স্বাদু পানি বা সুপেয় পানি বা মিঠা পানি এক ধরনের পানি বা লবণ নেই বা থাকলেও তাতে লবণের পরিমাণ খুবই কম। প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট জলপ্রপাত, হ্রদ, নদী, তুষারপাত, বরফ ইত্যাদি পানিবাহী মাধ্যমগুলো স্বাদু পানির প্রধান উৎসস্থল। মানুষ তৃষ্ণা নিবারণের উদ্দেশ্যে যে পানি পান করে, তা-ই স্বাদু পানি নামে পরিচিত। সাগর, মহাসাগরের পানিতে প্রচুর লবণাক্ততা রয়েছে এবং ঐ পানি পান করার উপযোগী নয়। তবে মানুষ যা পান করে, তার সবগুলো উৎসই স্বাদু পানি হিসেবে স্বীকৃত নয়। কারণ ঐ ধরনের স্বাদু পানি পরিষ্কার ও নিরাপদ নয়; পানিরসাথে ক্ষতিকর ব্যাক্টেরিয়ার ন্যায় অণুজীব লুকায়িত অবস্থায় থাকতে পারে। পানির তেষ্টা মেটালেও তা পরবর্তীতে মারাত্মক রোগের কারণ হতে পারে। মানুষ যে পানি পান করে তা নিরাপদ ও রোগ-জীবাণুমুক্ত এবং তা বোতলজাত হয়ে থাকে। মিষ্ট পানি বলতে স্বাদু পানি কেই বুঝায় যা নোনতা জলের বিপরীতচিত্র।[]

সংজ্ঞার্থ নিরূপণ

সম্পাদনা

যে পানিতে দ্রবীভূত অবস্থায় লবণাক্ততার মাত্রা ৫০০ পিপিএম বা এক মিলিয়নের পাঁচশত ভাগের চেয়ে কম থাকলে তা স্বাদু পানি হিসেবে বিবেচিত হয়।[]

পানিতে দ্রবীভূত অবস্থায় লবণের পরিমাণ
স্বাদু পানি ঈষৎলোনা পানি লবণাক্ত পানি সোডিয়াম লবণ
< ০.০৫% ০.০৫% – ৩% ৩% – ৫% > ৫%

আবার অন্য তথ্য মোতাবেক যদি পানিতে লবণাক্ততার মাত্রা এক মিলিয়নের এক হাজার[] থেকে তিন হাজার ভাগ থাকে তবে তা স্বাদুপানি হিসেবে ধরা হবে।[]

পানি ব্যবস্থাপনা

সম্পাদনা

জীববৈচিত্র্য রক্ষার্থে পৃথিবীর সকল প্রকার প্রাণীর জীবনধারনে পানি অতীব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিছু প্রজাতির পশু-প্রাণী লবণাক্ত পানি পান করে জীবনধারন করলেও উদ্ভিদ জগতসহ অধিকাংশ প্রজাতিই সুপেয় পানির উপর নির্ভরশীল। অধিকাংশ স্তন্যপায়ী প্রাণীই স্বাদু পানি পান করে জীববৈচিত্র্য রক্ষা করে থাকে। ব্যতিক্রম হিসেবে রয়েছে মরুভূমির কিছু ইঁদুরজাতীয় স্তন্যপায়ী প্রাণী, যারা পানি পান না করেও জীবনধারন করতে পারে।

পৃথিবীতে প্রাপ্ত সকল ধরনের পানির মধ্যে লবণাক্ত পানির পরিমাণই সর্বাধিক। মহাসাগর, সাগর এবং ভূ-গর্ভস্থ পানিতে লবণাক্ততার পরিমাণ প্রায় ৯৭ শতাংশ। মাত্র ২.৫% থেকে ২.৭৫% পানি সুপেয় পানির মর্যাদা পেয়েছে। তন্মধ্যে আবার ১.৭৫% থেকে ২% বরফ, তুষার, হিমবাহে বিদ্যমান রয়েছে। ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর এবং মাটিতে ০.৭% থেকে ০.৮% মিষ্ট পানি রয়েছে। এছাড়াও, ০.০১ শতাংশেরও কম হ্রদ, নদী, খাল-বিল, জলাভূমিতে আছে।[][] স্বাদুপানির ৮৭ শতাংশ হ্রদগুলোতেই বিদ্যমান। তন্মধ্যে - ২৯% আফ্রিকার হ্রদ, ২৩% রাশিয়ার বৈকাল হ্রদ এবং ১৪% বিশ্বের অন্যান্য হ্রদে রয়েছে। জলাশয়ের মাঝে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রক্ষার্থে নদ-নদীগুলোয় স্বল্প পরিমাণে সুপেয় পানি রয়েছে। এক্ষেত্রে আমাজন নদী অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। এছাড়াও, বায়ুমণ্ডলে ০.০৪% সুপেয় পানি বাষ্পাকারে ভাসমান অবস্থায় আছে।[] বিশ্বের অধিকাংশ স্বাদু পানিকেই হিমায়িত অবস্থায় বরফপ্রাচীরে আছে। অনেক দেশের এলাকাই সুপেয় পানির অভাবে গুরুতর সমস্যা ভুগছে, পরিবেশের ভারসাম্য নষ্টসহ মরুভূমি হয়ে যাচ্ছে।

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "sweet-water, n.", Oxford English Dictionary, Second edition (Online version November 2010. ed.), 1989, retrieved 16 February 2011[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  2. ""Groundwater Glossary". 2006-03-27. Retrieved 2006-05-14"। ২০০৬-০৪-২৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০৯-০৮ 
  3. ""Freshwater". Glossary of Meteorology. American Meteorological Society. June 2000. Retrieved 2009-11-27"। ২০১১-০৬-০৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০৯-০৮ 
  4. "Fishkeeping glossary. Practical Fishkeeping. Retrieved 2009-11-27"। ২০০৬-০৫-১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০৯-০৮ 
  5. "Where is Earth's water?, United States Geological Survey"। ১৪ ডিসেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ সেপ্টেম্বর ২০১২ 
  6. Physicalgeography.net
  7. Gleick, Peter; et al. (1996). Stephen H. Schneider. ed. Encyclopedia of Climate and Weather. Oxford University Press

আরও দেখুন

সম্পাদনা