স্বাতী সোমনাথ (জন্ম দুসি স্বাতী ) হলেন একজন ভারতীয় কুচিপুড়ি বিশেষজ্ঞ এবং অন্ধ্র প্রদেশ রাজ্যের নৃত্যশিক্ষক। তিনি কামোত্তেজক প্রেমের ওপর লেখা হিন্দু সাহিত্য কাম সূত্রের ওপর ভিত্তি করে একটি নৃত্যনাট্য পরিবেশন করেন, যার মাধ্যমে তিনি স্বীকৃতি লাভ করেন। তিনি ২০০৬ সালে কলা রত্ন পুরস্কার পান। তিনি হায়দ্রাবাদে নৃত্য ভারতী এবং শ্রীকাকুলাম জেলায় সম্প্রদায়ম নৃত্য ও সঙ্গীত কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন।

স্বাতী সোমনাথ
২০২০ সালের অক্টোবরে স্বাতী
জন্ম
দুসি স্বাতী

চক্রধরপুর, বিহার (বর্তমানে ঝাড়খণ্ড), ভারত
শিক্ষা
পেশাকুচিপুড়ি নৃত্যশিল্পী
পরিচিতির কারণকামসূত্রর উপর ভিত্তি করে ব্যালে
পুরস্কারকলা রত্ন

ব্যক্তিগত জীবন সম্পাদনা

বিহারের চক্রধরপুরের (বর্তমানে ঝাড়খণ্ডে ) ভারতীয় রেলওয়ের কর্মচারী সোমনাথ এবং তাঁর স্ত্রী লক্ষ্মীর হিন্দু ব্রাহ্মণ পরিবারে স্বাতীর জন্ম হয়েছিল।[ক][২] তাঁর পরিবারের আদি বাসস্থান শ্রীকাকুলাম জেলার ডুসি আগ্রাহারাম।[২] তাঁর এক ভাই ভারতীয় রেলে কাজ করেন। হায়দ্রাবাদে যাওয়ার আগে তিনি পশ্চিমবঙ্গে বড় হয়েছেন।[৩] তিনি হায়দ্রাবাদের সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি থেকে কুচিপুড়িতে স্নাতকোত্তর এবং ইংরেজি সাহিত্যে দর্শনের স্নাতকোত্তর[৪] করে নিজের শিক্ষা সমাপ্ত করেন।[২] অক্টোবর ২০২০-এর হিসাব অনুযায়ী তিনি ওসমানিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে পিএইচডি করছেন।[৫] তিনি তেলুগু সিনেমার একজন চলচ্চিত্র পরিচালক চেভেল্লা রবি কুমারকে বিয়ে করেছেন।[৩]

কুচিপুড়ি নাচ সম্পাদনা

স্বাতী তাঁর স্কুলের দিনগুলিতে লাম্বাডি নৃত্য পরিবেশন করেছিলেন। তিনি ১১ বছর বয়সে নাচ শেখা শুরু করেন এবং পরে চার বছর ধরে কুচিপুড়ি ও ভরতনাট্যম শেখেন সুমতি কৌশলের (তেলুগু: సుమతీ కౌశల్) কাছ থেকে। মাধ্যমিক স্কুল শেষ করার পর, তিনি ১৯৮০ সালের আগস্ট মাসে রবীন্দ্র ভারতী মঞ্চে আত্মপ্রকাশ করেন।[২][৫] ১৯৮১ সালে বাবার মৃত্যুর পর,[৫] তাঁর পরিবার নিম্ন মধ্যবিত্ত হওয়ার কারণে, সংসার চালানোর জন্য তিনি নিজের নৃত্য পরিবেশনা চালিয়ে যান,[৫] এবং একই সাথে নিজের পরবর্তী শিক্ষা অব্যাহত রাখেন।[২] তিনি বলেছিলেন, এর কিছুদিন পরে, তিনি ১৬ বছর বয়সে তাঁর নিজস্ব ঐকবাদনদল (অর্কেস্ট্রা) তৈরি করেছিলেন এবং একক পরিবেশনা শুরু করেছিলেন। তাঁর বাবার স্মরণে, তিনি নিজের শেষ নাম পরিবর্তন করে রাখেন সোমনাথ।

