স্বামী গৌতমানন্দ ( জন্ম:-১৯২৯) হলেন রামকৃষ্ণ মঠ এবং রামকৃষ্ণ মিশনের সপ্তদশ অধ্যক্ষ। ২০২৪ খ্রিস্টাব্দের ২৬ মার্চ প্রতিষ্ঠানটির ষোড়শ অধ্যক্ষ স্বামী স্মরণানন্দ মহারাজের মহাপ্রয়াণের পর তিনি তার স্থলাভিষিক্ত হন। [১] ২০২৪ খ্রিস্টাব্দের ২৪ এপ্রিল বেলুড় মঠে মঠের অছি পরিষদ ও মিশন পরিচালন সমিতির সভায় তাকে রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের সপ্তদশ সঙ্ঘ্যাধক্ষ নির্বাচিত করা হয়। [২]

স্বামী গৌতমানন্দ
ব্যক্তিগত তথ্য
জন্ম১৯২৯
ধর্মহিন্দুধর্ম
ক্রমরামকৃষ্ণ মিশন
দর্শনঅদ্বৈত বেদান্ত
ধর্মীয় জীবন
গুরুস্বামী বীরেশ্বরানন্দ
পূর্বসূরীস্বামী স্মরণানন্দ

প্রাথমিক জীবন ও শিক্ষা

সম্পাদনা

স্বামী গৌতমানন্দ ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ ভারতের অধুনা কর্ণাটক রাজ্যের বেঙ্গালুরুতে তামিলনাড়ুর কেথান্ডপট্টি হতে আসা এক ধার্মিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পাঁচ-ছয় বৎসরের বাল্য বয়সে তিনি মাহাত্মা গান্ধীকে দেখেন। তিনি বেঙ্গালুরুর শেষাদ্রীপুরম হাইস্কুলে বিদ্যালয়ের পাঠ এবং গভর্নমেন্ট সেন্ট্রাল কলেজে পড়াশোনা করেন। [৩]

সন্ন্যাস জীবনের সূচনা

সম্পাদনা

১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে যৌবনকালেই গৌতমানন্দ রামকৃষ্ণ মঠের বেঙ্গালুরু শাখার সংস্পর্শে আসেন। তখন থেকেই তার নিয়মিত যোগাযোগের কারণে সেখানকার মঠের স্বামী যতীশ্বরানন্দজির আধ্যাত্মিক নির্দেশনায় ঘনিষ্ঠ হন এবং শেষে ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে তার কাছে মন্ত্রদীক্ষা নেন। পরের বছর, তিনি তাঁর গুরুর পরামর্শে রামকৃষ্ণ মিশনের নয়াদিল্লি শাখায় যোগ দেন। সেই সময় দিল্লি শাখার নেতৃত্বে ছিলেন স্বামী রঙ্গনাথানন্দজী মহারাজ, যিনি পরে রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের ত্রয়োদশ অধ্যক্ষ নির্বাচিত হন। স্বামী রঙ্গনাথানন্দজি এই তরুণ নবজাতককে সন্ন্যাস জীবনের পথে পরিচালিত করেন। ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে তিনি বেলুড় মঠের প্রবেশিকা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে যোগদান করেন। দুই বছরের প্রশিক্ষণ শেষে, তিনি ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দে মঠের অষ্টম অধ্যক্ষ স্বামী বিশুদ্ধানন্দজি মহারাজের কাছ থেকে ব্রহ্মচর্য দীক্ষা এবং নাম ব্রহ্মচারী আত্মচৈতন্য গ্রহণ করেন। এরপর তিনি স্বামী স্বহানন্দজির সঙ্গে দিল্লিতে ফিরে আসেন এবং দুই বৎসর স্বামী স্বহানন্দজিকে সহায়তা করেন। ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দে ব্রহ্মচারী আত্মচৈতন্য দিল্লী থেকে মেঘালয়ের সোহরা (পূর্বে চেরাপুঞ্জি) আশ্রমে যান। সোহরা শাখা সংলগ্ন উপজাতীয় জনগোষ্ঠীর সর্বাত্মক উন্নয়নের প্রভূত কাজ করেন। এরপর আত্মচৈতন্য সন্ন্যাস গ্রহণের জন্য বেলুড় মঠে আসেন। রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের দশম অধ্যক্ষ স্বামী বীরেশ্বরানন্দ মহারাজ তাকে সন্ন্যাস দীক্ষা এবং 'স্বামী গৌতমানন্দ' নাম প্রদান করেন। স্বামী গৌতমানন্দ মহারাজের রামকৃষ্ণ আদেশ বা ভাবধারার অনেক প্রবীণ সন্ন্যাসী মহারাজের সংস্পর্শে আসার সৌভাগ্য হয়েছে। উল্লিখিত গুরু ছাড়াও, তারা হলেন- স্বামী অভয়ানন্দজি (ভারত মহারাজ), স্বামী শঙ্করানন্দ (সপ্তম অধ্যক্ষ), স্বামী মাধবানন্দ (অষ্টম অধ্যক্ষ), স্বামী নির্বানানন্দজি (সুরজি মহারাজ), স্বামী শান্তানন্দ (শ্রী শ্রী মায়ের একজন শিষ্য) প্রমুখেরা। [৩]

