেলা পর্যায়ে সরকারি পরিসংখ্যান মোতাবেক ২০১০ সালের এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে এ বিদ্যালয়টি শ্রীনগর উপজেলায় প্রথম স্থান অধিকার করেছে। এ ছাড়াও জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষায় ২০১০ সালে ১৩টি বৃত্তি (সাতটি ট্যালেন্টপুলে, ছয়টি সাধারণ গ্রেডে) পেয়ে উপজেলায় তাদের শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রেখেছে। প্রতিষ্ঠানটি সাঁতার প্রতিযোগিতায় উপজেলা, জেলা পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হয়ে জাতীয় পর্যায়ে অংশ নিয়েছে বেশ কয়েকবার। ক্রিকেটেও রয়েছে উল্লেখযোগ্য অর্জন। এ ছাড়াও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সাফল্য উল্লেখ করার মতো।
অবকাঠামো
সম্পাদনাসূচনালগ্নে বিদ্যালয়টি ছিল দোতলা, আর এতে কক্ষ ছিল ১৫-১৬টি। এর স্থাপত্য শৈলী ছিল খুবই আকর্ষণীয়। তবে ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ায় ঐতিহ্য হিসেবে সংরক্ষণ না করে ১৯৮৭ সালে এটি ভেঙে ৪২ কক্ষবিশিষ্ট ইংরেজি অক্ষর (L) আকৃতির তিন তলা ভবন নির্মাণ করা হয়। এই প্রতিষ্ঠানে বিজ্ঞানাগার, কম্পিউটার ল্যাব, লাইব্রেরি, শিক্ষক বিশ্রামাগার, পরিচালকদের বসার কক্ষ, পৃথক নামাজঘর ইত্যাদি রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান সড়ক সংলগ্ন গাছপালায় ঘেরা ঘন-সবুজের মাঝে সুদৃশ্য গেট সবার দৃষ্টি কেড়ে নেয়। প্রতিষ্ঠানের রয়েছে প্রায় ১৪.৬৫ একর সম্পত্তি। আছে ছোটবড় ছয়টি পুকুর, বিশাল খেলার মাঠ।
প্রধান শিক্ষক ও অধ্যক্ষের তালিকা
সম্পাদনাহাঁসাড়া কালী কিশোর স্কুল এন্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক ও অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন মোট ৪৪ জন ব্যক্তি।
শিক্ষা কার্যক্রম
সম্পাদনাহাঁসাড়া কালী কিশোর স্কুল এন্ড কলেজে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি প্রক্রিয়ার সময় এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে মানবিক এবং ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় ছাত্রছাত্রীদের ভর্তি করা হয়। এই কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা (এইচএসসি) কার্যক্রম ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।
শিক্ষা-সহায়ক কার্যক্রম
সম্পাদনা- সাহিত্য-সংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পালন
- শরীরচর্চা শিক্ষা
- লাইব্রেরি অনুশীলন
- বিতর্ক প্রতিযোগিতা
- বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা
- শিক্ষা সফর
- দেয়াল পত্রিকা প্রকাশ
- কলেজ বার্ষিকী প্রকাশ
চিত্রশালা
সম্পাদনা-
প্রধান ভবন (২০০৮)
-
১৮৭৯ সালে নির্মিত পুরাতন ঐতিহ্যবাহী ভবন
-
প্রধান গেইট (২০১৫)
-
প্রধান গেইট ২ (২০১৫)
-
স্কাউটস
-
সচেতনতামূলক র্যালি
-
বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি
-
প্রধান ভবন (২০১৩)
-
দৈনিক সমাবেশ
উল্লেখযোগ্য প্রাক্তন শিক্ষার্থী
সম্পাদনা- কফিল উদ্দিন চৌধুরী (যুক্তফ্রন্টের যুগ্ম-সচিব)[৪][৫]
- প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ অধ্যাপক পুলিন পাল (সাবেক ভিসি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়)
- প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ সিদ্ধার্থশঙ্কর রায় (পশ্চিমবঙ্গের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী)[২]
- পদ্মলোচন ঘোষ (শিশু সাহিত্যিক)[৩]
- স্বরাজ শান্তিরঞ্জন ঘোষ
- মো. মোয়াজ্জেম হোসেন (ইঞ্জিনিয়ার)
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "Hasara Kali Kishore School And College - Sohopathi | সহপাঠী" (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৭-০৭-০৩। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০২-০৪।
- ↑ ক খ "বিক্রমপুর এর ইতিহাস সেরা খ্যাতনামা যত ব্যক্তিবর্গ"। আমার বিক্রমপুর (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৭-০৬।
- ↑ "হাঁসাড়া কালী কিশোর স্কুল এন্ড কলেজের এডহক কমিটির সভাপতি আখতার হোসেন"। Daily Sokaler Somoy (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৭-০৬।
- ↑ "বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব"। archive.ph। ২০২০-০১-২৭। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৭-০৬।
- ↑ "চৌধুরী, কফিলউদ্দীন - বাংলাপিডিয়া"। bn.banglapedia.org। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৭-০৬।