তাঁর ব্যালে বাৎস্যায়নী কামসূত্র, বাৎস্যায়নের কামোত্তেজক প্রেমের হিন্দু সাহিত্য, কামসূত্রের উপর ভিত্তি করে তৈরি। এটি তাঁকে স্বীকৃতি এনে দিয়েছিল। এটি রসিকদের ( ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের শ্রোতাদের) মধ্যে ভালভাবে সমাদৃত হয়েছিল, কিন্তু মঞ্চে শৃঙ্গার (কামোত্তেজক প্রেম) চিত্রিত করার জন্য রক্ষণশীল নৃত্যশিল্পীদের দ্বারা সমালোচিত হয়েছিল।[২][৬] এর চিত্রনাট্য লিখেছিলেন বিনিম[৭]

তিনি ১৯৯০-এর দশকে হায়দ্রাবাদে নৃত্য ভারতী নামে একটি নৃত্য একাডেমি প্রতিষ্ঠা করেন।[২][৬] ২০১৫ সালে, অন্ধ্র প্রদেশ সরকার, শ্রীকাকুলামের কাছে কাল্লেপল্লী গ্রামে শাস্ত্রীয় সঙ্গীত এবং নৃত্য শেখানোর জন্য একটি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপনে তাঁকে সমর্থন করে ১২–১৬ একর (৪৯,০০০–৬৫,০০০ মি) জমি বরাদ্দ করেছিল।[খ][৯] এক সাক্ষাৎকারে স্বাতী জানিয়েছিলেন, জমিটি হল ১২ একর (৪৯,০০০ মি)।[১০] অন্যদের মধ্যে অন্ধ্রপ্রদেশের প্রজা নাট্যমণ্ডলী সরকারের এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে বলেছিল যে স্বাতী শ্রীকাকুলাম জেলায় বড় হননি এবং জমি বরাদ্দের জন্য বিকল্প স্থানীয় নৃত্যশিল্পীদের বিবেচনা করা উচিত।[১][৮][৯] তিনি শেষ পর্যন্ত তাঁর গুরুকুল একাডেমি, সম্প্রদায়ম নৃত্য ও সঙ্গীত কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন এবং কুচিপুড়ি শেখানোর পাশাপাশি এর পরিচালক হিসেবে কাজ করছেন।[১][১১] তাঁর মতে, একাডেমির নির্মাণ ব্যয় ছিল  ৫ কোটি (US$ ০.৬১ মিলিয়ন)। ২০১৫ সালের ১৫ই আগস্ট তারিখে, ভারতের স্বাধীনতা দিবসে এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছিল। প্রতিষ্ঠানটি তিরুপতির শ্রী ভেঙ্কটেশ্বর ইউনিভার্সিটির সাথে অধিভুক্ত এবং মাধ্যমিক শিক্ষা সমাপ্ত করা শিক্ষার্থীদের সার্টিফিকেট পাঠ্যক্রম করার সুযোগ দেয়।

তিনি ১০০টিরও বেশি ব্যালে পরিবেশন করেছেন, যার কয়েকটির মধ্যে রয়েছে দ্রৌপদীর উপর ভিত্তি করে দ্রৌপদী, কাম সূত্রের উপর ভিত্তি করে কাম টু মোক্ষ, হিন্দুত্ব, সহরনাম গোবিন্দম, রামানুজের জীবনের উপর ভিত্তি করে সৌন্দর্য দর্শন, আদি শঙ্করের জীবনের উপর ভিত্তি করে সর্বজ্ঞান শঙ্কর[২][৬]

ডিডি ইয়াদাগিরির সাথে একটি সাক্ষাৎকারে, তিনি বলেছিলেন যে তিনি ওড়িশি শাস্ত্রীয় নৃত্যও শিখেছেন যদিও তাঁর শিক্ষা মৌলিক বিষয়গুলিতে সীমাবদ্ধ।

অন্যান্য কাজ সম্পাদনা

তিনি নতুন দিল্লির সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ফিল্ম সার্টিফিকেশন এবং সেন্ট্রাল অডিশন বোর্ডের কুচিপুড়ি নৃত্য সদস্য হিসাবে কাজ করেছেন। এছাড়াও, তিনি হায়দ্রাবাদের কলেজ অফ মিউজিক অ্যাণ্ড ডান্সের অধ্যক্ষ হিসেবে কাজ করেন।[৬]