সংঘের কাজে

সম্পাদনা

সন্ন্যাস গ্রহণের পর স্বামী গৌতমানন্দ কেদারনাথ, বদ্রীনাথ, অমরনাথ, গঙ্গোত্রী, গোমুখ এবং যমুনোত্রীতে তীর্থ ভ্রমণের পর পুনরায় সোহরায় ফিরে আসেন এবং সব মিলিয়ে তিনি চার বৎসর সোহরা'তে ছিলেন। ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দে তাকে মুম্বই শাখায় যেতে হয়। সন্ন্যাস জীবনের নতুন অধ্যায় তিনি আট বৎসর দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দের তিনি অরুণাচল প্রদেশের প্রত্যন্ত উপজাতীয় গ্রাম আলো (পূর্বের আলং) মিশনের প্রধান নিযুক্ত হন। সেখানে তিনি দীর্ঘ তের বৎসর উপজাতীয় শিশুদের শিক্ষা দানের মহান দায়িত্ব পালন করেন। সেখানকার স্কুল যেমন ক্রমে প্রাথমিক হতে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে উন্নীত হয়, তেমনই শিক্ষার্থীদের প্রগতিতে ১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দে স্কুলটি শিশু কল্যাণে সেরা কাজের জন্য জাতীয় পুরস্কার' লাভ করে। স্কুলের ফুটবল দল ১৯৮৬ ও ১৯৮৮ খ্রিস্টাব্দে দু'বার সুব্রত মুখার্জি কাপ ফুটবল টুর্নামেন্টে রানার্সআপ হয়। ১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দে স্বল্প সময়ের জন্য তাকে রায়পুর কেন্দ্রের প্রধানের দায়িত্ব নিতে হয়। এখানে অবস্থানকালে ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দে রামকৃষ্ণ মঠের অছি পরিষদের ট্রাস্টি ও রামকৃষ্ণ মিশনের পরিচালন সমিতির সদস্য হন। তিনি পরে অধুনা ছত্তিশগড়ের (পূর্বের মধ্যপ্রদেশের) নারায়ণপুরের দায়িত্ব নিয়ে প্রত্যন্ত এবং উপজাতি-অধ্যুষিত আবুজমার্হ এলাকার জনসাধারণের মধ্যে অত্যন্ত কঠিন পরিস্থিতির মাঝে শিক্ষা প্রসারের কাজ করেছেন।[৪] দু'বছর নারায়ণপুরে সেবামূলক কাজের পর ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর সারদাপীঠ কেন্দ্রের দায়িত্ব নেন। পরবর্তী তিন বৎসরে দক্ষতার সঙ্গে কেন্দ্রের পরিচালনা ছাড়াও, সারদাপীঠের ছত্রছায়ায় বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শুরু করেন। ১৯৯৫ খ্রিস্টাব্দে স্বামী গৌতমানন্দ সমগ্র দক্ষিণ ভারতের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শাখা চেন্নাইয়ের ( যার স্থান বেলুড় মঠের পরেই বলেই গণ্য করা হয়) প্রধান নিযুক্ত হন। এখানে তিন দশকের কার্মকালে তিনি অসামান্য কাজের স্বাক্ষর রেখেছেন। ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে স্বামী বিবেকানন্দের প্রত্যাবর্তনের শতবর্ষে রামেশ্বরম থেকে চেন্নাই পর্যন্ত শোভাযাত্রা, ২০০৩ ও ২০১৩ খ্রিস্টাব্দে যথাক্রমে সারদা মা এবং স্বামী বিবেকানন্দের ১৫০ জন্মবার্ষিকী যথাযথ পালনের সঙ্গে তিনি দেশে বহু ত্রাণ অভিযানে অংশ নিয়েছেন। পুদুচেরি, অন্ধ্রপ্রদেশের কাডাপাতিরুপতি এবং তামিলনাড়ুর চেঙ্গাম, থাঞ্জাভুর, থিরুমকুডাল এবং ভিলুপুরম-এ নতুন শাখার সমর্থন দেন। অছি পরিষদ তাকে ভক্তদের আধ্যাত্মিক দীক্ষা দেওয়ার অনুমোদন দিলে তিনি ২০১২ খ্রিস্টাব্দের আধ্যাত্মিক মন্ত্রণালয় শুরু করেন। ২০১৭ খ্রিস্টাব্দের তিনি সংস্থার একজন সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন।[৩] দক্ষিণ ভারতের ভারতের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের আকর মনে করা হয় তাঁকে। দেশ ও বিদেশে বহু জায়গায় তাঁর বক্তৃতা ভারতের আধ্যাত্মিকতা ও বেদান্ত দর্শন বিষয়ে আগ্রহ সৃষ্টি করেছে। এছাড়াও, তিনি সেন্ট্রাল বোর্ড অফ সেকেন্ডারি এডুকেশন এবং নতুন দিল্লিতে ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর এডুকেশনাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং-এর মতো দুটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রীয় সংস্থায় সাধারণ ও এগজিকিউটিভ সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। [৪]


তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "Ramkrishna Math রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের নতুন অধ্যক্ষ হলেন স্বামী গৌতমানন্দ মহারাজ, শুভেচ্ছা প্রধানমন্ত্রীরও"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৬-২৭  line feed character in |শিরোনাম= at position 16 (সাহায্য)
  2. "সংবাদ চিত্র১ - সপ্তদশ সঙ্ঘ্যাধক্ষ"। ২ মে ২০২৪। পৃষ্ঠা ১৩।  অজানা প্যারামিটার |1= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য); অজানা প্যারামিটার |সংখ্যা= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য); অজানা প্যারামিটার |পত্রিকা= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য)
  3. "The President of Ramakrishna Math and Ramakrishna Mission"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৬-২৭ 
  4. "Swami Gautamananda: কে এই স্বামী গৌতমানন্দ? জেনে নিন তাঁর বিপুল কর্মকাণ্ডের ইতিহাস..."। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৬-২৭