সুকাফা
সুকাফা বা সাওলুং সুকাফা (অসমীয়া: চাওলুং চুকাফা) আহোম সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন।[১] তিনি ১২২৮ সনে পাটকাই পর্বত অতিক্রম করে অসমে আহোম সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন ও ১২৫৩ সনে শিবসাগর জেলার চরাইদেউয়ে স্থায়ী ভাবে রাজধানী প্রতিষ্ঠা করেন। আহোম সাম্রাজ্যের মোট সময়কাল প্রায় ৬০০ বছর ছিল। অসমে বসবাসকারী বিভিন্ন জাতিদের মধ্যে পরস্পর সম্বন্ধ স্থাপন করে চুকাফা সমগ্র অসমবাসীকে একত্রিত করেছেন। বিভিন্ন জাতিদের একত্রিত করার জন্য তাকে আহোম ভাষায় সাওলুং (সাও-ইশ্বর; লুং-মহান) আখ্যা দেওয়া হয়েছে।[১]
সুকাফা | |||||
---|---|---|---|---|---|
আহোম সাম্রাজ্য | |||||
রাজত্ব | ১২২৮ – ১২৬৮ | ||||
রাজ্যাভিষেক | ২ ডিসেম্বর, ১২২৮ | ||||
উত্তরসূরি | চুতেফা | ||||
জন্ম | ১১৮৯ মং মাও | ||||
মৃত্যু | ১২৬৮ চরাইদেউ | ||||
সমাধি | চরাইদেউ | ||||
বংশধর | চুতেফা | ||||
| |||||
রাজবংশ | আহোম রাজবংশ | ||||
পিতা | চাও চাং নেও | ||||
মাতা | ব্লাক খাম সেন |
জীবনী
সম্পাদনাআহোম জনজাতীরা মঙ্গোলীয় গোষ্ঠির অন্তর্গত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বৃহৎ জাতির একটি শাখা।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] খ্রীষ্টীয় অষ্টম শতিকায় আহোম যুবরাজ পি-লকু ৬টি ক্ষুদ্র রাজ্য জয় করেন ও রাজ্যগুলিকে একত্রিত করার ফলে টাই রাজ্য নানাচাও বৃহৎ সাম্রাজ্যে পরিনত হয়। এই রাজ্যের পরিধি ভারতের মগধ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। ব্রহ্মদেশের উত্তর ভাগ ও অসমের কিছু অংশ এই সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল। খুনলুং ও খুলনাই নামক দুই ভাতৃদ্বয় এই স্থানে প্রথম প্রবজন করেন। কালক্রমে এই সাম্রাজ্য বিভক্ত হয় এবং মুং-রি-মুং রামরাজ্যে পুনঃগঠিত হয়। প্রথম অবস্থায় স্থানটি জনশূন্য ছিল। সুকাফা নতুন রাজ্যের সন্ধানে যাত্রা করার সময় কিছুদিন ছোট দাদু ছু-কাম-ফার নরা রাজ্যে আশ্রয় নেয়। তিনি যাত্রাকালে তার ইষ্টদেবতা সুমদেউ, মঙ্গল কার্যের নির্দেশক মুরগি, তিনজন রানী- আই মে চাও লো, নাংচেন-চুম-ফা এবং য়িলো-কে-চি-চুম-ফা, দুইজন মন্ত্রী ও চারজন রাজপুরোহিতকে সঙ্গে নিয়ে আসেন। তিনি ১২০০০ সৈনিক, ৩০০০ ঘোড়া, পেং নামক দাতাল হাতি, মাখুন্দি নামক মহিলা হাতি ও বারুদ এনেছিলেন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] দাদু ছু-কাম-ফার নরা রাজ্যের দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে স্থিত রাজ্য জয় করার জন্য সুকাফাকে পরামর্শ দেন। সুকাফা দক্ষিণ-পশ্চিম অংশ জয় করে হংকং উপত্যকা হয়ে পাটকাই পর্বত পর্যন্ত নিজের সামাজ্র্য বিস্তার করে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
সুকাফার অবদান
সম্পাদনাস্বর্গদেউ সুকাফা টাই মংগোলীয় সংস্কৃতি উন্নতির সঙ্গে স্থানীয় অসমীয়া ভাষা ও সংস্কৃতি উন্নতির ক্ষেত্রেও যথেষ্ট উৎসাহিত ছিলেন। ইতিহাস রচনা করা সুকাফার এক উল্লেখযোগ্য অবদান। তিনি যাত্রাপথে সংঘঠিত সকল ঘটনা লিপিবন্ধ করেন। এই লিপিবন্ধ ঘটনা কালক্রমে অসম ইতিহাসের রুপ নেয়। তিনি অসমে বসবাসকারী বিভিন্ন জনজাতি যেমন: কছাড়ি, নাগা, চুতিয়া, মরান, বরাহী ইত্যাদি জনজাতির মধ্যে পরস্পর বিবাহ ও অনুষ্ঠান উৎযাপনের সুবিধা দিয়ে সমগ্র অসমবাসীকে একত্রিত করেছেন। তিনি বিভিন্ন শ্রেনীর ব্যক্তিদের নানান উপাধি প্রদান করে সকলকে রাজকার্যে অংশগ্রহণ করার সুযোগ দিয়েছিলেন। বিভিন্ন জাতিদের নিয়ে ঐক্য সৃষ্টিকারি সাওলুং সুকাফা অসম ও অসমীয়া জাতির পিতৃপুরুষ এবং বৃহৎ অসমীয়া জাতীর জনক।
মৃত্যু
সম্পাদনা১২৬৮ সনে সাওলুং সুকাফার মৃত্যু হয়।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
সুকাফা দিবস
সম্পাদনাঅসম ও অসমীয়া জাতি গঠনে যথেষ্ট অবদান থাকার জন্য সুকাফাকে শ্রদ্ধা জানিয়ে ১৯৮৭ সনে থেকে ২ ডিসেম্বর তারিখ অসমে সুকাফা দিবস বা অসম দিবস হিসেবে পালন করা হয়। ১১২৮ সনের ২ ডিসেম্বর তারিখে সাওলুং সুকাফা পাটকাই পর্বত অতিক্রম করে অসমে প্রবেশ করে আহোম সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। [তথ্যসূত্র প্রয়োজন] উক্ত দিনটিকে চিরস্মরনীয় করে রাখার জন্য ছৈখোয়া অঞ্চলের ভীমকান্ত বুঢ়াগোহাই ১৯৭২ সনে আরম্ভ করা একটি প্রচেষ্টার ফলে এই দিবসটির সূচনা হয়।