পুরস্কার সম্পাদনা

কুচিপুড়িতে স্বাতীর অবদানের জন্য তাঁকে ২০০৬ সালে যুক্ত অন্ধ্র প্রদেশ সরকার কলা রত্ন পুরস্কারে ভূষিত করেছিল।[১২]

টীকা সম্পাদনা

  1. The Hindu reported that Swathi was born and brought up at Doosi Agraharam, Srikakulam district, Andhra Pradesh.[১] However, Bnim stated she was born in Bihar.[২]
  2. The Hindu reported the allotment as ১৬ একর (৬৫,০০০ মি),[৮] Sakshi reported ১৩ একর (৫৩,০০০ মি).

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Cultural centre to come up at Kallepalli"The Hindu (ইংরেজি ভাষায়)। ২৯ জানুয়ারি ২০১৬। আইএসএসএন 0971-751X। সংগ্রহের তারিখ ১২ ডিসেম্বর ২০২২ 
  2. Bnim (২৩ অক্টোবর ২০১৪)। ""స్వాతి సోమనాథ్" – శింజారవం"acchamgatelugu.com। সংগ্রহের তারিখ ১৩ ডিসেম্বর ২০২২ 
  3. Vemuri, Radhakrishna (৫ এপ্রিল ২০২১)। Kuchipudi Dancer Swathi Somnath || Open Heart With RK || Season:1-Episode:17 || 07.02.2010 || #OHRK (Videotape) (তেলুগু ভাষায়)। ABN Andhra Jyothi 
  4. Vishwanath, Narayana (১১ জানুয়ারি ২০১৪)। "Representing The Art of Perfection"The New Indian Express। ১২ ডিসেম্বর ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ ডিসেম্বর ২০২২ 
  5. Vijetha || Swathi Somanath (Videotape) (তেলুগু ভাষায়)। DD Yadagiri। ২৮ অক্টোবর ২০২০। সংগ্রহের তারিখ ১৪ ডিসেম্বর ২০২২ 
  6. Vishwanath, Narayana (২৫ নভেম্বর ২০১৩)। "Saving the sanctity of Kuchipudi"The New Indian Express। সংগ্রহের তারিখ ১৩ ডিসেম্বর ২০২২ 
  7. Ramakrishna, Lakshmi (২২ মার্চ ২০১৯)। "Artist- writer Bnim: Canvas that's vast and wide"The Hindu (ইংরেজি ভাষায়)। আইএসএসএন 0971-751X। সংগ্রহের তারিখ ১৩ ডিসেম্বর ২০২২ 
  8. "Allocation of land to Kuchipudi dancer opposed"The Hindu (ইংরেজি ভাষায়)। ৪ জুলাই ২০১৫। আইএসএসএন 0971-751X। সংগ্রহের তারিখ ১৩ ডিসেম্বর ২০২২ 
  9. "ఎందుకంత ప్రేమ"Sakshi (তেলুগু ভাষায়)। ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ১৩ ডিসেম্বর ২০২২ 
  10. Swapna (২৫ সেপ্টেম্বর ২০২২)। శ్రీకాకుళంలో ఆ 12 ఎకరాలు ఎలా వచ్చాయి?-Classical Dancer Swathi Somanath || A Candid Conversation [How did those 12 acres come in Srikakulam?-Classical Dancer Swathi Somanath || A Candid Conversation] (Videotape) (তেলুগু ভাষায়)। iDream Telugu Movies। সংগ্রহের তারিখ ১৪ ডিসেম্বর ২০২২ 
  11. "దృశ్య కావ్యం.. నృత్య రూపకం"Eenadu (তেলুগু ভাষায়)। ৮ জানুয়ারি ২০২২। সংগ্রহের তারিখ ১৩ ডিসেম্বর ২০২২ 
  12. "Hamsa awards are now Kalaratna"The Hindu (ইংরেজি ভাষায়)। ১৫ আগস্ট ২০০৬। আইএসএসএন 0971-751X। সংগ্রহের তারিখ ১২ ডিসেম্বর ২০২২ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা